আসমা বিনতে উমায়েস
আসমা বিনতে উমায়েস (আরবি: أَسْمَاء بِنْت عُمَيْس) একজন সম্মানিত সাহাবি ছিলেন। তিনি খলিফা আবু বকর ও আলি এবং বিশিষ্ট সাহাবি আবু জাফর ইবনে আবু তালিবের স্ত্রী ছিলেন। তিনি প্রায় ৬০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ (সা.) ঐর অন্তিমকালে তিনি অনেক সেবা শুশ্রূষা করেন।
আসমা বিনতে উমায়েস | |
---|---|
أَسْمَاء بِنْت عُمَيْس | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | আনু. ৫৯৭ খ্রি.-৬০০ খ্রি. |
মৃত্যু | আনু. ৬৫৮ খ্রি.-৬৬১ খ্রি. |
সমাধিস্থল | বাব আল-সাগির কবরস্থান, দামেস্ক, সিরিয়া |
ধর্ম | ইসলাম |
দাম্পত্য সঙ্গী |
|
সন্তান |
|
পিতামাতা |
|
যুগ | প্রারম্ভিক ইসলামী যুগ |
যে জন্য পরিচিত | মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাহাবি |
জন্ম ও পরিচয়
সম্পাদনাতার নাম আসমা। তিনি ছিলেন খুশয়াম গোত্রের মহিলা। তার পিতার নাম ছিলো আমিস ইবনে সাদ ইবনে তামিম ইবনে হারেস, আর মাতার নাম ছিলো খাওলা বিনতে আওফ। আসমার পিতা ছিলো কিনানা গোত্রের বাসিন্দা।[১][২]
পরিবার-পরিজন
সম্পাদনাআসমার মা হিন্দ বিনতে আওফের সন্তানাদির মধ্যে দুই কন্যা ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.) এর স্ত্রী। একজন হলেন জয়নব বিনতে খুযায়মা এবং অন্যজন মায়মুনা বিনতে আল-হারিস। তার বৈমাত্রিক বোন সালমা বিনতে উমাইস ছিলেন হামযা ইবন আবদুল মুত্তালিব এর স্ত্রী। আসমা বিনতে উমাইসের গর্ভে মোট ৭জন সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মধ্যে পাঁচ জন পুত্র ও দুইজন কন্যা।
ইসলাম গ্রহণ
সম্পাদনাআসমা বিনতে উমাইস মুহাম্মদ (সা.) মক্কার পাশে দারুল আরকাম-এ অবস্থানের পূর্বে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নবী (সা.) এর হাতে বাইয়াতের গৌরব অর্জন করেন। মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণের আগে রোগাক্রান্ত হলে আসমা অনেক সেবা শুশ্রুষা করেন।
বৈবাহিক জীবন
সম্পাদনাপ্রথম বিবাহ
সম্পাদনাবিশিষ্ট সাহাবি ও মুহাম্মাদ (সা.) এর চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবি তালিব এর সাথে আসমা বিনতে উমাইসের প্রথম বিবাহ হয়। আসমা ইসলাম গ্রহণের সমসাময়িক সময়ে তাঁর স্বামীও ইসলাম গ্রহণ করেন, তারপর তাঁরা একত্রে হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে আবু জাফরের ঔরসে তিনটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে- মুহাম্মাদ, আব্দুল্লাহ ও আওন।[৩]
হাবশায় কিছু বছর অবস্থানের পরে, ৭ম হিজরি ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে খায়বারের যুদ্ধ বিজয়ের পর তাঁরা মদিনায় ফিরে আসেন এবং হাফসা বিনতে উমরের গৃহে অবস্থান করেন। ৮ম হিজরির জমাদিউল উলা মাসে, ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মুতার যুদ্ধে জাফর ইবনে আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন, মুহাম্মদ (সা.) এই পরিবারের পাশে ছিলেন, তাদের খোঁজ-খবর নেন এবং খাবারের ব্যবস্থা করেন। জাফরের মৃত্যুর পর আবু বকরের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের এক সন্তান মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর ছিলেন বিখ্যাত আলেম ও যোদ্ধা।
দ্বিতীয় বিবাহ
সম্পাদনাজাফর ইবনে আবি তালিব এর মৃত্যুর ৬ মাস পর ৮ম হিজরির শাওয়াল মাসে হযরত আবু বকরের সাথে আসমার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দু’বছর পর ১০ম হিজরির যিলকাদ মাসে আসমা হজ্ব করতে আসলে, সেই সময় যুলহুলাইফা নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরের জন্ম হয়। ১৩ হিজরিতে তার স্বামী আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন, তিনি আবারো একাকী হয়ে যান, অসিয়ত অনুসারে তার স্বামীর জানাজার গোসল তিনিই করান। আবু বকরের মৃত্যুবরণকালে পুত্র মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরের বয়স ছিল আনুমানিক তিন বছর।
তৃতীয় বিবাহ
সম্পাদনাআবু বকরের মৃত্যুর পর আলির সাথে তাঁর তৃতীয় বিয়ে হয়। শিশু পুত্র মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরও মাতার সাথে হযরত আলীর গৃহে লালিত-পালিত হন। মুহাম্মদ ইবনে জাফর ও মুহাম্মদ ইবনে আবি বকরের মধ্যকার বিতর্কও আসমা সমাধান করতেন। আলির ঔরসে এক পুত্র ইয়াহিয়া ইবনে আলী জন্ম গ্রহণ করেন। তবে মুহাম্মাদ ইবনে ওমরের মতে, আলীর ঔরসে দুই পুত্র জন্ম গ্রহণ করে, ইয়াহিয়া ও আওন।[৪]
হাদিস বর্ণনা
সম্পাদনাআসমা বিনতে উমায়েস ৬০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এসব হাদিস বর্ণনা করেছেন যেসব তাবেয়ী তারা হলো-
- আবদুল্লাহ ইবনে জাফর।
- ইবনে আব্বাস।
- কাসেম ইবনে মুহাম্মদ।
- আব্দুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ।
- ইবনুল হাদ।
- ওরওয়া।
- ইবনে মোসাইয়ের।
- উম্মে আওন বিনতে মুহাম্মদ ইবনে জাফর।
- ফাতমা বিনতে আলী।
- আবু ইয়াযিদ মাদানী, প্রভৃতি।
মৃত্যু
সম্পাদনা৪০ হিজরির দিকে খলিফা আলি মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর স্ত্রী আসমা তাঁর মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।