ফিনিন

প্রমিত ম্যাণ্ডারিনের জন্য রোমানীকরণ পদ্ধতি
(পিনয়িন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হানিউ ফিনিন (সরলীকৃত চীনা: 汉语拼音; প্রথাগত চীনা: 漢語拼音; ফিনিন: hànyǔ pīnyīn), সংক্ষেপে ফিনিন বলতে মূল মহাদেশীয় চীনা ভূখণ্ড তথা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে প্রচলিত প্রমিত ম্যান্ডারিন চীনা ভাষার সরকারি রোমানীকরণ পদ্ধতিটিকে বোঝায়। ম্যান্ডারিন চীনা ভাষাটি চীনা অক্ষরে লেখা হলেও যেসব শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই রোমান তথা লাতিন বর্ণমালার সাথে পরিচিত (যেটির বিভিন্ন সংস্করণ ইংরেজি, ফরাসি ও অন্যান্য বহু ইউরোপীয় ভাষাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে), তাদেরকে ম্যান্ডারিন চীনা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার সময় ফিনিন পদ্ধতিটিকে প্রায়শই ব্যবহার করা হয়। ম্যান্ডারিন চীনা একটি সুরেলা ভাষা, তাই ফিনিন পদ্ধতিটিতে ধ্বনিদলের সুর নির্দেশ করার জন্য চারটি "হরকত" বা ধ্বনি/সুর নির্দেশক বিশেষ চিহ্ন অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে চীনা ভূখণ্ডের বাইরে প্রায়শই চীনা ব্যক্তি ও স্থাননাম লাতিন বর্ণে বানান করার সময় এবং কম্পিউটার যন্ত্রে চীনা অক্ষর প্রবেশ করানোর সময় ঐ হরকতগুলিকে বাদ দেওয়া হয়। "হানিউ" (বা আরও সঠিকভাবে "হান-ইউ", Hànyǔ, (সরলীকৃত চীনা: 汉语; প্রথাগত চীনা: 漢語) আক্ষরিক অর্থে "হান চীনা"দের ভাষা অর্থাৎ চীনদেশের ব্যাপকভাবে প্রচলিত চীনা ভাষাকে বোঝায়। অন্যদিকে , "ফিনিন" (বা আরও সঠিকভাবে "ফিন-ইন", Pīnyīn, (拼音)) বলতে "বানানকৃত ধ্বনিসমূহ" বোঝায়।[]

চীনের হুপেই প্রদেশের ইছাং জেলার ইলিং শহরের একটি সড়কের ফলকের পাঠ্য বিষয়বস্তু চীনা অক্ষর এবং হানিউ ফিনিন উভয় পদ্ধতিতে লেখা হয়েছে।

কয়েকজন চীনা ভাষাবিজ্ঞানীর (যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাষাবিজ্ঞানী চৌ ইঔকুয়াং) একটি দল ১৯৫০-এর দশকে ফিনিন পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন।[] এটি চীনা ভাষার পূর্ববর্তী রোমানীকরণ পদ্ধতিগুলির উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি করা হয়। চীনা সরকার ১৯৫৮ সালে এটিকে প্রথম প্রকাশ করে। তারপরে এটিকে বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হয়।[] আন্তর্জাতিক মান সংস্থা আইএসও ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ফিনিন পদ্ধতিটিকে একটি আন্তর্জাতিক আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে।[] ১৯৮৬ সালে জাতিসংঘ একইভাবে ফিনিনকে গ্রহণ করে।[] ২০০২ ও ২০০৯ সালে তাইওয়ানে ফিনিনকে আদর্শ পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু চীনের সাথে তাইওয়ানের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে, এই কারণে সেগুলি গৃহীত হয়নি, ফলে বর্তমানে তাইওয়ানে কোনও একটিমাত্র আদর্শ বা প্রমিত রোমানীকরণ প্রতিবর্ণীকরণ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত নয়,[][][] বরং একাধিক রোমানীকরণ পদ্ধতি পাশাপাশি প্রচলিত।[]

ফিনিন পদ্ধতিতে লাতিন বর্ণগুলি ব্যবহার করা হলেও এটির সাথে ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ইত্যাদি ভাষাতে ঐ একই বর্ণের ধ্বনির সাথে মিল থাকতেও পারে, বা না-ও থাকতে পারে। যেমন ফিনিন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত "zh" দিয়ে যে ব্যঞ্জনধ্বনিটি নির্দেশ করা হয়, তার সাথে ইংরেজি "z" বা "h" ধ্বনি দুইটির কোনোই মিল নেই। ফিনিন "zh"-এর উচ্চারণ অনেকটা (বাংলা ট-এর মত) জিহ্বার ডগা উল্টিয়ে ঊর্ধ্বতালুতে রেখে "চ" উচ্চারণ করলে যে ধ্বনিটি পাওয়া যায়, তার মতো। এরকম আরও অনেকগুলি ফিনিন বর্ণের সাথে ইউরোপীয় ভাষাগুলির লাতিন বর্ণগুলির ধ্বনির কোনও সম্পর্ক নেই। ফলে দেখতে লাতিন বর্ণের মতো লাগলেও ফিনিনের বিশেষ জ্ঞান ছাড়া এটি ঐসব ভাষার বক্তাদের পক্ষে সহজেই উচ্চারণ করা সম্ভব নয়।

চীনা শব্দগুলির বানান ও উচ্চারণ বর্ণের পরে বর্ণ সাজিয়ে নয়, বরং সাধারণত আদ্যাক্ষরঅন্তিমাক্ষর এই দুইয়ের সাপেক্ষে প্রদান করা হয়, কেননা চীনা ভাষার শব্দগুলি খণ্ডীয় ধ্বনিমূল ভিত্তিক। আদ্যবর্ণগুলি হল প্রারম্ভিক ব্যঞ্জনবর্ণ বা ব্যঞ্জনধ্বনি, অন্যদিকে অন্তিমবর্ণগুলি হল একটি মধ্যবর্ণ (কোনও স্বরধ্বনি/বর্ণের ঠিক আগে আসা অর্ধস্বরধ্বনি), একটি কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি/বর্ণ এবং একটি ধ্বনিদল সমাপ্তিসূচক অন্তিম স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. চীনের জাতীয় চীনা ভাষা অভিধান কুওইউ সিতিয়েন" (《國語辭典》) ফিনিনকে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করেছে: 標語音﹑不標語義的符號系統,足以明確紀錄某一種語言。 "শব্দসমূহের মধ্যকার ধ্বনিসমূহের অর্থ নির্দেশ করার জন্য নয়, বরং সেগুলি লিপিবদ্ধ করার এমন একটি প্রতীকপদ্ধতি, যা কোনও ভাষাকে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট।"
  2. Margalit Fox (১৪ জানুয়ারি ২০১৭)। "Zhou Youguang, Who Made Writing Chinese as Simple as ABC, Dies at 111"The New York Times 
  3. "Pinyin celebrates 50th birthday"Xinhua News Agency। ২০০৮-০২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৯-২০ 
  4. "ISO 7098:1982 – Documentation – Romanization of Chinese"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০১ 
  5. Shih Hsiu-Chuan (২০০৮-০৯-১৮)। "Hanyu Pinyin to be standard system in 2009"Taipei Times। পৃষ্ঠা 2। 
  6. "Government to improve English-friendly environment"The China Post। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. Copper, John F. (২০১৪)। Historical Dictionary of Taiwan (Republic of China) (ইংরেজি ভাষায়)। Rowman & Littlefield। আইএসবিএন 978-1-4422-4307-1। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০২০ 
  8. Copper, John F. (২০১৫)। Historical Dictionary of Taiwan (Republic of China। Lanham: Rowman & Littlefield। পৃষ্ঠা xv। আইএসবিএন 9781442243064। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৭But some cities, businesses, and organizations, notably in the south of Taiwan, did not accept this, as it suggested that Taiwan is more closely tied to the PRC. 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা