রোনাল্ড হেনরি নিক্সন (১০ মে ১৮৯৮ –১৪ নভেম্বর ১৯৬৫) (পরবর্তীকালে শ্রীকৃষ্ণপ্রেম) ছিলেন একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় হিন্দু শিক্ষাগুরু। তিনি বিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতে আগমন করেন। তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী যশোদা মাঈ (১৮৮২-১৯৪৪) এর সাথে তিনি ভারতের আলমোড়ার কাছে মির্টোলায় একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন বৈষ্ণব হিন্দুধর্ম অনুসরণকারী প্রথম ইউরোপীয়ান। অনেক ভারতীয় শিষ্যদের সাথে তাকে অত্যন্ত সম্মানিত করা হয়েছিল।

শ্রী

কৃষ্ণ প্রেম
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
রোনাল্ড হেনরি নিক্সন

(১৮৯৮-০৫-১০)১০ মে ১৮৯৮
চেল্টেনহ্যাম, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৪ নভেম্বর ১৯৬৫(1965-11-14) (বয়স ৬৭)
মীর্টোলা, আলমোড়া, ভারত
সমাধিস্থলকৃষ্ণপ্রেমের সমাধি মন্দির, মির্টোলা
২৯°৩৮′৩৩″ উত্তর ৭৯°৪৯′৩৯″ পূর্ব / ২৯.৬৪২৩৭° উত্তর ৭৯.৮২৭৫১° পূর্ব / 29.64237; 79.82751
ধর্মহিন্দুধর্ম
জাতীয়তাব্রিটিশ, ভারতীয়
আখ্যাবৈষ্ণবধর্ম
সম্প্রদায়গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম
উল্লেখযোগ্য কাজThe Search for Truth, Initiation into Yoga, The Yoga of the Bhagavat Gita, The Yoga of the Kathopanishad
যেখানের শিক্ষার্থীকিংস কলেজ, কেমব্রিজ
মন্দিরউত্তর বৃন্দাবন আশ্রম, মীর্টোলা
ধর্মীয় জীবন
গুরুশ্রী যশোদা মাঈ, শ্রীবালকৃষ্ণ গোস্বামী
ওয়েবসাইটwww.mirtolareflections.com

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

রোনাল্ড নিক্‌সন ১৮৯৮ সালে ইংল্যান্ডের চেল্টেনহ্যামে জন্মগ্রহণ করেন [১] এবং টনটনে শিক্ষা গ্রহণ করেন । [২] তার মা ছিলেন একজন খ্রিস্টান বিজ্ঞানী, বাবা ছিলেন কাঁচ ও চীনের ব্যবসায়ী। [২]:২১৮

আঠারো বছর বয়সে, নিক্সন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একজন ব্রিটিশ পাইলট যোদ্ধা হয়েছিলেন।[২][৩] তিনি ১০ই মে, ১৯১৭ তারিখে অস্থায়ী দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হিসাবে নিযুক্ত হন, [৪] ১২ জুন তার পদ প্রাপ্ত হন, [৫] এবং ১৫ই জুন রয়্যাল ফ্লাইং কর্পসে ফ্লাইং অফিসার নিযুক্ত হন । [৬] এক সময় তিনি মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা তিনি অলৌকিক বলে বিশ্বাস করেছিলেন, একটি " অতীন্দ্রিয় শক্তি" তাকে বেশ কয়েকটি শত্রু বিমান থেকে রক্ষা করেছিল। [৭] যুদ্ধের সময় মানুষের মৃত্যু এবং ধ্বংসের অভিজ্ঞতা পেয়ে জীবনকে তিনি "অনর্থক অর্থহীন অনুভূতি" বলে মনে করতে থাকেন । [২]:২১৮ তিনি ১১ই জানুয়ারী ১৯১৯ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের বেকার তালিকায় স্থানান্তরিত হন [৮][৯] এবং সেই বছরের ৩ ডিসেম্বর তার অস্থায়ী সেনা কমিশন ত্যাগ করেন।

যুদ্ধের পর নিক্সন কেমব্রিজের কিংস কলেজে ভর্তি হন ,সেখানে তিনি ইংরেজি সাহিত্য অধ্যয়ন করেন। [২] এই সময়কালে নিক্সন দর্শনও অধ্যয়ন করেন। থিওসফি , অদ্বৈত বেদান্ত হিন্দুধর্ম , বৌদ্ধধর্মপালির সাথেও তিনি পরিচিত হন এবং ভারতীয় ধর্মের ব্যবহারিক দিকগুলি সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে ভারতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। [২]:২১৮[৩]

ভারতে আগমন সম্পাদনা

১৯২১ সালে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন নিক্সন উত্তর ভারতের লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। [৩] দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর জ্ঞানেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তখন আধ্যাত্মিকতার প্রতি ঝুঁকছিলেন এবং থিওসফিতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি নিক্সনকে সহায়তার প্রস্তাব দেন। সময়ের সাথে সাথে, নিক্সন জ্ঞানেন্দ্রের স্ত্রী মনিকা দেবী চক্রবর্তীকে তার আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে স্বীকার করেন। ১৯২৮ সালে মনিকা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্য অনুসারে বৃন্দাবনে বালকৃষ্ণ গোস্বামীর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। [১]সন্ন্যাস দীক্ষার পরে তিনি শ্রীযশোদা মাঈ নামে পরিচিত হন। এর পরেই তিনি নিক্সনকে সন্ন্যাস দীক্ষা দেন এবং তার সন্ন্যাস নাম কৃষ্ণপ্রেম প্রদান করেন। [১]

 
মীর্টোলা আশ্রমে যশোদা মাঈ, কৃষ্ণ প্রেম এবং মাধব আশীষের স্মৃতিচিহ্ন

১৯৩০ সালে, শ্রী যশোদা মাঈ ও কৃষ্ণ প্রেম পার্বত্য উত্তর-মধ্য ভারতের ( উত্তরাখণ্ড ) আলমোড়ার নিকটে মীর্টোলায় একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন [১] । ১৯৪৪ সালে যশোদা মাঈ ইহলোক ত্যাগ করেন এবং কৃষ্ণ প্রেম আশ্রমের প্রধান হিসাবে তার স্থলাভিষিক্ত হন। [১] তিনি ভ্রমণ করতে শুরু করেন,এবং ১৯৪৮ সালে তিনি দক্ষিণ ভারত সফর করেন, মহর্ষি রামণ , শ্রীঅরবিন্দ ও মাদার মিররা আলফাসার সাথে দেখা করেন। [১] সারদেল বলেছেন, ভারতে নিক্সনই "প্রথম ইউরোপীয় যিনি বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয় । [১০]:১৪৩

কৃষ্ণপ্রেম জন্মগতভাবে ব্রিটিশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছিলেন। ব্রুকস লিখেছেন, "কৃষ্ণ প্রেমের সুস্পষ্ট বুদ্ধিবৃত্তিক ও অনুপ্রেরণামূলক গুণাবলী তাকে ব্যাপক খ্যাতি এবং ভারতে অনেক শিষ্য অর্জন করতে সহায়তা করেছে, যা তার জীবন ও শিক্ষার উপর লিখিত অসংখ্য বইয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।" [১০]:১৪৩ গার্ট্রুড এমারসন সেন লিখেছেন, "আমি কৃষ্ণপ্রেমের মতো কাউকে জানি না, তিনি 'বিদেশী' হয়ে ভারতীয়দের আকর্ষণ করেছেন"। তাঁর জীবনীকার দিলীপ কুমার রায় লিখেছেন, কৃষ্ণপ্রেম "আমার অধ্যাত্ম পিপাসা উদ্দীপিত করেছিলেন"। [১১]

হ্যাবারম্যান লিখেছেন, কৃষ্ণপ্রেম "তাঁর সময়ের অনেক ভারতীয় দ্বারা একজন হিন্দু সাধক হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিলেন।" [২]:২১৭ নিক্সন যখন ১৯৬৫ সালে দেহত্যাগ করেন, তখন ভারতের রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন তাকে "মহাত্মা" বলে অভিহিত করেছিলেন[২]:২২১  নিক্সনের শেষ কথা ছিল "আমার নৌকা পাল তুলে চলে যাচ্ছে "। [২]:২২১

উল্লেখযোগ্য রচনা সম্পাদনা

জীবনী উৎস সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Krishna Prem, Sri (1898–1965) Western-born Vaishnavite Guru" in Jones, Constance; James D. Ryan (২০০৬)। Encyclopedia of Hinduism। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 246। আইএসবিএন 9780816075645 
  2. Haberman, David L. (১ জুলাই ১৯৯৩)। "A cross‐cultural adventure: The transformation of Ronald Nixon"। Religion। Routledge। 23 (3): 217–227। আইএসএসএন 0048-721Xডিওআই:10.1006/reli.1993.1020 
  3. "The Case of Sri Krishna Prem" in Brooks, Charles R. (১৯৮৯)। The Hare Krishnas in IndiaMotilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 98–101। আইএসবিএন 9788120809390 
  4. "নং. 30100"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ মে ১৯১৭। 
  5. "নং. 30181"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ জুলাই ১৯১৭। 
  6. "নং. 30181"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ জুলাই ১৯১৭। 
  7. Page 17 in Ginsburg, Seymour B.; Madhava Ashish (২০১০)। The masters speak: an American businessman encounters Ashish and Gurdjieff (1st Quest সংস্করণ)। Wheaton, Illinois, USA: Quest Books/Theosophical Pub. House। আইএসবিএন 9780835608824  (on page 283, the quote from Nixon is cited to page 54 of Roy's biography, 1975 2nd edition)
  8. "নং. 31162"দ্যা লন্ডন গেজেট (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯। 
  9. "নং. 32399"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ জুলাই ১৯২১। 
  10. Sardella, Ferdinando (২০১৩)। Modern Hindu personalism: the history, life, and thought of Bhaktisiddhānta Sarasvatī। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 9780199865901 
  11. quoted in Haberman, p. 221.

বহিসংযোগ সম্পাদনা