জর্জ চ্যালেনর
জর্জ চ্যালেনর (ইংরেজি: George Challenor; জন্ম: ২৮ জুন, ১৮৮৮ - মৃত্যু: ৩০ জুলাই, ১৯৪৭) বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেল এলাকার ওয়াটারলুতে জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯২৮ সালে তিনটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | জর্জ চ্যালেনর | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | সেন্ট মাইকেল, বার্বাডোস | ২৮ জুন ১৮৮৮|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ৩০ জুলাই ১৯৪৭ সেন্ট মাইকেল, বার্বাডোস | (বয়স ৫৯)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি মিডিয়াম | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
সম্পর্ক | ইএল চ্যালেনর (ভ্রাতা) আর চ্যালেনর (ভ্রাতা) ভিসি চ্যালেনর (ভ্রাতা) | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ২) | ২৩ জুন ১৯২৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
শেষ টেস্ট | ১১ আগস্ট ১৯২৮ বনাম ইংল্যান্ড | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ঘরোয়া দলের তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বছর | দল | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯০৫ – ১৯৩০ | বার্বাডোস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯২৬ | এমসিসি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ |
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাতার বড় তিন ভাই - ইএল চ্যালেনর, আর চ্যালেনর ও ভিসি চ্যালেনর - প্রত্যেকেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, এডওয়ার্ড চ্যালেনর বার্বাডোস, ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স, নাটাল, লিচেস্টারশায়ার ও আর্মির পক্ষে খেলেছেন। ১৯০৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে এডওয়ার্ড ও জর্জ লর্ডসে একে-অপরের বিপক্ষে খেলেছেন। তখন এডওয়ার্ড মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে অংশগ্রহণ করেছেন। তার কাকা জর্জ হোয়াইটহলও বার্বাডোসের পক্ষে আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতার শুরুরদিকে খেলেছিলেন।
বার্বাডোসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। ১৯০৫-০৬ মৌসুমের আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকালীন তার বয়স ছিল ১৭। চার ইনিংস খেলে ৯৪ রান তুলেছিলেন। এ প্রতিযোগিতা শেষে দলটি ইংল্যান্ড সফরের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দলের অন্যতম সদস্য মনোনীত হন তিনি।
ইংল্যান্ড গমন
সম্পাদনা১৯০৬ সালে ইংল্যান্ড সফরের পূর্বে তাকে দলের শিশু, চমৎকার ও মার্জিত ব্যাটিংশৈলীর অধিকারীরূপে চিত্রিত করা হয়েছিল।[১] এছাড়াও সুপরিচিত ক্রিকেট পরিবারের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি সুন্দর ব্যাটিং গড়ের অধিকারী ছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি রক্ষণাত্মক খেলায়ও বেশ দক্ষতা দেখান। তরুণ হলেও তিনি সর্বাপেক্ষা উদীয়মান ব্যাটসম্যান ছিলেন।
১২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ২৮.৫০ গড়ে ৬৮৪ রান তুলে এ সফরে কিছুটা সফলতার মুখ দেখেন। ধীরলয়ে এ সফরে যাত্রা শুরু করেন। দশম খেলায় এমসিসি’র বিপক্ষে ৮০ মিনিট ব্যাটিং করে ৫৯ রানের কার্যকরী ইনিংসের মাধ্যমে প্রথম অর্ধ-শতক লাভ করেন। এরপর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯০, কম গুরুত্বপূর্ণ খেলায় নর্দাম্বারল্যান্ড ও ডারহামের বিপক্ষে ৯৭, লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৬৩, নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ১০৮ ও নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে ৬৭ রান তুলেন। সকল খেলায় অংশ নিয়ে তিনি ১,০১৭ রান তুলেন। তার এ সংগ্রহটি সফরকারী দলের তিনজনের একজন হিসেবে সহস্রাধিক রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল।
এরপর থেকে তিনি বার্বাডোস দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে খেলতে থাকেন। ১৯১০-১১ ও ১৯১২-১৩ মৌসুমে সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে সম্মিলিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পক্ষে খেলার জন্য সুযোগ পান। প্রথম মৌসুমটিতে সম্মিলিত দলের সদস্যরূপে ৭৫ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। দ্বিতীয় মৌসুমটিতে বার্বাডোসের সদস্য হিসেবে থেকে ১১৮ ও ১০৯ রানের ইনিংস খেললেও সম্মিলিত দলের পক্ষে তেমন সফলতা লাভে ব্যর্থ হন। ১৯১০ সাল থেকে কার্যকরী মিডিয়াম পেস বোলার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বার্বাডোসের পক্ষে আরও সাফল্য পেতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ১৯২৩ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তার বয়স ছিল ৩৪ যা ১৯০৬ সালের সফরের পর দ্বিগুণ বয়স হয়ে যায়। ব্যক্তিগতভাবে এ সফরে তিনি বেশ সফলতা পেয়েছেন। ছয়টি সেঞ্চুরিসহ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৫১.৮৬ গড়ে ১,৫৫৬ রান তুলেন। সকল খেলায় অংশ নিয়ে আটটি সেঞ্চুরি করেছিলেন জর্জ চ্যালেনর।
সফরের শুরুতেই সারের বিপক্ষে ৮৭ রান ও মিডলসেক্সের বিপক্ষে ৯৪ রান তুলেনন। এরপর ৬ষ্ঠ খেলায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। পরের খেলায় এসেক্সের বিপক্ষে আরও একটি সেঞ্চুরি হাঁকান। নর্দাম্বারল্যান্ড, নটিংহ্যামশায়ার, গ্লুচেস্টারশায়ার, সারে, গ্ল্যামারগন ও নরফোকের বিপক্ষেও বড় ধরনের ইনিংস খেলেছেন। আগস্টের শুরুতে সারের বিপক্ষে সুন্দর খেলা উপহার দেন তিনি। ফলশ্রুতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ১০ উইকেটে জয় পায়। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে শেষ উইকেট জুটিতে জর্জ ফ্রান্সিসের সাথে ১৩৬ রানের জুটি গড়ে ১৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন; অন্য প্রান্তে জর্জ ফ্রান্সিস ৪১ রানে আউট হন। দলের ৩০৬ রানের অর্ধেকেরও বেশি ছিল তার।[২] ১৯২৩ সালে প্যাটসি হেনড্রেন ও ফিল মিডের পর ইংরেজ মৌসুমে ব্যাটিং গড়ে তৃতীয় স্থান দখল করেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে বার্বাডোসের পক্ষে ১৯২৩-২৪ মৌসুমে ত্রিনিদাদের বিপক্ষে ১১৪ রান তুলেন। এরপর ১৯২৪-২৫ মৌসুমে জ্যামাইকার বিপক্ষে অপরাজিত ২৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। ১৪ বছর পর এমসিসি দল ১৯২৫-২৬ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসে। সফরকারী দলের বিপক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী দলের পক্ষে খেলার জন্য জর্জ চ্যালেনর সন্দেহাতীতভাবে মনোনীত হন।
১৯২৬ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডে অবস্থান করেন। সেখানে এমসিসি এবং জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় অংশ নেন। ১৯২৬ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[৩][৪]
টেস্ট ক্রিকেট
সম্পাদনাসমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ১৯০৬, ১৯২৩ ও ১৯২৮ - এ তিনবার ইংল্যান্ড সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বপ্রথম টেস্টে অংশগ্রহণের অনন্য সুযোগ লাভ করেন। ২৩ জুন, ১৯২৮ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জর্জ চ্যালেনরের টেস্ট অভিষেক ঘটে।
১৯২৭-২৮ মৌসুমে অনুশীলনীমূলক খেলাগুলোয় তেমন সফলতা না পেলেও ১৯২৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে খেলার জন্য মনোনীত হন। এ সফরে তিন টেস্টে অংশ নেন। কিন্তু ৪০ বছরে পৌঁছানোর ফলে পাঁচ বছর পূর্বেকার শক্তিমত্তাকে এবার হাজির করতে পারেননি। প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় অংশ নিয়ে ২৭ গড়ে ১,০৭৪ রান তুলেন। তিন টেস্টের সবগুলোই ইনিংস ব্যবধানে হারে তার দল। খেলাগুলোর ব্যাপ্তি ছিল মাত্র দুই দিন। প্রত্যেকটিতেই চ্যালেনর রান পেয়েছেন ও প্রথম ইনিংসের উদ্বোধনী জুটিগুলোয় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসগুলোয় এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি।
১৯২৯-৩০ মৌসুমে এমসিসি দল আরও একবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে আসে। এ সফরে প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলার আয়োজন করা হয়। বার্বাডোসের সদস্যরূপে সফরকারী দলের প্রথম খেলায় অংশ নেন। তিনি ৫১ রান তুলেন। পাশাপাশি প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি ঘটান।
মূল্যায়ন
সম্পাদনাপ্রথম সেরা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানের মর্যাদা লাভ করেন। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক তাকে স্মরণপূর্বক উল্লেখ করে যে, তার অনবদ্য ব্যাটিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট ইতিহাসের সূচনালগ্ন টেস্ট খেলার মানদণ্ডে উপনীত করেছিল।[৫] মৃত্যু পরবর্তীকালে জুন, ১৯৮৮ সালে বার্বাডিয়ান ৪৫ সেন্ট মূল্যমানের ডাকটিকেটে বার্বাডোস ক্রিকেট বাকলের পার্শ্বে তাকে চিত্র আকারে প্রদর্শন করা হয়।
বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেলের কলিমোর রক এলাকায় ৩০ জুলাই, ১৯৪৭ তারিখে ৫৯ বছর বয়সে জর্জ চ্যালেনরের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ The West Indian Tour of England 1906 by Gerry Wolstenholme, page 7
- ↑ "Scorecard: Surrey v West Indians"। www.cricketarchive.com। ১ আগস্ট ১৯২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ ACS (১৯৮২)। A Guide to First-Class Cricket Matches Played in the British Isles। Nottingham: ACS।
- ↑ "Marylebone Cricket Club Players"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ Wisden 1948 page 782
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে জর্জ চ্যালেনর (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে জর্জ চ্যালেনর (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)