ওয়াজেহ রশিদ নদভী
মুহাম্মদ ওয়াজেহ রশিদ আল হাসানী আন নদভী (১৯৩২ – ১৬ জানুয়ারি ২০১৯) ছিলেন একজন ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত, আরবি সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক।[১][২][৩] তাকে ভারতে আরবি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা হয়।[৪] তিনি আবুল হাসান আলী নদভীর ভাগ্নে এবং রাবে হাসানী নদভীর সহোদর। তিনি দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার শিক্ষাবিভাগীয় প্রধান, আন্তর্জাতিক ইসলামি সাহিত্য সংস্থা ও ইসলামি গবেষণা একাডেমির সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় পাক্ষিক আর রায়িদ। এছাড়াও তিনি আল বাসুল ইসলামির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ভারতের আরবি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন।
মুহাম্মদ ওয়াজেহ রশিদ আল হাসানী আন নদভী | |
---|---|
শিক্ষাসচিব, দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামা | |
কাজের মেয়াদ ২০০৬ – ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ | |
উত্তরসূরী | আবদুল্লাহ আব্বাস নদভী |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯৩২ রায়বেরেলি, উত্তরপ্রদেশ, ভারত |
মৃত্যু | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ | (বয়স ৮৬–৮৭)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | আরবি সাহিত্য, সাংবাদিকতা |
আত্মীয় |
|
জীবনী
সম্পাদনাওয়াজেহ রশিদ নদভী ১৯৩২ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলির তাকিয়া কিলাঁ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ পরিবারে তার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। তারপর দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় ইসলাম ও আরবি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। এরপর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯৫২ সালে ইংরেজিতে অনার্স সম্পন্ন করেন।[৫]
১৯৫৩ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে আরবি বিভাগের উপস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সালে উপস্থাপনা ছেড়ে তিনি নদওয়াতুল উলামায় যোগ দেন। আরবি ভাষা ও ইসলামি সাহিত্যে শিক্ষকতা ও লেখালেখির পাশাপাশি তিনি পাক্ষিক আরবি পত্রিকা ‘আর-রায়িদ’-এর সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। মাসিক আরবি পত্রিকা ‘আল-বাসুল ইসলামি’র সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তার পরিচালনায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় নদওয়ার ইংরেজি মুখপত্র ‘দ্য ফ্রাগরেন্স অব ইস্ট’ (The Fragrance of East)। ভারতে আরবি সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন ভারতের ‘প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড’।[৫]
কর্মজীবনে তিনি নদওয়ার আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ডিন, ইসলামি দাওয়াহ ইনস্টিটিউটের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। ভারতের অন্যতম খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আব্বাস নদভীর মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি দারুল উলুম নদওয়ার শিক্ষাবিভাগীয় প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ‘রাবেতুল আদব আল ইসলামি আল আলমি’ (আন্তর্জাতিক ইসলামি সাহিত্য সংস্থা) ও ‘আল মুজাম্মাউল ইসলামি আল ইলমি’র (ইসলামি গবেষণা একাডেমি) সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ার সাহিত্য সেমিনারে।[৫]
তিনি ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
প্রকাশনা
সম্পাদনাতিনি আরবি ‘আর-রায়িদ’, ‘আল বাসুল ইসলামি’ এবং সাকাফাতুল হিন্দে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তার মৌলিক ও অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:[৪]
- তারিখুল আদাবিল আরবি
- আদাবুস সাহওয়াহ আল ইসলামিয়্যাহ
- হারকাতুত তালিমিল ইসলামী ফিল হিন্দি ওয়া তাতাওউরুল মানহাজ
- আদ দাওয়াতুল ইসলামিয়্যাহ ওয়া মিনহাজুহা ফিল হিন্দ
- মুখতাসারুল শামায়িলিন নববিয়্যাহ
- ইলা নিজামিন আলামিয়্যিন জাদিদিন
- আল ইমাম আহমদ বিন ইরফান আশ শহিদ
- মিন সানায়াতিল মাওতি ইলা সানায়াতিল কারারাত
- আ-লামুল আদাবিল আরবি ফিল আসরিল হাদিস
- আশ-শাইখ আবুল হাসান নদভি কায়িদান ওয়া হাকিমান
- মাসাদিরুল আদাবিল আরাবি ইত্যাদি
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আশফাক আহমদ নদভী বলেন,
“ | ‘ওয়াজেহ রশিদ নদভি একজন প্রসিদ্ধ সাংবাদিক, সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কীর্তিমান অনুবাদক, আরবি ভাষাবিদ, আধুনিক ও প্রাচীন উভয় আরবি সাহিত্যে সমান দক্ষ ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যের বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে সমধিক বিজ্ঞ। ইংরেজি ভাষায়ও তিনি পারদর্শী। যা তাঁর পাশ্চাত্য সংস্কৃতি-কলা ও সাহিত্যজ্ঞানের পরিধিকে সুবিস্তৃত করেছিল। আরবি ভাষায় প্রসিদ্ধ ভারতীয় সাংবাদিকদেরও অন্যতম ছিলেন তিনি। সাংবাদিকতায় তাঁর স্বতন্ত্র একটা শৈলী ছিল। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি ঘটনার রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণ করতেন তিনি। তাঁর লেখা দেখে কখনোই মনে হতো না, তিনি একজন মাওলানা এবং ইসলাম ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না; বরং মনে হতো, প্রাচ্যজ্ঞানের পাশাপাশি পাশ্চাত্যজ্ঞান ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও তিনি পূর্ণ দক্ষতার অধিকারী ও গভীর পর্যবেক্ষক। যিনি সমাজের শিরা-উপশিরায় হাত রেখে চলতেন এবং রাজনীতি ও সাহিত্যের প্রতিটি পরিবর্তন থাকত তাঁর নখদর্পণে।’ | ” |
— [৪] |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ মুহাম্মদ হাসান, আবুল মুফিদ (২০২০)। "Role of Muhammad Wadeh Rashid Al-Hasani AlNadwi in the development of Arabic studies in India" [ভারতে আরবি স্টাডিজের উন্নয়নে মুহাম্মদ ওয়াজেহ রশিদ হাসানি আন নদভীর ভূমিকা]। জার্নাল অব ক্রিটিকাল রিভিউজ। ৭ (২): ৬৬২–৬৬৭। ডিওআই:10.31838/jcr.07.02.174।
- ↑ মতিন, আব্দুল (জুন ২০১৯)। "حضرت مولانا سید واضح رشید ندوی رحمۃ اللہ علیہ" [হযরত মাওলানা ওয়াজেহ রশিদ হাসানী নদভী রহ.]। মাসিক বাইয়্যিনাত।
- ↑ সামাদ, আব্দুস (২০১৮)। العلماء البارزون من دار العلوم لندوة العلماء الذين حصلوا على الجائزة التقديرية لنشر اللغة العربية وآدابها [আরবি ভাষা ও সাহিত্যে প্রশংসিত দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার বিশিষ্ট আলেমগণ] (গবেষণাপত্র)। ভারত: মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৯৪–১০৭। hdl:10603/229374।
- ↑ ক খ গ হুসাইন, মুহাম্মদ সাদিক (১৫ মার্চ ২০১৯)। "আল্লামা ওয়াজেহ রশিদ নদভি (রহ.) : উপমহাদেশে আরবি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ"। কালের কণ্ঠ।
- ↑ ক খ গ ঘ "প্রখ্যাত আলেম সাইয়েদ ওয়াজেহ রশিদ নদভি আর নেই"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ১৬ জানুয়ারি ২০১৯।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- রেহমান, শীবা (২০০৮)। Contribution of Darul Uloom Nadwatul to the Development of Arabic Journalism in India [ভারতে আরবি সাংবাদিকতার বিকাশে দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার অবদান] (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৬৬–৬৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ওয়াজেহ রশিদ নদভীর উর্দু বই ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে
- ওয়াজেহ রশিদ নদভীর আরবি বই ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে