কালিয়াবড়
কলিয়াবর হল ভারতের আসাম রাজ্যের নগাঁও জেলায় অবস্থিত একটি শহর। এটি তেজপুর শহর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পূর্বে এবং আসামের রাজধানী শহর গৌহাটি থেকে ১১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।
কালিয়াবড় | |
---|---|
দেশ | ভারত |
জেলা | নগাঁও |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-AS |
লোকসভা নির্বাচনী এলাকা | কলিয়াবর |
বিধানসভা আসন | কলিয়াবর |
ইতিহাস
সম্পাদনাআহোম যুগে কলিয়াবর বরফুকনদের সদর দপ্তর হিসেবে কাজ করত। আসামের ইতিহাসের পাতায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে এবং "আসামের চালের বাটি" নামে পরিচিত। "কলিয়াবর" নামটি তাই ভাষা থেকে এসেছে এবং এর অর্থ 'কালো বড় গাছের জায়গা' (তুন = কালো, রান = বড়, বাঁধ = গাছ)।
কলিয়াবর একটি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। শহরটি ১৮ শতকে আহোম রাজা স্বর্গদেও গদাধর সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে রাজা তার রাণী কলিয়াভোমোরা এর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ করেছিলেন। বছরের পর বছর ধরে, কলিয়াবর এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
ভূগোল এবং জলবায়ু
সম্পাদনাকলিয়াবর হল ভারতের আসাম রাজ্যের নগাঁও জেলায় অবস্থিত একটি মহকুমা শহর। এটি নগাঁও শহর থেকে 48 কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এবং উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ, দক্ষিণে কার্বি আংলং জেলার পাহাড়, পূর্বে কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান এবং পশ্চিমে সামাগুড়ি দ্বারা বেষ্টিত।
কলিয়াবর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। শহরটি কোলং নদীর তীরে অবস্থিত, ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি উপনদী। এই অঞ্চলে একটি আর্দ্র উপক্রান্তীয় জলবায়ু রয়েছে, যেখানে গরম এবং আর্দ্র গ্রীষ্ম এবং হালকা শীতকাল রয়েছে।
জনসংখ্যা
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কালিয়াবোরের জনসংখ্যা ছিল ১২,৭১১ জন, যেখানে পুরুষ ৫১% এবং মহিলা ৪৯%। শহরের সাক্ষরতার হার হল ৮৪.২১%, যা সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৭৪.০৪% এর চেয়ে বেশি।
অর্থনীতি
সম্পাদনাকালিয়াবোরে কৃষি হল প্রাথমিক পেশা, ধান, পাট এবং সরিষা এই অঞ্চলের প্রধান ফসল। শহরটি তার চা বাগানের জন্যও পরিচিত, যা স্থানীয় অর্থনীতির রাজস্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়াও, কালিয়াবোরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
রাজনীতি
সম্পাদনাকলিয়াবর তার রাজনৈতিক গুরুত্বের জন্যও পরিচিত। এটি কলিয়াবর লোকসভা কেন্দ্রের অংশ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ
সম্পাদনাশিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে, কলিয়বরে বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কলিয়াবর কলেজ, পশ্চিম কলিয়াবর হাই স্কুল, খালোইয়াটি এলপি স্কুল, কুয়ারিটোল হাই স্কুল, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় মিসা ক্যান্ট, ডন বস্কো স্কুল, মিসা এবং আরও অনেক কিছু।
পরিবহন
সম্পাদনাকালিয়াবোর আসামের অন্যান্য অংশ এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সাথে সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভালভাবে সংযুক্ত। শহরটি জাতীয় মহাসড়ক ৩৭-এ অবস্থিত, যা এটিকে এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রধান শহরগুলির সাথে সংযুক্ত করে। কালিয়াবোরের নিকটতম বিমানবন্দর হল লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুয়াহাটি, যা প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে। শহরে একটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে যা উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এর অংশ।
পর্যটন
সম্পাদনাকালিয়াবোর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা বেষ্টিত, এটি পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হিসাবে পরিণত হয়েছে। শহরটি তার চা বাগান জন্য পরিচিত, যেটি পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখায়। কোলং নদী, যা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, এটিও একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট, এবং অনেক দর্শনার্থী নদীতে বোটিং এবং মাছ ধরা উপভোগ করতে আসে।
কলিয়াবর হল বেশ কিছু ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক পর্যটন স্পট। উল্লেখযোগ্য কিছু ধর্মীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ভরালী নামঘর, কামাখ্যা মন্দির এবং হাতিমুরা দুর্গা মন্দির। কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান সহ এই শহরে বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যান রয়েছে।
উপসংহার
সম্পাদনাসামগ্রিকভাবে, কলিয়াবর আসাম অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য অবদান সহ একটি সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ শহর। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ধর্মীয় স্থানগুলি এটিকে একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য করে তোলে।
কালিয়াবোর আসামের নগাঁও জেলার একটি সুন্দর এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শহর। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং অসংখ্য পর্যটন আকর্ষণের কারণে, কালিয়াবোর আসামের একটি অনন্য এবং খাঁটি অভিজ্ঞতার জন্য ভ্রমণকারীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।