আর্কিয়ান অধোগমন একটি বিতর্কিত বিষয়, এই বিষয়টি আর্কিয়ান সময়ে অধোগমনের সম্ভাব্য অস্তিত্ব এবং তার প্রকৃতির সঙ্গে জড়িত। আর্কিয়ান একটি ভূতাত্ত্বিক শৈলকাল যেটি ৪.০-২.৫ বিলিয়ন বছর আগে বর্তমান ছিল। সাম্প্রতিক কাল অবধি, দ্ব্যর্থহীনভাবে একে সমর্থন করা বা না করার পক্ষে সামান্য প্রমাণ ছিল, এবং অতীতে অনেক বিজ্ঞানী হয় অগভীর অধোগমনকে বিশ্বাস করেছিলেন বা এর অস্তিত্বকে সম্পূর্ণভাবে অবিশ্বাস করেছিলেন। তবে, গত দুই দশকে ভূতাত্ত্বিক বোধগম্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে, সেই চিন্তাধারায় শক্তিশালী পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে কারণ নতুন প্রমাণ ক্রমবর্ধমানভাবে অনিয়মিত, গভীর অধোগমনের ইঙ্গিত দিয়েছে।[১]

আর্কিয়ান অধোগমনের গুরুত্ব সম্পাদনা

অধোগমন হল ঘনত্ব দ্বারা নির্ণীত একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি ভূত্বকীয় পাত অন্যের নিচে চলে যায় এবং সম্মিলন সীমানায় ম্যান্টলে ডুবে যায়। ঘন পাথরের মাধ্যাকর্ষণ টান ভূত্বকীয় পাত সংস্থানের জন্য প্রায় ৯০% শক্তি সরবরাহ করে।[২] পৃথিবীর বিন্যাস পরিবর্তন করার জন্য তার তাপ বিবর্তনকে পরিচালনা করার,[৩] এবং এর গঠনমূলক কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে অধোগমন গুরুত্বপূর্ণ।[১] নির্দিষ্টভাবে, অধোগমন অঞ্চলগুলিতেই প্রাথমিকভাবে বর্তমান মহাদেশীয় ভূত্বক গঠিত হয়েছিল,[৪] এটি আধুনিক পৃথিবী গঠনের আর এক প্রক্রিয়া যার নিগূঢ় অতীত রয়েছে। তদুপরি, অধোগমন হল সেই মূল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৃষ্ঠতলের উপকরণগুলি পৃথিবীর গভীর অংশে প্রবেশ করেছে[৫] এবং আকরিক গঠনের জন্য এই প্রক্রিয়াই বিশেষভাবে দায়ী।[৬] অনেক ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়াগুলিতে অধোগমনের গুরুত্ব বিবেচনা করে, এটি স্পষ্ট যে, পৃথিবীকে একটি গতিশীল ব্যবস্থা হিসাবে বুঝতে গেলে এর অতীত এবং বর্তমানের প্রকৃতি আমাদের অধ্যয়ন করতে হবে।

আর্কিয়ান অধোগমনের বিরোধিতা সম্পাদনা

যাঁরা আর্কিয়ান সময়ে কোন অধোগমনের ঘটনাকে স্বীকার করেন না তাঁরা ইঙ্গিত করেন যে আর্কিয়ান পৃথিবী আজকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তপ্ত ছিল, সেই সময় তাপমাত্রা অশ্মমণ্ডলের ঘনত্বকে এমনভাবে প্রভাবিত করে থাকতে পারে যে হয়তো অধোগমন সম্ভব ছিলনা। আর্কিয়ান পৃথিবীর উচ্চ তাপমাত্রার কারণ হিসাবে সৌরজগৎের উপাদানগুলির বিবৃদ্ধির ফলে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভূত শক্তি এবং মজ্জাম্যান্টলের পৃথকীকরণকে দায়ী করা যেতে পারে।[১] এই শক্তি, অতি ঘন তাপ উৎপাদনকারী উপাদানের সাথে মিশে,[৭] আজকের পৃথিবীর চেয়ে আর্কিয়ান পৃথিবীর অধিকতর উষ্ণতর কারণ হয়েছিল।[৩] যদি ধরে নেওয়া যায় আর্কিয়ান সময়ে সমুদ্রতলদেশ প্রসারণের ফলে সমুদ্রীয় অশ্মমণ্ডল উৎপন্ন হয়েছিল, উচ্চতর তাপমাত্রা ম্যান্টল উপাদানের গলন বৃদ্ধি করেছিল এবং মহাসাগরীয় প্রসারণ কেন্দ্রগুলিতে উঠে এসেছিল।[৮] এর ফলস্বরূপ ঘন মহাসাগরীয় ভূত্বক এবং অন্তর্নিহিত অবনমিত অশ্মমণ্ডলীয় ম্যান্টলের ঘন অঞ্চল তৈরি হয়েছিল।[৮] অশ্মমণ্ডলের ঘনত্ব হ্রাস পেয়েছিল দুটি কারণে। একটি হল ম্যান্টল থেকে ক্রাস্টের পৃথকীকরণ এবং দ্বিতীয়টি হল অবশিষ্ট ম্যান্টল আপেক্ষিকভাবে লোহা এবং অ্যালুমিনিয়ামে হ্রাসপ্রাপ্তি।[৯] এই প্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে মনে হয় যে সমুদ্রের অশ্মমণ্ডলটি এত হালকা ছিল যে এটি খুব অগভীরভাবে অধোগমনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল বা একেবারেই অধোগমন হয়নি।[১০] বিজ্ঞানীরা যাঁরা এই অনুমানের পক্ষে আছেন তাঁরা যুক্তি দেখান যে সমুদ্রের মালভূমির মূল অঞ্চলগুলিতে ঘন সমুদ্র ভূত্বকের জলপূর্ণ আংশিক গলনের ফলে ফেলসিক পদার্থগুলি তৈরি হয়েছিল,[১১] সাধারণভাবে বিশ্বাস করা অধোগমনন অঞ্চলগুলি থেকে নয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Van Hunen, J; Moyen JF (২০১২)। "Archean Subductionl: Fact or Fiction?"। Annual Review of Earth and Planetary Sciences40: 195–219। ডিওআই:10.1146/annurev-earth-042711-105255 
  2. Forsyth, D; Uyeda, S (১৯৭৫)। "On the relative importance of the driving forces of plate motion"Geophysical Journal of the Royal Astronomical Society43: 163–200। ডিওআই:10.1111/j.1365-246X.1975.tb00631.x বিবকোড:1975GeoJ...43..163F 
  3. Jaupart, C; Labrosse S; Mareschal J-C (২০০৭)। "Temperatures, heat and energy in the mantle of the Earth"। Treatise on Geophysics: 253–303। 
  4. Davidson, JP; Arculus, RJ (২০০৬)। "The significance of Phanerozoic arc magmatism in generating continental crust"। Evolution and Differentiation of Continental Crust: 135–172। 
  5. R̈upke, LH; Morgan JP; Hort M; Connolly JAD (২০০৪)। "Serpentine and the subduction zone water cycle"। Earth and Planetary Science Letters223: 17–34। ডিওআই:10.1016/j.epsl.2004.04.018বিবকোড:2004E&PSL.223...17R 
  6. Bierlein, FP; Groves DI; Cawood PA (২০০৯)। "Metallogeny of accretionary orogens – the connection between lithospheric processes and metal endowment"। Ore Geology Reviews36: 282–292। ডিওআই:10.1016/j.oregeorev.2009.04.002 
  7. Leitch, AM (২০০৪)। "Archean Plate Tectonics"। American Geophysical Union, Spring Meeting 
  8. Sleep, NH; Windley BF (১৯৮২)। "Archean plate tectonics: constraints and inferences"Journal of Geology90: 363–379। ডিওআই:10.1086/628691বিবকোড:1982JG.....90..363S 
  9. Hynes, A (২০১৪)। "How feasible was subduction in the Archean?"। Canadian Journal of Earth Sciences51: 286–296। ডিওআই:10.1139/cjes-2013-0111 
  10. Abbott, DH; Drury R; Smith WHF (১৯৯৪)। "Flat to steep transition in subduction style"Geology22: 937–940। ডিওআই:10.1130/0091-7613(1994)022<0937:ftstis>2.3.co;2 
  11. Condie, KC (২০১১)। "Did early Archean continental crust form without plate tectonics?"। Geological Society of America Fall Meeting43 (5)।