রাধানাথ শিকদার

ভারতীয় গণিতবিদ

রাধানাথ শিকদার (১৮১৩ - ১৮৭০) একজন বাঙালি গণিতবিদ ছিলেন যিনি হিমালয় পর্বতমালার ১৫ নং শৃঙ্গের (চূড়া-১৫) উচ্চতা নিরূপণ করেন, এবং প্রথম আবিষ্কার করেন যে, এটিই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই পর্বত শৃঙ্গটিকেই পরে মাউন্ট এভারেস্ট নামকরণ করা হয়।

রাধানাথ শিকদার
রাধানাথ শিকদার
জন্মঅক্টোবর ১৮১৩
মৃত্যু১৭ মে ১৮৭০
গঙ্গার ধারে, গোন্দলপাড়া,চন্দননগর, হুগলী জেলা , পশ্চিমবঙ্গ (তার বাগানবাড়িতে)[১]
পেশাগণিতবিদ
পরিচিতির কারণমাউন্ট এভারেস্ট-এর উচ্চতা নিরূপণ
পিতা-মাতাতিতুরাম শিকদার(পিতা)[২]
আত্মীয়শ্রীনাথ শিকদার(ভাই)

শৈশব ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

রাধানাথ শিকদার ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলের শিকদার পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তিতুরাম শিকদার ছিলেন সেকালের উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি ও বিবিধ সদ্গুণের অধিকারী। তার মাতাও ছিলেন জ্ঞানে গুণে পিতার উপযুক্ত সহধর্মিণী। দুই ভ্রাতা ও তিন ভগিনীর সর্বজ্যেষ্ঠ ছিলেন রাধানাথ। ভ্রাতার নাাম শ্রীনাথ। বাড়িতেই পণ্ডিতের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাধানাথ ভর্তি হন চিৎপুরের ফিরিঙ্গি কমল বসুর বিদ্যালয়ে। পরে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ভর্তি হন হিন্দু কলেজে। এখানে অধ্যয়নের সময় তিনি বিখ্যাত শিক্ষক ডিরোজিওর ভাবধারার বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। কলেজে গণিতের অধ্যাপক ড.টাইটলারের প্রিয় ছাত্ররূপে তিনি উচ্চগণিতে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে কলেজের শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

ঊনবিংশ শতাব্দীর ১ম ভাগে জরিপ কাজে ব্যবহৃত গণিত বিষয়ে চর্চা প্রয়োগ উদ্ভাবনে তিনি স্বকীয়তার সাক্ষ্য রেখেছেন। এইজন্য তিনি ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। তিনি জার্মানির সুবিখ্যাত ফিলজফিক্যাল সোসাইটির ব্যাভেরিয়ান শাখার সম্মানীয় সদস্যপদ লাভ করেন ১৮৬২ সালে। গণিতে অসাধারণ পারদর্শিতার জন্য তার এই সম্মান প্রাপ্তি। [৪]

রাধানাথ শিকদার ভারতে তদানিন্তন ব্রিটিশ প্রশাসনের জরিপ বিভাগ সার্ভেয়র জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার দপ্তরে কাজ করতেন। তিনি ১৮৪০ সালের মহা ত্রিকোণমিতিক জরিপ কাজে অংশ নেন।১৮৫১ সালে ম্যানুয়াল অফ সারভেইং নামক সমীক্ষণ পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। পুস্তিকার,বৈজ্ঞানিক অংশ রাধানাথ শিকদারের লেখা। ব্যারোমিটারে সংযুক্ত ধাতব স্কেলের তাপজনিত প্রসারণ এবং পারদের নিজের প্রসারণ জনিত, পরিমাপের ত্রূটি যা আবহমানসংক্রান্ত পাঠ প্রভাবিত করে,সেই ত্রুটি বাতিল করার জন্য ইউরোপে ব্যবহৃত সূত্র, রাধানাথের অজানা ছিল। সুতরাং রাধানাথ তার বৈজ্ঞানিক অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করে, ৩২°ফারেনহাইট (০°সেলসিয়াস) এ ব্যারোমিটার পাঠ/রিডিং কমানোর জন্য, নিজের সূত্র উদ্ভাবন করেন। সূত্রটি তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে উপস্থাপন করেন। ১৮৫৭ থেকে ১৮৬২ অবধি তিনি আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের 'আবহবিদ্যা এবং পদার্থবিজ্ঞান কমিটিতে' সদস্য ছিলেন। রাধানাথ ১৮৬২ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলেন, এবং পরে জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজে) গণিত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন[৫][৬]। ১৮৫৪ সালে তিনি ও তার ডিরোজিয়ান বন্ধু প্যারীচাঁদ মিত্র "মাসিক পত্রিকা" নামক মহিলাদের শিক্ষাবিষয়ক পত্রিকাটি চালু করেন। তিনি প্রথাগত শৈলী ছেড়ে, একটি সহজ এবং বিশৃঙ্খলমুক্ত শৈলীতে লিখতেন [৭]

 
গ্রেট ট্রিকনোমেট্রিক সারভে টাওয়ার - সুকচর - উত্তর চব্বিশ-পরগণা

GTS(গ্রেট ট্রিকনোমেট্রিক সারভে) সংক্রান্ত কার্যক্রমের ব্যাপারে ব্রিটিশ সংসদের বক্তব্য ছিল -

"শুধুমাত্র উপ-সহকারী নয়, কর্তব্যনিষ্ঠ, উদ্যোগী এবং অনলস পরিশ্রমী মানুষেরা, যারা জরিপ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত, নাগরিক প্রতিষ্ঠানের এমন গঠন করেছেন, যা আর কোথাও দেখা যায় না। তাদের সাফল্যের অংশীদার, ভারতের শিক্ষাব্যাবস্থা। এঁদের মধ্যে দক্ষতার জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হিসাবে, উল্লেখ করা যেতে পারে, বাবু রাধানাথ শিকদারের নাম, যিনি একজন ভারতীয়, যার গাণিতিক নিষ্কাশন, সর্বোচ্চ সাফল্য লাভ করেছে।"

[২] ২০০৪ সালের ২৭ জুন তারিখে ভারতের ডাক বিভাগ চেন্নাইয়ে ভারতের ত্রিকোণমিতিক জরিপের প্রতিষ্ঠার স্মরণে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে, যাতে রাধানাথ শিকদার ও নইন সিং এর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন-বঙ্গসমাজ, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রণীত, S.K.Lahiri & Co., Calcutta, ১৯০৪, পৃ. ১৪৬
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  3. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৬৫১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  4. বিজ্ঞ্যানী রাধানাথ শিকদার, বিজ্ঞান অন্বেষক। "রাধানাথ শিকদার"। বিজ্ঞান অন্বেষক 
  5. আবুল হাসনাত (২০১২)। "শিকদার, রাধানাথ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. Staff List: General Assembly's Institution (1856-1907) in 175th Year Commemoration Volume. Scottish Church College, April 2008. page 569
  7. See Sivanath Sastri, "Ramatanu Lahiri o Tatkalin BangaSamaj", 1904

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা