করম আলী হাওলাদার

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

করম আলী হাওলাদার (জন্ম: ১৯৪০ (আনুমানিক), মৃত্যুঃ ১৯৮৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

করম আলী হাওলাদার
মৃত্যু১৯৮৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

করম আলী হাওলাদারের জন্ম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের ভরপাশা গ্রামে। বাবার নাম গোলাম আলী হাওলাদার এবং মায়ের নাম লতিফুন্নেছা। তার স্ত্রীর নাম খোদেজা বেগম। তাদের দুই ছেলে ও চার মেয়ে। তার পরিবারের কোলজুড়ে ১৪জন নাতি-নাতনী রয়েছে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

করম আলী হাওলাদার চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মার্চ মাসে এই রেজিমেন্টকে সম্ভাব্য ভারতীয় আগ্রাসনের কথা বলে সেনানিবাসের বাইরে মোতায়েন করা হয়। তার কোম্পানি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়িতে ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে করম আলী হাওলাদার ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালে সেখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ছিলো জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বাহাদুরাবাদ নৌবন্দর। এর অবস্থান যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ে। একসময় রেল যোগাযোগের জন্য বাহাদুরাবাদ ঘাট ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পূর্বাঞ্চল, বিশেষত ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ রক্ষায় ওই ঘাটের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল ৩১ বালুচ রেজিমেন্ট। ঘাটে তখন পাঁচটি জেটি ছিল। এর মধ্যে দুটি যাত্রীবাহী স্টিমার, দুটি সামরিক যানসহ রেলওয়াগন-তেলের ট্যাংকার এবং একটি সি-ট্রাক লঞ্চ ও সামরিক (আর্টিলারিসহ) মালামাল পারাপারের কাজে ব্যবহূত হতো। ৩১ জুলাই মুক্তিবাহিনীর একটি দল (তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট) বাহাদুরাবাদ ঘাটে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর এই দলে ছিলেন করম আলী হাওলাদার। তিনি ছিলেন মূল আক্রমণকারী দল ‘ডি’ (ডেলটা) কোম্পানিতে এবং একটি প্লাটুনের নেতৃত্বে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সেদিন নির্ধারিত সময়ে (শেষ রাত) ঘাটের রেললাইনের জংশন পয়েন্টে অবস্থান নেন। এরপর সবার আগে করম আলী হাওলাদার তার দল নিয়ে আক্রমণের জন্য এগিয়ে যান। তার ওপর দায়িত্ব ছিল জেনারেটরবাহী রেলওয়াগন ও এর আশপাশের ছোট ছোট বাংকারে আক্রমণ করে তা ধ্বংস করা। ঘটনাচক্রে তখন ওয়াগনের চারদিকের বাংকারে পাকিস্তানি সেনারা ছিল না। তারা লাইনের অপর পাশে ডিউটি শুরুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল এবং লাইনের ওপর একটি যাত্রীবাহী রেলের সানটিং চলছিল। সানটিং ইঞ্জিন সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করম আলী হাওলাদার সহযোদ্ধাদের নিয়ে এগিয়ে প্রথমে জেনারেটরবাহী রেলওয়াগন এবং সানটিং ইঞ্জিনের ওপর রকেট নিক্ষেপ করেন। করম আলী হাওলাদারের ছোড়া রকেট নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানে। প্রথম রকেটের আঘাতেই জেনারেটর অকেজো এবং সঙ্গে সঙ্গে গোটা এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। গোলার শব্দ পেয়ে তাদের অন্যান্য উপদলও আক্রমণ শুরু করে। আচমকা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা হকচকিত হয়ে পড়ে। অবশ্য কিছুক্ষণ পর নিজেদের গুছিয়ে তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু অতর্কিত আক্রমণে বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। বাঁচার জন্য অনেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সাঁতার না জানায় তারা নদীতে ডুবে মারা যায়। পরে করম আলী হাওলাদার রকেট লঞ্চার থেকে রকেট ছুড়ে নদীতে থাকা সব নৌযান—বার্জ, পন্টুন, টাগ ও লঞ্চ ধ্বংস করেন। সেগুলো রকেটের আঘাতে ফুটো হয়ে পানিতে ডুবে যায়।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১০-০৭-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২১৭। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা