আলীকদম উপজেলা
আলীকদম বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
আলীকদম (আলোহক্যডং) | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে আলীকদম উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২১°৪০′১৭″ উত্তর ৯২°১৮′৫″ পূর্ব / ২১.৬৭১৩৯° উত্তর ৯২.৩০১৩৯° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | বান্দরবান জেলা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৭৬ |
সংসদীয় আসন | ৩০০ পার্বত্য বান্দরবান |
সরকার | |
• সংসদ সদস্য | বীর বাহাদুর উশৈ সিং (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ৮৮৫.৭৮ বর্গকিমি (৩৪২.০০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৪৯,৩১৭ |
• জনঘনত্ব | ৫৬/বর্গকিমি (১৪০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৩১.৩% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৪৬৫০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ২০ ০৩ ০৪ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
অবস্থান ও আয়তন
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলার আয়তন ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার (২,১৮,৮৮০ একর)।[১][২] এটি বান্দরবান জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা। বান্দরবান জেলার দক্ষিণাংশে ২১°২১´ থেকে ২১°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ ৯২°১৫´ থেকে ৯২°৩৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে আলীকদম উপজেলার অবস্থান।[২] বান্দরবান জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১১১ কিলোমিটার।[৩] এ উপজেলার উত্তরে লামা উপজেলা, দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, পূর্বে থানচি উপজেলা, পশ্চিমে লামা উপজেলা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা।
নামকরণ
সম্পাদনাধারণা মতে, আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামের উৎপত্তি। বোমাং সার্কেল চীফের নথি পত্র ও ১৯৬৩ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আঁকা মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের সত্যতা পাওয়া যায়। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক আতিকুর রহমান এর মতে আলী পাহাড়ের সাথে সঙ্গতিশীল নাম হল আলীকদম। তাছাড়া কথিত আছে যে, ৩৬০ আউলিয়া এ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। তাদের মধ্যে আলী নামে কোন এক সাধক এ অঞ্চলে আসেন। ওনার পদধুলিতে ধন্য হয়ে এ এলাকার নাম করণ হয় আলীকদম।
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাপূর্ববর্তী সময়ে এটি লামা উপজেলার একটি ইউনিয়ন ছিল। ১৯৭৬ সালে লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে আলীকদম থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।[২] ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের ফলে এটি উপজেলায় অধিষ্ঠিত হয়।[৪] এ উপজেলায় বর্তমানে ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ আলীকদম উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আলীকদম থানার আওতাধীন।
ইতিহাস
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলা পার্বত্যাঞ্চলের ইতিহাসের উপজীব্য। এখানকার বিলুপ্তপ্রায় আলীর সুড়ঙ্গ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন পুকুর। তাছাড়া এখানকার নয়াপাড়া গ্রামে প্রাচীন ইটভাটার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান, যা বর্তমানে নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বসতভিটা। ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রন্থপ্রণেতা গবেষক আতিকুর রহমান সহ স্থানীয় সাংবাদিকরা ঐ এলাকায় মাটি খুঁড়ে ইট আবিষ্কার করেছেন। আবিস্কৃত ইটগুলোর গঠনপ্রণালীতে সুলতানী আমলের ইট বলে অনুমিত হয়। উদ্ধারকৃত ইটগুলোর দৈর্ঘ্য সাত ইঞ্চি, প্রস্থ সাড়ে চার ইঞ্চি আর পুরু দেড় ইঞ্চি মাত্র। আবিস্কৃত ইটগুলো বর্তমানে আলীকদম প্রেসক্লাবে রক্ষিত আছে।
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আলীকদম উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৪৯,৩১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৫,৬৫০ জন এবং মহিলা ২৩,৬৬৭ জন। মোট পরিবার ৯,৪২২টি।[১] মোট জনসংখ্যার ৫৮.৮১% মুসলিম, ৪.৩০% হিন্দু, ৩০.৯৬% বৌদ্ধ এবং ৫.৯৩% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।[২]
২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আলীকদম উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৬৩,৭৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৩,৩১৫ জন এবং মহিলা ৩০,৪৮৪ জন। মোট পরিবার ৯,৪২২টি।[১] মোট জনসংখ্যার ৫৪.৭১% মুসলিম, ৩.০৩% হিন্দু, ৩০.৫৪% বৌদ্ধ এবং ৬.৫১% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
এ উপজেলায় মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা উপজাতির বসবাস রয়েছে।[২]
শিক্ষা ব্যবস্থা
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলা শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই অনগ্রসর জনপদ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ উপজেলার সাক্ষরতার হার ৩১.৩%।[১] এ উপজেলায় ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[৫]
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান প্রধান সড়কগুলো হল বান্দরবান-থানচি-আলীকদম, বান্দরবান-লামা-আলীকদম এবং চকরিয়া-লামা-আলীকদম সড়ক। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম পূর্বাণী চেয়ারকোচ এবং জীপগাড়ি।
ধর্মীয় উপাসনালয়
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলায় ৩৮টি মসজিদ, ৫টি মন্দির, ১৭টি বিহার এবং ৩টি গীর্জা রয়েছে।[২]
অর্থনীতি
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলার পাহাড়ী-বাঙ্গালী জন সমাজের ঘূর্ণিয়মান অর্থনীতির চাকা এখনো ধীরলয়ে চলছে। বসবাসরত সিংহভাগ লোকজন অর্থনৈতিকভাবে সুযোগসুবিধা এখনো পায়নি। পাহাড়ী ভূমিতে জুম চাষ করে অধিকাংশ উপজাতীয় লোকজন জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই আদিম পদ্ধতিতে জুম চাষের মাধ্যমে জীবিকা আহরণ করে এলাকার সবুজ পাহাড়কে শ্মশানের ছাইয়ে পরিণত করলেও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসেনি তাদের। অপরদিকে, বাঙ্গালী জনসমাজেও খেটে খাওয়া লোকের সংখ্যা বেশি। পাহাড়ের বাঁশ-কাঠ কেটে জঠর জ্বালা মিটালেও তাদের অর্থনীতির চাকা মাঝে মধ্যে থমকে দাঁড়ায় পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিধি-নিষেধের কারণে।
নদ-নদী
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মাতামুহুরী নদী। এছাড়া রয়েছে তৈন খাল এবং চৈক্ষ্যং খাল।[৩]
দর্শনীয় স্থান
সম্পাদনাআলীকদম উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:[৩]
- আলীকদম সেনানিবাস
- আলীর সুড়ঙ্গ
- ক্রিসতং পাহাড়
- চাইম্প্রা ঝর্ণা
- ডামতুয়া ঝর্ণা
- ডিম পাহাড়
- তামাংঝিরি জলপ্রপাত
- তিনাম ঝর্ণা
- থাঙ্কুয়াইন ঝর্ণা
- পালংখিয়াং ঝর্ণা
- পোয়ামুহুরী ঝর্ণা
- মারায়ন তং পাহাড়
- রংরং পাহাড়
- রূপমুহুরী ঝর্ণা
- লাদ মেরাগ ঝর্ণা
- শিলবুনিয়া ঝর্ণা
জনপ্রতিনিধি
সম্পাদনা- সংসদীয় আসন
সংসদীয় আসন | জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[৬] | সংসদ সদস্য[৭][৮][৯][১০][১১] | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|---|
৩০০ পার্বত্য বান্দরবান | বান্দরবান জেলা | বীর বাহাদুর উশৈ সিং | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "আলিকদম উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org।
- ↑ ক খ গ ঘ "এক নজরে আলীকদম - আলীকদম উপজেলা - আলীকদম উপজেলা"। www.alikadam.bandarban.gov.bd। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ সরকার, বাংলাদেশ। "আলীকদম উপজেলার পটভূমি"। আলীকদম উপজেলা। বাংলাদেশ সরকার। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৫।
- ↑ "Schools/Colleges in ALIKADAM - Bangladesh School, College Directory"। edu.review.net.bd।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Election Commission Bangladesh - Home page"। www.ecs.org.bd।
- ↑ "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)। ecs.gov.bd। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"। বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"। প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "জয় পেলেন যারা"। দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"। সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮।