অম্লান দত্ত
অধ্যাপক অম্লান দত্ত (ইংরেজি: Amlan Dutta)(জন্ম- ১৭ জুন, ১৯২৪ - মৃত্যু - ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১০) ভারতের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ ও অধ্যাপক।[১][২]
অম্লান দত্ত | |
---|---|
জন্ম | ১৭ জুন, ১৯২৪ |
মৃত্যু | ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ (বয়স ৮৬) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ ও অধ্যাপক |
দাম্পত্য সঙ্গী | কিটি স্কুলার |
পিতা-মাতা | অশ্বিনীকুমার দত্ত (পিতা) সুনীতিবালা দেবী(মাতা) |
পুরস্কার | আনন্দ পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, জগত্তারিণী পদক, দেশিকোত্তম |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাঅধ্যাপক অম্লান দত্তের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার বাগিচাগাঁও এ। পিতা অশ্বিনীকুমার দত্ত ও মাতা সুনীতিবালা দেবী। স্কুলের পড়াশোনা কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালায়। উচ্চশিক্ষার্থে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় আসেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে আই.এ এবং অর্থনীতিতে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতক হন এবং পরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে চতুর্থ হয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন । তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও বেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন । তার অগ্রজ অনিলকুমারও অর্থনীতিবিদ, ভারতের প্রথম ব্যাচের আই.এ.এস এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার খসড়াকার। তৃতীয় ভাই অনিন্দ্যকুমার বিখ্যাত তার্কিক ও অর্থনীতিবিদ । ছোট ভাই অর্ঘ্যকুসুম 'সমতট' ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদক । সমাজসেবী, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যসচিব প্রয়াত অমিয়কুমার সেন তার বোন গীতি'র স্বামী।
কর্মজীবন
সম্পাদনাঅম্লান দত্ত ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে কলকাতার আশুতোষ কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন । পরের বছর থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হন। এছাড়া নানা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন । নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটি (১৯৭৪-৭৭), বারাণসীর গান্ধীয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্টাডিজ (১৯৭৮-৭৯)। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন । আমেরিকার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন।[২]
অগ্রণী চিন্তাবিদ
সম্পাদনাঅধ্যাপক অম্লান দত্তের অর্থনীতির অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা। কিন্তু, তার তৎপর লেখনী শুধুমাত্র অর্থনীতির গণ্ডীতেই আবর্তিত হয়নি। প্রায় চার দশককাল ধরে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজদর্শন, শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি জাতীয় নানান বিষয়ে তার বিভিন্ন মননদীপ্ত রচনা প্রকাশিত হয়েছে। এ-কালের একজন অগ্রণী চিন্তাবিদ হিসেবে অচিরেই চিহ্নিত হয়েছেন তিনি। অধ্যাপক দত্তের চিন্তায় রাজনীতি এসেছে অর্থনীতির হাত ধরে, রাজনীতি-অর্থনীতির সমস্যাবলি পর্যালােচিত হয়েছে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। ধাপে-ধাপে তার রচনায় যুক্ত হয়েছে নতুনতর মাত্রা। চিন্তার স্পষ্টতায়, ভাষার স্বচ্ছতায়, বিশ্লেষণের ব্যাপকতায়, উপলব্ধির গূঢ়তায়, প্রত্যয়ের দৃঢ়তায় তিনি তা রেখে গেছেন । তার প্রবন্ধাবলি আক্ষরিক অর্থেই প্রবন্ধ। আর রচনাবলিতে প্রতিফলিত হয়েছে তার সামাজিকভাবে সংবেদনশীল অর্থনীতির বিভিন্ন দিক যেগুলি সমাজের সমস্তস্তরের মানুষের স্বাধীনতা শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্য নিশ্চিত করে । বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন অধ্যাপক দত্তের প্রথম বই "For Democracy" পড়ে উচ্চ প্রশংসায় তাঁকে ব্যক্তিগত চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ভারতের মত বিশাল এক দেশের আর্থিক বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের অনুগামী আজীবন বামপন্থী ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী বিদগ্ধ অর্থনীতির অধ্যাপক দত্ত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, নেহেরুর আদর্শকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও দার্শনিক তত্ত্বে। আজকের দিনে সমাজের প্রতি কর্পোরেট দুনিয়ার দায়বদ্ধতা বোধহয় সেই লক্ষ্যেই নির্দিষ্ট ।[৩] ইংল্যান্ড, জাপান, চীন, ইটালি,অস্ট্রেলিয়া, ইজিপ্ট, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, আমেরিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহ বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছেন ও বক্তব্য রেখেছেন আর্থিক বিকাশ, রাজনীতি, সমাজদর্শন, ধর্ম, শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি জাতীয় নানান বিষয়ে।
তিনি বাংলা ও ইংরেজি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন । ইংরাজীতে প্রকাশিত গ্রন্থসমৃহ-
- 'For Democracy' - (1953)
- 'Religion, Education and Development' - (1968)
- 'The Third Movement' - (1983)
- 'The Gandhian Way' - (1986)
- 'A New Radicalism and Other Essays' - (1989)
- 'Beyond Socialism' - (1993)
- 'For A Quiet Revolution' - (1997)
- 'On the edge of A Century' - (1999)
- 'Perspectives of Economic Development'
- 'Towards an Alternative Economic Order'
- 'Socialism, Democracy and industrialization'
- Transitional Puzzles'
বাংলায় প্রকাশিত গ্রন্থসমৃহ -
- 'গণতন্ত্র ও গণযুগ' - (১৯৬৭)
- 'তিন দিগন্ত' - (১৯৭৮)
- 'ব্যক্তি, যুক্তি, সমাজ' - (১৯৭৮)
- 'কমলা বক্তৃতা ও অন্যান্য ভাষণ' - (১৯৮৪)
- 'গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ' - (১৯৮৬)
- 'দ্বন্দ্ব ও উত্তরণ' - (১৯৮৯)
- 'শান্তির সপক্ষে' - (১৯৯২)
- 'বিকল্প সমাজের সন্ধানে' - (১৯৯৪)
- 'অন্য এক বিপ্লব' - (১৯৯৯)
- 'মুক্তি তোরে পেতেই হবে' - (২০০২)
- 'প্রবন্ধ সংগ্রহ' - (২০০৫)
- 'যে কথা বলিতে চাই' - (২০০৯)
সম্মাননা
সম্পাদনাঅধ্যাপক অম্লান দত্ত বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী তাঁকে 'আনন্দ পুরস্কার' এ সম্মানিত করে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি 'বিদ্যাসাগর পুরস্কার' প্রদান করে । এই পুরস্কারের অর্থমূল্য পঁচিশ হাজার টাকা অবশ্য তিনি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেন ওড়িশায় বন্যার্তদের সাহায্যার্থে । এছাড়া তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক, শিরোমণি পুরস্কার এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'দেশিকোত্তম' পুরস্কারে ভূষিত হন।
মৃত্যু
সম্পাদনাঅধ্যাপক অম্লান দত্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ৮৬ বৎসর বয়সে কলকাতার সল্টলেকের বাসভবনে প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি - ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ ইসলাম, মুহম্মদ সাইফুল (ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। ফজলুল হক, আবুল কাসেম; ইসলাম, মুহম্মদ সাইফুল, সম্পাদকগণ। মানুষের স্বরূপ (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩৮২। আইএসবিএন 984-8524487।
- ↑ "'How Many of Us Would Take Our Knowledge to the Villages?"। Tehelka। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১০।