টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য

বাংলাদেশের একটি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য
(টেকনাফ গেম রিজার্ভ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, পূর্বনাম:টেকনাফ গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একমাত্র গেম রিজার্ভ বন[১] এর আয়তন ১১,৬১৫ হেক্টর।[২] বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্থানে বন্য হাতির দেখা মেলে তার মধ্যে টেকনাফ গেম রিজার্ভ অন্যতম। বন্য এশীয় হাতির অভয়ারণ্য হিসাবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে[৩] যথেষ্ট বিস্তীর্ণ এই গেম রিজার্ভে বন ছাড়াও আছে নাইটং পাহাড়, কুদুম গুহা, কুঠি পাহাড় প্রভৃতি আকর্ষণীয় স্থান। বনের উঁচু পাহাড় আর বঙ্গোপসাগরের মাঝে রয়েছে বিশাল গর্জন বন। আছে ১০০০ ফুট উঁচু তৈঙ্গা চূড়া। প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে আছে ফুল, ফল, বাহারি গাছ। সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষনীয় ভ্রমণ স্থান।

টেকনাফ গেম রিজার্ভ
আইইউসিএন বিষয়শ্রেণী IV (বাসস্থান/প্রজাতি ব্যবস্থাপনা অঞ্চল)
মানচিত্র টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান দেখাচ্ছে
বাংলাদেশের মানচিত্রে টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান
অবস্থানটেকনাফ উপজেলা, কক্সবাজার জেলা, বাংলাদেশ
নিকটবর্তী শহরটেকনাফ
স্থানাঙ্ক২১°০৪′০০″ উত্তর ৯২°০৯′০০″ পূর্ব / ২১.০৬৬৬৭° উত্তর ৯২.১৫০০০° পূর্ব / 21.06667; 92.15000
আয়তন১১,৬১৫ হেক্টর
স্থাপিত১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ
কর্তৃপক্ষবাংলাদেশ বন বিভাগ

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় টেকনাফ উপদ্বীপে অবস্থিত। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন জুড়ে এর বিস্তৃতী; এ ইউনিয়ন গুলো হল - বাহারছড়া, হ্নীলা, সুবরাং, টেকনাফ এবং হোয়াইক্যং।[৪] কক্সবাজার শহর থেকে এর দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার।[৩] এই গেম রিজার্ভের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী; এর ঠিক পরপরই মায়ানমার সীমান্ত এবং পশ্চিম দিকে বঙ্গোপসাগর

টেকনাফ গেম রিজার্ভ একটি সরল পাহাড় শ্রেনীর অংশ, যার সর্বোচ্চ উচ্চতা ৭০০ মিটার। এই গেম রিজার্ভের দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ২৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থ পূর্ব-পশ্চিমে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার।

ইতিহাস

সম্পাদনা

সংরক্ষিত বনের ১১,৬১৫ হেক্টর জায়গা নিয়ে ১৯৮৩ সালে টেকনাফ গেম রিজার্ভ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কক্সবাজার (দক্ষিণ) বন বিভাগের তিনটি ফরেষ্ট রেঞ্জঃ হোয়াইক্যং, শীলখালী এবং টেকনাফ এর ১০ টি ব্লক এ গেম রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত। বন্য এশীয় হাতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ভূপ্রকৃতি

সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভের প্রায় পুরোটাই একটি সরল পাহাড় শ্রেণীর অংশ। টেকনাফ উপদ্বীপের প্রায় মাঝ বরাবর পাহাড় গুলোর চূড়া উঠে গেছে। আছে বেশ কিছু সংকীর্ণ উপত্যকা ও গিরিখাত। এসব উপত্যকা আর গিরিখাত দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া বা ঝর্ণা, যা শেষে মিশেছে পূর্বদিকে নাফ নদীতে এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে। এসব ছড়ার বেশির ভাগই মৌসুমী, বর্ষাকালে পানি থাকে এবং শীতে শুকিয়ে যায়।

গেম রিজার্ভের বড় অংশ পাহাড়ি মৃত্তিকা গঠিত। পূর্ব পাশে নাফ নদীর তীর ঘেষে আছে জোয়ার ভাটায় সৃষ্ট কাদা মাটির ম্যানগ্রোভ বন। পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের তীরে আছে বালুকাবেলা গঠিত সৈকত।

উদ্ভিদ ও জীব বৈচিত্র্য

সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভ জীব বৈচিত্রে ভরপুর এবং এই বনের জীববৈচিত্রকে বাংলাদেশের মধ্যে সবার্ধিক বলে ধারণা করা হয়। এই বনে ২৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।

বিভিন্ন ধরনের গাছের মধ্যে আছে চাপালিশ (Artocarpus chaplasha), তেলি গর্জন (Dipterocarpus turbinatus), জলপাই (Elaeocarpus floribundaas), হরগজা (Dillenia pentagyna), আম চুন্দল (Swintonia floribunda), বুনো অশোক (Saraca asoca), জারুল প্রভৃতি। পাখির মধ্যে আছে ছোট কানাকুবো, নীলকান বসন্তবাউরি, বড়হলদেঝুঁটি কাঠকুড়ালী, এশীয় দাগি কুঁটি পেঁচা, কালাগলা টুনটুনি, লালমৌটুসী ইত্যাদি।

টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যে সাময়িকভাবে বিচরণকারী এশীয় হাতির দেখা পাওয়া যায়।[৫] যেটি বাংলাদেশের বুনো হাতির একটি বড় অংশ। এখানে বাস করা বাংলাদেশে বুনো মোট হাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়া বিলুপ্তপ্রায় রামকুত্তা, উল্লুক, সম্বর হরিণ, উড়ুক্কু কাঠবিড়ালী, সজারু প্রভৃতি প্রাণীরও দেখা মেলে। এলাকায় নৈসর্গিক অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করছে নিসর্গ সাপোর্ট প্রোগ্রাম।[৬]

কুদুম গুহা

সম্পাদনা

টেকনাফ গেম রিজার্ভের কয়েকটি প্রধান আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুদুম গুহা। জানামতে এটি বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির গুহা। কুদুম গুহায় প্রচুর বাদুড় বাস করে, তাই এটি বাদুর গুহা নামেও পরিচিত। কুদুম গুহায় দুই প্রজাতির বাদুড় থাকে। শুধু তাই নয়, বাদুর ছাড়াও এই গুহায় বাস করে ৪ প্রজাতির শামুক, গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিরিতে থাকে ৪ প্রজাতির মাছ আর আছে তিন প্রজাতির মাকড়শা। গুহার বাইরে থেকে পাখিদের এসে গুহার শামুক খেতে দেখা গেছে।[৭] প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে আকষর্ণীয় ইকোট্যুরিজমের স্থান হিসাবে কুদুম গুহার গুরূত্ব ব্যাপক।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১১ 
  2. "বন্যপ্রানী অভয়ারণ্য"জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। ২০১৭-০১-৩১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-০২ 
  3. "বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর"। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১১ 
  4. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "হাতিরা যাবে কোথায়"। www.manobkantha.com। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন
  7. http://www.bangladesh.com/national-parks/teknaf/

বহি:সংযোগ

সম্পাদনা