অর্জুন (উদ্ভিদ)

উদ্ভিদের প্রজাতি

অর্জুন (বৈজ্ঞানিক নাম: Terminalia arjuna) হচ্ছে টারমিনালিয়া গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ।[১] এর ইংরেজি নাম arjun। এরা পত্রঝরা, মধ্যম বা বৃহৎ আকৃতির বৃক্ষ, প্রায় ২০-২৫ মিটার উঁচু হতে পারে। মার্চ থেকে জুন মাসের ভিতরে এদের ফুল ফোটে।[২][৩] এদের ফল আকারে লম্বা।

অর্জুন
Terminalia arjuna
অর্জুনের ফল
অর্জুন গাছে ফুলর পাশে উপবিষ্ট পাখি
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: Tracheophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Myrtales
পরিবার: Combretaceae
গণ: Terminalia
প্রজাতি: Terminalia arjuna
দ্বিপদী নাম
Terminalia arjuna
(Roxb.) Wight & Arn.

বিস্তার সম্পাদনা

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানশ্রীলঙ্কা অর্জুনের আদি নিবাস।[৪] বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে অর্জুন গাছ কম-বেশি দেখা যায়। বিশেষত রাস্তার দুপাশে এবং চট্টগ্রামসিলেটের বনাঞ্চলে এটি প্রচুর জন্মে থাকে। আর্দ্র ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া অর্জুন গাছের জন্য উপযোগী। সাধারনত দো-আঁশ মাটিতে এ গাছ ভালো জন্মে থাকে।

চাষাবাদ সম্পাদনা

স্যাঁতস্যাঁতে ও ঊর্বর দোআঁশ মাটি অর্জুন চাষের জন্য উপযুক্ত। গাছে বৈশাখআষাঢ় মাসে ফুল ফুটে এবং পৌষফাল্গুন মাসে ফল পাকে। অর্জুনের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে পরিপক্ব ফল হতে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজ বপনের পূর্বে ৪৮ ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। বীজতলার মাটি ও গোবরের অনুপাত হবে ৩ : ১ । নয় মাস বয়সের অঙ্কুরিত চারা বীজতলা বা নার্সারী থেকে সংগ্রহ করে রোপন করা হয়। বর্ষার শুরুতেই নির্দিষ্ট স্থানে রোপন করতে হয়।[৫]

বাকল ও বীজ সংরক্ষণ সম্পাদনা

অর্জুনের বাকল আয়ুর্বেদীয় ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পরিপক্ব গাছ থেকে ছাল সংগ্রহ করে ছোট ছোট টুকরো করে ৪-৫দিন রৌদ্রে শুকিয়ে চটের বস্তায় ভরে শুষ্ক স্থানে রেখে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এবং এর কার্যকারিতা অটুট থাকে। এছাড়া পুরোপুরিভাবে পরিপক্ব বীজ গাছ থেকে সংগ্রহ করে ভালোভাবে রৌদ্রে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে রেখে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

গুণাগুণ সম্পাদনা

অর্জুন গাছের ছাল, পাতা ও ফল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বাকল থেকে আহরিত ট্যানিন চামড়াতে ব্যবহৃত হয়। এই টানিন মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহের চিকিৎসাতেও ব্যবহার করা হয়। এটি মাড়ির রক্তপাত বন্ধ করে। শরীরে ক্ষত, খোস পাঁচড়া দেখা দিলে অর্জুনের ছাল বেঁটে লাগালে সেরে যায়। অর্জুনের বাকল থেকে হৃদরোগের ওষুধ, পাতার রস আমাশয় রোগের ওষুধ বানাতে ব্যবহৃত হয়। পাতা তসর রেশম পোকার খাদ্য।[৬]

অর্থনৈতিক ব্যবহার সম্পাদনা

অর্জুন গাছে ভেষজ গুণ যেমন অনেক তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও কদর অনেক। অর্জুনের গাছের কাঠ বেশ শক্ত। একদা গরুর গাড়ির চাকা নির্মাণে অর্জুনগাছ ব্যবহৃত হতো। গৃহনির্মাণ, কৃষি উপকরণ, জলযান, নৌকা, দাড়, মাস্তুল, খনি ও নলকূপ খননে এই গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয়।

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Biswas, Moulisha; Biswas, Kaushik; Karan, Tarun K; Bhattacharya, Sanjib; Ghosh, Ashoke K; Haldar, Pallab K (২০১১)। "Evaluation of analgesic and anti-inflammatory activities of Terminalia arjuna leaf"Journal of Phytology3 (1): 33–8। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  2. Biswas, Moulisha; Biswas, Kaushik; Karan, Tarun K; Bhattacharya, Sanjib; Ghosh, Ashoke K; Haldar, Pallab K (২০১১)। "Evaluation of analgesic and anti-inflammatory activities of Terminalia arjuna leaf"Journal of Phytology3 (1): 33–8। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  3. "Arjun Tree"। Eco India। 
  4. Rastogī, Rekhā (২০০৮)। Let Us Identify The Useful Trees(New) (ইংরেজি ভাষায়)। Children's Book Trust। আইএসবিএন 978-81-7011-919-7 
  5. "Arjun Tree (Terminalia arjuna), Significance of Arjuna Tree, Description of Arjun Tree : Eco India"www.ecoindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৮ 
  6. "Arjuna"web.archive.org। ২০১২-০৯-১৪। Archived from the original on ২০১২-০৯-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা