এস এম ইমদাদুল হক
শহীদ এস এম ইমদাদুল হক (জন্ম: ১৯৪৬ - মৃত্যু: ৭ নভেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তার গেজেট নম্বর ৩৩। [১]
এস এম ইমদাদুল হক | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ১৯৪৬ |
মৃত্যু | ৭ নভেম্বর ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর উত্তম |
অফিস | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা
এস এম ইমদাদুল হকের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মধুমতী নদীতীরবর্তী মাটলা গ্রামে। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। এ পরিবারের চার ভাই মুক্তিযোদ্ধা। তার বাবার নাম আবদুল মালেক এবং মায়ের নাম রওশন নেছা। ইমদাদুল হক অবিবাহিত।
কর্মজীবনসম্পাদনা
১৯৭১ সালে এস এম ইমদাদুল হক ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। তিনি চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার। সহকর্মী বাঙালি কয়েকজনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদিন তারা ১২ জন একসঙ্গে পালিয়ে ভারতে যান। এস এম ইমদাদুল হককে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ১১ নম্বর সেক্টর এলাকায়, পরে জেড ফোর্সের অধীনে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। কয়েকটি যুদ্ধে যথেষ্ট সাহস ও রণকৌশল প্রদর্শন করেন। [২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাসম্পাদনা
১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর মৌলভীবাজার জেলার ধামাই চা-বাগানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর স্বল্প তৎপরতার কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই এলাকায় ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ধামাই চা-বাগানের অবস্থান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ধামাই চা-বাগানে আক্রমণ করা, চা-বাগানের দখল নেওয়া মুক্তিবাহিনীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। আর ধামাই চা-বাগানে আক্রমণের দায়িত্ব পড়ে এস এম ইমদাদুল হকের ওপর। ৭ নভেম্বর রাতে তার নেতৃত্বে প্রায় ১০০ মুক্তিযোদ্ধা সীমান্ত অতিক্রম করে চা-বাগান থেকে দূরে এক স্থানে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নেন। আক্রমণের নির্ধারিত সময় ছিল ভোররাত। আক্রমণ শুরুর আগে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এগিয়ে যান পাকিস্তানিদের অবস্থান নিজ চোখে দেখার জন্য। এ সময় বাগানে থাকা কয়েকটি কুকুর ডেকে উঠলে পাকিস্তানিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে গুলি শুরু করে। তার সঙ্গে থাকা মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি করেন। তিনি নিজে পাকিস্তানি ক্যাম্প লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়েন। শুরু হয়ে যায় তীব্র গোলাগুলি।
এর মধ্যে দূরে থাকা সহযোদ্ধারাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। ইমদাদুল হক সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন। একপর্যায়ে কয়েকজন সহযোদ্ধাকে নিয়ে ঢুকে পড়েন পাকিস্তানি অবস্থানের একদম ভেতরে। এ সময় আহত হন তার এক সহযোদ্ধা। তাকে উদ্ধার করতে তিনি নিজেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আর ঠিক তখনই গুলি এসে লাগে তার বুকে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শহীদ হন এই সাহসী যোদ্ধা। সে দিন যুদ্ধে আরও দুজন শহীদ হন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তার এবং অন্য দুই সহযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চল্লিশধন কদমতলায়। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা
পাদটীকাসম্পাদনা
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ২১-০৮-২০১১ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ:২১-০৮-২০১১"। ২০২০-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ। ঢাকা: জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৬৫। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৩। আইএসবিএন 9789849025375।