ওবায়দুল হাসান
ওবায়দুল হাসান শাহীন (জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৫৯) একজন বাংলাদেশী বিচারপতি। তিনি বাংলাদেশের সাবেক ২৪ তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। পূর্বে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক ছিলেন।[১] তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রণীত অনুসন্ধান কমিটি, ২০২২-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[২] ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।[৩] তিনি ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন।[৪]
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান | |
---|---|
বাংলাদেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ - ১০ আগস্ট ২০২৪ | |
নিয়োগদাতা | বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি |
রাষ্ট্রপতি | মোঃ সাহাবুদ্দিন |
পূর্বসূরী | হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী |
উত্তরসূরী | সৈয়দ রেফাত আহমেদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১১ জানুয়ারি ১৯৫৯ নেত্রকোনা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
সম্পর্ক | সাজ্জাদুল হাসান (ভাই) |
মাতা | বেগম হোসনে আরা হোসেন |
পিতা | আখলাকুল হোসাইন আহমেদ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
জন্ম ও পরিচয়
সম্পাদনাওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] তাঁর বাবার নাম আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন। তাঁর পিতা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। তার অনুজ সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোণা ৪ (মদন, মোহন গঞ্জ ও খালিয়াজুরী) আসনের সংসদ সদস্য। সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহণ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাওবায়দুল হাসানের স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স) হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ সাফকাত হাসান। তিনি ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএল.এম. ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ হতে বি.এস.এস. (অনার্স), এম.এস.এস. (অর্থনীতি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএল.বি. ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাওবায়দুল হাসান ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের সনদ প্রাপ্ত হন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ (পাঁচ) বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০১ সংসদীয় আসন ১৬৪ নেত্রকোণা ৪ মদন, মোহন গঞ্জ ও খালিয়াজুরী নির্বাচনীয় এলাকা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ২০১২ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে উক্ত ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন তার সহকর্মী বিচারকদের সাথে ১১টি মামলার রায় প্রদান করেন। তিনি ২০২০ সালের ০৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।[৬][৭]
ওবায়দুল হাসান ২০১৭ সালে তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন-এর নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে চেয়ারম্যান করে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।
তিনি ১৯৯১ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং বুয়েন্স আয়ার্স, আর্জেন্টিনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসরত হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লোভিয়া এর বিচারকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন।
তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য[৮] এবং 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য' [৯] রবীন্দ্রনাথ ভাবনা ও অন্যান্য নামক তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন দৈনিকের কলাম লেখক।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে তাকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।[১০] ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে শপথগ্রহণ পূর্বক ওবায়দুল হাসান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১১][১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট"। ww2.supremecourt.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-১৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হলেন ওবায়দুল হাসান"। মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১২।
- ↑ "দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১২।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২৪-০৮-১০)। "প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১০।
- ↑ "সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক হিসেবে শপথ নিলেন দুই বিচারপতি"। চ্যানেল আই অনলাইন। ২০২০-০৯-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-১৯।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "বিচারপতি ওবায়দুলের 'চিন্তা' মানা হলো?"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-১৯।
- ↑ "জাতির পিতার সমাধিতে দুই বিচারপতির শ্রদ্ধা"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-১৯।
- ↑ "মুক্তিযুদ্ধের ওপর বিচারপতির লেখা বই গৌরবের: প্রধান বিচারপতি"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলাদেশ কোনো খুনির দেশ নয় : প্রধান বিচারপতি"। wwww.jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২৭।
- ↑ "প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রজ্ঞাপন"। আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২০২৩-০৯-১২।
- ↑ "ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি"। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৬।
- ↑ "প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান"। প্রথম আলো। ২০২৩-০৯-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৬।