এভারেস্ট পর্বত
এভারেস্ট পর্বত বা মাউন্ট এভারেস্ট (ইংরেজি: Mount Everest), যা নেপালে সগরমাথা (নেপালি: सगरमाथा) এবং তিব্বতে চোমোলাংমা (তিব্বতি: ཇོ་མོ་གླང་མ, ওয়াইলি: jo mo glang ma) নামে পরিচিত, বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই শৃঙ্গটি হিমালয়ের মহালঙ্গুর হিমাল পর্বতমালায় অবস্থিত।[৩][৪] সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফু) হলেও পৃথিবীর কেন্দ্র হতে এই শৃঙ্গের দূরত্ব সর্বাধিক নয়।[৫] চীন ও নেপালের আন্তর্জাতিক সীমান্ত এভারেস্ট পর্বতের শীর্ষবিন্দু দিয়ে গেছে। এভারেস্ট বিজয়ী মূসা ইব্রাহিম জানিয়েছেন এভারেস্ট শৃঙ্গের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হলো ৩০ ফুট ও ৬ ফুট। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের মহান ত্রিকোণমিতিক সর্বেক্ষণের ফলে এভারেস্ট পর্বতের (যা তৎকালীন যুগে ১৫ নং পর্বতশৃঙ্গ নামে পরিচিত ছিল) উচ্চতা নির্ণয় করা হয় ৮,৮৪০ মি (২৯,০০২ ফু)। ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সার্ভেয়র জেনারেল অ্যান্ড্রিউ স্কট ওয়াহর সুপারিশে রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটি তার পূর্বসূরী জর্জ এভারেস্টের ১৫ নং পর্বতশৃঙ্গর নাম পরিবর্তন করে এভারেস্ট পর্বত রাখে।[৬] ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি ভারতীয় জরিপে এই শৃঙ্গের উচ্চতা নির্ণয় করা হয় ৮,৮৪৮ মি (২৯,০২৯ ফু), যা ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি চীনা জরিপ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়।
এভারেস্ট পর্বত | |
---|---|
सगरमाथा;(সগরমাথা) ཇོ་མོ་གླང་མ;(চোমোলাংমা) 珠穆朗玛峰;(ঝুমুলাংমা ফেং) | |
সর্বোচ্চ বিন্দু | |
উচ্চতা | ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট) |
সুপ্রত্যক্ষতা | ৮,৮৪৮ মিটার (২৯,০২৯ ফুট) |
বিচ্ছিন্নতা | ৪০,০০৮ কিমি (২৪,৮৬০ মা) |
তালিকাভুক্তি | সপ্তশৃঙ্গ আট-হাজারী পর্বতশৃঙ্গ দেশের উচ্চ পয়েন্ট Ultra |
ভূগোল | |
অবস্থান | সোলুখুম্বু জেলা, সগরমাথা অঞ্চল, নেপাল; টিংরি বিভাগ, জিগাজে/Xigazê, তিব্বত স্বয়ংশাসিত অঞ্চল, চীন |
মূল পরিসীমা | মহালঙ্গুর হিমাল, হিমালয় |
আরোহণ | |
প্রথম আরোহণ | ২৯শে মে, ১৯৫৩ এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে প্রথম শীতকালীন আরোহণ - ১৯৮০ (লেসজেক চিচি ও ক্রিজিস্তোফ উইয়েলিকি[১][২]) |
সাধারণ পথ | দক্ষিণ-পূর্ব শৈলশিরা (নেপাল) |
ব্রিটিশ পর্বতারোহীরা সর্বপ্রথম এই পর্বতশৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা শুরু করেন। নেপালে এই সময় বিদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় ব্রিটিশরা তিব্বতের দিক থেকে এই পর্বতের উত্তর শৈলশিরা ধরে বেশ কয়েক বার আরহণের চেষ্টা করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের এভারেস্ট পর্বত অভিযানে ব্রিটিশরা তিব্বতের দিক থেকে ৭,০০০ মি (২২,৯৭০ ফু) উচ্চতা পর্য্যন্ত ওঠেন। এরপর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অভিযানে তারা এই পথে ৮,৩২০ মি (২৭,৩০০ ফু) উচ্চতা পর্য্যন্ত ওঠে মানবেতিহাসের নতূন কীর্তি স্থাপন করেন। এই অভিযানে অবতরনের সময় তুষারধ্বসে সাতজন মালবাহকের মৃত্যু ঘটে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের অভিযান এভারেস্ট আরোহণের ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় অভিযান: জর্জ ম্যালোরি ও অ্যান্ড্রিউ আরউইন শৃঙ্গের দিকে আরোহণের একটি অন্তিম প্রচেষ্টা করেন কিন্তু আর ফিরে আসতে ব্যর্থ হন, যার ফলে তাদের আরোহণই প্রথম সফল আরোহণ কি না সেই নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ মে এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে নেপালের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব শৈলশিরা ধরে প্রথম এই শৃঙ্গজয় করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে, চীনা পর্বতারোহী ওয়াং ফুঝোউ, গোনপো এবং চু ইয়িনহুয়া উত্তর শৈলশিরা ধরে এই শৃঙ্গ জয় করেন ।[৭][৮]
সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে আবিষ্কার
সম্পাদনাপৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতসমূহের অবস্থান এবং পরিচয় শনাক্ত করার লক্ষ্যে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা মহান ত্রিকোণমিতিক সর্বেক্ষণ আরম্ভ করে। দক্ষিণ ভারত থেকে এই কাজ শুরু করে জরিপ দল ৫০০ কেজি (১,১০০ পা) ওজনের ভারী ভারী থিওডোলাইট যন্ত্র বহন করে উত্তরাভিমুখে এগোতে থাকে। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে তারা হিমালয়ের পাদদেশে পৌঁছায়, কিন্তু রাজনৈতিক এবং ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের সন্দেহে নেপাল ব্রিটিশদের তাদের দেশে প্রবেশাধিকার দেবার ব্যাপারে অনিচ্ছুক ছিল। জরিপ দলের নেপালে প্রবেশের সকল আবেদনই প্রত্যাখান করা হয়। ব্রিটিশরা বাধ্য হয়ে নেপালের দক্ষিণে হিমালয়ের সমান্তরালে অবস্থিত তরাই থেকে তাদের পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যায়। বর্ষা ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপে বিপর্যস্ত দলটির তিনজন আধিকারিক মৃত্যুবরণ করেন ও দুইজন অসুস্থ হয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন।[৯]
যাই হোক, ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা হিমালয়ের উচ্চ শৃঙ্গগুলি থেকে ২৪০ কিমি (১৫০ মা) দুরত্বে অবস্থিত পর্যবেক্ষণ স্টেশন থেকে হিমালয়ের নিখুঁত জরিপ কাজ চালিয়ে যায়। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বছরের কেবল শেষ তিন মাস জরিপকাজ চলত। ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের সার্ভেয়র জেনারেল অ্যান্ড্রিউ স্কট ওয়াহ হিমালয়ের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত সওয়াজপুর স্টেশন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হত, কিন্তু তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে ২৩০ কিমি (১৪০ মা)দুরত্বে অবস্থিত একটি আরো উচ্চ একটি শৃঙ্গ লক্ষ্য করেন। প্রায় একই সময়ে জন আর্মস্ট্রং নামে তার এক কর্মচারীও আরো পশ্চিম থেকে এই চূড়াটি লক্ষ্য করেন এবং একে peak-b হিসেবে অভিহিত করেন। ওয়াহ পরবর্তীতে মন্তব্য করেন যে যদিও পর্যবেক্ষণ হতে বোঝা যাচ্ছিলো যে peak-b কাঞ্চনজঙ্ঘা অপেক্ষা উচ্চতর, তা সত্ত্বেও প্রমাণের জন্যে আরো নিকটতর স্থান হতে পর্যোবেক্ষণ প্রয়োজন ছিলো। পরের বছর তিনি এই শৃঙ্গের আরো কাছ থেকে পর্য্যবেক্ষণের জন্য তরাই অঞ্চলে একজন আধিকারিককে পাঠান, কিন্তু মেঘের কারণে জরিপকাজ চালানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।[৯]
১৮৪৯ সালে ওয়াহ সেখানে জেমস নিকলসনকে প্রেরণ করেন। নিকলসন ১৯০ কিমি (১২০ মা) দূরে অবস্থিত জিরোল থেকে দুটি পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর নিকলসন সবচেয়ে বড় থিওডোলাইট নিয়ে পূর্বদিকে যাত্রা করে পাঁচটি বিভিন্ন স্থান হতে তিরিশেরও অধিক পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেন, যার মধ্যে নিকটতমটি ছিল এভারেস্টের ১৭৪ কিমি (১০৮ মা) দূর হতে নেয়া। এরপর তিনি পাটনায় ফিরে যান এবং পর্যবেক্ষণ হতে প্রাপ্ত উপাত্ত সমূহ নিয়ে হিসাব-নিকাশ আরম্ভ করেন। তার খসড়া উপাত্ত হতে তিনি peak-b এর উচ্চতা নির্ণয় করেন ৯,২০০ মি (৩০,২০০ ফু), কিন্তু এটি ছিল আলোর প্রতিসরণ জনিত ত্রুটি অগ্রাহ্য করে নির্ণীত উচ্চতা। তবুও এই খসড়া হিসাব থেকে বোঝা গেল যে, peak-b এর উচ্চতা কাঞ্চনজঙ্ঘা হতে বেশি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিকলসন ওই সময়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন এবং তার হিসাব-নিকাশ অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। মাইকেল হেনেসি নামক অ্যান্ড্রিউ স্কট ওয়াহর একজন সহকর্মী সে সময়ে পর্বতগুলিকে রোমান সংখ্যায় প্রকাশ করা আরম্ভ করেন এবং সেই রীতি অনুযায়ী peak-b এর নতুন নাম হয় peak-XV (১৫ নং শৃঙ্গ)।[৯]
১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে দেরাদুন শহরে অবস্থিত সদর-দপ্তরে বাঙালি গণিতবিদ ও পর্যবেক্ষক রাধানাথ শিকদার নিকলসনের মাপ-জোক থেকে ত্রিকোণোমিতিক গণনা করে সর্বপ্রথম নির্ণয় করেন যে, এই শৃঙ্গ বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।[১০] পরবর্তী কয়েক বছর গণনাগুলিকে বার বার নিশ্চিত করবার প্রচেষ্টার কারণে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করতে দেরি হয়। নিকলসনের উপাত্ত নিয়ে ওয়াহ ও তার কর্মীরা পরবর্তী দুই বছর গণনা কার্য চালিয়ে যান এবং পর্যবেক্ষণস্থল থেকে শৃঙ্গের দুরত্বের কারণে আলোর প্রতিসরণ, বায়ুমন্ডলের চাপ ও তাপমাত্রা তারতম্যের সমস্যাগুলির সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি কলকাতার সহকারীকে পত্র মারফত তার সিদ্ধান্ত জানান। তিনি সিদ্ধান্তে পৌছন যে, এই শৃঙ্গের উচ্চতা ৮,৮৩৯.২ মি (২৯,০০০ ফু) হওয়ায় এই শৃঙ্গ সম্ভবতঃ বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।[৯] জনসমক্ষে এই শৃঙ্গের উচ্চতা জানানো হয় ৮,৮৩৯.৮ মি (২৯,০০২ ফু)।[১১]
নামকরণ
সম্পাদনাযদিও সার্ভে পর্বতশৃঙ্গগুলির নামকরণ স্থানীয় নামে রাখতে ইচ্ছুক ছিল, কিন্তু ওয়াহ বলেন যে, তিনি ১৫ নং শৃঙ্গের কোন স্থানীয় নাম খুঁজে পাননি। বিদেশীদের জন্যে তিব্বত ও নেপাল উন্মুক্ত না থাকায় তার স্থানীয় নামের অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু এই পর্বতের বেশ কয়েকটি স্থানীয় নাম ছিল, যেমন দার্জিলিং অঞ্চলে প্রচলিত দেওধুঙ্গা বা পবিত্র পর্বত,[১২] তিব্বতে প্রচলিত চোমোলাংমা ইত্যাদি। ১৭৩৩ খ্রিস্তাব্দে প্যারিসে ফরাসি ভৌগোলিক জাঁ বাপ্তিস্তে বুর্জিগ্নোঁ দ'অ্যানভিলের দ্বারা প্রকাশিত একটি মানচিত্রে চোমোলাংমা নামটি ছিল। এই পর্বতশৃঙ্গের স্থানীয় নাম গৌরীশঙ্কর বলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের বেশ কিছু ইউরোপীয় মানচিত্র বিশারদ ভুল করে মনে করতেন, যা কাঠমাণ্ডু ও এভারেস্টের মধ্যবর্তী একটি পর্বত শৃঙ্গ বিশেষ।[১৩]
ওয়াহ এই যুক্তি উত্থাপন করেন যে, অনেকগুলি স্থানীয় নাম থাকায় যে কোন একটি নামকে রাখা ঠিক হবে না, সেই কারণে তিনি তার পূর্বসূরী সার্ভেয়র জেনারেল জর্জ এভারেস্টের নামে এই শৃঙ্গের নামকরণের সুপারিশ করেন।[৯][১৪][১৫] জর্জ স্বয়ং তার নাম ব্যবহারের বিরোধী ছিলেন এবং তিনি রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটিকে জানান যে, এভারেস্ট নামটি হিন্দিতে লেখা যায় না ও ভারতীয়রা উচ্চারণ করতে পারেন না। এতৎসত্ত্বেও বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম তার নামানুসারে রাখা হয় এভারেস্ট পর্বত।[৯] এভারেস্টের আধুনিক উচ্চারণ (/ˈɛvərɨst/ ও /ˈɛvrɨst/)[১৬] জর্জের পদবীর উচ্চারণের (/ˈiːvrɨst/, EEV-rist) চেয়ে ভিন্ন।[১৭]
তিব্বতী ভাষায় এভারেস্ট পর্বতকে জো-মো-গ্লাং-মা (ཇོ་མོ་གླང་མ; আধ্বব: [t͡ɕʰòmòlɑ́ŋmɑ̀]; পবিত্র মাতা) লেখা হয়, যার আনুষ্ঠানিক তিব্বতী পিনয়িন রূপ হল চোমোলাংমা।[১৮][১৯][২০][২১]}} এই নামের আনুষ্ঠানিক চীনা প্রতিলিপিকরণ হল 珠穆朗玛峰 (珠穆朗瑪峰), যার পিনয়িন রূপ হল ঝোমোলাংমা ফেং[২২] চীনা ভাষায় একে কখনো কখনো সরল করে শেংমু ফেং(聖母峰, 圣母峰, "পবিত্র মাতা শৃঙ্গ") বলা হয়ে থাকে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে পিপলস ডেইলি নামক চীনা সংবাদপত্রটিতে এই শৃঙ্গের নাম এভারেস্ট পর্বত রাখার বিরুদ্ধে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই নিবন্ধে স্থানীয় তিব্বতী নাম অনুসারে এই শৃঙ্গের নাম চোমোলাংমা রাখার পক্ষে সওয়াল করা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয় যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা এই শৃঙ্গ প্রথম আবিষ্কার করেননি, বরং তিব্বতীদের নিকট এই শৃঙ্গ বহু পূর্ব হতেই পরিচিত ছিল এবং চীনারা ১৭১৯ খ্রিষ্টাব্দে চোমোলাংমা হিসেবে এই শৃঙ্গকে মানচিত্রভুক্ত করেছিলেন।[২৩] ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে নেপাল সরকার সাগরমাথা নামে এই পর্বতের একটি নেপালী নাম রাখে।[২৪][২৫]
সফল অভিযানসমূহ
সম্পাদনাশুরুর দিককার অভিযানসমূহ
সম্পাদনা১৮৫৫ সালে আলপাইন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন টমাস ডেন্ট তার বই Above The Snow Line এ মন্তব্য করেন যে এভারেস্ট পর্বতে আরোহণ করা সম্ভব।
জর্জ ম্যালোরি তার ১৯২১ সালের অভিযানের সময় উত্তরদিক থেকে এভারেস্টে আরোহণ করার পথ আবিষ্কার করেন। ঐ অভিযানটি ছিলো মূলতঃ অনুসন্ধানমূলক অভিযান, চূড়ায় ওঠার মত প্রয়োজনীয় উপকরণ অভিযাত্রী দলটির ছিলো না। ম্যালোরির নেতৃত্বে (যিনি এই অভিযানের মাধ্যমে এভারেস্টের প্বার্শদেশে পা রাখা প্রথম ইউরোপিয়ানে পরিণত হন) দলটি উত্তরের গিরিখাতের ৭,০০৭ মি (২২,৯৮৯ ফুট) আরোহণ করে। সেখান থেকে চূড়ায় ওঠার জন্যে ম্যালোরি একটি সম্ভাব্য রুট পরিকল্পনা করেন, কিন্তু তার সহযাত্রীরা এরকম একটি দুঃসাহসিক অভিযানের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই সেবার তিনি ফিরে যান।
ব্রিটিশরা ১৯২১ সালের অভিযানে হিমালয়ে প্রত্যাবর্তন করে। এতে জর্জ ফিনচ প্রথমবারের মত অক্সিজেন ব্যবহার করে পর্বতারোহণ করেন। তার আরোহণের গতি ছিলো বিস্ময়কর – ঘণ্টায় প্রায় ৯৫০ ফুট (২৯০ মি)। তিনি ৮,৩২০ মিটার (২৭,৩০০ ফুট) ওপরে ওঠেন, যা ছিল সর্বপ্রথম কোনো মানুষের ৮,০০০ মিটারের বেশি উচুতে আরোহণ। ম্যালোরি এবং কর্ণেল ফেলিক্স দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ অভিযান করেন। ম্যালোরির নেতৃত্বাধীন দলটি উত্তরের গিরিখাত বেয়ে নামতে গিয়ে ভূমিধ্বসের কবলে পড়ে এবং সাতজন কুলি নিহত হয়।
পরবর্তী অভিযান হয় ১৯২৪ এ। ম্যালোরি এবং ব্রুসের প্রাথমিক প্রচেষ্টা স্থগিত করতে হয় যখন খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্যাম্প VI নির্মাণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরবর্তী প্রচেষ্টা চালান নর্টন এবং সমারভিল, তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই অভিযানে নামেন এবং চমৎকার আবহাওয়ার সুবিধা পেয়ে নর্থ ফেস থেকে গ্রেট কুলোয়ির পর্যন্ত পরিভ্রমণ করেন। নর্টন ৮,৫৫৮ মিটার (২৮,০৭৭ ফুট ) পরিভ্রমণ করেন, যদিও যদিও শেষ এক ঘণ্টায় তিনি মাত্র ১০০ ফুটের মতো উঠেছিলেন। ম্যালোরি শেষ চেষ্টা হিসেবে দ্রুত অক্সিজেন সরঞ্জাম যোগাড় করে এভারেস্টে অভিযানের আয়োজন করেন। এবার তিনি সঙ্গী হিসেবে নেন তরুণ এন্ড্রু আর্ভিংকে। ৮ জুন, ১৯২৪ তারিখে জর্জ ম্যালোরি ও এন্ড্রু আর্ভিং উত্তর গিরিখাত দিয়ে এভারেস্ট-চূড়া বিজয়ের মিশন শুরু করেন। এই অভিযান থেকে তাদের আর ফিরে আসা হয়নি। ১৯৯৯ ম্যালোরি ও আর্ভিং রিসার্চ এক্সপেডিশন নর্থ ফেসের নিচে, ক্যাম্প-VI এর পশ্চিমে একটি তুষার গহবর থেকে ম্যালোরির মৃতদেহ উদ্ধার করে। তারা দু’জন এভারেস্ট চূড়ায় ১৯৫৩ সালে হিলারি ও তেনজিংয়ের স্বীকৃত সর্বপ্রথম বিজয়ের আগে আরোহণ করতে পেরেছিলেন কিনা তা নিয়ে পর্বতারোহী সমাজে বহু বিতর্ক রয়েছে।
১৯৫২ সালে এডোয়ার্ড উইস-ডুনান্টের নেতৃত্বাধীন একটি সুইস অভিযাত্রী দল নেপাল দিয়ে এভারেস্টে আরোহণ অভিযানের চেষ্টা করার অনুমতি লাভ করে। দলটি খুম্বু আইসফলের মধ্য দিয়ে একটি রুট প্রতিষ্ঠা করে এবং দক্ষিণ গিরিখাতের ৭,৯৮৬ মিটার (২৬,২০১ ফুট) আরোহণ করে। রেমন্ড ল্যাম্বার্ট এবং শেরপা তেনজিং নোরগে দক্ষিণ-পূর্ব রিজের ৮,৫৯৫ মিটার (২৮,১৯৯ ফুট) ওপরে ওঠেন, যা ছিল উচ্চতা আরোহণে মানুষের নতুন রেকর্ড। তেনজিংয়ের এই অভিজ্ঞতা ১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের সঙ্গে কাজ করার সময় সহায়ক হয়।
সহায়ক অক্সিজেন ছাড়া প্রথম সফল আরোহণ
সম্পাদনা১৯৭৮ সালের ৮ মে অস্ট্রিয়ার পিটার হেবলার এবং ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার প্রথম অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট এর চূড়ায় সফলভাবে অরোহণ করেন।
বিবিধ রেকর্ড
সম্পাদনা১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করার কৃতিত্ব লাভ করেন জাপানের জুনকো তাবেই।
প্রথম দুইবার এভারেস্টে উঠতে সক্ষম হন শেরপা নাওয়াং গোম্বু। ১৯৬৫ সালের ২০ মে তিনি এই রেকর্ড অর্জন করেন। প্রথমে ১৯৬৩ সালে একটি আমেরিকান অভিযানে এবং ১৯৬৫ সালে একটি ইন্ডিয়ান অভিযানের মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট করেন।
প্রথম প্রতিবন্ধী হিসেবে ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টম হুইটেকার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেন। একটি কৃত্রিম পা নিয়েও তিনি এভারেস্ট জয় করে বিশ্ববাসীকে চমকে দেন।
নেপালের আপা শেরপা সবচেয়ে বেশিবার এভারেস্ট জয় করেছেন। ১৯৯০ সালের ১০ মে থেকে ২০১১ সালের ১১ মে পর্যন্ত তিনি মোট ২১ বার তিনি এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন। নন শেরপা হিসেবে এই রেকর্ড আমেরিকান পর্বতারোহী ও অভিযানের গাইড ডেভ হানের দখলে। ১৯৯৪ সালের ১৯ মে থেকে ২০১২ সালের ২৬ মে পর্যন্ত মোট ১৪ বার এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Starr, Daniel (১৮ মার্চ ২০১১)। "Golden Decade: The Birth of 8000m Winter Climbing"। Alpinist.com। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৩।
- ↑ "Mt Everest History and facts"। Mnteverest.net। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৩।
- ↑ "Everest Khumbu Region"। peakpromotionnepal.com।
- ↑ "The 8 of 10 Highest Mountains of the World Located in Nepal"। haminepali.com। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫। একের অধিক
|archiveurl=
এবং|আর্কাইভের-ইউআরএল=
উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য); একের অধিক|archivedate=
এবং|আর্কাইভের-তারিখ=
উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য); একের অধিক|url-status=
এবং|ইউআরএল-অবস্থা=
উল্লেখ করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Robert Krulwich (৭ এপ্রিল ২০০৭)। "The "Highest" Spot on Earth?"। NPR.org।
- ↑ "Papers relating to the Himalaya and Mount Everest"। Proceedings of the London Royal Geographical Society of London। IX: 345–351। এপ্রিল–মে ১৮৫৭।
- ↑ Lewis, Jon E. (২০১২)। "Appendix 1"। The Mammoth Book of How it Happened - Everest। Hachette।
- ↑ "Gonpo: first Chinese atop Mount Qomolangma"। CCTV। ২০০৯-১০-১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Peter Gillman, সম্পাদক (১৯৯৩)। Everest – The Best Writing and Pictures from Seventy Years of Human Endeavour। Little, Brown and Company। পৃষ্ঠা 10–13। আইএসবিএন 978-0-316-90489-6।
- ↑ Biswas, Soutik (২০ অক্টোবর ২০০৩)। "The man who "discovered" Everest"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ "Letters to the Editor"। The American Statistician। 36 (1): 64–67। ফেব্রুয়ারি ১৯৮২। জেস্টোর 2684102। ডিওআই:10.1080/00031305.1982.10482782।
- ↑ "Mt. Everest 1857"। harappa.com। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০০৮।
- ↑ Waddell, LA (ডিসেম্বর ১৮৯৮)। "The Environs and Native Names of Mount Everest"। The Geographical Journal। 12 (6): 564–569। ডিওআই:10.2307/1774275।
- ↑ "India and China"। The Times (22490)। ৪ অক্টোবর ১৮৫৬। পৃষ্ঠা 8।
- ↑ "Papers relating to the Himalaya and Mount Everest"। Proceedings of the Royal Geographical Society of London। IX: 345–351। এপ্রিল–মে ১৮৫৭।
- ↑ "Mount Everest."। Dictionary.com Unabridged (v 1.1)। Random House, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০০৯।
- ↑ Claypole, Jonty (Director); Kunzru, Hari (Presenter) (২০০৩)। Mapping Everest (TV Documentary)। London: BBC Television।
- ↑ "Chomo-lungma: Nepal"। Geographical Names। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ "Djomo-lungma: Nepal"। Geographical Names। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ "Chomolongma: Nepal"। Geographical Names। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ "Mount Jolmo Lungma: Nepal"। Geographical Names। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ "Qomolangma Feng: Nepal"। Geographical Names। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ "No Longer Everest but Mount Qomolangma"। People's Daily Online। ২০ নভেম্বর ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০০৫।
- ↑ "Sagar-Matha: Nepal"। Geographical Names। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ Unsworth, Walt (২০০০)। Everest – The Mountaineering History (3rd সংস্করণ)। Bâton Wicks। পৃষ্ঠা 584। আইএসবিএন 978-1-898573-40-1।
আরো পড়ুন
সম্পাদনা- Boukreev, Anatoli; DeWalt, G. Weston (১৯৯৭)। The Climb: Tragic Ambitions on Everest। Saint Martin's Press। আইএসবিএন 0312168144।
- Hillary, Edmund (১৯৫৩)। High Adventure। London: Hodder & Stoughton।
- Krakauer, Jon (১৯৯৭)। Into Thin Air: A Personal Account of the Mt. Everest Disaster। New York: Villard। আইএসবিএন 0-679-45752-6।
- Messner, Reinhold (১৯৮৯)। The Crystal Horizon: Everest – the first solo ascent। Seattle: The Mountaineers। আইএসবিএন 0-89886-207-8।
- Murray, W. H. (১৯৫৩)। The Story of Everest, 1921–1952। London: J. M. Dent & Sons।
- Norgay, Tenzing; Ullman, Ramsey James (১৯৫৫)। Tiger of the Snows। New York: Putnam।
- Tilman, H. W. (১৯৫২)। Nepal Himalaya। Cambridge University Press।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- National Geographic site on Mt. Everest
- NOVA site on Mt. Everest
- Royal Geographical Society site on Mt. Everest ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে
- Mount Everest panorama, Mount Everest interactive panorama (Quicktime format), Virtual panoramas *North ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ মে ২০২৩ তারিখে *South ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে
- Interactive climb of Everest from Discovery Channel
- Mount Everest on Summitpost
- Full list of all ascents of Everest up to and including 2008 (in pdf format)
- Summits and deaths per year
- The Everest Trek guidebook
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |