কেপলার-১১বি
কেপলার-১১বি একটি বহির্গ্রহ যা কেপলার মহাকাশযানের দ্বারা আবিষ্কৃত হয় এবং যার অবস্থান কেপলার ১১ নক্ষত্রের কাছাকাছি , যা ছিল পৃথিবী সাদৃশ গ্রহ খোঁজার উদ্দেশ্যে নাসা কর্তৃক পরিচালিত একটি অভিযান। কেপলার-১১বি পৃথিবীর চেয়ে চার গুন বেশি ভর বিশিষ্ট ও দ্বিগুণ বড়।, কিন্তু এর নিম্ন ঘনত্বএর কারণে, এর গঠন পৃথিবীর মতো নয়। কেপলার-১১বি, কেপলার-১১ সিস্টেম এর ছয়টি গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত, এবং এর কক্ষপথ এর অন্য গ্রহগুলোর তুলনায় সবচেয়ে নিকটে। কেপলার-১১বি আরো ছয়টি গ্রহ সহ, প্রথম আবিষ্কৃত গ্রহমণ্ডল যার তিনের অধিক পরিক্রমণকারী গ্রহ রয়েছে—আবিষ্কৃত সবচেয়ে ঘন সন্নিবেশিত মন্ডল। গ্রহমণ্ডলটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে সমতল মন্ডল[৪] আবিষ্কার পরবর্তী গবেষণার পর,গ্রহটি আরো পাঁচটি সিস্টার গ্রহ সহ ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১ সালে আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। এটি আমাদের সৌরজগৎ থেকে Cygnus constellation বা বকমন্ডল নক্ষত্রমন্ডলীতে অবস্থিত।[৩]
বহির্গ্রহ | বহির্গ্রহসমূহের তালিকা | |
---|---|---|
মাতৃ তারা | ||
তারা | কেপলার-১১ (KOI-157) | |
তারামণ্ডল | সিগনাস | |
বিষুবাংশ | (&আলফা;) | ১৯ঘ ৪৮মি ২৭.৬২সে |
বিষুবলম্ব | (&ডেল্টা;) | +৪১° ৫৪′ ৩২.৯″ |
আপাত মান | (mV) | ১৪.২[১] |
ভর | (m) | ০.৯৫ (± ০.১)[২] M☉ |
ব্যাসার্ধ | (r) | ১.১ (± ০.১)[২] R☉ |
তাপমাত্রা | (T) | ৫৬৮০ (± ১০০)[২] K |
ধাতবতা | [Fe/H] | ০ (± ০.১)[২] |
বয়স | ৮ (± ২)[২] Gyr | |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | ||
ভর | (m) | ৪.৩+২.২ −২.০[৩] M🜨 |
ব্যাসার্ধ | (r) | ১.৯৭ (±০.১৯)[৩] R🜨 |
ঘনত্ব | (রৌ) | ৩.১+২.১ −১.৫[৩] গ্রা সেমি−৩ |
তাপমাত্রা | (T) | ৯০০[১] |
কক্ষপথের রাশি | ||
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ | (a) | .০৯১[১] AU |
কক্ষীয় পর্যায়কাল | (P) | ১০.৩০৩৭৫[১] d |
নতি | (i) | ৮৮.৫[১]° |
আবিষ্কারের তথ্য | ||
আবিষ্কারের তারিখ | ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১[৪] | |
আবিষ্কারক(সমূহ) | কেপলার টিম | |
আবিষ্কারের পদ্ধতি | অতিক্রমণ (কেপলার মিশন)[৪] | |
অন্য সনাক্তকরণ পদ্ধতি | Transit timing variations | |
আবিষ্কারের অবস্থা | সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত |
নামকরণ ও আবিষ্কার সম্পাদনা
কেপলার-১১বি নামের দুটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশটি তার পরিক্রমনকারী নক্ষত্র কেপলার-১১ থেকে নেয়া হয়েছে। কেপলার-১১বি আর অন্য সব গ্রহ সমূহের সাথে একত্রে আবিষ্কার হওয়ার কারণে, কেপলার-১১বি এর পদবি বি দেয়া হয়েছে কারণ আবিষ্কৃত ছয়টি গ্রহের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে অন্তর্বর্তী। মাতৃ তারকা কেপলার-১১ এর নাম কেপলার মিশন থেকে যা এটিকে সম্ভাব্য পরিক্রমনকারী গ্রহের মাতৃ নক্ষত্র হিসেবে কেওআই-১৫৭ নামে শনাক্ত করেছিল।[২] কেপলার স্যাটেলাইটটি একটি একটি নাসা - পরিচালিত স্পেস টেলিস্কোপ যার লক্ষ্য হচ্ছে সেই সব গ্রহকে আবিষ্কার করা যারা তাদের মাতৃ নক্ষত্রকে পরিক্রমন করার সময় অথবা অতিক্রমের সময় পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়। এই অতিক্রমণ মাতৃ নক্ষত্র এর উজ্জ্বলতার তারতম্যের সৃষ্টি করে; এই তারতম্যই গ্রহের উপস্থিতি নির্দেশ করে, অতঃপর যা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ দ্বারা যাচাই করা হয়।[৪]
ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, অ্যারিজোনা, এবং টেক্সাসের স্থল-ভিত্তিক টেলিস্কোপ গুলো, পাশাপাশি স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ, এই পরবর্তী পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করেছে ও কেপলার-১১বি এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। একটি কক্ষপথ অনুরণন শনাক্তকরণ করার মাধ্যমে কেপলার-১১বি ও কেপলার-১১সি এর অস্তিত্ব নির্দিষ্টভাবে নিশ্চিত করেছে।[৩] কেপলার-১১বি এর আবিষ্কারের ঘোষণা ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১ তারিখে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়। এটাই প্রথম আবিষ্কৃত গ্রহমণ্ডল যার তিনের অধিক পরিক্রমণকারী গ্রহ রয়েছে, এবং এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ঘন সন্নিবেশিত ও সমতল মন্ডল।[৪] কেপলার-১১ হচ্ছে আবিষ্কৃত দ্বিতীয় গ্রহমণ্ডল যার একাধিক পরিক্রমকারী গ্রহ রয়েছে , এবং কেপলার -৯ নক্ষত্রকেও টপকে গেছে যার কক্ষপথে নিশ্চিত ভাবে তিনটি গ্রহ (দুটি পরিক্রমনকারী) রয়েছে।[৩]
মাতৃ নক্ষত্র সম্পাদনা
কেপলার-১১ একটি সূর্য সদৃশ নক্ষত্র যা সিগনাস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত,যার ভর ০.৯৫ (± ০.১) Msun এবং এর পরিধি ১.১ (± ০.১) Rsun. অন্য কথায়, কেপলার-১১ সূর্যের তুলনায় প্রায় ৫% কম ভর বিশিষ্ট এবং ১০% বেশি বিস্তৃত।[২] নক্ষত্রটির ধাতবতা হচ্ছে ০ (± ০.১), যার অর্থ তারকাটিতে আয়রন (এবং, সম্ভবতঃ, অন্যান্য উপাদানের) এর মাত্রা প্রায় সূর্যের মতই, ধাতবতা গ্রহ মণ্ডলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং উচ্চ ধাতবতা সম্পন্ন নক্ষত্রের কাছাকাছি গ্রহ থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৫] এর কারণ সম্ভবত, উচ্চ ধাতবতা এই গ্যাসীয় দৈত্যকে দ্রুত গ্রহ নির্মাণ এর জন্য প্রচুর উপাদান প্রদান করে থাকে।অথবা উচ্চ ধাতবতা গ্রহদের কে মাতৃ নক্ষত্র হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, গ্রহকে শনাক্ত করা সহজ হয়। [৬] নক্ষত্রটির কক্ষপথে আবিষ্কৃত আরও পাঁচটি গ্রহ রয়েছে: কেপলার-১১সি, কেপলার-১১ডি, কেপলার-১১ই, কেপলার-১১এফ, এবং কেপলার-১১জি[২]। প্রথম পাঁচটি গ্রহগুলোর কক্ষপথ খুব সহজেই বুধ গ্রহের কক্ষপথে এটে যাবে, শুধু জি গ্রহটাই এর বাইরে থাকবে।[৭]
নক্ষত্রটির আপাত মান ১৪.২। এটা খুব অস্পষ্ট যা খালি চোখে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নয়।[১]
বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা
কেপলার-১১বি এর আনুমানিক ভর ৪.৩ পৃথিবীর ভর (Earth masses) এবং ১.৯৭ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ (Earth radii), যা তাকে পৃথিবীর চেয়ে চারগুন ভর বিশিষ্ট ও দ্বিগুণ প্রশস্ততা দিয়েছে। কেপলার-১১বি ব্যাসার্ধ সম্পর্কে যতটুকু নিশ্চিত ভাবে জানা যায় (ব্যাসার্ধ আনুমানিক ১.৭৮ থেকে ২.১৬ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ এর মধ্যে ), ভর সম্পর্কে যতটুকু নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না, ভর আনুমানিক ২.৩ থেকে ৬.৫ পৃথিবীর ভর এর মধ্যে। এই ভর কেপলার-১১সি এর পরিক্রমন সময় এর পার্থক্য ব্যবহার করে নির্ধারিত হয়, এবং এটি তথ্যের মান এর উপর নির্ভরশীল।[৩] কেপলার-১১বি তার মাতৃ নক্ষত্র কেপলার-১১ এর সবচেয়ে নিকটস্থ গ্রহ। আনুমানিক ঘনত্ব ৩.১ গ্রাম/সেমি৩ কারণে, কেপলার-১১বি চাঁদের সাথে তুলনীয়, এবং সৌর জগতের গ্যাস দৈত্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঘন কিন্তু শিলাময় গ্রহের তুলনায় কম ঘনত্বের। এর মাঝারি মানের ঘনত্বের কারণে এর গঠন পৃথিবীর মতো নয়,[৮] এখনো কম সংখ্যক উপাদানই হিলিয়াম এর চেয়ে ভারি নয়। [৩] গ্রহের কার্যকর তাপমাত্রা ৯০০ ক্যালভিন, এবং এই কারণে কেপলার -১১ সিস্টেমে আবিষ্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত। কেপলার-১১বি, .০৯১ অস্ট্র দূরত্বে থেকে তার মাতৃ নক্ষত্রকে প্রতি ১০.৩০৩৭৫ দিনে পরিক্রমন করে। এর তুলনায় বুধ গ্রহ, .৩৮৭ অস্ট্র দূরত্ব থেকে প্রতি ৮৭.৯৭ দিনে সূর্যকে পরিক্রমন করে। [৯] কেপলার-১১বি এর নতি ৮৮.৫° এর মানে এটা কক্ষপথ সমতল থেকে সামান্য বিচ্যুত, কিন্তু এটা কেপলার-১১বি এর সাথে আবিষ্কৃত অন্য পাঁচটি গ্রহ থেকে বেশি।[১]
কেপলার-১১বি এবং কেপলার-১১সি কক্ষপথে কেপলার-১১ এর সাথে একটি শক্তিশালী কক্ষপথের অনুরণন রয়েছে, গ্রহগুলো মহাকর্ষীয় টানে কক্ষপথে স্থির থাকার সরল অনুপাত রয়েছে। কেপলার-১১বি এবং কেপলার-১১সি এর মধ্যে অনুরণন অনুপাত ৫:৪।[৩]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "Kepler Discoveries"। Ames Research Center। NASA। ২০১১। ২৭ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Jean Schneider (২০১১)। "Notes for star Kepler-11"। Extrasolar Planets Encyclopaedia। ১৬ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১১।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ Lissauer, Jack L.; ও অন্যান্য (২০১১-০২-০২)। "A closely packed system of low-mass, low-density planets transiting Kepler-11" (পিডিএফ)। Nature। 470 (7332): 53। arXiv:1102.0291 । ডিওআই:10.1038/nature09760। বিবকোড:2011Natur.470...53L। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-২৫।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Michael Mewinney and Rachel Hoover (২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "NASA's Kepler Spacecraft Discovers Extraordinary New Planetary System"। Ames Research Center। NASA। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১১।
- ↑ Fischer, Debra A.; Valenti,Jeff (২০০৫-০৪-০১)। "The planet-metallicity correlation"। The Astrophysical Journal। 622 (2): 1102। ডিওআই:10.1086/428383। বিবকোড:2005ApJ...622.1102F। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-২৭।
- ↑ Seager, Sara (২০১০)। "Statistical Distribution of Exoplanets by Andrew Cumming"। Exoplanets। University of Arizona Press। পৃষ্ঠা 191–214। আইএসবিএন 978-0-8165-2945-2।
- ↑ Denise Chow (২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "Astronomers Find 6-Pack of Planets in Alien Solar System"। Space.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১১।
- ↑ Alan Boyle (২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "Planetary six-pack poses a puzzle"। Cosmic Log। MSNBC। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১১।
- ↑ David Williams (২০০১)। "Mercury Fact Sheet"। Goddard Space Flight Center। NASA। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১১।
বহিস্থঃ সংযোগ সম্পাদনা
- Denise Chow (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "A tourist's guide to the new Kepler-11 planet system"। Space section। MSNBC। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১১।
- Henry Bortman (১২ অক্টোবর ২০০৪)। "Extrasolar Planets: A Matter of Metallicity"। Space Daily। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১১।