জল নূপুর

টেলিভিশন ধারাবাহিক

জল নূপুর ভারতীয় বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসায় পূর্বে প্রচারিত একটি ধারাবাহিক নাটক। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে নাটকের পরিবর্তে এই নাটকের প্রচার শুরু হয়। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লাভলী মৈত্র, সৌপ্তিক চক্রবর্তী (পরবর্তীতে ফাহিম মির্জা) ও অপরাজিতা আঢ্য। ৯০১টি পর্ব প্রচারের পর ২০১৫ সালে ধারাবাহিকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এর পরিবর্তে পুণ্যিপুকুর ধারাবাহিকের সম্প্রচার শুরু হয়।

জল নূপুর
ধরনপ্রেমকমেডিধর্মী নাটক
নির্মাতাম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচার্স
লেখকগল্প
চিত্রনাট্য
সংলাপ
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়
পরিচালকশৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়
অরুণাভ অধিকারী
সৃজনশীল পরিচালকলীনা গঙ্গোপাধ্যায়
উপস্থাপকব্রাইট অ্যাডভার্টাইজিং প্রাইভেট লিমিটেড
অভিনয়েলাভলি মৈত্র
অপরাজিতা আঢ্য
উদ্বোধনী সঙ্গীতসমবেত কণ্ঠে ছন্দে বাজে.. জল নূপুর
মূল দেশ ভারত
মূল ভাষাবাংলা
মৌসুমের সংখ্যা
পর্বের সংখ্যা৯০১
নির্মাণ
নির্বাহী প্রযোজকসুমিত কুমার রায়,
সত্যজিত চক্রবর্তী (ম্যাজিক মোমেন্টস),
কস্তুবী ঘোষ (স্টার জলসা),
শ্রিয়া বসু (স্টার জলসা)
প্রযোজকশৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়
নির্মাণের স্থানউড়িষ্যা
পশ্চিমবঙ্গ
চিত্রগ্রাহকসিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
সম্পাদকসমীর
সৌমেন
ব্যাপ্তিকাল২২ মিনিট
নির্মাণ কোম্পানিম্যাজিক মোমেন্টস মোশন পিকচার্স
মুক্তি
মূল নেটওয়ার্কস্টার জলসা
ছবির ফরম্যাট৫৭৬আই এসডিটিভি
১০৮০আই এইচডিটিভি
মূল মুক্তির তারিখ২১ জানুয়ারি ২০১৩ (2013-01-21) –
৫ ডিসেম্বর ২০১৫ (2015-12-05)
ক্রমধারা
পূর্ববর্তীসংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
পরবর্তীপুণ্যিপুকুর
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

কাহিনীসংক্ষেপ

সম্পাদনা

জল নূপুর ধারাবাহিকের কাহিনী উড়িষ্যার এক সাধারণ মেয়ে কাজল এবং কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে অরিন বসুমল্লিক (নীল) কে ঘিরে আবর্তিত হয়। কাজল কোমল-হৃদয় ও শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী এবং ওড়িশি নৃত্যে পারদর্শী। নীলকে ধারাবাহিকে একজন আদর্শবান পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূলত, জল নূপুর হলো সাগরের প্রেক্ষাপটে নীল ও কাজলের প্রেমের কাহিনী, যেখানে সাগরের ঢেউ যেন তাদের মধ্যকার সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার পার্থক্যকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের আন্তরিক বন্ধনে আবদ্ধ করে।

নীল ছুটিতে সমুদ্রে গেলে কাজলের সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটে। ধীরে ধীরে নীলের মনে কাজলের জন্য এক ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে কাজল ও নীল দুর্ঘটনাবশত এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে হিন্দু বিয়ের কিছু রীতি পালন করে ফেলে। তাই জগন্নাথ মন্দিরের পূজারীরা কাজলকে দেবদাসী করার হুমকি দেয় এবং শেষ পর্যন্ত কাজল নীলকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়।

এরপর দুইজন একসাথে কলকাতায় এলে নীলের পরিবার কাজলকে মেনে নিতে পারে না। কাজলকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। নীলের বৌদি ভূমি কাজলকে বিভিন্নভাবে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।

তা সত্ত্বেও কাজল নীলের পরিবারের অনেকের সমর্থন লাভ করে - নীলের কাকা, যিনি বসুমল্লিক পরিবারের প্রধান পূর্ণেন্দুশেখরের তৃতীয় পুত্র, নীলের পিসি অপরাজিতা (পারী) এবং পারীর গানের শিক্ষক ও স্বামী অমর্ত্য। পারী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যে কিনা অসাধারণ গান গাইতে পারে।

ধীরে ধীরে কাজল বসুমল্লিক পরিবারের প্রায় সবার মন জয় করে নেয়। এরমধ্যে কাজল একটি ওড়িশি নৃত্যের প্রতিযোগিতায় ভূমিকে হারিয়ে পুরস্কার জেতে। পরবর্তীতে জানা যায়, কাজল আর ভূমি একে অপরের মাসতুতো বোন এবং কাজল বিখ্যাত ওড়িশি নৃত্যশিল্পী স্বর্গীয় সূর্য পাণিগ্রাহীর মেয়ে। কাজলের মা উর্বশী ও ভূমির মা সৃষ্টি মুখার্জী আপন বোন। ক্ষমতালোভী সৃষ্টি নিজেকে একজন ওড়িশি নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

কিন্তু ঘটনাক্রমে নীলের বান্ধবী আরশির জন্য নীল ও কাজলের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে আরশি নীলকে বিয়ে করে। কাজল বসুমল্লিক বাড়ি ত্যাগ করে এবং একজন বৃদ্ধ ওড়িশি শিল্পীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে জানা যায়, এই বৃদ্ধ ব্যক্তিই সূর্য পাণিগ্রাহী। সৃষ্টি নিজেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী সূর্যকে খুন করার চেষ্টা করে। এভাবেই কাজলের জন্মরহস্য উন্মোচিত হয়।

এবার কাজল তার বাবার কাছে নতুন উদ্যমে নাচ শেখা শুরু করে এবং জাতীয় পর্যায়ের নৃত্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়। এরমধ্যে নীল শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অমর্ত্যের সাথে পারীর বিয়ে হয় এবং অমর্ত্যের সাহায্য ও সমর্থনে পারী জাতীয় পর্যায়ে গান গেয়ে বিজয়ী হয়।

এই সময়ের মধ্যে কাজল, নীলের পরিবার ও পারী নানান দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। আরশী ও ভূমি মিলিত হয়ে নীলের পরিবার ও কাজলের ক্ষতি করার চেষ্টা করতে থাকে। পারীর বিয়ের পর অমর্ত্য অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই অমর্ত্যের বৌদি নন্দিনী পারীকে গান গেয়ে টাকা আনতে বলে। বস্তুত, নন্দিনী অমর্ত্যকে ভালোবাসত। তাই সে পারীকে মেনে নিতে পারে নি এবং একপর্যায়ে সে পারীকে চোর অপবাদ দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ভুল প্রমাণিত হয় এবং তার ছেলে জুডো নীলের বোনকে বিয়ে করে।

কাহিনীর এই পর্যায়ে আরেকটি চরিত্র মিনুর আবির্ভাব ঘটে। বসুমল্লিক পরিবার গ্রামে থাকাকালীন মিনুদের প্রতিবেশি ছিল। মিনু বসুমল্লিক পরিবারের বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ায় এবং যথাসাধ্য সাহায্য করে। পরবর্তীতে পূর্ণেন্দুশেখরের তৃতীয় ছেলে ছোটনের সাথে মিনুর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের জীবনেও প্রতিবন্ধকতা আসে। জানা যায়, মিনু একজন বিধবা এবং এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু ছোটন তার পাশে দাঁড়ায় এবং প্রতিটি ঘটনায় তার সঙ্গ দেয়। কখনো কখনো কাজলকেও তাদের ও বসুমল্লিক পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসতে দেখা যায়।

এত ঘটনার পরেও নীলের জন্য কাজলের ভালোবাসা কিংবা কাজলের জন্য নীলের ভালোবাসা, কোনোটিই শেষপর্যন্ত পরিণতি পায় না। কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়েই তাদের জীবন এগিয়ে চলে।

অভিনয়ে

সম্পাদনা

প্রধান চরিত্র

সম্পাদনা
  • লাভলী মৈত্র - শঙ্খমালা পাণিগ্রাহী/ কাজল বসুমল্লিক (কাজু), মুখ্য নারী চরিত্র, নীলের প্রথমা স্ত্রী
  • সৌপ্তিক চক্রবর্তী/ ফাহিম মির্জা - অরিন বসুমল্লিক (নীল), কাজলের স্বামী
  • অপরাজিতা আঢ্য - অপরাজিতা চৌধুরী (বসুমল্লিক) (পারী) - সমান্তরাল মুখ্য ও সহায়ক চরিত্র

অন্যান্য চরিত্র

সম্পাদনা
  • পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় - অমর্ত্য চৌধুরী, পারীর গানের শিক্ষক ও পরবর্তীতে স্বামী (সহায়ক চরিত্র)
  • সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় - কমলিনী বসুমল্লিক (সোনা ঠাম্মা)
  • সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় - কৃষ্ণেন্দু শেখর বসুমল্লিক, কমলিনীর স্বামী
  • অনসূয়া মজুমদার - রাধারাণী বসুমল্লিক, নীলের ঠাম্মা
  • সন্তু মুখোপাধ্যায় - পূর্ণেন্দু শেখর বসুমল্লিক, নীলের দাদু
  • বিদীপ্তা চক্রবর্তী - অঞ্জনা বসুমল্লিক, লালের মা ও ভূমির শাশুড়ি, নীলের জেঠিমা
  • দীগন্ত বাগচী - শুভময় বসুমল্লিক, নীলের বাবা, পূর্ণেন্দুশেখর-রাধারাণীর দ্বিতীয় সন্তান
  • রাজশ্রী ভৌমিক - শ্রীময়ী বসুমল্লিক, নীলের মা, শুভময়ের স্ত্রী এবং কাজলের শাশুড়ি
  • বিশ্বনাথ বসু - ছোটন, নীলের কাকা, পূর্ণেন্দু শেখর-রাধারাণীর ছোট ছেলে
  • সোনালী চৌধুরী[] - মৃণালিনী বসুমল্লিক (মিনু), ছোটনের স্ত্রী, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা
  • রনি চক্রবর্তী - লাল, নীলের জেঠতুতো ভাই, ভূমির স্বামী
  • স্নেহা চট্টোপাধ্যায় ভৌমিক - ভূমিসূতা বসুমল্লিক (পট্ট‌নায়ক) (ভূমি), লালের স্ত্রী, কাজলের মাস্তুতো বোন (খল চরিত্র)
  • প্রিয়দর্শিনী চট্টোপাধ্যায় - রুমি, লালের ছোট বোন
  • প্রিয়া পাল[] - মিমি চৌধুরী (বসুমল্লিক), নীলের ছোট বোন এবং জুডোর স্ত্রী
  • দেবোত্তম মজুমদার - বুধাদিত্য চৌধুরী (জুডো), অমর্ত্যের ভ্রাতুষ্পুত্র, মিমির স্বামী
  • ঋতা দত্ত চক্রবর্তী - নন্দিনী চৌধুরী, জুডোর মা, অমর্ত্যের বৌদি
  • নীল মুখোপাধ্যায় - সূর্য পাণিগ্রাহী, কাজলের বাবা
  • বাদশাহ মৈত্র - বিনায়ক পাটনায়েক, ভূমির বাবা, সৃষ্টির স্বামী, কাজলের মেসো এবং একজন বিজ্ঞানী
  • অনুশ্রী দাস - সৃষ্টি মুখার্জী, ভূমির মা, বিনায়কের স্ত্রী, ঊর্বশীর বোন ও কাজলের মাসি
  • সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায় - আরশী বসুমল্লিক, নীলের বান্ধবী ও দ্বিতীয়া স্ত্রী

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা
বছর পুরস্কার ক্যাটাগরি গ্রহীতা ফলাফল
২০১৪ টেলি সম্মান শ্রেষ্ঠ গল্প লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বিজয়ী
মুখ্য চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (জুরি) অপরাজিতা আঢ্য
সেরা খলচরিত্র (নারী) সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায়
বছর পুরস্কার ক্যাটাগরি গ্রহীতা ফলাফল
২০১৪ স্টার জলসা পরিবার অ্যাওয়ার্ড সেরা জুটি কাজল - নীল বিজয়ী
সেরা খলনায়িকা ভূমি
সেরা শ্বশুর পূর্ণেন্দু শেখর
সেরা গুরুজন সোনা ঠাম্মা
সেরা মজার সদস্য পারী
সেরা মিষ্টি সম্পর্ক কাজল - পারী
২০১৫ স্টার জলসা পরিবার অ্যাওয়ার্ড সেরা ননদ পারী বিজয়ী
সেরা দেওর ছোটন
সেরা বোন মিমি
সেরা গুরুজন সোনা ঠাম্মা
সেরা জামাই অমর্ত্য

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Sonalee goes for a makeover in Jol Nupur!"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসে ২০১৪ 
  2. "ইয়ংস্টার চয়েজ"। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

আরো পড়ুন

সম্পাদনা