ওয়াহাবি আন্দোলন

ধর্মীয় আন্দোলন বা ইসলামের একটি শাখাগোষ্ঠী
(ওয়াহাবী আন্দোলন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ওয়াহাবী আন্দোলন (আরবীঃ وهابية ওয়াহাবিয়াহ) হচ্ছে ধর্মীয় আন্দোলন বা ইসলামের একটি শাখাগোষ্ঠী[][] যা অর্থোডক্স, ধর্মের দিক থেকে অতিচরমপন্থী,"[] বিশুদ্ধবাদী,"[][] একেশ্বরবাদীর উপাসনার জন্য ইসলামী পূনর্জাগরণ,[] চরমপন্থী আন্দোলন[] ইত্যাদি নামে পরিচিত। ইবনে তাইমিয়া এবং আহমাদ ইবনে হান্বাল এর শিক্ষায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে[] এই মতবাদে বিশ্বাসীরা ইসলামের মূলধারা থেকে বিচ্যুতদেরকে কোরআন ও হাদিসের বর্ণিত পথে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

বিশ্বের ওয়াহাবী মতবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে[] বাস করে। সৌদি আরবের ২২.৯%, কাতারের ৪৬.৮৭%,[] আমিরাতের[] ৪৪.৮%, বাহরাইনের ৫.৭%, কুয়েতের[] ২.১৭% জনগণ ওয়াহাবী পন্থী। সৌদি আরবের ওয়াহাবী পন্থী লোকের বেশীর ভাগ নজদ (রিয়াদ) অঞ্চলে বাস করে।[] সৌদি আরব, কাতার,[১০] শারজাহ এবং রাস আল খাইমাহ তে ইসলামের অফিশিয়াল সংস্করণ হচ্ছে ওয়াহাবী মতবাদ।

নামকরণ

সম্পাদনা

Muhammad ibn ʿAbd al-Wahhab (আরবি: محمد بن عبد الوهاب‎‎;বাংলায়: মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব) (জন্ম ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে, মৃত্যু ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে) একজন ইসলামিক সালাফি পণ্ডিত এবং ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা।তাঁর জন্ম নজদ প্রদেশে (বর্তমান রিয়াদ)।মূলত তাঁর নামানুসারে এই আন্দোলনের নাম হয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে বিস্তার

সম্পাদনা

কেউ কেউ মনে করেন ভারতে উত্তর প্রদেশের সৈয়দ আহমদ বেরলভি ১৮২২সালে মক্কায় হজ করতে গিয়ে আবদুল ওয়াহাবের সংস্পর্শে এসে প্রভাবিত হন এবং তিনি ভারতে ফিরে এসে ওয়াহাবি অন্দোলনের অনুকরণে ভারতে ধর্মসংষ্কার কার্যক্রম শুরু করেন। যদি ও এই বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না, কেননা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব ১৭৯২ সালে মৃত্যু বরণ করেন , তাদের মাঝে লেক্বা তথা সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই।তবে তিনি ফকির ও মুহাদ্দিস আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভীর মাধ্যমে বেশি প্রভাবিত হন,আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী ভারতবর্ষকে দারুল হারব ঘোষণা করেছিলেন, এতে মুসলমানরা প্রভাবিত হন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, সৈয়দ আহমেদ ব্রেলবী শিখদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং শিখদের সাথে ইংরেজদের সুসম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে ইংরেজরা শিখদের সাথে সমন্বয় করে তাঁকে ওহাবী মতবাদ প্রচারের সাথে যুক্ত হওয়ার ভুয়া ইতিহাস তৈরি করে। বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে, ভারতে ওহাবী মতবাদের প্রচার করেছিল মাজহাব বিরোধী আহলে হাদিস আকিদার অনুসারীরা।

সমালোচনা

সম্পাদনা

২০১৮ সালের ২২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে সফরে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সৌদি প্রিন্স ডিনাইস কুশনার ইজ ইন হিজ পকেট শীর্ষক ৭৫ মিনিটের এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ বিন সালমান বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে মোকাবেলায় সৌদি আরব মুসলিম দেশগুলোতে ওয়াহাবি মতবাদ বিস্তারে অর্থায়ন করে।এর লক্ষ্য ছিল, মুসলিম বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে পশ্চিমাদের জয়লাভ করা। [১১][১২][১৩][১৪] রাশিয়াভিত্তিক স্পুটনিক নিউজ, আরটিসহ বিশ্বের আরো কয়েকটি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়। [১৫][১৬][১৭]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Wahhabi"। GlobalSecurity.org। ২০০৫-০৪-২৭। ২০০৫-০৫-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১০ 
  2. although most Sunnis dispute this and tend to disassociate themselves with adherents to the Wahhabi Ideology.(source: http://www.sunnah.org ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, Wahhabism: Understanding the Roots and Role Models of Islamic Extremism, by Zubair Qamar, condensed and edited by ASFA staff)
  3. Our good name: a company's fight to defend its honor J. Phillip London, C.A.C.I., Inc – 2008, "wahhabism is considered in particular an ultra-conservative orientation".
  4. Kampeas, Ron। "Fundamentalist Wahhabism Comes to U.S."। Belief.net, Associate Press। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  5. "Wahhābī"Encyclopædia Britannica Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১২ 
  6. Commins, David। The Wahhabi Mission and Saudi Arabia। I.B. Tauris। পৃষ্ঠা vi। 
  7. http://www.sunnah.org ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে, Wahhabism: Understanding the Roots and Role Models of Islamic Extremism, by Zubair Qamar, condensed and edited by ASFA staff
  8. "Wahhābī"Encyclopædia Britannica Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১২ 
  9. "Demography of Religion in the Gulf"Mehrdad Izady। ২০১৩। 
  10. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  11. "ওয়াহাবিবাদ নিয়ে যা বললেন সালমান"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  12. "পশ্চিমাদের কথায় ওয়াহাবিবাদ প্রচার করে সৌদি"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  13. "রুশ প্রভাব ঠেকাতে পশ্চিমাদের কথায় ওয়াহাবিবাদের প্রচার: সৌদি প্রিন্স"। bdnews24.com। ৩১ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  14. "পশ্চিমাদের কথাতেই ওয়াহাবিবাদ প্রচার করেছে সৌদি :প্রিন্স"। সমকাল। ৩১ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  15. "Spread of Wahhabism was done at request of West during Cold War – Saudi crown prince"। RT। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  16. "Cold War-era Wahhabism used as tool against Soviets on US demand, Saudi Crown Prince Salman confesses"। Daily Sabah। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  17. "Saudi Arabia spread Wahhabism to counter Soviet influence, says crown prince"। GEO.tv। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৮ 

বিস্তারিত পড়ুন

সম্পাদনা
  • Saint-Prot, Charles. Islam. L'avenir de la tradition entre révolution et occidentalisation (Islam. The Future of Tradition between Revolution and Westernization). Paris: Le Rocher, 2008.

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
Critical