এম মিজানুর রহমান
এম মিজানুর রহমান (জন্ম: ১ নভেম্বর, ১৯৪৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
এম মিজানুর রহমান | |
---|---|
জন্ম | ১ নভেম্বর, ১৯৪৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাএম মিজানুর রহমানের জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বড় মোকাম গ্রামে। তার বাবার নাম মজিবর রহমান এবং মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম গুলশান আরা। তাঁদের চার ছেলে, দুই মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালে ঢাকায় আমেরিকান এক্সপ্রেস নামক বিদেশি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন এম মিজানুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চাকরিতে আর যোগ না দিয়ে ভারতে যান তিনি। পরে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীর প্রথম বাংলাদেশ অফিসার্স ওয়ার কোর্সে। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের মহেন্দ্রগঞ্জ সাব সেক্টরে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এম মিজানুর রহমান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। পরে সোনালী ব্যাংকেও চাকরি করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত সীমান্ত ফাঁড়ি (বিওপি) ছিলো কামালপুর। এখানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। ১৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর কয়েকটি দল কামালপুরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন এম মিজানুর রহমান। সব দলের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন ১১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক আবু তাহের (বীর উত্তম)। এম মিজানুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলেন শত্রুসেনা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দিকে। তুমুল গোলাগুলিতে গোটা এলাকা মুখরিত। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল পাকিস্তানি সেনারা। তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান ভেঙে পড়ার উপক্রম। এম মিজানুর রহমান সহযোদ্ধাদের বললেন আরও সাঁড়াশি আক্রমণ চালানোর জন্য। তার নির্দেশ পেয়ে সহযোদ্ধারা আবারও বড় আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। এমন সময় ঘটল দুর্ঘটনা। তাঁদের অধিনায়ক শত্রুর নিক্ষিপ্ত শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হলেন। ১৪ নভেম্বর রাত তিনটা বা সাড়ে তিনটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের তিন পাশে অবস্থান নেন। এর আগে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়। কিন্তু ওই গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী বাংকারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ভোর সাড়ে পাঁচটা বা তার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ শুরু করে সামনে এগোতে থাকেন। এম মিজানুর রহমান তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে গুলি করতে করতে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের একদম কাছে চলে যান। তাঁদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের যুদ্ধক্ষেত্রের অদূরে দাঁড়িয়ে পরোক্ষভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করছিলেন। এম মিজানুর রহমানের দলের প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মেজর আবু তাহের বিজয় সন্নিকটে ভেবে এগিয়ে যান। তখন আনুমানিক সকাল নয়টা। এ সময় তার সামনে শত্রুর ছোড়া একটি শেল বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরিত শেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে আবু তাহের আহত হন এবং মাটিতে পড়ে যান। এ দৃশ্য দেখে সেখানে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। আবু তাহেরের আহত হওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় এম মিজানুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। মূলত তার প্রচেষ্টাতেই মুক্তিযোদ্ধারা আবার মনোবল ফিরে পান এবং যুদ্ধ করতে থাকেন। আবু তাহের আহত হওয়ার পর এম মিজানুর রহমানই ওই যুদ্ধে সার্বিক নেতৃত্ব দেন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৯-০১-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩০০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৮৭। আইএসবিএন 9789843338884।