উমেশচন্দ্র বটব্যাল

বাঙালি লেখক

উমেশচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার বটব্যাল (১৮৫২-১৮৯৮) ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি সাহিত্যিক ও ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মালদহে একটি প্রাচীন তাম্রলিপি আবিষ্কারের জন্য তাকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়।

উমেশচন্দ্র বটব্যাল
জন্ম৩০ আগস্ট ১৮৫২
রামনগর, হুগলি
মৃত্যু১৬ জুলাই ১৮৯৮
বগুড়া
মাতৃশিক্ষায়তন
পেশাশিক্ষক, সাহিত্যিক, ম্যাজিস্ট্রেট
প্রতিষ্ঠান
উপাধিবিদ্যালঙ্কার
পিতা-মাতা
  • দুর্গাচরণ বটব্যাল (পিতা)

জন্ম সম্পাদনা

উমেশচন্দ্র ১৮৫২ সালের ৩০ আগস্ট হুগলি জেলার খানাকুলের নিকটবর্তী রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দুর্গাচরণ বটব্যাল এবং দাদার নাম রামকানাই। রামকানাই ছিলেন তান্ত্রিক সাধক এবং ’জগদীশ্বরী’ যন্ত্রের প্রবর্তক।[১]

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

উমেশ তার স্কুল জীবন অতিবাহিত করেন খানাকুল-কৃষ্ণনগর ইংরেজি-সংস্কৃত বিদ্যালয়ে। ১৮৬৮ সালে তিনি সেখান থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি লাভ করেন। তারপর তিনি কলকাতা যান এবং সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন।

১৮৭০ সালে তিনি এফএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিন বছর অধ্যায়ন করে ১৮৭৩ সালে প্রথম বিভাগে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আবার সংস্কৃত কলেজে ফিরে আসেন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যায়ন শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তিনি এ কলেজে এমএ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৭৬ সালে তাকে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি প্রদান করা হয়।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

উমেশচন্দ্র তার কর্মজীবনে বিচিত্র পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বেশ কিছু দিন নড়াইল ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

১৮৭৭ সালের আগস্টে তাকে স্ট্যাটুটরি সিভিল সার্ভিসের জন্য মনোনিত করা হয়। ১৮৯১ সালে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বীরভূম, বাঁকুরা, মালদহ, হাওড়াবগুড়া সহ বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।[১]

মালদহে থাকাকালীন ১৮৯৩ সালে তিনি খালিমপুর গ্রাম থেকে একটি তাম্রপট্টলিপি উদ্ধার করেন। জানা যায়, রাজা ধর্ম্মপাল শান্ডিল্য গোত্রের ব্রাক্ষ্মণদের পূর্বপুরুষ- ভট্টনারায়ণকে এটি প্রদান করেছিলেন। উমেশ এর পাঠোদ্ধার করেন এবং তা ইংরেজিতে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে[২] ও বাংলায় ’সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন।[৩]

সাহিত্য চর্চা সম্পাদনা

উমেশের লেখা বইগুলোর মধ্যে সাংখ্য-দর্শন (১৯০০), বেদ-প্রবেশিকা (১৯০৫), প্রেমশক্তি ও জননী (১৯২২) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন গবেষণ জার্নালেও তার লেখা বেড়িয়েছে। এছাড়া, তিনি সাহিত্য পত্রিকা সহ বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। যেমন: রিলিজিয়ন শব্দের মানে কি? (সাহিত্য ১৩০০, মাঘ), ধর্ম্মপালের তাম্রশাসন (সাহিত্য, বৈশাখ ১৩০১), গৌরাঙ্গ-চরিত (সাহিত্য, অগ্রহায়ণ ১৩০৩), বিজ্ঞান ও বেদ (সাহিত্য, বৈশাখ ১৩০৮), নূতন তাম্রশাসন (সাধনা, বৈশাখ ১৩০১), চন্ডীদাসের কবিতাস্বাদন (ভারতী, কার্ত্তিক ১৩০৩), হরিনামের শব্দতত্ত্ব (সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, ১৩০৪ — ৩য় সংখ্যা)।

১৮৯৩ সালের ২৬ নভেম্বর দি বেঙ্গল একাডেমি অব লিটারেচারের ১৭ তম অধিবেশনে উমেশচন্দ্র সংস্থাটির সদস্যপদ লাভ করেন। তার পরামর্শক্রমেই ১৮৯৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ রাখা হয়।[১]

পুরস্কার ও স্বীকৃতি সম্পাদনা

উমেশচন্দ্র মৌয়াট পদকে ভূষিত হন। সংস্কৃতে পাণ্ডিত্যের কারণে সংস্কৃত কলেজ তাকে বিদ্যালঙ্কার উপাধি প্রদান করে। তার সাহিত্যকর্মে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার তার কাছে চিঠি লিখেছিলেন।[১]

মৃত্যু সম্পাদনা

উমেশচন্দ্র ব্যাটবল ১৮৯৮ সালের ১৬ জুলাই বগুড়ায় পরলোক গমন করেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শামীমা আক্তার। "বটব্যাল, উমেশচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৫ 
  2. Editor, MCADD (২০১২-০৫-০৯)। "1894 Journal Asiatic Society of Bengal Vol 63 Part 1 s"MCADD-PAHAR (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৭-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৫ 
  3. অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়। "ধর্ম্মপালদেবের তাম্রশাসন"। গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক)। কলিকাতা: শ্রীসুরেশ্বর বিদ্যাবিনোদ। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা