গ্লিওব্লাস্টোমা

মস্তিষ্কের রোগ

গ্লিওব্লাস্টোমা (ইংরেজি: glioblastoma) যা গ্লিওব্লাস্টোমা মাল্টিফর্মি (ইংরেজি: glioblastoma multiforme) বা জিবিএম নামেও পরিচিত, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে সৃষ্ট সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ক্যান্সার[৫] গ্লিওব্লাস্টোমার প্রাথমিক লক্ষণগুলো সুনির্দিষ্ট নয়।[১] লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, বমি ভাব, এবং সেই সাথে স্ট্রোকের লক্ষণগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।[১] লক্ষণগুলো সাধারণত খুব দ্রুততার সাথে অধিকতর খারাপ অবস্থার দিকে অগ্রসর হয়,[২] যা এক পর্যায়ে জ্ঞান হারানোর দিকে মোড় নিতে পারে।[২]

গ্লিওব্লাস্টোমা
প্রতিশব্দগ্লিওব্লাস্টোমা মাল্টিফর্মি, গ্রেড ৪ অ্যাস্ট্রোসাইটোমা
১৫ বছর বয়সী একজন পুরুষের করোনাল এমআরআই যেখানে গ্লিওব্লাস্টোমার স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে
বিশেষত্বঅনকোলজি, নিউরোসার্জারি
লক্ষণপ্রাথমিকভাবে সুস্পষ্ট নয়, মাথা ব্যাথা, ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন, বমি ভাব, স্ট্রোকের লক্ষণ[১]
রোগের সূত্রপাতপ্রায় ৬৪ বছর বয়স[২][৩]
কারণসাধারণত অনির্দিষ্ট[২]
ঝুঁকির কারণজিনগত ব্যাধি (নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসলি-ফ্রাউমেনি সিনড্রোম), রেডিয়েশন থেরাপির পূর্ব ইতিহাস[২][৩]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিসিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান, টিস্যু বায়োপসি[১]
প্রতিরোধঅজানা[৩]
চিকিৎসাঅস্ত্রপোচার, কেমোথেরাপি, রেডয়েশন থেরাপি[৩]
ঔষধটেমোযলোমাইড, স্টেরয়েড[১][৪]
আরোগ্যসম্ভাবনানিয়মিত চিকিৎসায় জীবনীকাল প্রায় ১৪ মাস (৫ঃ-এরও কম ক্ষেত্রে ৫ বছরের বেশি জীবনীকাল)[২][৩]
সংঘটনের হারপ্রতি বছর ১,০০,০০০ জনে ৩ জন[৩]

বেশিরভাগ গ্লিওব্লাস্টোমার কারণ অস্পষ্ট।[২] সাধারণ নয় এমন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসলি-ফ্রাউমেনি সিনড্রোমের মতো জিনগত ব্যাধি, রোগীর রেডিয়েশন থেরাপির ইতিহাস।[২][৩] মস্তিষ্কের টিউমারের মধ্যে গ্লিওব্লাস্টোমার হার প্রায় ১৫%।[১] এটি মস্তিষ্কের সাধারণ কোষ থেকে বা ইতোমধ্যেই বিদ্যমান নিম্ন গ্রেডের অ্যাস্ট্রোসাইটোমা থেকেও তৈরি হতে পারে।[৬] রোগ নির্ণয় সাধারণত সিটি স্ক্যান, এমআরআই স্ক্যান, এবং টিস্যু বায়োপসির সমন্বয়ে করা হয়।[১]

এই রোগ প্রতিরোধের কোনও সুস্পষ্ট উপায় নেই।[৩] সাধারণত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে অস্ত্রোপচার যা মূলত কেমোথেরাপিরেডিয়েশন থেরাপির পরে করা হয়।[৩] কেমোথেরাপির অংশ হিসাবে প্রায়শই টেমোযলোমাইড ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৩][৪][৭] ফুলে যাওয়া ও লক্ষণ হ্রাসের জন্য উচ্চ মাত্রার স্টেরয়েড ব্যবহৃত হতে পারে।[১] ক্যান্সার কোষগুলো সম্পূর্ণ বা বেশিরভাগ অপসারণ-ই এই রোগের চিকিৎসার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি কী না তা পরিষ্কার নয়।[৮]

সর্বোচ্চ মাত্রার চিকিৎসা সত্ত্বেও সাধারণত এই ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তি ঘটে।[৩] রোগ নির্ণয়ের পরে বেঁচে থাকার সবচেয়ে সাধারণ সময়কাল ১২ থেকে ১৫ মাস। শতকরা ৩ থেকে ৫ ভাগ রোগী পাঁচ বছরেও বেশি সময় বেঁচে থাকেন।[২][৩] বিনা চিকিৎসায় এই রোগে বেঁচে থাকার সময়কাল সাধারণত তিন মাস।[৯] মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মধ্যে এটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি এবং মেনিনজিওমার পর মস্তিষ্কে সৃষ্ট টিউমার গুলোর মধ্যে এর অবস্থান দ্বিতীয়।[৫][১০] প্রতি বছরে প্রায় ১০০,০০০ জনে ৩ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়।[৩] প্রায় ক্ষেত্রে ৬৪ বছর বয়সের দিকে এই রোগের প্রকোপ দেখা যায় এবং মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়।[২][৩]

লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পাদনা

সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে খিঁচুনি, মাথাব্যথা, বমি ভাব এবং বমি হওয়া, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, ব্যক্তিত্ব, মেজাজ বা মনোসংযোগের পরিবর্তন এবং মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানসংক্রান্ত স্নায়বিক সমস্যা।[১১]

প্রকাশ পাওয়া লক্ষণগুলো সাধারণত টিউমারের অবস্থান ও প্যাথলজিকাল বিষেশত্বের ওপর নির্ভরশীল। গ্লিওব্লাস্টোমার ক্ষেত্রে টিউমার অত্যন্ত দ্রুততার সাথে লক্ষণের প্রকাশ ঘটায় তবে মাঝে মাঝে এটি অত্যন্ত বিশাল আকৃতি ধারণ না করার আগ পর্যন্ত কোনো লক্ষণ-ই প্রকাশ করে না যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অ্যাসিম্পটমিক কন্ডিশন নামে পরিচিত।

ঝুঁকির কারণ সম্পাদনা

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগের কারণ অস্পষ্ট।[২] প্রায় শতকরা পাঁচ ভাগের ক্ষেত্রে নিম্ন গ্রেডের অ্যাস্ট্রোসাইটোমা থেকে এর বিকাশ ঘটে।[১১]

জেনেটিক্স সম্পাদনা

অপ্রচলিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসলি-ফ্রাউমেনি সিনড্রোমের, টিউবেরাস স্ক্লেরোসিস, টারকোট সিনড্রোমের মতো জিনগত ব্যাধি[১১] রেডিওথেরাপির পূর্ব ইতিহাসও ঝুঁকির একটি কারণ।[২][৩] অজানা কারণে, পুরুষদের মধ্যে সাধারণত গ্লিওব্লাস্টোমার প্রকোপ বেশি দেখা যায়।[১২]

পরিবেশগত সম্পাদনা

ধূমপান, কীটনাশকের উপস্থিতি, পেট্রোলিয়াম পরিশোধন বা রবার উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টতার সাথে এই রোগের সংস্পর্শতা দেখা গেছে।[১১]

গ্লিওব্লাস্টোমার সাথে এসভি৪০,[১৩] হিউম্যান হার্পভাইরাস ৬,[১৪][১৫]সাইটোমেগালোভাইরাসের সংস্পর্শতাও পরিলক্ষিত হয়েছে।[১৬]

রোগতত্ত্ব সম্পাদনা

প্রতি বছর এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৩ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়,[৩] যদিও আঞ্চলিকভাবে এই মাত্রা আরও বেশি হতে পারে।[১৭] ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডে এই রোগের মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে।[১৮]

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্যান্সারের মধ্যে মেনিনজিওমার পর-ই গ্লিওব্লাস্টোমার অবস্থান।[১০] নারীদের চেয়ে পুরুষের মধ্যেই এই রোগ বেশি দেখা যায়।[২][৩] যদিও প্রায়শই এটি প্রায় ৬৪ বছর বয়সের দিকে শুরু হয়,[২][৩] ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগীদের মাঝে বিস্তৃতি অর্থে মস্তিষ্কের ক্যান্সার লিউকিমিয়ার পরে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো।[১৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Young, RM; Jamshidi, A (জুন ২০১৫)। "Current trends in the surgical management and treatment of adult glioblastoma.": 121। ডিওআই:10.3978/j.issn.2305-5839.2015.05.10পিএমআইডি 26207249পিএমসি 4481356  
  2. "Chapter 5.16"। World Cancer Report 2014। World Health Organization। ২০১৪। আইএসবিএন 978-9283204299 
  3. Gallego, O (আগস্ট ২০১৫)। "Nonsurgical treatment of recurrent glioblastoma.": e273–81। ডিওআই:10.3747/co.22.2436পিএমআইডি 26300678পিএমসি 4530825  
  4. Hart, MG; Garside, R (৩০ এপ্রিল ২০১৩)। "Temozolomide for high grade glioma.": CD007415। ডিওআই:10.1002/14651858.CD007415.pub2পিএমআইডি 23633341 
  5. Bleeker, Fonnet E.; Molenaar, Remco J. (২০১২)। "Recent advances in the molecular understanding of glioblastoma": 11–27। ডিওআই:10.1007/s11060-011-0793-0পিএমআইডি 22270850পিএমসি 3337398  
  6. "Chapter 3.8"। World Cancer Report 2014। World Health Organization। ২০১৪। আইএসবিএন 978-9283204299 
  7. Khosla, D (ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Concurrent therapy to enhance radiotherapeutic outcomes in glioblastoma.": 54। ডিওআই:10.3978/j.issn.2305-5839.2016.01.25পিএমআইডি 26904576পিএমসি 4740000  
  8. Van Meir, E. G.; Hadjipanayis, C. G. (২০১০)। "Exciting New Advances in Neuro-Oncology: The Avenue to a Cure for Malignant Glioma": 166–93। ডিওআই:10.3322/caac.20069পিএমআইডি 20445000পিএমসি 2888474  
  9. Schapira, Anthony H.V. (২০০৭)। Neurology and clinical neuroscience। Mosby Elsevier। পৃষ্ঠা 1336। আইএসবিএন 9780323070539। ২০১৭-০৭-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  10. McNeill, Katharine A. (২০১৬)। "Epidemiology of Brain Tumors": 981–98। ডিওআই:10.1016/j.ncl.2016.06.014পিএমআইডি 27720005 
  11. Alifieris, C; Trafalis, DT (আগস্ট ২০১৫)। "Glioblastoma multiforme: Pathogenesis and treatment.": 63–82। ডিওআই:10.1016/j.pharmthera.2015.05.005পিএমআইডি 25944528 
  12. Ohgaki, Hiroko; Kleihues, Paul (২০০৫)। "Population-Based Studies on Incidence, Survival Rates, and Genetic Alterations in Astrocytic and Oligodendroglial Gliomas": 479–89। ডিওআই:10.1093/jnen/64.6.479পিএমআইডি 15977639 
  13. Vilchez, Regis A; Kozinetz, Claudia A (২০০৩)। "Simian virus 40 in human cancers": 675–84। ডিওআই:10.1016/S0002-9343(03)00087-1পিএমআইডি 12798456 
  14. Crawford, JR; Santi, MR (২০০৯)। "Detection of human herpesvirus-6 variants in pediatric brain tumors: Association of viral antigen in low grade gliomas": 37–42। ডিওআই:10.1016/j.jcv.2009.05.011পিএমআইডি 19505845পিএমসি 2749001  
  15. Chi, J.; Gu, B. (২০১২)। "Human Herpesvirus 6 Latent Infection in Patients with Glioma": 1394–98। ডিওআই:10.1093/infdis/jis513পিএমআইডি 22962688 
  16. McFaline-Figueroa, JR; Wen, PY (ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "The Viral Connection to Glioblastoma.": 5। ডিওআই:10.1007/s11908-017-0563-zপিএমআইডি 28233187 
  17. Xu, H.; Chen, J. (২০১৭)। "Geographic Variations in the Incidence of Glioblastoma and Prognostic Factors Predictive of Overall Survival in US Adults from 2004–2013": 352। ডিওআই:10.3389/fnagi.2017.00352পিএমআইডি 29163134পিএমসি 5681990  
  18. Philips, Alasdair; Henshaw, Denis L. (২০১৮)। "Brain Tumours: Rise in Glioblastoma Multiforme Incidence in England 1995–2015 Suggests an Adverse Environmental or Lifestyle Factor": 7910754। ডিওআই:10.1155/2018/7910754পিএমআইডি 30034480পিএমসি 6035820  
  19. Siegel, David A. (২০১৮)। "Geographic Variation in Pediatric Cancer Incidence — United States, 2003–2014" (ইংরেজি ভাষায়): 707–713। আইএসএসএন 0149-2195ডিওআই:10.15585/mmwr.mm6725a2পিএমআইডি 29953430পিএমসি 6023185  

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

শ্রেণীবিন্যাস