গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।[১][২] এটি ঢাকা বিভাগের অধীন গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে একটি। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সংসদীয় আসন গোপালগঞ্জ-২ এর অধীন। গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ও কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা ইউনিয়ন, হাতিয়াড়া ইউনিয়ন, পুইশুড় ইউনিয়ন, বেথুড়ী ইউনিয়ন, নিজামকান্দি ইউনিয়ন, ওরাকান্দি ইউনিয়ন ও ফুকরা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-২ আসনটি জাতীয় সংসদে ২১৬নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।[৩]
গোপালগঞ্জ সদর | |
---|---|
উপজেলা | |
বাংলাদেশে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°০′৫২″ উত্তর ৮৯°৪৯′৫৭″ পূর্ব / ২৩.০১৪৪৪° উত্তর ৮৯.৮৩২৫০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | গোপালগঞ্জ জেলা |
সরকার | |
• উপজেলা চেয়ারম্যান | শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু |
আয়তন | |
• মোট | ৩৮৯.৪২ বর্গকিমি (১৫০.৩৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৩,১৯,৯৩৪ |
• জনঘনত্ব | ৮২০/বর্গকিমি (২,১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৪.৫৩% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৮১০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৩৫ ৩২ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
অবস্থান ও আয়তনসম্পাদনা
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°০১′০০″ উত্তর ৮৯°৫০′০০″ পূর্ব / ২৩.০১৬৭° উত্তর ৮৯.৮৩৩৩° পূর্ব। এই উপজেলাটির আয়তন ৩৮৯.৪২ বর্গকিলোমিটার। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তরে মুকসুদপুর উপজেলা ওকাশিয়ানী উপজেলা ও নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলা, দক্ষিণে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলা, পূর্বে কোটালীপাড়া উপজেলা ও মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা, পশ্চিমে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলা ও বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলা।[৪]
ইতিহাসসম্পাদনা
আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা' গোপালগঞ্জ জেলার বৃহত্তম উপজেলা। গোপালগঞ্জের প্রাচীন এবং অতীত নাম 'রাজগঞ্জ ছিল বলে জানা যায়। কথিত আছে, সিপাই মিউনিটির সময় রাসমনি নামক এক জেলের মেয়ে একজন উচ্চ পদস্থ ইংরেজ সাহেবের প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীতে তারই পুরস্কার হিসাবে বৃটিশ সরকার রাসমনিকে মকিমপুর স্টেটের জমিদারী প্রদান করেন এবং তাঁকে রাণী উপাধিতে ভুষিত করেন। রাণী রাসমনি কলকাতার কর্পোরেশন ষ্টীটে বসবাস করতেন। মাঝে মাঝে জমিদারী দেখাশুনার জন্য রাণী আসতেন তার জমিদারী এলাকায়। কলকাতা থেকে এখানে আসতে হতো পানসী বা বজরা নৌকায় করে। একবার রাসমনি তার আদরের নাতি গোপালকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। কলকাতা শহরে বড় হয়েছে গোপাল। বিল বাওড় নদী বিমুগ্ধ দৃশ্যের সাথে তার পরিচয় নেই। রাজগঞ্জ ঘাটে পানসী থেকে নেমে গোপাল যে দিকে তাকায় সেদিকেই অন্তহীন প্রকৃতি। বিলে ঝিলে শাপলা শালুকের মেলা দেখে আনন্দে আত্তহারা হয়ে পড়ে সে। রাজগঞ্জ এলাকাটাকে খুব ভাল লাগে গোপালের। রাণী রাসমনি তার প্রিয় নাতির ভালবাসার জায়গাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য রাজগঞ্জের 'রাজ' শব্দটির স্থলে 'গোপালের' নাম যুক্ত করে এলাকার নাম রাখেন 'গোপালগঞ্জ'।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গোপালগঞ্জ এলাকা ফরিদপুর জেলায় মাদারীপুর মহকুমা ও থানাধীন ছিল। ঐ সময়ে মাদারীপুরের সাথে এ এলাকায় জলপথ ছাড়া কোন স্থল পথের সংযোগ ছিল না। কোন স্টীমার বা লঞ্চ চলাচলও ছিল না। কেবলমাত্র বাচাড়িনৌকা, পানসি নৌকা, টাবুরিয়া নৌকা, গয়না নৌকা, ইত্যাদি ছিল চলাচলের একমাত্র বাহন। যোগাযোগ অসুবিধার দরুন ১৮৭০ সালে গোপালগঞ্জ থানা স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৯০৯ খ্রি. সদর মহকুমা থেকে কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর থানা এবং মাদারীপুর থেকে গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থানা নিয়ে গোপালগজ্ঞ মহকুমা স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি গোপালগজ্ঞ পৌরসভা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোপালগজ্ঞ সদর থানা উপজেলায় উন্নীত হয়।
প্রশাসনিক এলাকাসম্পাদনা
১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোপালগঞ্জ সদর থানা উপজেলায় উন্নীত হয়। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ২১টি ইউনিয়ন, ১২৭টি মৌজা ও ১৯৭টি গ্রাম রয়েছে। বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু।[৫]
ইউনিয়নসমূহ
- জালালাবাদ ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- বৌলতলী ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- শুকতাইল ইউনিয়ন
- চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন
- গোপীনাথপুর ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- পাইককান্দি ইউনিয়ন
- উরফি ইউনিয়ন
- লতিফপুর ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- সাতপাড় ইউনিয়ন
- সাহাপুর ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- হরিদাসপুর ইউনিয়ন
- উলপুর ইউনিয়ন
- নিজড়া ইউনিয়ন
- করপাড়া ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- দুর্গাপুর ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- কাজুলিয়া ইউনিয়ন
- কাঠি ইউনিয়ন
- মাঝিগাতী ইউনিয়ন
- রঘুনাথপুর ইউনিয়ন, গোপালগঞ্জ সদর
- গোবরা ইউনিয়ন
- বোড়াশী ইউনিয়ন
১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারী গোপালগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। পৌরসভাটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০ জানুয়ারী ১৯৭২ তৃতীয় শ্রেণী (গ-শ্রেণী), ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ দ্বিতীয় শ্রেণীর (খ-শ্রেণী) এবং ১০ জুলাই ১৯৯৬ প্রথম শ্রেণীর (ক-শ্রেণী) পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃত পায়। পৌরসভার আয়তন ১৩.৮২ বর্গ কি:মি:। পৌরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ৯টি। বর্তমানে কাজী লিয়াকত আলী পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জনসংখ্যার উপাত্তসম্পাদনা
২০১১ সালের জেলা পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৪৪,০০৮ জন যাদের মধ্যে পুরুষ ১,৭২,৯৯১ এবং নারী ১,৭১,০১৭ জন।[৬]
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসম্পাদনা
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী গোপালগঞ্জ শহরের গড় সাক্ষরতার হার শতকরা ৬১.৮ ভাগ (পুরুষ ৬৪.৪%, মহিলা-৫৯.২%)। ২০১১ সালে উপজেলার গোবরা ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জেলার প্রথম এবং একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ।পরবর্তীতে, ২০১২ সালে এখানে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এ উপজেলায় ১৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৭৭টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪১টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ১১টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি সরকারি ও ১৬টি বেসরকারি কলেজ, ৬টি মাদ্রাসা, ৭১ টি কওমি মাদ্রাসা এবং ১৯টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে।[৬] উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে-
বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজসম্পাদনা
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
- শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ
- হাজী লালমিয়া সিটি কলেজ, গোপালগঞ্জ
- সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, গোপালগঞ্জ
- সুলতানশাহী কেকানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া সুলতানশাহী ঘোড়াদাইড় সুলতানুল উলুম মাদরাসা
- কোর্টমসজিদ মাদ্রাসা, গোপালগঞ্জ সদর
- এস.এম.মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ সদর।
মাদরাসাসম্পাদনা
- পাইককান্দি পঞ্চপল্লী মাদরাসা, পাইককান্দি, গোপালগঞ্জ সদর
অর্থনীতিসম্পাদনা
গোপালগঞ্জ মূলত কৃষি প্রধান অঞ্চল। এখানে ধান, গম, পাট, আখ, নানা ধরনের সবজি জন্মে। এছাড়া মৎস্য আহরণসহ এ জায়গার লোকজন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। বর্তমানে প্রবাসে বসবাসকারীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নদনদীসম্পাদনা
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় অনেকগুলো নদী আছে। সেগুলো হচ্ছে মধুমতি নদী, মাদারীপুর নদী এবং আঠারোবাঁকি নদী।[৭][৮]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পাদনা
- শেখ ফজলুল করিম সেলিম (জাতীয় সংসদ সদস্য)
- মথুরানাথ বসু (খ্রীষ্টিয়ান ধর্ম প্রচার);
- মোল্লা জালাল উদ্দীন আহমেদ (জাতীয় সংসদ সদস্য);
ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ঐতিহ্যসম্পাদনা
- উলপুর জমিদার বাড়ি;
- গিরীশ চন্দ্র সেনের জমিদার বাড়ি;
- শেখ কামাল স্টেডিয়াম;
- কোর্ট মসজিদ;
- মধুমতি নদী।
- ভূত বাড়ী,দিঘী,খানারপাড়
- সুকতাইল মঠ বাড়ি
- আড়পাড়া জমিদার বাড়ি
উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনসম্পাদনা
ক্রম নং. | পদবী | নাম |
---|---|---|
০১ | উপজেলা চেয়ারম্যান | শেখ লুৎফার রহমান বাচ্চু |
০২ | ভাইস চেয়ারম্যান | নিতিশ রায় |
০৩ | মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান | বেগম নিরুন্নাহার |
০৪ | উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা | মোঃ মোহসিন উদ্দীন |
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা"। sadar.gopalganj.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-০৭।
- ↑ "গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-০৭।
- ↑ "জাতীয় সংসদীয় আসনবিন্যাস (২০১৩) গেজেট" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ২০১৫-০৬-১৬। ১৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬।
- ↑ "গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬।
- ↑ "গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পটভূমি"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬।
- ↑ ক খ "জেলা পরিসংখান ২০১১" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ৩ মে ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২৬।
- ↑ ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৯৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
- ↑ মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৬। আইএসবিএন 984-70120-0436-4।