আবু সাঈদ (আন্দোলনকর্মী)
আবু সাঈদ (২০০১ - ১৬ জুলাই ২০২৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী ছাত্র সক্রিয়কর্মী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী, তিনি ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি এই আন্দোলনের রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন।[১] ১৬ জুলাই আন্দোলন চলাকালে একজন পুলিশ সদস্যের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩] কোটা আন্দোলন কর্মীরা তাকে আন্দোলনের প্রথম শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছে।[৪]
আবু সাঈদ | |
---|---|
মৃত্যু | ১৬ জুলাই ২০২৪ রংপুর |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ ![]() |
মাতৃশিক্ষায়তন | বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর |
পরিচিতির কারণ | ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ। |
আন্দোলন | ২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন |
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাআবু সাঈদ ২০০১ সালে রংপুরের জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন এবং মাতার নাম মনোয়ারা বেগম। আবু সাঈদের পাঁচ ভাই ও তিন বোন ছিলো, নয় ভাই বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। তিনি স্থানীয় জাফর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপরে স্থানীয় খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে তিনি ২০২০ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন।[৫] তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।[৬]
২০২৪-এর আন্দোলন
সম্পাদনাআবু সাঈদ বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের একজন কর্মী। ২০১৩, ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের ৬ জুন আবারো কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই ২০১৪ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে উল্লেখ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন,
“ | স্যার! (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা), এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিলো সবাই তো মরে গিয়েছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।
আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেচেঁ আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। নায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাড়াঁন। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেচেঁ থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের। |
” |
১৬ জুলাই দুপুর ১২ টা থেকেই রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে কোটা আন্দোলনকর্মীরা বিক্ষোভ করছিলো। আবু সাঈদ এই আন্দোলনের সম্মুখ ভাগেই অবস্থান করছিলো সবসময়।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদের সবাই স্থান ত্যাগ করলেও আবু সাঈদ স্থান ত্যাগ করেনা। সে হাতে একটি লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। পুলিশ এই অবস্থায় তার উপরে গুলি ছুড়ে। সংঘর্ষ শুরু হলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিলেন আবু সাঈদ। অন্যরা একটু পেছনে ছিলেন। আবু সাঈদের ঠিক সামনে অবস্থান ছিল পুলিশের। পুলিশের অবস্থানের জায়গাটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে। উল্টো দিক থেকে রাবার বুলেট ছুড়ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। তারপরও অবস্থান থেকে সরেননি আবু সাঈদ, দাঁড়িয়েই ছিলেন, তাঁর হাতে ছিল একটি লাঠি। তিনি সেই লাঠি দিয়ে রাবার বুলেট ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে শরীরে একের পর রাবার বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।[২][৭]
প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাজনপ্রিয় সংস্কৃতিতে
সম্পাদনাকোটা আন্দোলনকে কবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী তার নামে প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ নামে একটা কবিতা লিখেন।[৮] আন্দোলন কর্মীরা রংপুর পার্ক মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘আবু সাঈদ চত্বর’ দিয়েছেন।[৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব; দিনাজপুর (২০২৪-০৭-১৬)। "পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, রংপুরে কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৭।
- ↑ ক খ "রংপুরে যেভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন আন্দোলনকারী আবু সাঈদ"। প্রথম আলো। ১৬ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার!"। প্রথম আলো। ১৭ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "'যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাঁচুন' মৃত্যুর আগে আবু সাইদের বার্তা"। দৈনিক যুগান্তর। ১৭ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "আদরের ছোট ছেলে সাঈদের মৃত্যুতে পাগলপ্রায় মা, বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন"। The Daily Star বাংলা। ১৬ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন, জানাজায় মানুষের ঢল"। banglanews24.com। ১৭ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪।
- ↑ "স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার, স্যার!"। প্রথম আলো। ১৭ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৪।
- ↑ ফরায়জী, শহীদুল্লাহ। "প্রজন্মের বীর আবু সাঈদ"। মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৭।
- ↑ "রংপুর পার্ক মোড়ের নাম 'আবু সাঈদ চত্বর' দিলেন শিক্ষার্থীরা"। সময় টিভি। ১৭ জুলাই ২০২৪।