জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা যা এনএসআই নামে পরিচিত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান ও স্বাধীন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা। এনএসআইয়ের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। এনএসআই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স ও বৈদেশিক গোয়েন্দা সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলোতে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। এনএসআই বাংলাদেশের অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা যেমন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা, সেনা গোয়েন্দা ও নৌ গোয়েন্দা প্রভৃতির মধ্যে বৃহত্তম। সংস্থাটি সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।[৭]
সংস্থার রূপরেখা | |
---|---|
গঠিত | ২৯ ডিসেম্বর ১৯৭২[১] |
সদর দপ্তর | সেগুনবাগিচা, ঢাকা, বাংলাদেশ[২][৩] |
বার্ষিক বাজেট | গোপনীয় |
সংস্থা নির্বাহী |
|
মূল সংস্থা | প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়[৬] |
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংস্থাটির দপ্তর রয়েছে। পাশাপাশি যুগ্ম-পরিচালকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জেলাসমূহে স্থানীয় ইউনিট রয়েছে।[৭] বাংলাদেশের বৃহত্তম গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে এনএসআই প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে মূলত বৈদেশিক সরকার, নির্দিষ্ট ব্যক্তি, সংস্থা, রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন ধর্মীয় দল এবং কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা।
প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম
সম্পাদনাবাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে ‘জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষ কিছু কর্মকর্তাদের নতুন এই বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সংস্থাটির কার্যক্রম শুরু হয়।[১]
এনএসআই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সীমান্ত এলাকার কৌশলগত নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণ করাও এই সংস্থার দায়িত্ব। পাশাপাশি এনএসআই বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার জনবলের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে।
প্রশিক্ষণ
সম্পাদনাএনএসআইয়ের সদস্যগণ দেশে ও দেশের বাইরে বিশেষ গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন।[১]
মহাপরিচালকের তালিকা
সম্পাদনা- এ বি এস সফদার (আগস্ট ১৯৭৫-)
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এজেএম আমিনুল হক (জুন ১৯৯৪-মার্চ ১৯৯৬)
- মেজর জেনারেল গোলাম কাদের
- মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক (ভারপ্রাপ্ত; ১৯৯৬-১৯৯৭)
- মেজর জেনারেল আব্দুর রহিম (২০০১-৫ জানুয়ারি ২০০৫)
- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (৫ জানুয়ারি ২০০৫-)
- মেজর জেনারেল শেখ মো. মনিরুল ইসলাম (২০ এপ্রিল ২০০৮-১ মার্চ ২০০৯)
- মেজর জেনারেল এম মনজুর আহমেদ (১ মার্চ ২০০৯-২৫ মার্চ ২০১৪)
- মেজর জেনারেল মোঃ শামসুল হক (২৫ মার্চ ২০১৪-৩১ জুলাই ২০১৮)
- মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের (৩১ জুলাই ২০১৮-৩১ মার্চ ২০২৪)
- মেজর জেনারেল মোহাঃ হোসাইন আল মোরশেদ (২ এপ্রিল ২০২৪-১৩ আগস্ট ২০২৪)
- মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ (১৩ আগস্ট ২০২৪-বর্তমান)
উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক অভিযান
সম্পাদনাইয়েমেন
সম্পাদনা- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট সুফিউল আনাম ইয়েমেনের মুদিয়াহ প্রদেশ হতে আল-কায়েদা কর্তৃক অপহৃত হন।[৮] তিনি ইয়েমেনের অ্যাডেনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিভাগের প্রধান ফিল্ড সিকিউরিটি কোঅর্ডিনেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অপহরণ করার ৭ মাস পর একটি ভিডিও বার্তায় আল-কায়েদা তার মুক্তিপণ বাবদ ৩০ লাখ ডলার পরিশোধের দাবি জানায়।[৯][১০] এভাবে ১৮ মাস জিম্মিদশায় থাকার পর এনএসআই সদস্যরা কোনরূপ মুক্তিপণ প্রদান ছাড়াই সুফিউল আনামকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনেন।[১১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের বহুতলবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয় ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, ভাষণ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনা (১৭ জানুয়ারি ২০১৫)"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনএসআই এর প্রধান কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন… -The Prime Minister's Office-Government of the People's Republic of Bangladesh - প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Pratidin, Bangladesh। "গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী"।
- ↑ "এনএসআইয়ের নতুন ডিজি জোবায়ের - জাতীয় - The Daily Ittefaq"।
- ↑ "এনএসআইয়ের নতুন ডিজি জেনারেল জোবায়ের"।
- ↑ "প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়"। www.pmo.gov.bd।
- ↑ ক খ "৫৬ কোটি টাকায় এনএসআই-এর জন্য বহুতল ভবন"। ৪ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২২-০২-১৪)। "বাংলাদেশি সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুফিউল আনাম ইয়েমেনে অপহৃত"। The Daily Star Bangla। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-০৮।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২০২৩-০৮-১০)। "যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা কেবল সিনেমায় দেখা যায়: আল-কায়েদার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সুফিউল আনাম"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-০৮।
- ↑ মহানগর ডেস্ক (সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২)। "সুফিউলকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে বাধা রয়েছে জাতিসংঘের: পররাষ্ট্রসচিব"। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৩-০৮-০৯)। "ইয়েমেনে অপহৃত বাংলাদেশি সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুফিউল আনাম উদ্ধার"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-০৮।