গিয়াসউদ্দীন মিয়া
গিয়াসউদ্দীন মিয়া (জন্ম: ১৯৬০) একজন বাংলাদেশী কৃষিবিদ। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) কৃষিবনায়ন ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য। উপাচার্য পদে নিয়োগ লাভের পূর্বে তিনি বশেমুরকৃবির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।[১]
অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দীন মিয়া | |
---|---|
ষষ্ঠ উপাচার্য | |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় | |
কাজের মেয়াদ ১১ জুন ২০১৭ – ১৯ আগস্ট ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | মো. মাহবুবর রহমান |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯৬০ সাগরদী, নরসিংদী, বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল লোজন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, ফিলিপাইন কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এগ্রো এনভাইরনম্যান্টাল স্টাডিজ, জাপান লাভাল বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য |
পেশা | কৃষিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসক |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
সম্পাদনাগিয়াসউদ্দীন মিয়া ১৯৬০ সালে নরসিংদীর সদর উপজেলার সাগরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছায়েদ আলী ও মাতার নাম আমেনা বেগম।[২] তিনি সাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর মাধবদী সতী প্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে মাধ্যমিক এবং নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে বিএসসি (কৃষি সম্মান) এবং ১৯৮৪ সালে কৃষিতত্ত্বে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ফিলিপাইনের সেন্ট্রাল লোজন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১৯৯৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
গিয়াসউদ্দীন জাপানের কিউশু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইবারাকির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এগ্রো এনভাইরনম্যান্টাল স্টাডিজে পোষ্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন। পরবর্তীকালে তিনি কমনওয়েলথ স্কলার হিসেবে কানাডার লাভাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনাগিয়াসউদ্দীন মিয়া ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন চাকরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকেও। এরপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৃষিতত্ত্ববিদ হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় নয় বছর।[৪]
১৯৯৫ সালে গিয়াসউদ্দীন তৎকালীন ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (ইপসা)-তে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৬ সালে কৃষিবনায়ন ও পরিবেশ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একাধারে বারো বছর বিভাগটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সালে তিনি একই বিভাগের অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। মিয়া বাংলাদেশে কৃষিবনায়ন ও পরিবেশ শিক্ষা এবং গবেষণায় একজন পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত হন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপনার পাশাপাশি গিয়াসউদ্দীন বিভিন্ন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৮ সালে ইপসা-কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রাজুয়েট স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট ও পরিকল্পনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি মাধবদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির মানোন্নয়নে অবদান রাখেন।[৫]
গিয়াসউদ্দীন মিয়া ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের ১১ জুন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ষষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।[৬] ২০২১ সালে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে বশেমুরকৃবির উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।[৭] তিনি ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন।[৮]
বশেমুরকৃবির উপাচার্য হিসেবে অর্জন
সম্পাদনাদায়িত্ব লাভের পর গিয়াসউদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণার মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এর ফলে ২০২১ সালে স্কোপাস ও সিমাগো ইনডেক্স জরিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থান এই তিন সূচকে প্রথম স্থান লাভ করে এবং একই ইনডেক্স জরিপে বশেমুরকৃবি ২০১৯ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে যথাক্রমে চতুর্থ ও তৃতীয় স্থান লাভ করে।[২]
গবেষণাকর্ম ও প্রকাশনা
সম্পাদনাগিয়াসউদ্দীন একাধিক বই ও শতাধিক গবেষণা নিবন্ধের রচয়িতা। তার তত্ত্বাবধানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী পিএইচডি ও এমএস ডিগ্রি লাভ করেন। গিয়াসউদ্দীন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে অসংখ্য গবেষণাকর্ম ও প্রকল্প সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন। তিনি ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, চীন, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি দেশে-বিদেশে বহু সম্মেলনে যোগদান ও গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। তিনি একাধিক গবেষণা জার্নালের সম্পাদনা পরিষদের সদস্য।[৪][৯]
সদস্যপদ
সম্পাদনামিয়া অন্তত পঁচিশটি দেশি-বিদেশি পেশাজীবী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।[৫]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাগিয়াসউদ্দীন মিয়া কৃষি ও পরিবেশ শিক্ষাবিদ হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষক সোসাইটি কর্তৃক অমর একুশে স্মৃতি পদক-২০১৬ লাভ করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মেয়াদ বাড়ল"। যায়যায়দিন। ২৪ মে ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ ক খ "দ্বিতীয়বারের মতো বশেমুরকৃবি ভিসি হলেন নরসিংদীর কৃতি সন্তান প্রফেসর ড. মো. গিয়াস উদ্দীন মিয়া"। নিউজ নরসিংদী টিভি। ১১ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ "বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি প্রফেসর গিয়াসউদ্দীন"। যুগান্তর। ১১ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ ক খ গ "Vice Chancellor - BSMRAU" [উপাচার্য - বশেমুরকৃবি]। বশেমুরকৃবি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ ক খ "Professor Dr. Md. Giashuddin Miah recruited Vice-Chancellor of BSMRAU" [অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া বশেমুরকৃবির উপাচার্য নিযুক্ত]। বশেমুরকৃবি। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য"। এনটিভি অনলাইন। ১১ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ "দ্বিতীয় মেয়াদে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন গিয়াসউদ্দীন মিয়া"। সমকাল। ২৫ মে ২০২১। ১১ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।
- ↑ "বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক দায়িত্বে মোস্তাফিজুর রহমান"। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Dr. Md. Giashuddin Miah" [অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া]। বশেমুরকৃবি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০২১।