অসুরবানীপাল (ভাস্কর্য)

(অসুরবানীপাল থেকে পুনর্নির্দেশিত)

অসুরবানীপাল (অসুরবানীপাল স্মৃতিসৌধ বা অসুরবানীপালের মূর্তি) [২] হল ফ্রেড পার্হাদ নির্মিত (যিনি একজন আসিরীয়-বংশজ এবং জন্মসূত্রে ইরাকি) একটি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো-এর পৌরকেন্দ্রে অবস্থিত। আসিরীয়ান ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস দ্বারা প্রযোজিত পনেরো ফুট দীর্ঘ আসিরীয় রাজা অসুরবানীপালের এই মূর্তিটি ১৯৮৮ সালে সান ফ্রান্সিসকো শহরে আসিরীয় জনগণের তরফে নিবেদন করা হয়। অসুরবানীপালের এই প্রথম দীর্ঘদেহী ব্রোঞ্জমূর্তি বানাতে এক লক্ষ ডলার খরচ হয়েছিল।[৩]

অসুরবানীপাল
অসুরবানীপাল ২০১১-এর এপ্রিলে
অসুরবানীপাল সান ফ্রান্সিস্কো-এ অবস্থিত
অসুরবানীপাল
অসুরবানীপাল
সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থান
শিল্পীফ্রেড পার্হাদ
বছর১৯৮৭–১৯৮৮[১]
ধরনভাস্কর্য
উপাদানব্রোঞ্জ
বিষয়অসুরবানীপাল
আয়তন৪.৬ মি (১৫ ft)
ওজনapproximately ১,৮০০ পা (৮২০ কেজি)
অবস্থানসান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
স্থানাঙ্ক৩৭°৪৬′৪৭″ উত্তর ১২২°২৪′৫৭″ পশ্চিম / ৩৭.৭৭৯৭৩° উত্তর ১২২.৪১৫৯৩৪° পশ্চিম / 37.77973; -122.415934
মালিকসিটি অ্যান্ড কান্ট্রি অফ সান ফ্রান্সিসকো এবং সান ফ্রান্সিসকো আর্টস কমিশন এর তত্ত্বাবধান করেছিল

সিটি অ্যান্ড কান্ট্রি অফ সান ফ্রান্সিসকো এবং সান ফ্রান্সিসকো আর্টস কমিশন এর তত্ত্বাবধান করেছিল। পার্হাদের তৈরি পুস্তক ও সিংহধারী বা স্কার্ট পরিহিত অসুরবানীপালের এই প্রতিকৃতি স্থানীয় আসিরীয়রা যথাযথ বা সঠিক নয় বলে সমালোচনা করেছিলেন। সমালোচকেরা এটিকে সুমেরীয় রাজা গিলগমেশের মত দেখতে বলে মনে করেন; রেনি কোভাক্স (একজন পণ্ডিত ও স্বঘোষিত আসিরীয়বিদ) বিশ্বাস করতেন যে, ভাস্কর্যটি একটি মেসোপটেমীয় প্রতিরক্ষাকর ব্যক্তিত্ব। পার্হাদ তার কাজের যথার্থতা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এবং বলেন যে, তিনি মূর্তি নির্মাণে শিল্পীর স্বাধীনতা অবলম্বন করেছেন।[৩]

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

 
Possible representation of Enkidu as Master of Animals grasping a lion and snake, in an Assyrian palace relief, from Dur-Sharrukin, now Louvre

পার্হাদ বালকেলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথাগত আর্টস শিক্ষা বর্জন করে নিউইয়র্কে চলে যান, যেখানে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট তাকে তাদের আসিরীয় সংকলন অধ্যয়নে অনুমতি দেয়।[৪] আসিরীয়ান ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস দ্বারা প্রযোজিত এই কাজটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন এই সংস্থার সভাপতি নারসাই ডেভিড।[৫] আসিরীয়ান ইউনিভার্সাল আলায়েন্স ফাউন্ডেশনও কাজটি প্রযোজনা করার দাবি করেছিল।[৬] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত আসিরীয়দের থেকে কাজটির টাকা সংগ্রহ করা হয়।[৩]

১৯৮৭ সালে, দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুসারে, অসুরবানীপালের এই প্রথম বৃহদায়তনের ব্রোঞ্জমূর্তি বানাতে এক লক্ষ ডলার খরচ হয়েছিল।[৩] ১৯৮৮ সালের ২৯ মে, মূর্তিটি সান ফ্রান্সিসকো শহরকে আসিরীয় জনগণের তরফে এক উপহার রূপে নিবেদন করা হয়।[৭] ভ্যান নেস আভিনিউ-এ এশিয়ান আর্ট মিউজিয়ামের প্রবেশপথে এর পর্দা উন্মোচন ঘটে।[২] মূর্তিটি এখন শহরের পৌরকেন্দ্রের মধ্যে মেইন লাইব্রেরি ও এশিয়ান আর্ট মিউজিয়ামের মাঝের ফুল্টন স্ট্রীটের ওপর দাড়িয়ে আছে।[৮][৯]

সান ফ্রান্সিসকো আর্টস কমিশন কাজটির দায়িত্বে ছিলেন।[১] স্মিথ সোনিয়ান ইনস্টিটিউশন ফ্রাঙ্ক টমসিককে স্থাপনাকাজের ভাস্কর হিসাবে এবং এমবিটি সঙ্গীদের এর ভাস্কর্য-প্রতিষ্ঠান হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। ১৯৯২ সালে স্মিথ সোনিয়ানের 'সেভ আউটডোর স্কাল্পচার' কার্যক্রমে অসুরবানীপালকে নিরীক্ষণ করা হয়।[১] ১৯৯৬ এ, সান ফ্রান্সিসকো পরিকল্পনা ও নগর গবেষণা অনুষদ একটি পৌরকেন্দ্র পদযাত্রী ভ্রমণস্থানের পরিকল্পনা করে। এক পরিকল্পনাকারী মূর্তিটির চারপাশে পদ্মকুঁড়ি, দাড়িম্ব ফলের গাছ এবং নলখাগড়া সমন্বিত আসিরীয় উদ্যান তৈরীর পক্ষে সমর্থন জানান। [১০]

বর্ণনা সম্পাদনা

মূর্তির নিচে খোদাইকৃত লেখাগুলি

আট ফুট দীর্ঘ ব্রোঞ্জ মূর্তিটি[১][৩] একটি ভিত্তি এবং একটি চতুষ্কোণ ব্লকের উপর দন্ডায়মান, যা মূর্তিটির মোট দৈর্ঘ্য পনেরো ফুট ও ওজন আঠারশো পাউন্ড করে তুলেছে। অসুরবানীপাল বহুল পরিচিত অসুরবানীপালের গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য বিখ্যাত কারণ তিনি নিভেভাতে সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার তৈরী করেছিলেন।[৫] শ্মশ্রুযুক্ত মূর্তিতে রাজা কানের দুলটিউনিক পরিহিত; এক হাতে পুস্তক ও অন্য হাতে সিংহ ধরে আছেন। [১][৩] ঐতিহাসিক মার্কার তথ্যপঞ্জী অনুসারে, বইটি কিউনিফর্ম লিপিতে লিখিত : "স্বর্গ ও পৃথিবীর শান্তির প্রতি /দেশ ও শহরসমূহের শান্তির প্রতি /সমস্ত স্থলবাসীদের শান্তির প্রতি/আমেরিকার সার্বভৌমত্বের দু'শ দশ বছরে আসিরীয় জনগণের তরফ থেকে সান ফ্রান্সিসকো শহরকে এই মূর্তি উপহার দেওয়া হল।"[৮]

এই অতিবাস্তব, পূর্ণদৈর্ঘ্য মূর্তিটি একটি চতুষ্কোণ ব্লক বা প্লিন্থের উপর পদ্মকুঁড়ির নক্সায় সজ্জিত; একটি অ্যান্টি-গ্রাফিটি প্রলেপ এর কংক্রীট ভিত্তিতে আছে।[১] ভিত্তিটিতে খোদাই করা কৃত্রিম গোলাপ ও একটি ব্রোঞ্জ সৌধফলক আছে।[১] মূর্তির নিচে বইটি ইংরেজি, আক্কাডিয়ান কিউনিফর্মআরামেইক লিপিতে লিখিত। উপরে লেখা, "অসুরবানীপাল, আসিরীয়ার রাজা খ্রী:পূ: ৬৬৯-৬২৭" এবং নিচে লেখা, "১৯৮৮র ২৯ মে সমর্পিত হল।" দুটিই ইংরেজিতে লেখা।[৮] আরেকটি উৎকীর্ণ লিপি মূর্তিটির নিচে, "সান ফ্রান্সিসকোর আমেরিকার আসিরীয়ান সমিতির প্রদত্ত টাকায় আসিরীয়ান ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টসের দ্বারা সান ফ্রান্সিসকো শহরকে উপহার/ আসিরীয়ান আমেরিকান জাতিয় ফাউন্ডেশন", দাতাদের নামের তালিকা সহ। [৮] ২০১০ এর ডিসেম্বরে, সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল প্রতিবেদনে জানায় যে, সৌধটি থেকে একটি বড় ফলক নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।[১১]

অভ্যর্থনা সম্পাদনা

 
মূর্তিটি, এশিয়ান আর্ট মিউজিয়ামের সামনে এর ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে (২০১১)।

১৯৮৭ এর ডিসেম্বরে, সংবাদে প্রকাশিত হতে শুরু করে যে, স্থানীয় আসিরীয় জনগণ পার্হাদকে অসুরবানীপালের ভুল অবয়ব বানানোর জন্য দায়ী করেছেন। দুই হাতে পুস্তক ও সিংহধারী এবং স্কার্টপরিহিত এই মূর্তির যথার্থতা নিয়ে সমালোচনা ওঠে; তারা বলেন যে, রাজা এগুলো কখনোই করেননি বা পরেননি।[৩] সমালোচকেরা এটিকে সুমেরীয় রাজা গিলগমেশের মত দেখতে বলে মনে করেন।[৩]

একজন সমালোচক বলেন: "এটা খুব সহজ। মূর্তিটি গিলগমেশের.....কোন আসিরীয়ানের তাঁদের রাজার সম্বন্ধে কল্পনা করার অধিকার নেই। এটা একেবারে 'স্বাধীনতার মূর্তি'র অণুকরণে তৈরীর মত। এবং বলার মত যে, এটা জর্জ ওয়াশিংটন.... আসিরীয় রাজারা ছোট স্কার্ট পরতেন না। এটা আসিরীয়ানদের প্রতি একটা অপমান।"[৩]

নারসাই ডেভিড জবাব দেন,

"তাঁরা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন....আমরা কখনোই বলিনি যে এটি একটি জাদুঘর-গুণান্বিত সৃষ্টি.....আমরা সবসময় বলেছিলাম যে এটা বিংশ শতাব্দীর এক শিল্পীর তৈরী অসুরবানীপালের চরিত্রায়ণ। যদি তাঁরা এটাকে গিলগমেশের মত মনে করেন, তারা অবশ্যই করুন।[৩]

রেনি কোভাক্স (একজন পণ্ডিত ও স্বঘোষিত আসিরীয়বিদ) বলেন যে, "ভাস্কর্যটি একটি মেসোপটেমীয় প্রতিরক্ষাকর ব্যক্তিত্ব, একজন পাহারাদারের মতো।"[৩] পার্হাদ তার কাজের যথার্থতা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন এবং বলেন যে, তিনি মূর্তি নির্মাণে শিল্পীর স্বাধীনতা অবলম্বন করেছেন। আসিরীয় সংস্কৃতির পান্ডিত্য থেকে প্রশংসনীয় লেখনীর নানা দিক তুলে এনেছেন। ভাস্কর্য সম্বন্ধে তিনি বলেন,

"মূর্তিটিতে নির্ভরযোগ্য গুণাবলি রয়েছে, কিন্তু এটা আমারও মূর্তি....কানের দুল থেকে বেশভূষা, চুল, অস্ত্রসস্ত্র সবটা মিলিয়েই অসুরবানীপাল।তাঁর দুই হাতের বই ও সিংহ শুধু আমার পছন্দমাফিক হয়েছে।আমি নিজেকে এই নমুনায় প্রতিনিধি করতে চেয়েছিলাম।"[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Ashurbanipal, (sculpture)"Smithsonian Institution। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১১, ২০১৩ 
  2. "1988: USA, California, San Jose: The Ashurbanipal Monument"। Assyrian Information Management। আগস্ট ৮, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ 
  3. Fernandez, Elizabeth (ডিসেম্বর ৩১, ১৯৮৭)। "Statue of Assyrian king in skirt stirs controversy"The Telegraph119 (228)। Nashua, New Hampshire। ওসিএলসি 22532489। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ 
  4. "Fred Parhad"। Caroun.com। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ 
  5. Sources by Arianne Ishaya:
  6. "Who Is Who"। Assyrian Universal Alliance Foundation। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ 
  7. ""Promoting Yourself in the Digital Age" – by Georgia I. Hesse"। Bay Area Travel Writers। ডিসেম্বর ২, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "Ashurbanipal Monument"। Historical Marker Database। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ 
  9. টেমপ্লেট:Cite? web
  10. Adams, Gerald D. (ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৯৬)। "A mall sans shops or cars"San Francisco Chronicleআইএসএসএন 1932-8672। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১২, ২০১৩ 
  11. Garchik, Leah (ডিসেম্বর ১৭, ২০১০)। "Passenger climbs aboard, needles and all"San Francisco Chronicleআইএসএসএন 1932-8672। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৯, ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা