তামিরে হায়াত

দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার পাক্ষিক উর্দু ম্যাগাজিন

তামিরে হায়াত (উর্দু: تعمیر حیات‎‎) হলো দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার একটি পাক্ষিক উর্দু ম্যাগাজিন।[১] ১৯৬৩ সালে মুহাম্মদ আল-হাসানীর সম্পাদনায় এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যার বর্তমান সম্পাদক শামসুল হক নদভী।[২] প্রতি মাসের ১০ ও ২৫ তারিখে এটি প্রকাশিত হয়। এটি ভারতীয় সমাজের গতিশীলতার উপর একটি সুনির্দিষ্ট ফোকাস সহ ধর্মীয় ও বৈশ্বিক উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।[৩] এছাড়াও এটি নদওয়াতুল উলামার চিন্তা, ধারণা, তত্ত্ব এবং বিশ্বাসের ব্যাখ্যা করে। এটি শিবলী নোমানীর প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার প্রথম ম্যাগাজিন আন নদওয়ার উত্তরসূরি।[৪]

তামিরে হায়াত
প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ
সম্পাদকশামসুল হক নদভী
বিভাগধর্মতত্ত্ব, সংস্কৃতি, দাওয়াত, সাহিত্য, নদওয়াতুল উলামা, শিক্ষা
প্রকাশনা সময়-দূরত্বপাক্ষিক
প্রকাশকদারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা
প্রতিষ্ঠাতামুহাম্মদ আল-হাসানী
প্রথম প্রকাশ১০ নভেম্বর ১৯৬৩
দেশভারত
ভিত্তিলখনউ
ভাষাউর্দু
ওয়েবসাইটtameerehayat.com
আইএসএসএন2582-4619

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৬৩ সালের ১০ নভেম্বর তামিরে হায়াত প্রতিষ্ঠিত হয়, মুহাম্মদ আল-হাসানীকে এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং সাঈদুর রহমান আজমি নদভিকে তার সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।[৫] ১৯৭৪ সালের মে মাসে সম্পাদনার দায়িত্ব ইসহাক জলিস নদভীর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যিনি ১৯৭৯ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নায়েব হাসান কাসেমী ইসহাক জলিস নদভীর মেয়াদকে ম্যাগাজিনের স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।[৫] ১৯৭৯ সালের ৩ জুন মুহাম্মদ আল-হাসানী এবং ১৯৭৯ সালের ১২ জুলাই ইসহাক জালিস নদভীর মৃত্যুর পর, আবদুন নূরকে মৃতব্যক্তিদ্বয়কে স্মরণ করে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়, শামসুল হক নদভী এবং মাহমুদ আল-আজহার নদভী এই স্মরণিকা প্রকাশে সহযোগী ছিলেন। তারপর থেকে শামসুল হক নদভী নিয়মিত সম্পাদকের ভূমিকা গ্রহণ করেন এবং আজও সেই দায়িত্বে রয়েছেন।[৬] আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীও এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।[৭] এখন পর্যন্ত এটি আবদুস সালাম কিদওয়াই নদভী, মুহাম্মদ আল-হাসানী, ওয়াজেহ রশিদ নদভী, রাবে হাসানী নদভীর উপর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।[৮]

এই ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আল-হাসানী এর উদ্দেশ্যগুলি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন। এর লক্ষ্য মুসলিমদের কাছে নদওয়াতুল উলামার মূলনীতির সাথে পরিচয় করে দেওয়া, এর মূল্যবোধের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করা, সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় এর শিক্ষাগত পদ্ধতির ধারাবাহিকতার পক্ষে সমর্থন করা। এটি বিজ্ঞান প্রসারের যুগে ইসলামি আইনশাস্ত্র এবং বিভিন্ন ইসলামি অনুশাসনে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার চেষ্টা করে। এটি আপাত দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য যুক্তি, বিশ্বাস এবং সমসাময়িক জ্ঞানের সমন্বয় সাধন করে পাঠকদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে। উপরন্তু, এটি পশ্চিমা বিশ্বের দ্বারা উপস্থাপিত সমসাময়িক সভ্যতার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য মুসলিমদের উৎসাহিত করে।[২]

মূল্যায়ন সম্পাদনা

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মুহাম্মদ সিরাজুল্লাহ ম্যাগাজিনটিকে এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং যুগান্তকারী বিষয়বস্তুর জন্য প্রশংসা করেন, যা শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না বরং ভারতীয় সমাজের জটিলতাগুলিকে নেভিগেট করার জন্য ব্যবহারিক দিকনির্দেশনাও উপস্থাপন করে। তিনি পাঠকদের কাছে এর বিস্তৃত আবেদনের মূল কারণ হিসেবে ম্যাগাজিনের সহজলভ্য ভাষা এবং উচ্চ-মানের বিষয়বস্তুকে তুলে ধরেন।[৩] আরেক লেখক নায়েব হাসান কাসেমী, ম্যাগাজিনটির স্থায়ী জনপ্রিয়তা এবং বিখ্যাত প্রকাশনাগুলোর মধ্যে এর বিশিষ্ট অবস্থান স্বীকার করেছেন, এর সাফল্যের কারণ হিসেবে এর ব্যতিক্রমী গুণাবলীকে চিহ্নিত করেছেন।[৯] পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ মুসা, ম্যাগাজিনের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলির একটি বিশদ বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন, এটি একটি ধর্মীয়, বুদ্ধিবৃত্তিক, এবং সংস্কারমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশের জন্য এর ভূমিকার উপর জোর দিয়েছেন। মুসা একটি অ্যাক্সেসযোগ্য এবং সর্বজনীন শৈলীতে পণ্ডিত, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাহিত্যিক বিষয়বস্তু উপস্থাপনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং স্বতন্ত্র অবস্থানে অবদান রাখে।[২] আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মো. সোহাইব সিদ্দিকী ম্যাগাজিনটিকে আন নদওয়ার সাথে তুলনা করেছেন।[১০] কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ওবায়দুর রহমান দাবি করেন যে ম্যাগাজিনটি বৈজ্ঞানিক ও সাহিত্যিক দিকগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে একীভূত করে সফল সাংবাদিকতা উপস্থাপন করে।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Singh, Rajendra Pal; Rana, Gopal (২০০২)। Teacher Education in Turmoil: Quest for a Solution (ইংরেজি ভাষায়)। Sterling Publishers Pvt. Ltd। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 978-81-207-2431-0। ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ 
  2. Moosa, Mohmmad (২০২২)। Urdu Sahafat Mein Ulama Ke Khidmaat 1800 AD To 1960 AD (গবেষণাপত্র) (উর্দু ভাষায়)। India: Department of Urdu, Panjab University। পৃষ্ঠা 327। hdl:10603/471669। ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ 
  3. Sirajullah, Muhammad (২০১৭)। Urdu Sahafat Ke Farogh Mein Madaris Ka Hissa [The Contribution Of Madrasas To The Promotion Of Urdu Journalism] (উর্দু ভাষায়)। New Delhi: Educational Publishing House। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 978-93-86624-58-1। ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ 
  4. Rahman 2017, পৃ. 436।
  5. Qasmi 2013, পৃ. 101।
  6. "About us"Tameer-e Hayat (ইংরেজি ভাষায়)। ১ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৬ 
  7. Shetty, V. T. Rajshekar (১৯৯৮)। India's Muslim Problem: Agony of the Country's Single Largest Community Persecuted by Hindu Nazis (ইংরেজি ভাষায়)। India: Dalit Sahitya Akademy। পৃষ্ঠা 126। ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২৪ 
  8. "Special Issues"Tameer-e Hayat (ইংরেজি ভাষায়)। ২ মার্চ ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৬ 
  9. Qasmi, Nayab Hasan (২০১৩)। Darul Uloom Deoband Ka Sahafati Manzarnama [Journalistic Scenario Of Darul Uloom Deoband] (উর্দু ভাষায়)। India: Idara Tahqueeq-e-islami Deoband। পৃষ্ঠা 102। 
  10. Siddiqi, Mohd. Sohaib (১৯৯৩)। Nadwa Movement Its Contribution To The Development Of Arabic Language And Literature In India (গবেষণাপত্র) (উর্দু ভাষায়)। India: Department of Arabic, Aligarh Muslim University। পৃষ্ঠা 244। ২৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২৪ 
  11. Rahman, Obaidur (২০১৭)। Musahamatu Darul Uloom Nadwatul Ulama Fi Nashril Lughatil Arabiati Wal Adabil Islami Wa Dauruha Fi Majalis Sahafati Wal Elam (গবেষণাপত্র) (আরবি ভাষায়)। India: University of Calcutta। পৃষ্ঠা 438। hdl:10603/314806। ১৬ জুন ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২৪