ইসাক্কি বা ইসাক্কাই একজন হিন্দু দেবী। তাঁর উপাসনাস্থল মূলত দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর জেলাসমূহ।[১] এই দেবী বিশেষত কন্যাকুমারী, তিরুনেলভেলি এবং সালেম প্রভৃতি জেলাগুলির হিন্দুদের মধ্যে জনপ্রিয়। তাঁকে সাধারণত 'গ্রাম্য দেবী'দের মধ্যে একজন ( বা তামিল ভাষায় কাভাল দেইভাম ) হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সাধারণত "ইসাক্কি আম্মান" ("মা" শব্দটির তামিল হল "আম্মান" ) নামে ডাকা হয়। গ্রামের দেবদেবীরা আত্মার অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়।[২][৩]

তামিলনাড়ুর শেনকোট্টাইয়ের নিকটে একটি ছোট মন্দিরের গেটে চিত্রিত দেবী ইসাক্কি

মন্দির সম্পাদনা

বৈদিক দেবদেবীদের মন্দিরগুলোর মতই ইসাক্কির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত মন্দিরগুলি সাধারণত তামিল ভাষায় পাককলি নামে পরিচিত। এগুলো প্রকৃতপক্ষে ক্যাকটাস-জাতীয় উদ্ভিদ দ্বারা সজ্জিত সৌন্দর্যমণ্ডিত মন্দির। যখন এ গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এই ক্যাকটাস গাছগুলো দুধের মত প্যাচপেচে কাদাসদৃশ রস নিঃসৃত করে যা দেবী ইসাক্কির চিহ্ন বলে মনে করা হয়।

সাধারণত প্রায় প্রতিটি ইসাক্কি মন্দিরের পাশেই একটি করে বট গাছ বা অশ্বত্থ গাছ অবস্থিত। যে মহিলারা সন্তান ধারণ করতে চান তারা প্রায়শই ছোট ছোট কাঠের কাঁকড়া এবং/অথবা তাদের শাড়ির টুকরো গাছের শাখাগুলিতে বা দৃশ্যমান শিকড়গুলিতে উপহার হিসাবে রাখেন।

উৎসব সম্পাদনা

ইসাক্কি আম্মান সেসব জনপ্রিয় উৎসবগুলির সাথেই উদযাপিত হয় যেগুলোতে মন্দিরে খাবার রান্না করা হয় এবং উজ্জ্বল রঙে আঁকা দেবীর বৃহৎ(৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার) পোড়ামাটির চিত্রগুলির নিকট উৎসর্গ করা বা বলী দেয়া হয়ে থাকে। উৎসব চলাকালীন দেবদেবীরা ভক্তদের থেকে দিনে দুবার জল, নারকেল দুধ, গোলাপ জল, মধু বা তেল দিয়ে পূজা লাভ করেন। এই বস্তুগুলোকে কখনও কখনও চুন, জল এবং হলুদ মিশ্রন করে তৈরি তরল দিয়ে গন্ধযুক্ত করা হয় (যা ধর্মীয় বিধান অনুসারে রক্তকে উপস্থাপন করে)। এরপর যখন প্রধান পুরোহিত প্রার্থনা করেন তখন দেবীকে ভাত, কেক, ফল, দুধ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান ও উৎসব শেষে মন্দির থেকে খাবার সরিয়ে নেওয়া হয়।[৩]

প্রতিমা শিল্প সম্পাদনা

ইসাক্কিকে সাধারণত একটি লাল পোশাক পরা যুবতী হিসাবে চিত্রিত করা হয়। তিনি সাধারণত একটি হাতে একটি শিশু এবং অন্য হাতে ত্রিশূল ধরে রেখে নিজেকে প্রকাশ করেন। তাঁকে কখনও কখনও মাটিতে পড়ে থাকা একজন ব্যক্তির উপরে দাঁড়িয়েও উপস্থাপন করা হয়।[৪] ইসাক্কি জৈন ধর্মের দেবী যক্ষী অম্বিকার অনুরূপ, যিনি সর্বদা গাছের নিচে এক বা দুটি বাচ্চাকে সাথে নিয়ে আবির্ভূত হন।[৫]

কিংবদন্তি অনুসারে উৎস সম্পাদনা

ইসাক্কির সাথে সম্পর্কিত সর্বাধিক প্রচলিত কিংবদন্তি নিম্নরূপ: [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] অম্বিকা নাম্নী এক গৃহবধূ স্বামী সোমশর্মণ ও তাদের দুই পু্ত্রকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে পারিবারিক জীবন যাপন করছিলেন। একদিন তাদের পরিবারের পূর্বপুরুষদের কল্যাণের জন্য "দর্পন" যজ্ঞ পালন করতে হয়েছিল। পূজার যাবতীয় জিনিসপত্র যথাযথভাবেই প্রস্তুত করা হয়েছিল। তবে সোমশর্মণ নদীতে স্নান করতে যাওয়ার সময় অম্বিকা এক ক্ষুধার্ত অনাহারী ঋষিকে সেখান থেকে খাবার খেতে দেন। এতে সোমশর্মণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন। কেননা পুজোর আচার-অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ঋষির কাছে পূজা শুরু হবার আগেই সরবরাহ করা হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে তিনি অম্বিকা এবং তাঁর সন্তানদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। বিশ্রাম করার মতো কোন শান্ত জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান অম্বিকা। পরে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে সোমশর্মণ তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সন্ধান করতে বের হন, কিন্তু ততক্ষণে তাঁর ভয়ে ভীত অম্বিকা নিজের জীবন ত্যাগ করেন। এটি বিশ্বাস করা হয় যে তাঁর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর পরে তিনি যক্ষিণী রূপ ধারণ করেন। তার কারণ তিনি তখনও তার ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি সন্তানের সুবিধার জন্য তার জীবন ফিরে পেতে সক্ষম হন। এটি করার ফলে অম্বিকা হলেন দেবী ইসাক্কি।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

http://isakkiammankovilsaral.zohosites.com/ তথ্যসূত্র />

  • কল্পনা রাম; মুকুওয়ার মহিলা।
  • জাভিয়ার রোমেরো-ফ্রিয়াস, দ্য মালদ্বীপ আইল্যান্ডারস, আ স্টাডি অব দ্য পপুলার কালচার অব অ্যান অ্যানশায়েন্ট ওশান কিংডম। বার্সেলোনা ১৯৯৯।
  • টিওয়ারি, এম.এন.পি (১৯৮৯)। অম্বিকা ইন জৈন আর্টস অ্যান্ড লিটরেচার, নয়াদিল্লি: ভারতীয় জ্ঞানপীঠ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

http://isakkiammankovilsaral.zohosites.com তামিলনাড়ুর গ্রাম্য দেবীরা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

http://isakkiammankovilsaral.zohosites.com/   উইকিমিডিয়া কমন্সে ইসাক্কি সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।