গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ
গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ (ফার্সি: غیاث الدین اعظم شاہ; শাসনকাল: ১৩৯০–১৪১১) ছিলেন ইলিয়াস শাহী রাজবংশের তৃতীয় সুলতান।[১] তিনি তৎকালীন বাংলার সুপরিচিত সুলতানদের অন্যতম ছিলেন। তার প্রকৃত নাম আজম শাহ। সিংহাসন আরোহণের পর তিনি গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ নাম ধারণ করেন।
গিয়াসউদ্দীন আজম শাহ غیاث الدین اعظم شاہ | |
---|---|
সুলতান-ই-বাঙ্গালা | |
বাংলার সুলতান | |
রাজত্ব | ১৩৯০–১৪১১ |
পূর্বসূরি | সিকন্দর শাহ |
উত্তরসূরি | সাইফউদ্দিন হামজা শাহ |
জন্ম | অজানা |
মৃত্যু | আনু. নভেম্বর ১৪১১ সোনারগাঁও, শাহী বাংলা |
সমাধি | |
রাজবংশ | ইলিয়াস শাহী রাজবংশ |
ধর্ম | ইসলাম |
বৈদেশিক সম্পর্ক
সম্পাদনাতিনি যুদ্ধর চেয়ে মিত্রতা ও কূটনীতির মাধ্যমে রাজ্যকে সমৃদ্ধ করতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। তিনি চীনের মিং সাম্রাজ্যের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, পারস্যের শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদদের সাথে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন এবং আসামকে জয় করেছিলেন।[২] শাসনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি কামরূপের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অঞ্চল জয়ের চেয়ে শাসন সুসংহত করার প্রতি তার মনোনিবেশ বেশি ছিল। জৌনপুরের খাজা জাহানের নিকট তিনি দূত ও উপহার প্রেরণ করেন।[৩] সমকালীন চৈনিক সম্রাট ইয়ং লির সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ১৪০৫, ১৪০৮ ও ১৪০৯ সালে তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন।[৩] ইয়ং লিও তার কাছে দূত ও উপহার পাঠান। গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ মক্কা ও মদিনায়ও দূত প্রেরণ করেন।[৪] এই দুই স্থানে গিয়াসিয়া মাদ্রাসা নামক দুটি মাদ্রাসা নির্মাণে তিনি আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন।[৩] তার শাসনামলে জমিদার রাজা গণেশ নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন।[৩]
সাহিত্যে আগ্রহ
সম্পাদনাগিয়াসউদ্দিন আজম শাহ পণ্ডিত ও কবিদের সমাদর করতেন। পারস্যের কবি হাফিজের সাথে তার পত্রবিনিময় হত। বাঙালি মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর তার বিখ্যাত রচনা ইউসুফ জুলেখা এ সময়ে সম্পন্ন করেন। এসময় কৃত্তিবাসের রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করা হয়।[৩]
কবি হাফিজকে বাংলায় নিমন্ত্রন করার জবাবে তিনি সুলতানকে একটি গজল রচনা করে পাঠান।
- "শক্কর শিকন শওন্দ হমাঃ তূতিয়ানে হিন্দ।
- যী কন্দে ফারসী কেঃ ব-বঙ্গালাঃ মী রওদ॥
- হাফিয যে শওকে মজ্লিসে সুলতানে গিয়াস্দীন।
- গাফিল ম-শও কেঃ কারে তূ আয নালাঃ মী রওদ॥"
- হিন্দ এর তোতা হবে মিষ্টি-মুখো সকল-ই,
- ফারসীর মিছরী যবে বাঙ্গালায় চলিছে।
- হে হাফিয! গিয়াসুদ্দীন শাহের সভার বাসনা
- ছেড়ো না, কাজ তোমারি কাঁদা-কাটায় চলিছে।[৫]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৪১১ সালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে তার মাজার রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সুলতানি আমলের অন্যতম দৃশ্যমান নিদর্শন, যা সোনারগাঁও উপজেলার শাহচিলাপুরে অবস্থিত।[৬]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sen, Sailendra. (২০১৩)। Textbook of medieval indian history.। Primus Books। আইএসবিএন 93-80607-34-2। ওসিএলসি 822894456।
- ↑ Ahmed, Salahuddin (২০০৪)। Bangladesh: Past and Present (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। আইএসবিএন 978-81-7648-469-5।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Ghiyasuddin Azam Shah in Banglapedia"। ২৫ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪।
- ↑ Land of Two Rivers: A History of Bengal from the Mahabharata to Mujib - Nitish Sengupta - Google Books
- ↑ "আজম শাহ"। onushilon.org। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৫।
- ↑ "গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ্ এর মাজার, নারায়ণগঞ্জ জেলা, বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন"। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- অতুলচন্দ্র রায়, প্রনবকুমার টট্টোপাধ্যায়। ভারতের ইতিহাস।
- মজুমদার, রমেশচন্দ্র। বাংলাদেশের ইতিহাস।
পূর্বসূরী সিকান্দার শাহ |
বাংলার সুলতান ১৩৯০–১৪১০ |
উত্তরসূরী সাইফউদ্দিন হামজা শাহ |