গোপাল বা দ্বাদশ গোপাল (আইএএসটি: dvādaśa-gopāla , আক্ষ.'বারো জন গোপাল') ষোড়শ শতাব্দীর ভারতীয় ধর্মপ্রচারকদের একটি দল যারা সারা বাংলায় গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব বহন করে। তারা গৌড়ীয়-বৈষ্ণব সাধক নিত্যানন্দের (আনু. ১৪৭৪আনু. ১৫৪০) প্রধান শিষ্য ছিলেন। নিত্যানন্দকে কৃষ্ণের ভাই বলরামের অবতার মনে করা হয়।

গোপাল
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
সম্প্রদায়গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদ
দর্শনঅচিন্ত্যভেদাভেদ, ভক্তি যোগ
ধর্মীয় জীবন
গুরুনিত্যানন্দ

দ্বাদশ গোপাল সম্পাদনা

কবি কর্ণপুরের গৌর গণোদ্দেশ দীপিকা দ্বাদশ গোপালের তালিকা করেছেন: অভিরাম (বা রামদাস অভিরাম), উদ্ধারণ দত্ত, কমলাকর পিপলাই, কালাকৃষ্ণ-দাস, গৌরীদাস পণ্ডিত, পরমেশ্বরী দ্বাস, ধনঞ্জয় পণ্ডিত, পুরুষোত্তম দত্ত (বা নাগর-পুরুষোত্তম), পুরুষোত্তম- দাস, মহেশ-পণ্ডিত, কলাবেচা শ্রীধর এবং সুন্দরানন্দ-ঠাকুর। অন্যান্য সূত্রে, ত্রয়োদশতম হলায়ুধ-ঠাকুরের নাম যোগ করা হয়েছে।[১]

আরও সুপরিচিত গোপালগণ (উদাহরণস্বরূপ, অভিরাম, গৌরীদাস, কমলাকর পিপলা, পুরুষোত্তম-দাস এবং উদ্ধারণ দত্ত) "শক্তির স্বাধীন কেন্দ্র" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা শ্রীপাট নামে পরিচিত।[২] গোপালগণ ছিলেন গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের "প্রথম সংগঠিত দল [সিক] এবং নাম - ধর্ম [ঈশ্বরের (কৃষ্ণ) নামের ধর্মতত্ত্ব ] প্রচারের উদ্দেশ্যে সরাসরি শ্রী চৈতন্য কর্তৃক নিযুক্ত।"[৩] তাদের নিজস্ব এলাকায় চৈতন্য বৈষ্ণব মতবাদ প্রচার করা এবং দান সংগ্রহ করার অধিকার ছিল তাদের শ্রীপাটের জন্য, যা তাদের দ্বারা ধীরে ধীরে বৈষ্ণব ধর্মের কেন্দ্র বা পবিত্র স্থানে পরিণত হয়েছিল।[৪]

দ্বাদশ প্রধান গোপালের মধ্যে তিন জন ছিলেন নিম্ন (শূদ্র) বর্ণের।[২]

পৌরাণিক গোপাল এর সাথে সম্পর্ক সম্পাদনা

নিত্যানন্দের মতো ১৬ শতাব্দীর গোপালগণ "পৌরাণিক বৃন্দাবনে" কৃষ্ণের লীলা এর সাথে যুক্ত ছিলেন, [২] – বিশেষ করে গোপালকদের দলটি (গোপাল) "পূর্বে কৃষ্ণ এবং বলরামের কার্যকলাপে আকৃষ্ট হয়েছিল।" [৫] "তাদের ব্যক্তিগত ধার্মিকতা" এবং ভক্তিতে, বৃন্দাবন লীলা-তে গোপালদের "কৃষ্ণ ও বলরামের পুরুষ গোপাল সখাদের মতো" আচরণ প্রকাশ করা হয়। [৬]

'গৌর গণোদ্দেশ দীপিকা'-তে দ্বাদশ গোপালের আধ্যাত্মিক পরিচয় দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন: শ্রীদাম (অভিরাম), সুদাম (সুন্দরানন্দ), বসুদাম (ধনঞ্জয়), সুবল (গৌরীদাস), মহাবল (কমলাকর পিপলাই), সুবাহু (উদ্ধারণ দত্ত), মহাবাহু (মহেশ), স্তোককৃষ্ণ (পুরুষোত্তম-দাস), দাম (পুরুষোত্তম দত্ত), লবঙ্গ (কালাকৃষ্ণ-দাস), অর্জুন (পরমেশ্বরী দাস), মধুমঙ্গল (কলাবেচা শ্রীধর)। [৫]

উপ-গোপাল সম্পাদনা

নিত্যানন্দের দ্বাদশ বয়ঃকনিষ্ঠ সহযোগীদের একটি পৃথক দলকে বলা হয় উপ-গোপাল ( 'কনিষ্ঠ গোপাল')। উপ-গোপাল সম্ভবত ১৬ শতকের শেষের দিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছিল [৭] গোপালের আসনে নতুন দাবিদারদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায়। [৮]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dimock, Edward (১৯৯১)। The Place of the Hidden Moon: Erotic Mysticism in the Vaiṣṇava-sahajiyā Cult of Bengal। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 94–95। আইএসবিএন 9780226152370। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  2. Sen, Amiya (২০১৯)। Chaitanya: A Life and Legacy। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 102। আইএসবিএন 978-0-19-909777-7। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  3. Tripurari, Bhaktivedanta। "Nityananda Rama"Harmonist। ১৮ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  4. Broo, Måns (২০০৩)। As Good as God: The Guru in Gauḍīya Vaiṣṇavism। Åbo Akademi University Press। পৃষ্ঠা 56। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  5. Stewart, Tony (২০১০)। The Final Word: The Caitanya Caritamrita and the Grammar of Religious Tradition। 3.1: Oxford University Press। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  6. O'Connell, Joseph (১৯৯৯)। Organizational and Institutional Aspects of Indian Religious Movements। New Delhi: Manohar। পৃষ্ঠা 224। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  7. Chakravarti, Ramakanta (১৯৮৫)। Vaiṣṇavism in Bengal 1486–1900। Sanskrit Pustak Bhandar। পৃষ্ঠা 161। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২ 
  8. Saha, Sanghamitra (১৯৯৮)। A Handbook of West Bengal vol. 1। International School of Dravidian Linguistics। পৃষ্ঠা 195। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০২২