দৈনিক আজাদ
দৈনিক আজাদ বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে প্রবর্তিত একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা ছিল। এটি ১৯৩৬ সালে চালু হয়ে ১৯৯০ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়।[১] আজাদ ঢাকার প্রথম দৈনিক পত্রিকা ছিল। পত্রিকাটি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় বাংলা ভাষার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ধরন | দৈনিক সংবাদপত্র (বর্তমানে বিলুপ্ত) |
---|---|
প্রধান সম্পাদক | মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ (প্রতিষ্ঠাতা) |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৩১ অক্টোবর ১৯৩৬ |
ভাষা | বাংলা |
প্রকাশনা স্থগিত | ১৯৯০ |
ইতিহাস
সম্পাদনা৩১ অক্টোবর ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা থেকে সর্বপ্রথম পত্রিকাটি প্রকশিত হয়।[১] দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ। প্রথম দিকে এই পত্রিকাটি বঙ্গ এবং আসামের মুসলমানদের বক্তব্যকে প্রতিনিধিত্ব করছে বলে মনে করা হত। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে সম্পাদক ছিলেন শিশু সাহিত্যিক মোহাম্মদ মোদাব্বের। সেসময় মোহাম্মদ মোদাব্বের এবং তার ছেলের প্রচেষ্টায় এই পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হত। সদরুল আনাম খান এবং নাজির আহমেদও এই প্রকাশনার সাথে যুক্ত ছিলেন। এই পত্রিকায় ঢাকার প্রতিদিনকার সংবাদের পাশাপাশি আঞ্চলিক প্রতিবেদক খাইরুল কবিরের পাঠানো বিভিন্ন সংবাদও ছাপানো হত।
ভারত বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের ১৯ অক্টোবর পত্রিকার সকল কার্যক্রম ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। আবুল কালাম সামসুদ্দিনকে সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন খায়রুল কবির সংবাদ সম্পাদক, মুজিবুর রহমান খান এবং আবু জাফর সামসুদ্দিন ছিলেন সম্পাদকীয় বিভাগে। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দৈনিক আজাদ পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্রে পরিণত হয়।[২]
১৯৪৯ সালে সরকার-বিরোধী সংবাদ প্রকাশের কারণে দৈনিক আজাদের প্রকাশনায় বাধা দেয়া হয়। এবং এই পত্রিকায় সরকারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় এই পত্রিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আজাদ এই আন্দোলনের সমর্থনে ছিলো এবং সরকারের কার্যক্রমের সত্যতা তুলে ধরছিলো। ২১ ফেব্রুয়ারির হত্যার পরপরই ২২ তারিখে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছিল। এই হত্যকান্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ আবুল কালাম সামসুদ্দিন গণপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি সেই সময় দৈনিক আজাদের সম্পাদক ছিলেন। যদিও এটি তখন মুসলিম লীগ ভিত্তিক পত্রিকা ছিল কিন্তু বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছিল এই পত্রিকায়। এর ফলস্রুতিতে আজাদ এই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সংকলনের অন্যতম প্রধান সূত্র ছিল। যদিও বিভিন্ন সময় এটির প্রচারণার উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়েছিল। বিশেষত ১ মার্চের পর এটি সরকারের পক্ষে প্রচার করতে থাকে। আইয়ুব খানের শৈরাচারী আচরণের কারণে দৈনিক আজাদ আবার সরকারের বিপক্ষে প্রচার শুরু করে। সরকারের দুর্নীতি এবং অনৈতিক আচরনগুলো তুলে ধারা হয় এই পত্রিকায়।[৩] এই সময় পত্রিকার নেতৃত্বে ছিলেন মওলানার ছোট ছেলে মোহাম্মদ কামরুল আনাম খান।
বন্ধ হওয়া
সম্পাদনা১৯৬৮ সালে মোহাম্মদ আকরাম খাঁর মৃত্যুর পর পত্রিকাটির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়, এতে পত্রিকাটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এছাড়া এটি ইত্তেফাকের কাছেও পাঠক হারাতে থাকে, যা তখন ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় হচ্ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, পত্রিকাটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় কিছু দিন প্রকাশিত হয়। এরপর পত্রিকাটি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হলে, পত্রিকাটির আইনি মালিক মোহাম্মদ কামরুল আনাম খান এটি পরিচালনা করা শুরু করেন। আর্থিক সহায়তার অভাবে ও সরকারি নীতির কারণে, ১৯৯০ সালে পত্রিকাটির প্রকাশনা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।[৪]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ মনু ইসলাম (২০১২)। "আজাদ, দৈনিক"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ মনু ইসলাম (২০১২)। "আজাদ, দৈনিক"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ বশীর আল-হেলাল, "ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস", পৃষ্ঠা ৫১৩
- ↑ "দৈনিক আজাদ"। কালের কন্ঠ। ২৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২০।