টাইটানিক (১৯৯৭-এর চলচ্চিত্র)
টাইটানিক (ইংরেজি: Titanic; অনু. দানবীয়[৮]) হলো ১৯৯৭ সালের একটি মার্কিন মহাকাব্যিক প্রণয়ধর্মী দুর্যোগ চলচ্চিত্র, যা রচনা, পরিচালনা, সহ-প্রযোজনা এবং সহ-সম্পাদনা করেছেন জেমস ক্যামেরন। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও ও কেট উইন্সলেট। উচ্চবিত্ত সমাজের মেয়ে রোজের সাথে টাইটানিক জাহাজের যাত্রায় নিম্নবিত্ত সমাজের প্রতিভূ জ্যাকের প্রেম হয়। ১৯১২ সালে টাইটানিকের পরিণতির পটভূমিতে তাদের এই বিষাদই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এতে। এটির প্রেমের গল্প আর কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও কয়েকটি পার্শ্বচরিত্র ঐতিহাসিক সত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। গ্লোরিয়া স্টুয়ার্ট বৃদ্ধা রোজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বৃদ্ধা রোজ তার টাইটানিক জীবনের কাহিনী বর্ণনা করেছেন।
টাইটানিক | |
---|---|
![]() প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত পোস্টার | |
পরিচালক | জেমস ক্যামেরন |
প্রযোজক |
|
রচয়িতা | জেমস ক্যামেরন |
শ্রেষ্ঠাংশে | |
সুরকার | জেমস হর্নার |
চিত্রগ্রাহক | রাসেল কার্পেন্টার |
সম্পাদক |
|
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক |
|
মুক্তি |
|
দৈর্ঘ্য | ১৯৫ মিনিট[৩] |
দেশ | মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
ভাষা | ইংরেজি |
নির্মাণব্যয় | মার্কিন $২০ কোটি[৪][৫][৬] |
আয় | মার্কিন $২১০.৯৫ কোটি[৭] |
১৯৯৫ সালে টাইটানিকের চলচ্চিত্রায়ন শুরু হয়। সে সময় ক্যামেরন আটলান্টিকের তলায় টাইটানিকের আসল ভগ্নাবশেষের ছবি তোলা শুরু করেছিলেন। তিনি প্রেম কাহিনীর অবতারণা ঘটিয়েছিলেন মানুষের বাস্তব জীবনের ট্রাজেডির মাধ্যমে টাইটানিকের ট্রাজেডি ফুটিয়ে তোলার জন্য। ছবির আধুনিক সময়ের শ্যুটিং করা হয়েছে রাশিয়ার মির অভিযানের সহযোগী জাহাজ Akademik Mstislav Keldysh-এ, আর প্রাচীন টাইটানিকের শ্যুটিংয়ের জন্য পুরনো টাইটানিক নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। বাহা ক্যালিফোর্নিয়ার Playas de Rosarito-তে টাইটানিক পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া টাইটানিকডুবির দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য ক্যামেরন স্কেল মডেলিং ও কম্পিউটার এনিমেশনের সাহায্য নিয়েছেন। তৎকালীন সময়ে টাইটানিকই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি। এই চলচ্চিত্র তৈরীতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্যারামাউন্ট পিকচার্স ও টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স যৌথভাবে এই অর্থের যোগান দিয়েছে।
১৯৯৭ সালের ২রা জুলাই মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণ প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে অবশেষে ১৯শে ডিসেম্বর টাইটানিক মুক্তি পায়। মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যাওয়ার কথা শুনে অনেকেই ভেবে বসেছিলেন, এই ছবির মুক্তি পাওয়া আর হবে না এবং ফক্স ও প্যারামাউন্ট বিশাল লোকসানের সম্মুখীন হবে। আশা খুব বেশি না থাকলেও মুক্তির পর টাইটানিক সমালোচক ও দর্শক সবার কাছ থেকেই বিপুল প্রশংসা পায়। টাইটানিকের সবচেয়ে বড় দুটি অর্জন হচ্ছে: ১৪টির মধ্যে ১১টি ক্ষেত্রেই একাডেমি পুরস্কার জিতে নেয়া এবং সর্বকালের সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা। স্ফীতির বিষয়টা বাদ দিলে টাইটানিকের চেয়ে বেশি আয় এ পর্যন্ত কোন সিনেমা করতে পারেনি। টাইটানিক মোট ২.১৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। অবশ্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করলে উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী সিনেমার তালিকায় টাইটানিক ৬ নম্বরে থাকে। আর অস্কার ১১টির বেশি কোনো সিনেমাই পায়নি। টাইটানিক ছাড়া একমাত্র বেন-হার ও দ্য লর্ড অব দ্য রিংস: দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং-ই ১১টি ক্ষেত্রে অস্কার পেয়েছে।
কাহিনীসম্পাদনা
১৯৯৬ সালে গবেষণা জাহাজ আকাদেমি ম্যাকতিসলাভ কেলদিশ (Академик Мстислав Келдыш), ব্রক লাভেট ও তার দল আরএমএস টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করে। তারা জাহাজ থেকে অক্ষত একটি বাক্স উদ্ধার করে, তাদের আশা যে সেখানে একটি বড় হীরার গলার হার রয়েছে যা "মহাসাগরের হৃদয়" (Heart of the Ocean) নামে পরিচিত। এর পরিবর্তে তারা শুধুমাত্র নেকলেস পরা একজন নগ্ন তরুণীর একটি চিত্র খুঁজে পায়। চিত্রটিতে তারিখ হিসাবে ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল উল্লেখ করা, যা টাইটানিকের বরফখণ্ডে আঘাতের একই দিন।[Note ১]
চরিত্রসমূহসম্পাদনা
কাল্পনিকসম্পাদনা
- লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও - জ্যাক ড'সন
- কেট উইন্সলেট - রোজ ডিউইট বিউকেটার
- বিলি জেইন - কেইলডন "ক্যাল" নেথান হকলি
- ফ্রান্সিস ফিশার - রুথ ডিউইট বিউকেটার
- গ্লোরিয়া স্টুয়ার্ট - ১০১ বছর বয়সের রোজ
ঐতিহাসিকসম্পাদনা
- ক্যাথি বেটস - মার্গারেট ব্রাউন
- ভিক্টর গার্বার - টমাস অ্যান্ড্রুস
- বার্নার্ড হিল - ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথ
- ইওয়ান স্টুয়ার্ট - ফার্স্ট অফিসার উইলিয়াম মারডক
পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা
- একাডেমি পুরস্কার ১৯৯৮
- সেরা ছবি - জন ল্যান্ডাউ ও জেমস ক্যামেরন
- সেরা পরিচালক - জেমস ক্যামেরন
- সেরা পোশাক সজ্জা
- সেরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট
- সেরা শব্দ সমন্বয়
- সেরা শব্দ সম্পাদনা
- সেরা মৌলিক সুর - জেমস হর্নার
- সেরা সম্পাদনা - কনরাড বাফ, জেমস ক্যামেরন ও রিচার্ড এ হ্যারিস
- সেরা মৌলিক সঙ্গীত
- সেরা শিল্প নির্দেশনা
- সেরা চিত্রগ্রহণ - রাসেল কার্পেন্টার
- গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড
- সেরা চলচ্চিত্র - নাট্য
- সেরা পরিচালক
- সেরা মৌলিক সুর
- সেরা সঙ্গীত
অ্যামেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি তালিকায় টাইটানিক শীর্ষস্থান পেয়েছে। যেমন:
- আমেরিকার সর্বকালের সেরা ১০০টি থ্রিলিং সিনেমার তালিকায় ২৫তম (২০০১)
- মার্কিন চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা ১০০টি প্রেমকাহিনীর তালিকায় ৩৭তম (২০০২)
- মার্কিন চলচ্চিত্রে সর্বকালের সেরা ১০০টি গানের তালিকায় সেলিন ডিয়নের "মাই হার্ট উইল গো অন" ১৪ নম্বরে আছে (২০০৪)
- মার্কিন সিনেমায় সর্বকালের সেরা ১০০টি উক্তির তালিকায় জ্যাক ডসনের (ক্যাপ্রিও) "I'm king of the world!" উক্তিটি ১০০ নম্বরে আছে (২০০৫)
- ২০০৭ সালে সর্বকালের সেরা ১০০ মার্কিন সিনেমার নাম পুনরায় প্রকাশিত হলে টাইটানিক তাতে ৮৩তম স্থান দখল করে
- এএফআই এর টেন টপ টেন-এ টাইটানিক সর্বকালের সেরা ১০টি এপিক চলচ্চিত্রের তালিকায় ৬ নম্বরে আছে
টীকাসম্পাদনা
- ↑ যদিও টাইটানিক ১৪ এপ্রিল বরফখন্ডে আঘাত হেনেছিল, তবে এটি ১৫ এপ্রিলের প্রাথমিক ঘণ্টা পর্যন্ত ডুবে যায়নি।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ গ "Titanic (1997)"। Film & TV Database। British Film Institute। জানুয়ারি ১৪, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৯, ২০১১।
- ↑ ক খ "Titanic"। AFI Catalog of Feature Films। American Film Institute। সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮।
- ↑ "TITANIC (12)"। British Board of Film Classification। নভেম্বর ১৪, ১৯৯৭। এপ্রিল ২৭, ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৮, ২০১৪।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Garrett (2007)
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Sandler & Studlar 1999
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Welkos (1998)
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;bom
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ রাজীব সরকার (২০১৯-১১-২৩)। "জাদুঘরে টাইটানিক-আখ্যান"। প্রথম আলো। ২০২১-০৮-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৯।
ইংরেজি টাইটানিক শব্দের বাংলা অর্থ দানবীয়। আইরিশ প্রকৌশলী উইলিয়াম পিরির নকশায় তৈরি জাহাজটি প্রকৃত অর্থেই ছিল দানবাকৃতির।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- টাইটানিক-এর দাপ্তরিক ওয়েবসাইট
- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে টাইটানিক (ইংরেজি)
- রটেন টম্যাটোসে টাইটানিক (ইংরেজি)
- মেটাক্রিটিকে টাইটানিক (ইংরেজি)
- টাইটানিক - The Numbers