কিরণশঙ্কর রায়
কিরণশঙ্কর রায় (২৫ অক্টোবর ১৮৯১ - ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) ছিলেন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ব্যারিস্টার, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বরাজ দলের অন্যতম নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং সুভাষচন্দ্রবসুর এক সময়ের সহকর্মী ও শরৎচন্দ্র বসুর সহযোগী।[১]
কিরণশঙ্কর রায় | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ | (বয়স ৫৭)
পিতা-মাতা | হর শঙ্কর রায় (পিতা) |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাকিরণশঙ্কর রায়ের জন্ম ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে অক্টোবর অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার তেঁওতা গ্রামের জমিদার পরিবারে। পিতা হর শঙ্কর রায়। কিরণশঙ্করের প্রাথমিক পড়াশোনা গ্রামের স্কুল তেঁওতা একাডেমিতে। পরবর্তীতে কলকাতার হিন্দু স্কুল ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। উচ্চ শিক্ষার্থে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে যান এবং অক্সফোর্ডের নিউ কলেজে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও সংস্কৃত কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপনা করেন। কিন্তু রাওলাট আইনের প্রতিবাদ করায় তিনি বৃটিশ শাসকের বিরাগভাজন হয়ে ইস্তফা দেন এবং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আবার আইন পড়তে ইংল্যান্ডে যান। ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ন্যাশন্যাল কলেজের (কলিকাতা বিদ্যাপীঠের) সহ-অধ্যক্ষ ও ইংরাজী সাহিত্যের অধ্যাপক হন। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন অধ্যক্ষ সেসময়। পরবর্তীতে ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (গৌড়ীয় সর্ব-বিদ্যায়তনের) উপাচার্য হন।
রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ
সম্পাদনাকিরণশঙ্কর ইতিমধ্যেই গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহৃত হলে মতিলাল নেহেরু ও চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে বিকল্প স্বরাজ্য পার্টি গঠিত হলে তিনি দলে প্রধান পাঁচজনের অন্যতম ছিলেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পার্টির সম্পাদক হন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনে গ্রেফতার হন ও কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুনরায় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং কংগ্রেসের একজন সদস্য হিসাবে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লিতে নির্বাচিত হন। সুভাষচন্দ্র বসুর সহকর্মী হিসাবে কাজ করেন এবং পরে অ্যাড হক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক হন। শরৎচন্দ্র বসুর ন্যায় তিনিও বাংলা ভাগের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন এবং স্বাভাবিকভাবে শরৎচন্দ্র বসুর পরিচালিত প্রভিন্সিয়াল কোয়ালিশন পার্টির সমর্থক ছিলেন তিনি। শরৎচন্দ্র বসুর সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের প্রচেষ্টারও পক্ষে ছিলেন কিরণশঙ্কর। স্বাধীনতার পর তিনি পূর্ব পাকিস্তান বিধানসভায় কংগ্রেস দলের নেতাও হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে আসেন এবং বিধানচন্দ্র রায় নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রীসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন।
কিরণশঙ্কর রায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়েও সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন। তিনি প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত সবুজপত্র পত্রিকার এবং সুকুমার রায়ের মণ্ডে ক্লাবের বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। 'সবুজপত্র', 'প্রবাসী', 'আত্মশক্তি' পত্রিকায় নিয়মিতই তার প্রবন্ধ ও ছোটগল্প প্রকাশিত হত। সেগুলি পাঠক সমাজে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। 'সবুজপত্র'-এ প্রকাশিত গল্পগুলি পরে পুস্তকাকারে সপ্তপর্ণ নামে প্রকাশিত হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৩৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬