তারামন বিবি

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

তারামন বেগম (১৯৫৭ - ১ ডিসেম্বর ২০১৮) যিনি তারামন বিবি নামে অধিক পরিচিত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[][] ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪। গেজেটে নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম।[]

তারামন বিবি
জন্ম১৯৫৭
মৃত্যু১ ডিসেম্বর ২০১৮(2018-12-01) (বয়স ৬০–৬১)[]
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বপাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
পেশামুক্তিযোদ্ধা
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
দাম্পত্য সঙ্গীআবদুল মজিদ
সন্তান২ জন

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি।[]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন।[][] তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।[] যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তিতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান।[]

পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[]

স্বাধীনতা পরবর্তী

সম্পাদনা

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন।[][] কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।[] ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান।[] এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।

এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।[] সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন।[] তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামক একটি বই রয়েছে। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন তারামন বিবি। []

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ।[] এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।[]

মৃত্যু

সম্পাদনা

তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থায় ভুগছিলেন। ১লা ডিসেম্বর ২০১৮ সালে তিনি নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।[১০] রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।[১০]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "তারামন বিবি আর নেই"। বাংলানিউজ২৪। ১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল|আর্কাইভের-ইউআরএল= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা।  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |death_place= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য);
  2. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"archive.prothom-alo.com। ২০১২-০৩-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "'বীর প্রতীক' তারামন বিবি কেমন আছেন?"আমাদের সময়। ২০১৬-১২-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "ছদ্মবেশী নানা ভূমিকায় বীর প্রতীক তারামন বিবি - 12.02.2011"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  5. সময় টেলিভিশন। "বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে সিএমএইচে নিয়ে আসা হচ্ছে"somoynews.tv। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  6. arthosuchak (২০১৬-০২-২১)। "সিএমএইচে বীর প্রতীক তারামন বিবি"ArthoSuchak। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  7. "অসুস্থ তারামন বিবিকে হেলিকপ্টারে ঢাকা আনা হচ্ছে"আরটিভি অনলাইন। ২০১৭-০৮-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  8. bhorerkagoj.net (২০১৬-০২-১৬)। "তারামন বিবি হাসপাতালে"ভোরের কাগজ অনলাইন। ২০১৮-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  9. "বীর প্রতীক তারামন বিবি হাসপাতালে"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০০৯-০৫-০৫। ২০১৮-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  10. "বীরপ্রতীক তারামন বিবির চিরবিদায়"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৮-১২-০১। ২০১৮-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-০১