কাজী জাফর আহমেদ
কাজী জাফর আহমেদ (১ জুলাই ১৯৩৯ - ২৭ আগস্ট ২০১৫) ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ এবং ৮ম প্রধানমন্ত্রী। তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
কাজী জাফর আহমেদ | |
---|---|
বাংলাদেশের ৯ম প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ১২ই আগস্ট, ১৯৮৯ – ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯০ | |
রাষ্ট্রপতি | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
পূর্বসূরী | মওদুদ আহমেদ |
উত্তরসূরী | খালেদা জিয়া |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯৩৯ সালের ১ জুলাই চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি (বর্তমানে-বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ২৭ আগস্ট ২০১৫ (৭৬ বছর) ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
রাজনৈতিক দল | ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১৯৭২-৭৪ ইউনাইটেড পিপলস পার্টি ১৯৭৪-৮৬ জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ১৯৮৬-২০১৩ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)২০১৩-১৫ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | খুলনা জিলা স্কুল রাজশাহী সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
ধর্ম | ইসলাম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনা১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এম এ (ইতিহাস) পাস করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম এ এবং এল.এল.বি. কোর্স সম্পন্ন করা স্বত্ত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে পারেননি।[১]
প্রথম জীবনের রাজনীতি
সম্পাদনাকাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন/ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ইপসু/EPSU) এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র জীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন।
ভাসানীর মহাসচিব
সম্পাদনা১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। [২]
পরবর্তী রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাএরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন কুমিল্লা-১২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৩][৪][৫]
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
সম্পাদনাকাজী জাফর আহমেদ ১৯৮৯-১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। এ সময় তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় পার্টি (জাফর)প্রতিষ্ঠা
সম্পাদনাবাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অংশ নেওয়ায় এক বিবৃতিতে এরশাদকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেন কাজী জাফর। এরপর এরশাদ ও কাজী জাফর পরস্পরকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন ।
এরপর কাজী জাফর আহমেদ দলের একাংশকে নিয়ে জাতীয় পার্টি নামেই নতুন দল গঠন করেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।[১]
শিক্ষকতা
সম্পাদনা১৯৯৯-২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দক্ষিণ এশীয় ভূমণ্ডলীয় রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।[৬]
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।[৭][৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "কাজী জাফর আহমেদের বর্ণাঢ্যময় রাজনৈতিক জীবন"। www.jugantor.com।
- ↑ http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/drishtikon/2015/11/06/81917.html
- ↑ "৩য় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৪র্থ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ৮ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "৫ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)। জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশ সরকার। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Rising BD"। www.risingbd.com।
- ↑ কাজী জাফর আহমেদ মারা গেছেন
- ↑ "কাজী জাফর আহমদ মারা গেছেন"। ২৮ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৫।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাপূর্বসূরী: মওদুদ আহমেদ |
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১২ আগস্ট ১৯৮৯ - ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ |
উত্তরসূরী: খালেদা জিয়া |