ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক

বাংলাদেশের দুর্নীতিবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র
(অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স মেন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক আল জাজিরা কর্তৃক বাংলা ভাষায় বাংলাদেশ নিয়ে প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে তাদের ইংরেজি চ্যানেলে প্রথম প্রচারের পর এটি আরবিইংরেজি ভাষাতেও প্রচারিত হয়।[৩][২] এই প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। এতে মূলত বাংলাদেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয় এবং নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কারের একটি বিভাগে সেরা প্রামাণ্যচিত্রের পুরস্কার অর্জন করে।

ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক
ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক প্রামাণ্যচিত্রের ইউটিউব থাম্বনেল
ধরনঅনুসন্ধানমূলক প্রামাণ্যচিত্র
নির্মাতাআল জাজিরা ইনভেস্টিগেটস
বর্ণনাকারী
মূল ভাষাআরবি[৩], বাংলা ও ইংরেজি
নির্মাণ
নির্মাণের স্থানবাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং হাঙ্গেরি
ব্যাপ্তিকাল৬৪ মিনিট (বাংলা)
নির্মাণ কোম্পানিআল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক
পরিবেশকআল জাজিরা
মুক্তি
মূল নেটওয়ার্কআল জাজিরা ইংরেজি
মূল মুক্তির তারিখ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ (2021-02-01)

বর্ণনা সম্পাদনা

প্রায় ৬০ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই প্রামাণ্যচিত্রে মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ এবং তার তিন ভাইয়ের কার্যক্রম দেখানো হয়। আজিজের আপন তিন ভাই ২০০৪ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিল। এই ভাইদের মধ্যে আনিস আহমেদ এবং হারিস আহমেদ ২০২১ অনুসারে পলাতক থাকেন। তৃতীয় ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন।

দুই ভাই পলাতক হলেও এই প্রামাণ্যচিত্রে তাদের আজিজ আহমেদের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশে দেখা যায়। এখানে দেখানো হয় আনিস আহমেদ থাকেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এবং হারিস আহমেদ থাকেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে

গোপন রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে বুদাপেস্টে হারিস আহমেদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। এতে দেখানো হয়, তিনি নাম পরিবর্তন করে হাসান মোহাম্মদ নাম নিয়ে বিভিন্ন দেশে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। বুদাপেস্টে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সাথে এক কথোপকথনে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বুলেট সরবরাহের কথা বলতে দেখা যায়। সরকারের শীর্ষস্থানের লোকের যোগসাজশে পুলিশের চাকরি, যেমন থানার ওসির পদ পেতে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত নেয়া হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এইসব কাজে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত থাকেন বলে হারিস আহমেদ উল্লেখ করেন।[৪]

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে গোপন পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে আজিজ শেখ হাসিনাকে সরাসরি সহায়তা করেন। আল জাজিরা ফাঁদ পেতে হারিসের এক গোপন সাক্ষাৎকার নেয়। সাক্ষাৎকারে হারিস বলেন, পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সবকিছু করেন।

অন্য এক গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে, কীভাবে ভাইয়ের সেনাপ্রধান ক্ষমতা ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ঠিকাদারি ও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণদের ঘুষের মধ্যস্থতা করে অঢেল অর্থ উপার্জন করেছেন তার বিবরণ দিতে হারিসকে দেখা যায়।

এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী ইসরায়েল থেকে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন নজরদারী করার প্রযুক্তি আমদানি করেছে এমন কিছু নথিপত্র এতে দেখানো হয়। তবে এই ক্রয়ের সাথে হারিস আহমেদের কোন যোগাযোগের কথা বলা হয় নি।[৫][৪] প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়, ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণও দিয়েছেন।

প্রচার সম্পাদনা

আল জাজিরা তাদের ইংরেজি চ্যানেলে ২০২১ সালে ১ ফেব্রুয়ারি প্রামাণ্যচিত্রটি প্রথম প্রচার করে। পরবর্তী এক সপ্তাহ এটির পুনপ্রচার চলে।[৫] পরের দিন এটি আল জাজিরার সহযোগী ইউটিউব চ্যানেল এজে ইনভেস্টিগেশন্স-এ উম্মুক্ত করা হয়।[৬]

প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

আল জাজিরার এই প্রামাণ্যচিত্রকে মিথ্যা, মানহানিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তীব্র সমালোচনা করে বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সেনা সদর দপ্তর[৭] বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে:

“কিছু উগ্রপন্থি ও তাদের সহযোগী, যারা লন্ডন এবং বিভিন্ন জায়গায় থেকে এসব করছে, তাদের এই বেপরোয়া ‘অপপ্রচারকে’ বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করছে। বাংলাদেশের অসাধারণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যেখানে সরকারের ভূমিকা প্রমাণিত, সেই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকারকে কক্ষচ্যুৎ করার লক্ষ্য নিয়ে সাজানো হীন রাজনৈতিক ছক বাস্তবায়নে আল জাজিরা নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে, এটা হতাশাজনক।”

— [৮]

বিবৃতিতে সেনা সদর দপ্তর বলে:

“অসৎ ও কলুষিত চরিত্রের অধিকারী এসকল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গ পূর্ব থেকেই তাদের নিজেদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে বাংলাদেশ বিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। আল জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সাথে মূলধারার সাংবাদিকতা থেকে বিচ্যুত ও অশুভ চিন্তাধারার এসকল ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশের বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ও বোধগম্য নয়। দেশের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাগণের বিভিন্ন দাপ্তরিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কার্যক্রমের ভিডিও ক্লিপ ও ছবি চাতুর্যের সাথে সম্পাদনা এবং অডিও সংযোজন করে এই প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়েছে।”

— [৯]

পুরস্কার সম্পাদনা

আল জাজিরা ৮ম বার্ষিক অ্যামনেস্টি মিডিয়া পুরস্কারে 'ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক'-এর জন্য সেরা মানবাধিকার সাংবাদিকতার (তদন্ত বিভাগ) জন্য শীর্ষ পুরস্কার জিতেছে।[১০][১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "আল জাজিরার প্রতিবেদন ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন: আইএসপিআর"। বাংলানিউজ২৪। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  2. "رفعها محام بعد تحقيق صحفي عن الفساد بأعلى هرم الدولة.. محكمة في بنغلاديش ترفض دعوى ضد الجزيرة بتهمة إثارة الفتنة" [বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আল জাজিরার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাখ্যান হয়েছে]। www.aljazeera.net (আরবি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২২ 
  3. "تحقيقات الجزيرة - رجال رئيسة الوزراء" (আরবি ভাষায়)। আল জাজিরার ইউটিউব চ্যানেল। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. "আল জাজিরার প্রতিবেদনে কী আছে, কী বলছে বাংলাদেশ?"বিবিসি নিউজ বাংলা। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  5. আল জাজিরা আই ইউনিট (২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার ম্যান'স"আল জাজিরা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  6. "ওরা প্রধানমন্ত্রীর লোক | আল জাজিরার অনুসন্ধান"এজে ইনভেস্টিগেশন্স। ২০২১-০২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-২৬ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে। 
  7. স্টার অনলাইন রিপোর্ট (২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "আল-জাজিরার প্রতিবেদনটি মিথ্যা, মানহানিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: বাংলাদেশ সরকার"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  8. প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ (২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "আল জাজিরার প্রতিবেদন 'অপপ্রচার': পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়"বিডিনিউজ২৪.কম। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২১ 
  9. প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ (২ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "আল জাজিরার প্রতিবেদনের প্রতিবাদ সেনা সদরের"বিডিনিউজ২৪.কম। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২১ 
  10. "Al Jazeera wins Amnesty Media award for 'All the Prime Minister's Men'"। ৬ মে ২০২২। 
  11. "Amnesty International UK Media Awards 2022 - Winners Announced" 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা