কুরআন ও সুন্নাহর বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বিষয়ক কমিশন

কুরআন ও সুন্নাহর বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বিষয়ক কমিশন একটি সংস্থা যা "কুরআন ও সুন্নাতে পাওয়া বৈজ্ঞানিক নিদর্শন" প্রচার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা।[১] সংগঠনের মতে বিজ্ঞানের অসংখ্য আবিষ্কার (আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম মেকানিক্স, মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব, জেনেটিক্স, ভ্রূণবিদ্যা, লেজার প্রভৃতি) কুরআনসুন্নাহ পাওয়া যায়। এটি ১৯৮৪ সালে সৌদি আরবে বিশ্ব মুসলিম লিগের সমর্থনে শেখ আবদুল মজিদ আল-জিন্দানি প্রতিষ্ঠা করেন। কমিশনটি "ওয়ার্ল্ড বুক অ্যান্ড সুন্নাহ অ্যাসোসিয়েশন", "আন্তর্জাতিক কমিশন", বা "ওয়ার্ল্ড কমিশন অন সায়েন্টিফিক সাইন্স অব দ্য কোরান অ্যান্ড সুন্নাহ" নামেও পরিচিত রয়েছে।[২] আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল মুসলিহ ২০০২-২০০৩ সালে কমিশনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে আব্দুল মাজিদ আল-জিন্দানির স্থলাভিষিক্ত হন।[২][৩] আল-জিন্দানি ছিলেন ওসামা বিন লাদেনের আধ্যাত্মিক উপদেষ্টাদের একজন ছিলেন।

কুরআন ও সুন্নাহর বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বিষয়ক কমিশন
Commission on Scientific Signs in the Quran and Sunnah
সংস্থার লোগো
প্রতিষ্ঠিত১ জানুয়ারি ১৯৮৪; ৪০ বছর আগে (1984-01-01)
প্রতিষ্ঠাতাআব্দুল মাজিদ আল জিন্দানি
প্রতিষ্ঠাস্থানসৌদি আরব
আইনি অবস্থাসক্রিয়
উদ্দেশ্যকুরআন ও হাদিসে বৈজ্ঞানিক মূল খোজ করা
সদরদপ্তরসৌদি আরব
উৎপত্তিকুরআন ও হাদিস
ক্ষেত্রসমূহইসলাম ও বিজ্ঞান
মহাসচিব
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল মুসলিহ
ওয়েবসাইটhttps://www.ioqas.org.sa/

ইতিহাস সম্পাদনা

নলেজ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম অনুসারে, সংস্থাটি ১৪০৪ হিজরি সালে (১৯৮৩-৮৪ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্ব সুপ্রিম কাউন্সিল অফ মসজিদের জারি করা একটি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৩] এটির প্রতিষ্ঠা ১৪০৬ হিজরি সালে (১৯৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্ব সুপ্রিম কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। ১৪২৩ হিজরিতে (২০০২-২০০৩ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্ব মুসলিম লিগের সাংবিধানিক পরিষদ কর্তৃক "কুরআন ও সুন্নাহের বৈজ্ঞানিক নিদর্শন সম্পর্কিত বিশ্ব কমিশন" নামে কমিশনটিকে "বিকাশ" করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছিল।[৩] আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আল মুসলিহ ২০০২-২০০৩ সালে কমিশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবদুল মাজিদ আল-জিন্দানির স্থলাভিষিক্ত হন,[২] তিনি ২০১৫ পর্যন্ত ১২ বছর এই পদে দায়িত্বরত ছিলেন।[৩]

২০০৬ সাল পর্যন্ত কমিশন কোরআন ও সুন্নাহতে বৈজ্ঞানিক নিদর্শনের উপর আটটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।[৪] প্রথমটি ১৯৮৭ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সারা বিশ্ব থেকে ২০০ জন মুসলিম প্রতিনিধি সেই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলো। পাকিস্তান সরকার থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন হয়েছিল।[৫] ২০০৪ সালে দুবাইতে সপ্তম সম্মেলনে ১৫০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক অংশ নিয়েছিলো।[৬] ২০০৬ সালে কুয়েতে অষ্টম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শিরোনাম ছিলো "অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য নবীর সুন্নাতে নির্ধারিত একটি ভেষজ নির্যাস", বিজ্ঞানীরা এই শিরোনামের উপর ভিত্তি করে এইডসের সম্ভাব্য নিরাময়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন।[৭][৮]

লক্ষ্য এবং কার্যক্রম সম্পাদনা

কমিশন তার মিশনটিকে কুরআন এবং সুন্নাতে পাওয়া বৈজ্ঞানিক চিহ্ন দেখানো, যাচাই করা এবং প্রকাশ করা হিসাবে বর্ণনা করে।[২] এমন একটি প্রচেষ্টা যা বৈজ্ঞানিক সূত্র প্রমাণ করার চেষ্টা হিসাবেও বর্ণনা করে। সংস্থার কাজ পবিত্র গ্রন্থে বৈজ্ঞানিক পূর্বজ্ঞান খোঁজা, এটা বিজ্ঞানী বুকাইলিজম ধারণার মত একটি ব্যপার।[৯] এই কমিশনের কাজ হলো কুরআন ও বৈজ্ঞানিক মিল বিষয়ক আলোচনা বস্তু খুজে বের করা। এটা খুজের বের করার পরে বিষয়টির মধ্যে কোন যোগসূত্র খুজে বের করার চেষ্টা করা। সংস্থাটি কুরআনের বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক আয়াতের দিকে লক্ষ্য রাখে, ইসলামের নবী মুহাম্মাদের জীবনীকে পাঠ করে এবং সেই অনুসারে গবেষণা চালায়, এবং এসব বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক খুজে বের করে।[৮]

বিতর্ক সম্পাদনা

কমিশনের একটি সমালোচনা হল যে কোরানের বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতার পক্ষে প্রমাণগুলি স্পষ্ট ও সত্য করা, এবং জনসস্মুখে প্রদর্শন করা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই কাজ করার জন্য বিশিষ্ট অমুসলিম পণ্ডিতদের একটি দল এই অলৌকিক সংযোগের সাক্ষ্য দিয়েছে।[১০] কমিশন এই বেশ কয়েকজন অমুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা বিভ্রান্তিকর, প্রসঙ্গ-বহির্ভূত বিবৃতি ছড়িয়েছে।[৯]

১৯৮৪ সালে কমিশনের একজন সদস্য মোস্তফা আব্দুল বাসিত আহমেদ, কুরআনের অলৌকিক নিদর্শন যাচাই করার জন্য পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের নিয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০০২ সালে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বেশ কয়েকজন অমুসলিম বিজ্ঞানীর নিকট কমিশন কর্তৃক তাদের কাছ থেকে বিবৃতি ঢোকানোর জন্য ব্যবহার করা সন্দেহজনক অনুশীলনের কথা বলেছিলো কিন্তু নিরপেক্ষতার প্রশ্নে সেগুলো রাখা হয়নি।[৯]

এছাড়াও ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ প্রতিষ্ঠাতা আল-জিন্দানিকে "বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী" মনোনীত করে।[১১] (আল-জিন্দানি ওসামা বিন লাদেনের একজন আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা ছিলেন এবং জাতিসংঘের আল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ১২৬৭ কমিটির তালিকায় রয়েছেন।[১২]

আরো পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Online Project Spotlights Science in Qur’an, Sunnah
  2. Commission on Scientific Signs in the Quran and Sunnah ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৮-০১-০৯ তারিখে website
  3. "Commission on Scientific Signs in the Quran and Sunnah"Knowledge Exchange Program। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫। ৮ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০ 
  4. "Kuwait Hosts 8th Science in Qur'an Conference"। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২৩ 
  5. "When Science Teaching Becomes A Subversive Activity By Pervez Hoodbhoy"। Archived from the original on ২০০১-১২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-১৩ 
  6. Dubai Meet to Highlight Scientific Facts in the Qur’an
  7. "Miracle Drug Announced, Scientific Evidence Still Hazy"। ২০০৭-১২-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২৬ 
  8. El-Maghraby, Tamer (২৯ নভেম্বর ২০০৬)। "Miracle Drug Announced, Scientific Evidence Still Hazy"। IslamOnline.net। ২৩ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০ 
  9. Daniel Golden (২৩ জানুয়ারি ২০০২)। "Western Scholars Play Key Role In Touting 'Science' of the Quran"The Wall Street Journal 
  10. Abdul Majeed al-Zindani in an interview in the May 2001 issue of a magazine published by the Commission on Scientific Signs
  11. Ferguson, Jane (২২ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Firebrand cleric walks a fine line in Yemen"। Al Jazeera। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০ 
  12. McGregor, Andrew (৭ মার্চ ২০০৬)। "Stand-Off in Yemen: The al-Zindani Case"। Jamestown Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২০