বাইয়াত
বাইয়াত (আরবি- بَيْعٌة) শব্দটি একটি ইসলামিক পরিভাষা। এর অর্থ আনুগত্যের চুক্তি, আনুগত্যের শপথ ও আনুষ্ঠানিক আনুগত্য (সূত্র: আল মুজামুল ওয়াফী) ৷ এর মূলধাতু হলো (بيع) যার অর্থ বিক্রয় করা, লেনদেন করা, শপথ করা, চুক্তি করা ইত্যাদী। তবে, ইসলাম ধর্মে বাইয়াত বলতে শপথ পাঠ বা আনুগত্যের চুক্তিকে বুঝানো হয়।
অভিধান অনুসারে
সম্পাদনাআরবী-ইংরেজি অভিধান “মু‘জামুল লুগাতুল আরাবীয়্যাহ” অনুসারে, বাইয়াতের(بَيْعٌ) অর্থ লিখা হয়েছে
- To Sell - বিক্রি করা
- To Make a Contract - কোন একটি চুক্তি করতে
- To acknowledge Severing or leader - নেতার সেবা করার স্বীকৃতি জানাতে
- Agreement - চুক্তি করা
- Arrangement business deal Commercial transaction - ব্যবসায়িক লেনদেন প্রভৃতি।
কুরআনের পরিভাষায়
সম্পাদনাকুরআনের পরিভাষায় বাইউন (بَيْع) শব্দের অনেক ব্যবহার রয়েছে -
১। বেচা-কেনা,ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থ-
সুরা নুরের ৩৭ নং আয়াত,
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاء الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ“ অর্থঃ
এরা এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা- বাণিজ্য ও ক্রয়- বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে,যে দিন অন্তর ও দৃষ্টি সমুহ উল্টে যাবে।[১]
সুরা জুমআর ৯ নং আয়াত,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ “ অর্থঃ হে মুমিনগণ, জুমাআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়,তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ছুটে চল এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝে থাক।” (সুরা- জুমাআ- ০৯)[২]
২। নিজের জান-মাল আল্লাহ ও তার রাসুলের নিকটে চুক্তিবদ্ধ হওয়া অর্থেঃ
সুরা তওবার ১১১ নং আয়াত,
إِنَّ اللّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللّهِ فَاسْتَبْشِرُواْ بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ অর্থঃ “আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে, তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জলি ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবচিল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দতি হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমাদের করেছ তাঁর সাথ। আর এ হল মহান সাফল্য।” [৩]
প্রকারভেদ
সম্পাদনাইসলামী বিশেষজ্ঞরা বাইয়াতকে মোটামুটি ৫ ভাগে বিভক্ত করেছেন,
১. খিলাফাতের বাইয়াত - যা ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের বা খলিফার আনুগত্বের শপথ হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে। যখন ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা নিয়োগ করা হয় তখন এই বাইয়াত গ্রহণ করা হয় ৷
২. বাইয়াতে ইসলাম - তথা ইসলাম গ্রহণের জন্য বাইয়াত নেয়া।
৩. বাইয়াতে তাসাওউফ - তাকওয়া পরহেযগারীতে অগ্রগামী হবার এবং নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার শপথ। কোন পীর বা ধর্মীয় ব্যক্তির পক্ষ থেকে এই বাইয়াত নেওয়া হয়ে থাকে ৷
৪. বাইয়াতে হিজরত - দারুল কুফর বা কাফেরদের জুলুমী রাষ্ট্র ছেড়ে কোন ইসলামী রাষ্ট্রে চলে যাওয়ার জন্য কারো হাতে হাত রেখে যে শপথ গ্রহণ করা হয়।
৫. বাইয়াতে জিহাদ - জিহাদের ময়দানে দৃঢ় থাকার বাইয়াত। যদি কখনো জিহাদের ময়দানে ভয়ে পালিয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন আমীরে জিহাদের হাতে সকল মুজাহিদ বাহিনী দৃঢ়তার বাইয়াত গ্রহণ করে। এছাড়াও সাধারণ অবস্থাতেও আমীরে জিহাদের হাতে মুজাহিদ বাহিনী জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করে থাকে ৷
এখানে উল্লেখ্য যে, বাইয়াতের এসব প্রকারভেদ ছাড়াও আরো প্রকারভেদ রয়েছে ৷ এসবের বিস্তারিত বিবরণ ফিকহের কিতাবসমূহে রয়েছে ৷ উপরোক্ত প্রকারভেদের সামর্থনে ইসলামের মূল গ্রন্থ কুরআনে পর্যাপ্ত আয়াত রয়েছে ৷ যার সবগুলো এখানে এখনো উল্লেখ করা হয়নি।