তনুজা
তনুজা সমর্থ (মারাঠি: तनुजा समर्थ) (জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩) ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প বা বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তবে 'তনুজা' নামেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি অতি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও, তিনি 'তনুজা মুখার্জি' নামেও পরিচিত। বাংলা, মারাঠি এবং গুজরাটি চলচ্চিত্রেও তিনি ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করেছেন। জাকুল (মারাঠি), এন্টনী ফিরিঙ্গী (বাংলা), দেয়া নেয়া, তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯), প্রথম কদম ফুল, রাজকুমারী, সীমানা পেরিয়ে (বাংলাদেশ) তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
তনুজা মুখার্জী | |
---|---|
জন্ম | মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত | ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩
পেশা | চলচ্চিত্র অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৬৫-১৯৭৫, ২০০২-২০০৩ |
দাম্পত্য সঙ্গী | শমু মুখার্জী (১৯৭৩–২০০৮; শমুর মৃত্যু) |
সন্তান | কাজল, তানিশা |
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনামুম্বাইয়ের (সাবেক: বোম্বে) মারাঠি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন 'তনুজা সমর্থ' নামে। বাবা কুমারসেন সমর্থ এবং মা শোভনা সমর্থের চার সন্তানের মধ্যে তিনি একজন। কুমারসেন সমর্থ ছিলেন একজন কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক। 'শোভনা সমর্থ' ১৯৩০ ও ১৯৪০ এর দশকে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। শৈশবকালেই পিতা-মাতার মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। বড় বোন নূতন ছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী।[১] তার 'চতুরা' নাম্নী আরেকটি বোন রয়েছে, যিনি কখনো অভিনয় জগতে প্রবেশ করেননি। কুমারসেন সমর্থ মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে (পূর্ব) এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই বড় হন।
চলচ্চিত্র জীবন
সম্পাদনাবড় বোন নুতনের সাথে হামারি বেটি (১৯৫০) ছবিতে 'বেবি তনুজা' নামের চরিত্রে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূত্রপাত ঘটে।[২] ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে অভিনয় করে গেছেন। ছাবিলি (১৯৬০) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ছবিটির পরিচালক ছিলেন তাঁর মা এবং তার বোনও এতে নেতৃত্ব দেন। পূর্ণাঙ্গ নায়িকা হিসেবে তিনি কিদার শর্মা'র হামারি ইয়াদ আয়েগী (১৯৬১) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খ্যাতির শিখরে পৌঁছান। ১৯৫০ এর দশকে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী গীতা বালি'র ন্যায় তিনিও ছিলেন ভীষণ একগুঁয়ে ও জেদী স্বভাবের ।
তাঁর প্রথমদিককার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হিসেবে বাহারেন ফির ভি আয়েঙ্গী (১৯৬৬) ছবির পরিচালক ছিলেন শহীদ লতিফ।[৩] 'ওহ্ হাসকে মিলে হামসে' গানের মাধ্যমে তিনি সকলের নজর কাড়েন। সহজাত ও স্বভাবশৈলী অভিনয় নৈপুণ্যের মাধ্যমে তিনি খুব শীঘ্রই প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। জিনে কি রাহে (১৯৬৯) ছবিতে জীতেন্দ্রের সাথে অভিনয় করেন ও আশ্চর্য্যজনকভাবে ছবিটি ব্যবসা সফল হয়। ঐ বছরই তনুজা পয়সা ইয়ে পেয়ার ছবির মাধ্যমে 'ফিল্ম ফেয়ারঃ সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার' পান। হাতি মেরে সাথী (১৯৭১) চলচ্চিত্রটি সফলতা লাভ করে। পরবর্তীতে মেরে জীবন সাথী, দো চোর এবং এক বার মুসকরা দো (১৯৭২) ছবিতেও তিনি অভিনয় করেন। এছাড়াও, পবিত্র পাপী (১৯৭০), ভুত বাংলা, অনুভব ইত্যাদি তার কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি।
১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তনুজা কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রেও সমানতালে অভিনয় করতে শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে দেয়া নেয়া চলচ্চিত্রে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়া, অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হিসেবে এন্টনি-ফিরিঙ্গী (১৯৬৭) এবং রাজকুমারী (১৯৭০) অন্যতম। তনুজা তাঁর অত্যন্ত চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় মুখশ্রী নিয়ে অন্যতম সুপারস্টার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতেও বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তন্মধ্যে - তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯), প্রথম কদম ফুল এবং আগুন (১৯৮৮ চলচ্চিত্র) অন্যতম। এছাড়াও তিনি বেশকিছু ভিন্নধর্মী আর্থসামাজিক বিষয়নির্ভর বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন যার মধ্যে আদালত ও একটি মেয়ে, মধুবন ইত্যাদি উল্লেখনীয়। তিনি নির্ভুল পরিষ্কার উচ্চারণে বাংলা সংলাপ বলার দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
পরবর্তীতে তনুজা বেশ কয়েক বছর চলচ্চিত্রাঙ্গন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। শমু মুখার্জী'র সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানার পর তিনি পুনরায় চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন। সহকারী অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয়ের জন্য তিনি তাঁর পূর্বের নায়কদের কাছ থেকে প্রস্তাবনা পান। পেয়ার কি কাহানী'র নায়ক অমিতাভ বচ্চন খুদ্দার (১৯৮২) ছবিতে তাঁকে 'ভাবী' হিসেবে সম্বোধন করেন। রাজ কাপুরের প্রেম রোগ (১৯৮২) ছবিতেও তিনি সহ-অভিনেত্রী ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সাথিয়া (২০০২), রুলস্ (২০০৩) এবং খাকী (২০০৩) চলচ্চিত্রগুলোয় তিনি সহ-অভিনেত্রী হিসেবে অংশ নেন।
অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহ
সম্পাদনাসাল | চলচ্চিত্র | সাল | চলচ্চিত্র | সাল | চলচ্চিত্র |
১৯৫০ | হামারি বেটি | ১৯৫২ | আম্বের | ১৯৬০ | ছাবিলি |
১৯৬১ | মেম দিদি, হামারি ইয়াদ আয়েগী | ১৯৬৩ | আজ অউর কাল | ১৯৬৪ | বেনজীর |
১৯৬৫ | নয়ে উমর কি নয়ে ফসল, চান্দ অউর সুরজ, ভুত বাংলা | ১৯৬৬ | সনাতা, বাহারে ফির ভি আয়েঙ্গী | ১৯৬৭ | নয়ে রোশনী, জুয়েল থীফ, ওয়াহা কি লগ |
১৯৬৮ | স্বপ্ন কা সওদাগর, জুয়ারী, ইজ্জত, দো দোনী চর | ১৯৬৯ | পয়সা ইয়া পেয়ার, জিয়ো অউর জিনে দো, জিনে কি রাহ, গুস্তাখী মাফ, এক মাসুম | ১৯৭০ | প্রিয়া, পবিত্র পাপী, বাচপান |
১৯৭১ | অনুভব, পেয়ার কি কাহানী, পুরানি পেহচান, প্রীত কি দোরী, হাতি মেরে সাথী, এক থি রীতা, এক পাহেলী, দূর কা রাহি | ১৯৭২ | মোমে কি গুদিয়া, মেরে জীবন সাথী, দো চোর | ১৯৭৩ | নানা শিকারী, ইনসাফ |
১৯৭৪ | আমির গরীব, ইমতিহান, হামরাহী, হাম সকল | ১৯৭৫ | আজা সনম | ১৯৭৮ | স্বর্গ নরক (রাধা), লাল কোঠি, সীমানা পেরিয়ে (বাংলাদেশ) |
১৯৮০ | বিন মা কে বাচ্চে, বন্দীশ | ১৯৮১ | কমাণ্ডার, ইয়ারানা | ১৯৮২ | কামচোর, জনি আই লাভ ইউ, বহু হো তো এ্যায়সি, রুস্তম, প্রেম রোগ, খুদ্দার |
১৯৮৩ | এক জান হ্যায় হাম, পিয়াস, মাসুম | ১৯৮৪ | সোহনী মাহিওয়াল, পেট পেয়ার অউর পাপ, নাদানিয়ান, মাটি মাং খুন, কুনারী বহু, বক্সার, ইয়াদগার | ১৯৮৫ | ঘর দোয়ার, জবর দাস্ত, লাভার বয় |
১৯৮৬ | এক অউর সিকান্দার, অনোখা রিশতা, অধিকার, সুহাগন, নসীহত, মোহাব্বত কি কসম, লাভ ৮৬, জাল | ১৯৮৭ | মা বেটি, ইতিহাস, ঘর কা সুখ, দিল জ্বালা, মেরা সুহাগ | ১৯৮৮ | মেরা মুকাদ্দর, অগ্নি, উচা ডর বাবে নানক দা, পাপ কো জ্বালা কর রাখ কর দুঙ্গা |
১৯৮৯ | রাখওয়ালা, পারায়া ঘর, মেরি জবান, তাকতওয়ার, ঘরানা, গাওয়াহী | ১৯৯০ | দুশমন | ১৯৯১ | পিয়ার ভরা দিল, জহর |
১৯৯২ | আই লাভ ইউ, এক লড়কা এক লড়কী, বেখুদী, আভি আভি, গজব তামাশা | ১৯৯৩ | ইজ্জত কি রোটি, অন্তিম নাইয়ে | ১৯৯৪ | আতিশ, আগ |
১৯৯৫ | পান্ডব | ১৯৯৬ | মুকাদমা | ১৯৯৮ | স্বামী বিবেকানন্দ |
১৯৯৯ | সাফারী | ২০০০ | ভাই নাম্বার ওয়ান | ২০০২ | সাথিয়া |
২০০৩ | ভুত, রুলস্ (পিয়ার কা সুপারহিট ফর্মুলা) | ২০০৪ | খাকী, দিবার | ২০০৮ | মুক্তি, হালে দিল |
২০১০ | তুনপুর কা সুপারহিরো |
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাতনুজা শশধর মুখার্জির সন্তান ও পরিচালক শমু মুখার্জি'র সাথে এক বার মুসকরা দো (১৯৭২) ছবিতে কাজ করার সময় প্রেমে পড়ে যান।[৪] প্রেম থেকে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ১৯৭৩ সালে। তাদের সংসারে কাজল মুখার্জি এবং তানিশা মুখার্জি নামে দু'টো মেয়ে রয়েছে।[৫][৬] পরবর্তীতে তাদের সম্পর্কে ভাটা পড়লে পৃথকভাবে বসবাস করেন। কিন্তু তারা কখনো বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাননি। ১০ এপ্রিল, ২০০৮ সালে শমু মুখার্জি হৃদজনিত কারণে পরলোকগমন করেন।
পুরস্কার ও মনোনয়ন
সম্পাদনা- ১৯৬৯: ফিল্মফেয়ার - সেরা সহ-অভিনেত্রী পুরস্কার, পয়সা ইয়ে পেয়ার
- ১৯৬৭: ফিল্মফেয়ার - সেরা সহ-অভিনেত্রী মনোনয়ন, জুয়েল থিফ
অন্য ভূমিকায়
সম্পাদনা২০০৮ সালে জি টিভি'র পারিবারিক নাচের অনুষ্ঠান "রক এন্ড রোল ফ্যামিলি"তে বিচারক হিসেবে তনুজা তার মেয়ে কাজল এবং মেয়ে জামাই অজয় দেবগন অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "তনুজাঃ অভিনেত্রী নুতনের ছোট বোন"। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১।
- ↑ শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক
- ↑ বাহারেন ফির ভি আয়েঙ্গী ছবির পর্যালোচনা
- ↑ "কাজলের বয়স ৫৬ বছর!"। ২০১১-০৯-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-১৬।
- ↑ সাফল্যের আরেক নাম- কাজল[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ পিছিয়ে আছেন কন্যারা![স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- * *