আবু হাসান শাহরিয়ার
আবু হাসান শাহরিয়ার (জন্ম: ২৫ জুন ১৯৫৯ ) বাংলাদেশের একজন আধুনিক কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। তিনি দৈনিক পত্রিকা আমাদের সময়-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি দৈনিক মুক্তকণ্ঠ ও দৈনিক যুগান্তর সহ বিভিন্ন পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানজনক সাহিত্য পুরস্কার বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[১] কাব্য ছাড়াও তার অন্যতম গ্রন্থ প্রামাণ্য শামসুর রাহমান।
আবু হাসান শাহরিয়ার | |
---|---|
জন্ম | সিরাজগঞ্জ | ২৫ জুন ১৯৫৯
পেশা | কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
সময়কাল | স্বাধীনতা উত্তর |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | প্রামাণ্য শামসুর রাহমান |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০১৬) |
দাম্পত্যসঙ্গী | মনিরা কায়েস |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
সম্পাদনাতার জন্ম ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জুন রাজশাহীতে। পৈতৃক নিবাস কড্ডাকৃষ্ণপুর, সিরাজগঞ্জ।[২] তার বাবা শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সিরাজউদ্দীন ছিলেন একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও সরকারী কলেজের অধ্যাপক।[৩] তিনি পিতা এবং মাতা লেখিকা রাবেয়া সিরাজ-এর একমাত্র পুত্র, পরিণয়সূত্রে কথাসাহিত্যিক মনিরা কায়েস তার জীবনী সঙ্গিনী।[৪] তার শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা এবং ঢাকা শহরে। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এস এস সি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হবার পর চিকিৎসক হবার ইচ্ছা নিয়ে তিনি ১৯৭০-এর শেষভাগে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্র তাকে বেশি দিন আকর্ষণ করে রাখতে পারেনি। তিনি এক বছর পড়ার পর মেডিক্যাল কলেজ চিরতরে পরিত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন এবং সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। কিছু দিনের মধ্যে তিনি প্রকাশনা ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরপর প্রবেশ করেন সাংবাদিকতায়।[২]
সাংবাদিকতা
সম্পাদনাশাহরিয়ার মূলত: একজন লেখক এবং সাংবাদিকতার জগতে তিনি প্রধানত সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে খ্যাতিমান। তিনি বেক্সিমকো গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সাহিত্য বিভাগ খোলা জানালার সম্পাদক হিসেবে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন।[২] এছাড়া তিনি দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দীর্ঘকাল সাহিত্য সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের সময় পত্রিকায় সম্পাদক পদে যোগদানের আগেও তিনি এ পত্রিকাটিতে দীর্ঘকাল কাজ করেছেন।[২]
সাহিত্যকৃতি
সম্পাদনাব্যক্তিজীবনে স্পষ্টবাদী, দৃঢ়চেতা ও আপসহীন হলেও তিনি রোম্যান্টিক কবিতার জন্য বিখ্যাত। তার কবিতা গীতল এবং ছন্দোময়তার কারণে শ্রুতিমধুর। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন এবং সংকলন গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ অন্তহীন মায়াবী ভ্রমণ ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।[৩] এই প্রকাশনার মধ্য দিয়ে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার ভূবনে দৃঢ়পদক্ষেপে প্রবেশ করেন। তার জীবনী, মিডিয়া, সাহিত্য ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে তিনি রচনা করেন সমাত্মজীবনী।[৩] তার বেশিরভাগ কবিতা দৃষ্টান্তবাদ-সমর্থিত। কবিতা তার মূল বিচরণ ক্ষেত্র হলেও তিনি কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ এবং সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও মেধাবী অবদান রেখেছেন। তার গদ্য একইসঙ্গে স্বাদু এবং বিশ্লেষণধর্মী।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দীর্ঘ ত্রিশ বছরের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি কবি শামসুর রাহমানকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। এ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আমরা একসাথে হেঁটেছিলাম নামের একটি বই। এতে রয়েছে দুই প্রজন্মের দুই কবির মধ্যে চিন্তা-ভাবনা বিনিময়মূলক সংলাপ।[৫]
প্রকাশিত গ্রন্থ
সম্পাদনাকবিতা
সম্পাদনা- অন্তহীন মায়াবী ভ্রমণ (১৯৮৬);
- অব্যর্থ আঙুল (১৯৯০);
- তোমার কাছে যাই না তবে যাব (১৯৯৬);
- একলব্যের পুনরুত্থান (১৯৯৯);
- নিরন্তরের ষষ্ঠীপদী (১৯৯৯);
- এ বছর পাখিবন্যা হবে (২০০০);
- ফিরে আসা হরপ্পার চাঁদ (২০০১);
- হাটে গেছে জড়বস্তুবাদ (২০০৩);
- শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৩);
- সে থাকে বিস্তর মনে বিশদ পরানে (২০০৪);
- প্রেমের কবিতা (২০০৪)
- আড়াই অক্ষর (২০০৭)
- তোমাদের কাচের শহরে (২০০৮)
- "কিছু দৃশ্য অকারণে প্রিয়" (২০১৬)
- শিশিরে পা রাখো অসুখীরা (২০১৮)
- বিমূর্ত প্রণয়কলা (২০১৯)
- নোনা ব্যঞ্জনার শিলালিপি (২০২০)
- ও হে সাঁকো, নড়ো (২০২০)
কাব্য
সম্পাদনা- বালিকা আশ্রম (২০০৫)
কিশোর কবিতা
সম্পাদনা- পায়ে নূপুর (১৯৮৪);
- ভর দুপুরে অনেক দূরে (১৯৮৭);
- আয়রে আমার ছেলেবেলা (১৯৯৮)।[৪]
ছোটগল্প
সম্পাদনা- আসমানী সাবান (১৯৮১)।[৪]
প্রবন্ধ-গবেষণা-আখ্যান
সম্পাদনা- কালের কবিতা কালান্তরের কবিতা (২০০০);
- কবিতার প্রান্তকথা (২০০১);
- অর্ধসত্য (২০০৩);
- কবিতার বীজতলা (?)
- কবিতা অকবিতা অল্পকবিতা (২০০৪);
- সমাত্মজীবনী : মিডিয়া ও প্রতিমিডিয়া (২০০৪);
- কবিতার সঙ্গে কথোপকথন (২০০১)।[৪]
- আমরা একসঙ্গে হেঁটেছিলাম
- যাইত্যাছি যাইত্যাছি কই যাইত্যাছি জানি না
- নৈঃশব্দের ডাকঘর (মৃণাল বসু চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে)
- প্রবন্ধসংগ্রহ (২০১৭)
- চম্পুবচন (২০১৭)
সমালোচনা
সম্পাদনা- উদোরপি-পিণ্ডি (১৯৯০)।[৪]
সম্পাদনা
সম্পাদনা- প্রামাণ্য শামসুর রাহমান (১৯৮৪);
- জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত কবিতাসমগ্র (২০০৩);
- জীবনানন্দ দাশ : মূল্যায়ন ও পাঠোদ্ধার (২০০৩);
- রূপসী বাংলা [কবিকৃত পাণ্ডুলিপি সংস্করণ (২০০৩);]
- বনলতা সেন (২০০৪);
- জীবনানন্দ দাশের অগ্রন্থিত-অগ্রন্থিত শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৬)
- জীবনানন্দ দাশের প্রেমের কবিতা
- জীবনানন্দ দাশের গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত প্রেমের কবিতা (২০০৬)।[৪]
- ৩২ নম্বর : চোখের আলোয় দেখেছিলেম
- ছোটগল্প : ৯৮
আত্মজৈবনিক রচনা
সম্পাদনা- শৈশবের সিঁড়িগুলো : ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১
পুরস্কার ও সম্মননা
সম্পাদনা- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (কবিতা) - ২০১৭[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "আবু হাসান শাহরিয়ার ও শাহাদুজ্জামান পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার"। bangla.bdnews24.com। ২৩ জানুয়ারি ২০১৭। ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ গ ঘ দীপ, কুমার (২৫ জানুয়ারি ২০১৭)। "আবু হাসান শাহরিয়ার : কবিতার রাজভিখিরি"। এনটিভি অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ গ সরকার, সুজিত (২১ মে ২০১৫)। "কবি আবু হাসান শাহরিয়ার আমার 'মনের মানুষ'"। দৈনিক মানবকন্ঠ। ১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ সম্পাদিত বাংলা একাডেমী লেখক অভিধান; পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ, সেপ্টেম্বর, ২০০৮; পৃষ্ঠা-৫৪, আইএসবিএন 984-07-4725--8
- ↑ "শামসুর রাহমানের সঙ্গে আবু হাসান শাহরিয়ার"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন আবু হাসান শাহরিয়ার"। ভোরের পাতা। ২৩ জানুয়ারি ২০১৭। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৭।