কনডম
কনডম বা কন্ডোম প্রধানত যৌনসংগমকালে ব্যবহৃত এক প্রকার জন্মনিরোধক বস্তু। এটি মূলত গর্ভধারণ ও গনোরিয়া, সিফিলিস ও এইচআইভি-এর মতো যৌনরোগের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি পুরুষদের উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরানো হয়। রেতঃস্খলনের পর কনডম যৌনসঙ্গীর শরীরে বীর্য প্রবেশে বাধা দেয়। কনডম জলাভেদ্য, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই বলে একে অন্যান্য কাজেও লাগানো যায়। বীর্যহীনতা চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য কনডমের মধ্যে করে বীর্য সংগ্রহ করা হয়। জলাভেদ্য মাইক্রোফোন তৈরি ও রাইফেলের ব্যারেল নোংরা পচা বস্তু দ্বারা বুজে যাওয়া আটকাতেও কনডম ব্যবহৃত হয়।
কনডম | |
---|---|
তথ্য | |
জন্মনিরোধক ধরন | প্রতিরোধক |
প্রথম ব্যবহার | রবার: ১৮৫৫ ল্যাটেক্স: ১৯২০ পলিআরথিন: ১৯৯৪ পলিআইসোপ্রিন: ২০০৮ |
গর্ভাধান হার (প্রথম বছর ল্যাটেক্স) | |
যথাযথ ব্যবহার | ২% |
প্রচলিত ব্যবহার | ১০-১৮% |
ব্যবহার | |
ব্যবহারকারীর স্মর্তব্য | তেলভিত্তিক ল্যুব্রিকেন্ট ব্যবহার করলে ল্যাটেক্স কনডম নষ্ট হয়ে যায়। |
সুবিধা ও অসুবিধা | |
যৌনরোগ প্রতিরোধী | হ্যাঁ |
লাভ | কোনো রকম প্রতিষেধক নিতে হয় না বা ডাক্তারখানায় যেতে হয় না |
আধুনিক যুগে কনডম মূলত তরুক্ষীর থেকে প্রস্তুত করা হয়। তবে কনডম তৈরি ক্ষেত্রে অনেক সময় পলিআরথিন, পলিইসোথ্রিন বা ল্যাম্ব ইনসেসটাইনও ব্যবহৃত হয়। মহিলাদের কনডমও পাওয়া যায়। জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসেবে কনডম অত্যন্ত সুলভ, সহজে ব্যবহার্য, কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ও যৌনব্যাধি প্রতিরোধে সর্বাধিক কার্যকর। সঠিক জ্ঞান ও ব্যবহার কৌশল এবং যৌনসংগমের প্রতিটি ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হলে যেসব মহিলাদের পুরুষ যৌনসঙ্গীরা কনডম ব্যবহার করেন, তারা বার্ষিক মাত্র ২ শতাংশ গর্ভাবস্থার সম্মুখীন হন।
কনডম প্রায় ৪০০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই কনডম ব্যবহার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় জন্মনিরোধ পদ্ধতি। আধুনিক সমাজে কনডমের ব্যবহার ব্যাপক মান্যতা লাভ করেছে। যদিও যৌনশিক্ষা পাঠক্রমে কনডমের ব্যবহার ইত্যাদি প্রসঙ্গে কনডম নিয়ে কিছু বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে।
ইতিহাস
ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে
প্রাচীন সভ্যতাগুলিতে কনডমের ব্যবহার প্রচলিত ছিল কিনা তা নিয়ে পুরাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান।[১]:১১ প্রাচীন মিশর, গ্রিস ও রোমে গর্ভাধান রোধ নারীর দায়িত্ব হিসেবে পরিগণিত হত। এই সব দেশ থেকে সে সকল সুলিখিত প্রাচীন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিবরণীগুলি পাওয়া গেছে, সেগুলিতে মূলত নারী-নিয়ন্ত্রিত গর্ভনিরোধ বস্তুগুলিরই উল্লেখ রয়েছে।[১]:১৭,২৩ পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্বে কিছু শিশ্নাগ্র কনডমের ব্যবহারের কথা জানা যায়; এগুলি প্রধানত পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগকে ঢেকে রাখত। মনে করা হয়, জন্মনিরোধক হিসেবেই কনডমের ব্যবহার প্রচলিত ছিল এবং এই প্রচলন কেবলমাত্র সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের মধ্যেই পরিলক্ষিত হত। চীনে শিশ্নাগ্র কনডম তৈরি হত তৈলনিষিক্ত রেশমি কাগজ বা ভেড়ার অন্ত্র দিয়ে। জাপানে কনডম তৈরি হত কচ্ছপের খোল বা জন্তুর শিং দিয়ে।[১]:৬০-১
ষোড়শ শতাব্দীর ইতালিতে গ্যাব্রিয়েলে ফ্যালোপিও সিফিলিস রোগের উপর একখানি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন।[১]:৫১,৫৪-৫ সেই সময়কার লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ১৪৯০-এর দশকে সিফিলিস একটি ভয়ানক রোগের আকারে প্রকট হয়েছিল। রোগাক্রান্ত হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটত।[২][৩] ফ্যালোপিওর গবেষণা গ্রন্থটি কনডম ব্যবহারের প্রাচীনতম অবিতর্কিত বিবরণ। এই বর্ণনা অনুযায়ী, একটি ক্ষৌমবস্ত্রনির্মিত খাপকে একটি রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হত এবং ব্যবহারের পূর্বে সেটি শুকিয়ে নেওয়া হত। বর্ণনা অনুযায়ী এক কাপড়টি কেবলমাত্র শিশ্নাগ্রভাগকেই ঢেকে রাখত এবং একটি রিবন দিয়ে এটিকে বেঁধে রাখা হত।[১]:৫১,৫৪-৫[৪] ফ্যালোপিও দাবি করেন, ক্ষৌমবস্ত্রাকার খাপের একটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার ঘটিয়ে দেখেছেন যে এর মাধ্যমে সিফিলিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।[৫]
এর পর থেকে সমগ্র ইউরোপে বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত নানা রকম পুরুষাঙ্গ-আচ্ছাদনী রোগ প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৬০৫ সালে রচিত De iustitia et iure (বিচার ও আইন প্রসঙ্গে) নামে একটি ধর্মীয় পুস্তকের বক্তব্য থেকে অনুমিত হয় এই জাতীয় বস্তুগুলি রোগ প্রতিরোধের বদলে জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হত। এই পুস্তকের লেখক ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্ববিদ লেওনার্দাস লেসিয়াস এগুলিকে অনৈতিক বলে বর্ণনা করেছেন।[১]:৫৬ ১৬৬৬ সালে ব্রিটিশ বার্থ রেট কমিশনের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে এই সময় "condons" ব্যবহারের ফলে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে। এই শব্দটিই কনডমের অনুরূপ বানানবিশিষ্ট কোনো শব্দের প্রথম উল্লেখ।[১]:৬৬-৮
ক্ষৌমবস্ত্রের পাশাপাশি রেনেসাঁর যুগে অন্ত্র ও মুত্রাশয় নির্মিত কনডমের ব্যবহারও প্রচলন লাভ করে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে ওলন্দাজ বনিকেরা "ভাল চামড়া" নির্মিত কনডম নিয়ে যায় জাপানে। এই অঞ্চলে পূর্বে ব্যবহৃত শিং-নির্মিত কনডম শুধুমাত্র শিশ্নাগ্রভাগকেই ঢাকত। কিন্তু এই সকল চামড়ার কনডমে সমগ্র পুরুষাঙ্গকে ঢাকার সুবিধা পাওয়া যেত।[১]:৬১
অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে আইনজ্ঞ, ধর্মতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকদের একটি অংশ কনডম ব্যবহারের বিরোধিতা করতে থাকেন। তারা যে আপত্তিগুলি তোলেন, সেগুলির অনেকগুলি আজও তোলা হয়ে থাকে: কনডম গর্ভাধান সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়, যাকে কেউ কেউ জাতির পক্ষে অনৈতিক ও অবাঞ্ছিত মনে করেন; এগুলি যৌনরোগ থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করতে অক্ষম, অথচ এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় বিশ্বাস রেখে মানুষ তাদের যৌন কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে থাকে; তাছাড়া অনেকেই নানা ব্যবহার সংক্রান্ত সমস্যা, চড়া দাম ও ব্যবহারের ফলে কামোদ্দীপনা কমে যাওয়ার জন্য কনডম ব্যবহার এড়িয়ে চলেন।[১]:৭৩,৮৬-৮,৯২
কিন্তু কোনো কোনো মহলের বিরোধিতা সত্ত্বেও কনডমের বিক্রি বাড়তে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন মান ও আকারের কনডম কিনতে পাওয়া যেত। এর মধ্যে যেমন রাসায়নিক মাখানো ক্ষৌমবস্ত্র নির্মিত কনডম ছিল, তেমনই ছিল "ত্বক"-ও (সালফার ও লাই মিশ্রিত নরম করা মুত্রাশয় বা তন্ত্র)।[১]:৯৪-৫ সমগ্র ইউরোপে ও রাশিয়ায় পাব, নাপিতের দোকান, ঔষধের দোকান, খোলাবাজার এবং নাট্যশালায় কনডম বিক্রি হত।[১]:৯০-২,৯৭,১০৪ পরে এগুলি আমেরিকাতেও বিক্রি হতে শুরু করে। তবে সর্বত্রই চড়া দাম ও যৌনশিক্ষার অভাবগত কারণে কেবলমাত্র উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই কনডমের প্রচলন সীমাবদ্ধ থাকে।[১]:১১৬-২১
১৮০০ থেকে ১৯২০-এর দশক
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে জন্মনিরোধক পদ্ধতিগুলির সঙ্গে সমাজের দরিদ্র শ্রেণি পরিচিত হয়। এই সময়কার জন্মনিরোধক সম্পর্কিত লেখকেরা জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতিগুলিকেই বেশি গুরুত্ব দিতেন। এযুগের নারীবাদীরা বলতেন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি একান্তভাবেই নারীর হাতে থাকা উচিত। তারা কনডম জাতীয় সকল পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত জন্মনিরোধকের বিরোধী ছিলেন।[১]:১২৯,১৫২-৩ অন্যান্য লেখকেরা লিখেছেন কনডম ছিল দামী ও নির্ভরযোগ্যতাশূন্য (এগুলিতে ছিদ্র হয়ে যেত, খুলে আসত বা ফেটে যেত)। তবে তারা কতকগুলি ক্ষেত্রে কনডমকে ভাল বিকল্প বলেছেন। যেমন রোগপ্রতিরোধের ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যবহার্য ছিল কনডম।[১]:৮৮,৯০,১২৫,১২৯-৩০
অনেক দেশে কনডম উৎপাদন বা গর্ভনিরোধ ব্যবস্থার প্রসার রোধ করার জন্য আইন পাস করা হয়।[১]:১৪৪,১৬৩-৪,১৬৮-৭১,১৯৩ কিন্তু এত বাধা সত্ত্বেও ভ্রাম্যমাণ ভাষণ ও সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনের কনডমের কথা প্রচারিত হতে থাকে। যেসকল অঞ্চলে এই জাতীয় বিজ্ঞাপন আইনত নিষিদ্ধ ছিল সেখানে শালীনভাবে কনডমের কথা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়।[১]:১২৭,১৩০-২,১৩৮,১৪৬-৭ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ঘরে কি করে কনডম তৈরি করতে হয় তার নির্দেশিকা বিলি করা হত।[১]:১২৬,১৩৬ সামাজিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কনডমই হয়ে ওঠে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।[১]:১৭৩-৪
ঊনবিংশ শতাব্দীর পরার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যৌনরোগীর সংখ্যা অকস্মাৎ অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ঐতিহাসিকগণ এর জন্য আমেরিকার গৃহযুদ্ধের প্রভাব ও কমস্টক আইন কর্তৃক প্রচারিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলির প্রতি অজ্ঞতাকে দায়ী করেন।[১]:১৩৭-৮,১৫৯ এই ক্রমবর্ধমান মহামারীর সঙ্গে যুঝতে সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে প্রথম যৌনশিক্ষা পাঠক্রম চালু করা হয়। এই পাঠক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন যৌনব্যাধি ও কেমন করে তা সংক্রমিত হয়, সেই সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হত।[১]:১৭৯-৮০ তবে যৌনব্যাধি নিয়ন্ত্রণে কনডমের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হত না। কারণ সেযুগের চিকিৎসক মহল ও নৈতিকতার ধ্বজাধারীগণ মনে করতেন, যৌনরোগ আসলে যৌন অসদাচারের শাস্তি। যৌনরোগে আক্রান্তদের প্রতি বিদ্বেষ এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে অনেক হাসপাতাল সিফিলিজ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে অস্বীকার করে।[১]:১৭৬
এদিকে, ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে জার্মান সামরিক বাহিনীতে সেনা জওয়ানদের মধ্যে কনডম ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়া হতে থাকে।[১]:১৬৯,১৮১ বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মার্কিন সামরিক বাহিনী কর্তৃপক্ষ একটি পরীক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে কনডম ব্যবহারের ফলে সেনা জওয়ানদের যৌনরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।[১]:১৮০-৩ তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও (কেবলমাত্র যুদ্ধের সূচনাভাগে) ব্রিটেন যুদ্ধের সেনা জওয়ানদের মধ্যে কনডম সরবরাহ বা কনডম ব্যবহার উৎসাহিত করেনি; যা যুদ্ধের অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সকল রাষ্ট্রই করেছিল।[১]:১৮৭-৯০
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরও কয়েক দশক সমগ্র ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কনডম ব্যবহারে সামাজিক ও আইনগত বাধা থেকেই যায়।[১]:২০৮-১০ মনস্তত্ত্ব চর্চার প্রবর্তক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এই মর্মে সকল প্রকার জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন যে সেগুলির ব্যর্থতার হার ছিল সুউচ্চ। ফ্রয়েড বিশেষভাবে কনডম ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। কারণ, তিনি মনে করতেন কনডম যৌন উত্তেজনা প্রশমিত করে দেয়। কোনো কোনো নারীবাদীও কনডম সহ সকল প্রকার পুরুষনিয়ন্ত্রিত জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরোধিতা করতে থাকেন। ১৯২০ সালে চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ল্যামবেথ কনফারেন্সে সকল প্রকার "unnatural means of conception avoidance"-এর বিরোধিতা করা হয়। লন্ডনের বিশপ আর্থার উইনিংটন-ইনগ্রাম অভিযোগ করেন যে গলি ও উদ্যানগুলিতে বিশেষ করে সপ্তাহান্ত ও ছুটির দিনগুলিতে ব্যবহৃত কনডম ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।[১]:২১১-২
যদিও ইউরোপীয় সামরিক বাহিনীগুলি রোগ প্রতিরোধকল্পে নিজ সদস্যদের কনডম সরবরাহ করত। এমনকি যে সব দেশে সাধারণের মধ্য কনডমের ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল, সেই সব দেশেও সেনাবাহিনীতে কনডম ব্যবহার করা যেত।[১]:২১৩-৪ ১৯২০-এর দশকে আকর্ষক নাম ও চকচকে মোড়ক ব্যবহার কনডম ও সিগারেটের মতো পণ্য বিক্রির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কৌশল হয়ে ওঠে।[১]:১৯৭ মানপরীক্ষাও প্রচলন লাভ করে। চাপহীনতা পরীক্ষা করার জন্য অন্যান্য সব পদ্ধতির সঙ্গে কনডমে হাওয়া ভরেও পরীক্ষা করা হত।[১]:২০৪,২০৬,২২১-২ ১৯২০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী কনডমের বিক্রি দ্বিগুণ হয়ে যায়।[১]:২১০
রবার ও উৎপাদনপ্রক্রিয়ার উন্নতি
১৮৪৪ সালে চার্লস গুডইয়ার তাপপ্রয়োগ করে রবারে গন্ধক মিশিয়ে তা শক্ত করার প্রক্রিয়াটির পেটেন্ট নেন।[৬] ১৮৫৫ সালে প্রথম রবার কনডম তৈরি হয়।[৭] অনেক দশক ধরে শিশ্নাকৃতি মণ্ডে কাচা রবার মাখিয়ে এবং তারপর রবারকে শোধন করার জন্য মণ্ডটিকে রাসায়নিক দ্রবণে ডুবিয়ে কনডম প্রস্তুত করা হত।[১]:১৪৮ ১৯১২ সালে জুলিয়াস ফ্রম নামে এক জার্মান কনডম উৎপাদনের একটি নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন: তিনি কাচা রবারের দ্রবণে কাচের মণ্ড ডুবিয়ে কনডম উৎপাদন শুরু করেন।[৭] সিমেন্ট ডিপিং নামে পরিচিত এই পদ্ধতিতে রবারকে তরল করতে তার সঙ্গে গ্যাসোলিন বা বেনজিন মেশাতে হত।[১]:২০০
জলাভেদ্য রবার তরুক্ষীর কনডম আবিষ্কৃত হয় ১৯২০ সালে। সিমেন্ট-ডিপড রবার কনডমের তুলনায় তরুক্ষীর কনডম উৎপাদন প্রক্রিয়া ছিল অনেক সহজ। রবার কনডম ঘষে ঘষে মসৃণ করতে হত। তাছাড়া গ্যাসোলিন ও বেনজিনের বদলে তরুক্ষীর কনডম উৎপাদনে জল ব্যবহারের ফলে কনডম কারখানায় আগুন জ্বালানোর সমস্যার সমাধান হয়। ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেও তরুক্ষীর কনডম অনেক বেশি কার্যকরী: এগুলি রবার কনডমের তুলনায় অনেক শক্ত অথচ পাতলা। ব্যবহার না করা অবস্থায় এগুলি পাঁচ বছর পর্যন্ত রেখে দেওয়া যায়; যেখানে রবার কনডম রাখা যায় মাত্র তিন মাস।[১]:১৯৯-২০০
১৯২০-এর দশক পর্যন্ত সকল প্রকার কনডমই অর্ধদক্ষ শ্রমিকদের দ্বারা হাতে তৈরি হত। কিন্তু এই দশকে যন্ত্রের মাধ্যমে কনডম উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৩০ সালে প্রথম সম্পূর্ণ যন্ত্রচালিত কনডমের পেটেন্ট নেওয়া হয়। ফলত, বড়ো বড়ো কনডম প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিই কনডম উৎপাদন চালিয়ে যেতে থাকে, ছোটোখাটো সংস্থাগুলি ব্যবসা গুটিয়ে নেয়।[১]:২০১-৩ তরুক্ষীর কনডমের চেয়ে অনেক বেশি দামী স্কিন কনডমের বাজারও ছোটো হয়ে আসে।[১]:২২০
১৯৩০ থেকে বর্তমান কাল
১৯৩০ সালে অ্যাংলিকান চার্চের ল্যামবেথ কনফারেন্সে বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে জন্মনিরোধক ব্যবহারে অনুমোদন জানানো হয়। ১৯৩১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল কাউন্সিল অফ চার্চেস একটি অনুরূপ বক্তব্য জানায়।[১]:২২৭ রোমান ক্যাথলিক চার্চ এর প্রতিক্রিয়ায় Casti Connubii নামে একটি এনসাইক্লিকাল (সমগ্র বিশ্বে রোমান ক্যাথলিক বিশপদের প্রেরিত পোপের চিঠি) জারি করে সকল প্রকার জন্মনিরোধ ব্যবহারের বিরুদ্ধে রোমান ক্যাথলিক চার্চের কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। এই চার্চ অদ্যাবধি এই অবস্থান থেকে সরে আসেনি।[১]:২২৮-৯
১৯৩০-এর দশক থেকেই কনডমের উপর থেকে আইনি বিধিনিষেধ শিথিল করা হতে থাকে।[১]:২১৬,২২৬,২৩৪[৮] তবে ফ্যাসিবাদী ইতালি ও নাৎসি জার্মানিতে কনডমের উপর বিধিনিষেধ বৃদ্ধি করা হয় (যদিও রোগ প্রতিরোধে কনডমের ব্যবহার তখনও অনুমোদিত ছিল)।[১]:২৫২,২৫৪-৫ মহামন্দার সময় স্ক্মিডের কনডম জনপ্রিয়তা অর্জন করে। স্ক্মিড সিমেন্ট-ডিপিং পদ্ধতিতে কনডম প্রস্তুত করত। তরুক্ষীর কনডমের তুলনায় এই জাতীয় কনডমে দুটি অধিক সুবিধা পাওয়া যেত। প্রথমত, সিমেন্ট-ডিপড কনডমের সঙ্গে তৈলমিশ্রিত ল্যুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যেত; এবং দ্বিতীয়ত পুরনো রবারের কনডম পুনর্ব্যবহারযোগ্য ছিল, যা সেই মন্দার বাজারে অনেকের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সুবিধাজনক প্রতিপন্ন হয়।[১]:২১৭-৯ ১৯৩০-এর দশকে মানের দিকটিতেও গুরুত্ব দেওয়া শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেদেশে বিক্রিত কনডমের মান নিয়মিত করতে শুরু করে।[১]:২২৩-৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কনডম শুধুমাত্র মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেনা জওয়ানদের মধ্যে বিতরণই করা হয় না, বরং চলচ্চিত্র, পোস্টার ও লেকচারের মাধ্যমে কনডমের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হতে থাকে।[১]:২৩৬-৮,২৫৯ ইউরোপীয় ও এশীয় সকল পক্ষের সামরিক বাহিনীগুলি যুদ্ধ চলাকালীন আগাগোড়াই সেনাবাহিনীতে কনডমের সরবরাহ অব্যাহত রেখেছিল। এমনকি জার্মানিতে ১৯৪১ সালে সকল নাগরিকের কনডম ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে গেলেও, সেনা জওয়ানদের কনডম ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হয়।[১]:২৫২-৪,২৫৭-৮ অন্যদিকে কনডম সহজলভ্য ছিল বলে সেনারা যৌনসংগম ছাড়াও অন্যান্য কাজে কনডম ব্যবহার করতে শুরু করে। এই রকম কিছু ব্যবহার অদ্যাবধি প্রচলিত রয়েছে।
যুদ্ধের পরেও কনডমের বিক্রি বাড়তে থাকে। ১৯৫৫-১৯৬৫ সময়কালের মধ্যে আমেরিকার প্রজননশীল জনসংখ্যার ৪২ শতাংশই জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কনডমের উপর নির্ভর করতেন। ১৯৫০-১৯৬০ সময়কালের মধ্যে ব্রিটেনে ৬০ শতাংশ বিবাহিত দম্পতি কনডম ব্যবহার করতেন। ১৯৬০ সালে বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি জন্মনিয়ন্ত্রণের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় পন্থায় পরিণত হয়। কিন্তু কনডম শক্তিশালী দ্বিতীয় বিকল্প হয়ে থেকেই যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশানাল ডেভেলপমেন্ট উন্নয়নশীল দেশগুলিকে "বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধি সমস্যা" সমাধানার্থে কনডম ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। ১৯৭০ সালের মধ্যে ভারতে লক্ষাধিক কনডম প্রতি বছর ব্যবহৃত হতে থাকে।[১]:২৬৭-৯,২৭২-৫ (সাম্প্রতিক দশকগুলিতে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে: ২০০৪ সালে ভারত সরকার পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে বিতরণার্থে ১.৯ বিলিয়ন কনডম ক্রয় করে।) [৯]
১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে মানের ব্যাপারে কড়াকড়ি করা হয়।[১০] কনডম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনি বাধাগুলিও বহুলাংশে অপসারিত হয় এই সময়।[১]:২৭৬-৯ ১৯৭৮ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রথম আইনসম্মত কনডম বিক্রি হয়।[১]:৩২৯-৩০ অবশ্য কনডমের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আইনি বাধা কিছু থেকেই যায়। ১৯৫০-এর দশকের শেষভাগে আমেরিকার ন্যাশানাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রডকাস্টার্স জাতীয় টেলিভিশনে কনডমের বিজ্ঞাপনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে; এই নীতি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল।[১]:২৭৩-৪,২৮৫
১৯৮০-এর দশকে জানা যায় যে এইডস একটি যৌনব্যাধিও হতে পারে।[১১] এরপর থেকেই এইচআইভি প্রতিরোধকল্পে কনডমের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হতে থাকে। কিছু রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য ব্যক্তিত্বের বিরোধিতা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে জাতীয়স্তরে কনডম ব্যবহারকে উৎসাহ দিতে প্রচারাভিযান চালানো হতে থাকে।[১]:২৯৯,৩০১,৩০৬-৭,৩১২-৮ এই সকল প্রচারাভিযানের ফলে কনডমের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।[১]:৩০৯-১৭
ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও বৃহত্তর সামাজিক স্বীকৃতির ফলে বিভিন্ন ধরনের পাইকারে দোকানে কনডম বিক্রি শুরু হয়ে যায়। এই সব দোকানের মধ্যে সুপারমার্কেট ও ওয়াল-মার্টের মতো ডিসকাউন্ট ডিপার্টমেন্ট স্টোর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[১]:৩০৫ ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কনডমের ব্যবহার বাড়তে থাকে। এরপরই গণমাধ্যমগুলি এইডস রোগাক্রান্তের সংখ্যাহ্রাসের দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।[১]:৩০৩-৪ এরপরই রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কনডমের ব্যবহার আকস্মিকভাবে হ্রাস পায়। এই ঘটনাকে নিরোধ অবসাদ বা কনডম অবসাদ বলে উল্লেখ করা হয়। পর্যবেক্ষকগণ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা উভয় অঞ্চলেই এই কনডম অবসাদের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন।[১২][১৩] এরপর থেকেই কনডম উৎপাদকগণ তাদের বিজ্ঞাপনের সুর বদলে ভয়াল বিজ্ঞাপনের বদলে মজার বিজ্ঞাপন প্রচার করতে থাকে।[১]:৩০৩-৪ এরপর কনডমের বাজারে কিছু নতুন উন্নতির ঘটনা ঘটে। ১৯৯০-এর দশকে ড্যুরেক্স কনডমের উৎপাদক সংস্থা অবন্তী নামের ব্র্যান্ডে প্রথম পলিআরথিন কনডম বাজারে ছাড়ে।[১]:৩২৪-৫ ২০০৩ সালে দেফিট নামে প্রথম কাস্টম সাইজ-টু-ফিট কনডম বাজারে আসে।[১৪] মনে করা হচ্ছে সারা বিশ্ব কনডমের ব্যবহার বাড়তেই থাকবে। একটি সমীক্ষার মতে ২০১৫ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলির ১৮.৬ বিলিয়ন কনডম প্রয়োজন হবে।[১]:৩৪২ বর্তমানে কনডম আধুনিক সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
২০১০ সালের মার্চ মাসে সুইজারল্যান্ড সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা ১২-১৪ বছরের ছেলেদের জন্য ছোটো আকারের কনডম প্রস্তুত করবে। এই কনডমের নাম রাখা হয়েছে হটশট। সেদেশের সরকারি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, বারো থেকে চোদ্দো বছর বয়সী ছেলেরা যৌনসংগমের সময় যথেষ্ট পরিমাণে প্রতিরোধক ব্যবহারের সুযোগ পায় না। একটি প্রমাণ আকারের কনডমের ব্যাস ২ ইঞ্চি (৫.২ সেন্টিমিটার); কিন্তু হটশটের ব্যাস ১.৭ ইঞ্চি (৪.৫ সেন্টিমিটার)। তবে উভয় প্রকার কনডমের দৈর্ঘ্য একই থাকবে – ৭.৪ ইঞ্চি (১৯ সেন্টিমিটার)। একটি জার্মান সমীক্ষায় দেখা গেছে ১২,৯৭০ জন ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সীদের দলে এক চতুর্থাংশেরই বক্তব্য প্রমাণ আকারের কনডম বেশ বড়ো। অন্যদিকে সুইজারল্যান্ডের সরকারি গবেষণা ও বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট পারসোন্যালিটি সাইকোলজির গবেষণা পত্রের ভিত্তিতে পরিবার পরিকল্পনা গোষ্ঠীগুলি এবং সুইস এইডস ফেডারেশন হটশট উৎপাদনের সপক্ষে প্রচার চালায়।[১৫]
ব্যুৎপত্তি ও অন্যান্য নাম
কনডম শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। এর বুৎপত্তি অজ্ঞাত। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কনডমের আবিষ্কার ও নামকরণ করেছিলেন "ডাঃ কনডম" বা "আর্ল অফ কনডম" নামে রাজা দ্বিতীয় চার্লসের এক সহকারী। তবে উক্ত নামের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো ঐতিহাসিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। তাছাড়া রাজা দ্বিতীয় চার্লসের সিংহাসনে আরোহণের প্রায় একশো বছর আগেই কনডমের ব্যবহার প্রচলিত হয়েছিল।[১]:৫৪,৬৮
বিভিন্ন লাতিন শব্দ থেকে কনডম শব্দটির বুৎপত্তি সম্ভাবনার কথা বলা হয়ে থাকে। এই শব্দগুলি হল: condon (পাত্র),[১৬] condamina (বাড়ি),[১৭] ও cumdum (আচ্ছাদন বা বাক্স)।[১]:৭০-১ কেউ কেউ মনে করেন ইতালীয় শব্দ guantone থেকে শব্দটির ব্যুৎপত্তি; উল্লেখ্য guantone শব্দটি আবার guanto শব্দ থেকে ব্যুৎপন্ন যার অর্থ গ্লাভস।[১৮] ১৯৮১ সালে উইলিয়াম ই. ক্রুক একটি নিবন্ধে লেখেন, "As for the word 'condom', I need state only that its origin remains completely unknown, and there ends this search for an etymology."[১৯] আধুনিক অভিধানগুলিতেও শব্দটির বুৎপত্তি স্থলে "অজ্ঞাত" কথাটি লেখা হয়।[২০]
কনডম বোঝাতে অন্যান্য শব্দও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উত্তর আমেরিকায় কনডমকে সাধারণত prophylactics বা rubbers বলা হয়। ব্রিটেনে কখনও কখনও একে French letters-ও বলা হয়।[২১] তাছাড়া কনডম অনেক সময় উৎপাদক সংস্থার নামেও পরিচিতি লাভ করে।
বৈচিত্র্য
প্রত্যেক কনডমের অগ্রভাগে একটি আধার স্ফীতাংশ বিদ্যমান। এর ফলে রেতঃস্খলনের পর কনডমে বীর্য ধরে রাখতে সুবিধা হয়। কনডম অতিবৃহৎ থেকে আরামদায়ক – বিভিন্ন আকারের হতে পারে। যৌনসঙ্গীর কামোত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য কনডমে আবরণভাগেও নানা বৈচিত্র্য আনা হয়ে থাকে। পুরুষাঙ্গ প্রবেশের সুবিধার জন্য কনডমের সঙ্গে ল্যুব্রিকেন্টও ব্যবহার করা হয়। ফ্লেভার্ড বা স্বাদযুক্ত কনডম মূলত মৌখিক যৌনতার জন্য ব্যবহৃত হয়। আগেই বলা হয়েছে, অধিকাংশ কনডম তরুক্ষীরে নির্মিত হয়, তবে পলিআরথিন ও ল্যাম্বস্কিন নির্মিত কনডমও সুলভ।
উপাদান
প্রাকৃতিক তরুক্ষীর
তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্সের স্থিতিস্থাপকতা অসাধারণ: এর প্রসারণ ক্ষমতা ৩০ এমপিএ, এবং ভাঙার আগে এটিকে ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত টেনে বাড়ানো যায়।[২২] ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক মান সংস্থা কনডম উৎপাদনের মান নির্ধারিত করে দেয় (আইএসও ৪০৭৪, ন্যাচারাল ল্যাটেক্স রাবার কনডম)। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবশ্য ইউরোপীয় মান কমিটি নির্ধারিত মানই অনুসরণ করে (ডাইরেক্টিভ ৯৩/৪২/ইইসি কনসার্নিং মেডিক্যাল ডেভাইসেস)। প্রত্যেক ল্যাটেক্স কনডমে ছিদ্র সৃষ্টির সম্ভাবনা বিদ্যুতের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় পাস করলে তবেই সেই কনডমকে গুটিয়ে মোড়কবন্দী করা হয়। এছাড়া কনডমের প্রত্যেক ব্যাচের একটি অংশের জলের লিক ও হাওয়ায় ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখা হয়।[২৩]
নানা সুবিধার জন্য ল্যাটেক্স এখন কনডম প্রস্তুতির জনপ্রিয়তম উপাদান। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। পেট্রোলিয়াম জেলির মতো তেলভিত্তিক ল্যুব্রিকেন্টে তেল থাকার জন্য ল্যাটেক্স কনডম ফেটে যাওয়ার বা তার স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।[২৪] তাছাড়া ল্যাটেক্স ব্যবহারে ল্যাটেক্স অ্যালার্জিও দেখা দিতে পারে। এই জন্য কনডম উৎপাদনে অন্যান্য উপাদানও ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালের মে মাসে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভাইটেক্স তরুক্ষীর নির্মিত কনডম উৎপাদনে অনুমোদন জানিয়েছে।[২৫] এই জাতীয় তরুক্ষীর ৯০ শতাংশ অ্যালার্জি-উৎপাদক প্রোটিন অপসারিত করে।[২৬] সিনথেটিক ল্যাটেক্স বা পলিআইসোপ্রিন নির্মিত অ্যালার্জিন-মুক্ত কনডমও সুলভ।[২৭]
সিনথেটিক
অ-তরুক্ষীর কনডমগুলির মধ্যে পলিআরথিন-নির্মিত কনডমগুলি সর্বাপেক্ষা সুলভ। এছাড়া অ্যাট-১০ রেসিন-এর মতো অন্যান্য সিনথেটিক উপাদানেও কনডম তৈরি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে পলিআইসোপ্রিন দিয়েও কনডম তৈরি হচ্ছে।[২৭]
পলিইউরোথিন কনডমের ল্যাটেক্স কনডমের মতোই চওড়া ও মোটা হয়। অধিকাংশ পলিআরথিন কনডম ০.০৪-০.০৭ মিলিমিটার মোটা হয়ে থাকে।[২৮] মহিলাদের কনডমের উপাদান হিসেবেও পলিআরথিন ব্যবহৃত হয়।
বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রবিচারে পলিআরথিন ল্যাটেক্সের তুলনায় অনেক বেশি ভাল: ল্যাটেক্সের তুলনায় এটি অধিক পরিমাণে তাপ সহ্য করতে পারে, পলিআরথিন তাপমাত্রা বা অতিবেগুনি রশ্মির প্রতি ল্যাটেক্সের মতো সংবেদনশীল নয়। তাই এর ব্যবহার না করা অবস্থায় এটি রেখে দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা সাবধানী না হলেও চলে। এই অবস্থায় এই কনডম অনেক বেশি দিন রেখে দেওয়া যায়। এছাড়া এটি তেলভিত্তিক ল্যুব্রিকেন্টের সঙ্গে ব্যবহার করা যায়; এটি ল্যাটেক্সের তুলনায় কম অ্যালার্জিক এবং এর কোনো দুর্গন্ধ নেই।[২৯] এই কনডমের এইচআইভি প্রতিরোধ ক্ষমতা ল্যাটেক্স কনডমের সমরূপ। এই কারণে এইচআইভি প্রতিরোধে এই কনডম মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন পেয়েছে।[৩০]
যদিও পলিআরথিন কনডম ল্যাটেক্স কনডমের তুলনায় কম স্থিতিস্থাপক এবং এই কনডমের ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।[২৯][৩১] তাছাড়া পলিআরথিন কনডমের দামও বেশি।
পলিআইসোপ্রিন প্রাকৃতিক রবার ল্যাটেক্সেরই সিনথেটিক সংস্করণ। এর দাম আরও বেশি।[৩২] এতে ল্যাটেক্সের কিছু গুণ পাওয়া যায় (যেমন এটি অনেক নরম ও পলিআরথিন কনডমের তুলনায় বেশি স্থিতিস্থাপক)।[২৭] এছাড়া ল্যাটেক্স অ্যালার্জিসৃষ্টিকারী প্রোটিনগুলিও এতে নেই।[৩২]
মহিলাদের কনডম
পাদটীকা
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য র ল শ ষ স হ ড় ঢ় য় ৎ কক কখ কগ কঘ কঙ কচ কছ কজ কঝ কঞ কট কঠ কড কঢ কণ কত কথ কদ কধ কন Collier, Aine (২০০৭)। The Humble Little Condom: A History। Amherst, NY: Prometheus Books। আইএসবিএন 978-1-59102-556-6।
- ↑ Oriel, JD (১৯৯৪)। The Scars of Venus: A History of Venereology। London: Springer-Verlag। আইএসবিএন 0-387-19844-X।
- ↑ Diamond, Jared (১৯৯৭)। Guns, Germs and Steel। New York: W.W. Norton। পৃষ্ঠা 210। আইএসবিএন 0-393-03891-2।
- ↑ "Special Topic: History of Condom Use"। Population Action International। ২০০২। ২০০৭-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-১৮।
- ↑ Youssef, H (১ এপ্রিল ১৯৯৩)। "The history of the condom"। Journal of the Royal Society of Medicine। 86 (4): 226–228। পিএমআইডি 7802734। পিএমসি 1293956 । ১ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০৩।
- ↑ Reprinted from India Rubber World (১৮৯১-০১-৩১)। "CHARLES GOODYEAR—The life and discoveries of the inventor of vulcanized India rubber"। Scientific American Supplement। New York: Munn & Co. (787)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০৮।
"The Charles Goodyear Story: The Strange Story of Rubber"। Reader's Digest। Pleasantville, New York: The Reader's Digest Association। ১৯৫৮। ২০০৮-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-০৮। অজানা প্যারামিটার|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ ক খ "Rubbers haven't always been made of rubber"। Billy Boy: The excitingly different condom। ২০০৬-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০৯।
- ↑ "Biographical Note"। The Margaret Sanger Papers। Sophia Smith Collection, Smith College, Northampton, Mass.। ১৯৯৫। ২০০৬-০৯-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২১।
- ↑ Sharma, AP (2006). "Annual Report of the Tariff Commission" (PDF). India government. Retrieved on 2009-07-16. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৬-১৯ তারিখে "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২০০৯-০৬-১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-২৭।
- ↑ Collier, pp.267,285
- ↑ Centers for Disease Control (CDC) (১৯৮২-০৬-১৮)। "A Cluster of Kaposi's Sarcoma and Pneumocystis carinii Pneumonia among Homosexual Male Residents of Los Angeles and range Counties, California"। Morbidity and Mortality Weekly Report। Centers for Disease Control and Prevention। 31 (23): 305–7। পিএমআইডি 6811844। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-১৫।
- ↑ 1Adam, Barry D; Husbands, Winston; Murray, James; Maxwell, John (২০০৫)। "AIDS optimism, condom fatigue, or self-esteem? Explaining unsafe sex among gay and bisexual men"। Journal of Sex Research। FindArticles.com। ২০১২-০৫-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-২৯। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Walder, Rupert (২০০৭-০৮-৩১)। "Condom Fatigue in Western Europe?"। Rupert Walder's blog। RH Reality Check। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-২৯।
Jazz। "Condom Fatigue Or Prevention Fatigue"। Isnare.com। ২০১১-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৬-২৯। - ↑ ""For Condoms, Maybe Size Matters After All""। CBS News। ২০০৭-১০-১১। ২০০৮-১০-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১১।
- ↑ "Extra small condoms for 12-year-old boys go on sale in Switzerland"। ৬ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১০।
- ↑ James, Susan; Kepron, Charis (২০০২)। "Of Lemons, Yams and Crocodile Dung: A Brief History of Birth Control" (পিডিএফ)। University of Toronto Medical Journal। 79 (2): 156–158। ২০০৬-১০-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-২৬। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Thundy, Zacharias P (Summer ১৯৮৫)। "The Etymology of Condom"। American Speech। 60 (2): 177–179। ডিওআই:10.2307/455309। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৭।
- ↑ Harper, Douglas (২০০১)। "Condom"। Online Etymology Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৭। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Kruck, William E (১৯৮১)। "Looking for Dr Condom"। Publication of the American Dialect Society। 66 (7): 1–105।
- ↑ "Condom"। Mirriam-Webster's Online Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-২৬।
- ↑ "French letter"। Merriam-Webster's Online Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৭-২৬।
- ↑ Program for the Introduction and Adaptation of Contraceptive Technology PIACT (১৯৮০)। "Relationship of condom strength to failure during use"। PIACT Prod News। 2 (2): 1–2। পিএমআইডি 12264044।
- ↑ Nordenberg, Tamar (১৯৯৮)। "Condoms: Barriers to Bad News"। FDA Consumer magazine। U.S. Food and Drug Administration। ২০১০-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৭। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Spruyt, Alan B (১৯৯৮)। "Chapter 3: User Behaviors and Characteristics Related to Condom Failure"। The Latex Condom: Recent Advances, Future Directions। Family Health International। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৮।
- ↑ "FDA Clearance for Envy Natural Rubber Latex Condom Made with Vytex NRL" (পিডিএফ) (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Vystar। ২০০৯-০৫-০৬। ২০১১-১০-০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-২৬।
- ↑ "How Vytex Works"। Vystar। ২০০৯। ২০১০-০৫-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-২৬।
- ↑ ক খ গ "Lifestyles Condoms Introduces Polyisoprene Non-latex" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। HealthNewsDigest.com। ২০০৮-০৭-৩১। ২০০৮-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২৪।
- ↑ "Condoms"। Condom Statistics and Sizes। ২০০৮-০৩-১২। ২০০৮-০৩-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১২।
- ↑ ক খ "Nonlatex vs Latex Condoms: An Update"। The Contraception Report। Contraception Online। 14 (2)। ২০০৩। ২০০৬-০৯-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-১৪। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "Are polyurethane condoms as effective as latex ones?"। Go Ask Alice!। ফেব্রুয়ারি ২২, ২০০৫। ২০০৭-০৫-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৫।
- ↑ "Prefers polyurethane protection"। Go Ask Alice!। মার্চ ৪, ২০০৫। ২০০৭-০৬-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৫।
- ↑ ক খ "Polyisoprene Surgical Gloves"। SurgicalGlove.net। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৮-২৪।
অতিরিক্ত পঠন
- Green, Shirley (১৯৭২)। The Curious History of Contraception। New York: St. Martin's Press।
বহিঃসংযোগ
- Male Latex Condoms and Sexually Transmitted Diseases — from the US Center for Disease Control.
- How To Put On A Condom — from VideoJug