মাওবাদ
মাওবাদ, পূর্বে মাও ৎসেতুং চিন্তাধারা নামে পরিচিত ছিল, (সরলীকৃত চীনা: 毛泽东思想; প্রথাগত চীনা: 毛澤東思想; ফিনিন: Máozédōng sīxiǎng), হচ্ছে গণচীনের রাজনৈতিক নেতা মাও ৎসে-তুং-এর শিক্ষাসমূহ থেকে পাওয়া রাজনৈতিক মতবাদ। এর অনুসারীবৃন্দ মাওবাদী নামে পরিচিত, এবং তারা এটিকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সংশোধনবাদ-বিরোধী রূপ হিসেবে বিবেচনা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর বছরগুলোতে এটি বিকশিত হয়, এবং এটি বিস্তৃতভাবে রাজনৈতিক ও সামরিক চালনামূলক আদর্শ হিসেবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বাস্তবায়ন করে।
মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বিশ্ব-ভাণ্ডারে মাও-সেতুং-এর নতুন অবদানসমূহকে মাওবাদ বলা হয়েছে। মাওবাদের নতুন সংযোজিত অবদানসমূহের মধ্যে প্রথম হচ্ছে মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শনশাস্ত্রে দ্বন্দ্বতত্ত্বের মহান সংযোজন দ্বারা শ্রেণিসংগ্রাম, পার্টি-গঠন প্রলেতারিয় একনায়কত্ব ও সমাজতান্ত্রিক সমাজের গুণগত বিকাশ সাধন। দ্বিতীয়ত, মাওবাদ নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবকে শ্রমিক শ্রেণির একনায়কত্বে বিপ্লবী জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব দ্বারা সমাজতান্ত্রিক সমাজের উৎক্রমণ ঘটাতে কাজ করে। তৃতীয়ত, মাওবাদ প্রলেতারিয়েত শ্রেণির রাষ্ট্র দখলে বলপ্রয়োগের রাজনীতিকে বিশ্বজনীন গণযুদ্ধে পরিণত করে। চতুর্থত, প্রলেতারিয়েত শ্রেণির একনায়কত্বকে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের রাজনৈতিক সংগ্রামের দ্বারা সাম্যবাদী লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়। শেষৎ, মাওবাদ নয়াগণতন্ত্রের অর্থনীতি ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির উচ্চতর বিকাশ ও তার সংগ্রামের রূপ নির্দিষ্ট করে।[১]
মাওবাদের বিষয়বস্তু
সম্পাদনানয়া গণতন্ত্র
সম্পাদনামাও সেতুং ১৯১৭ সালের রাশিয়ায় বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব, ফেব্রুয়ারি বিপ্লব ও অক্টোবর বিপ্লবের অভিজ্ঞতাকে অনুশীলনের প্রক্রিয়ায় সংশ্লেষিত করে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদ দ্বারা নিপীড়িত দেশে বিশেষত ঔপনিবেশিক, আধা-ঔপনিবেশিক বা নয়া-ঔপনিবেশিক এবং আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিবাদী দেশে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নতুন তত্ত্ব নির্মাণ করেন। এই নির্মাণ হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে কয়েকটি বিপ্লবী শ্রেণির যৌথ একনায়কত্বাধীন প্রজাতন্ত্র, যা বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অংশ।[১]
নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পরেই আসবে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধাপ - যার লক্ষ্য সাম্যবাদের দিকে।
নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব অনুসারে বিপ্লবের চেহারা হবে দ্বিমাত্রিক, অর্থাৎ এটি মোট দুটি বিপ্লবকে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করবে। চীন বিপ্লবের ঐতিহাসিক ধারাকে মাও সে তুং দুইটি পর্বে ভাগ করেন, প্রথমে গণতান্ত্রিক বিপ্লব এবং তারপরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই গণতান্ত্রিক বিপ্লব বুর্জোয়াশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে না, এবং পুঁজিবাদী সমাজ ও বুর্জোয়া একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলবে না। অধিকন্তু এই বিপ্লব এক নতুন ধরনের বিপ্লবঃ নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব যা সর্বহারাশ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত হবে এবং যার লক্ষ্য হচ্ছে বিপ্লবের প্রথম পর্যায়ে এক নয়া-গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং সমস্ত বিপ্লবী শ্রেণির যুক্ত একনায়কত্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এই বিপ্লব আবার সমাজতন্ত্রের বিকাশের আরও বিস্তৃত পথ পরিষ্কার করবে। এই ধরনের বিপ্লব অনিবার্যরূপে সর্বহারাশ্রেণির সমাজতান্ত্রিক বিশ্ববিপ্লবের অংশে পরিণত হবে।
গণযুদ্ধ
সম্পাদনাগণযুদ্ধ সম্পর্কে মাও সেতুংয়ের নীতি হলো গণযুদ্ধের একমাত্র উদ্দেশ্য জনগণের সেবা করা। গণফৌজ বিষয়ে তার নীতি হচ্ছে পার্টির আজ্ঞাধীন বন্দুক, বন্দুকের আজ্ঞাধীন পার্টি নয়। মাও সেতুংয়ের সামরিক শৃঙ্খলা হলো: রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিক গণতন্ত্র পালন; সামরিক অফিসার ও সৈন্যদের ঐক্য; সেনাবাহিনী ও জনগণের ঐক্য। চীনের বিপ্লবী যুদ্ধের রণনীতির সমস্যা রচনায় মাও সেতুং কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তার মতে 'যুদ্ধের উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধের বিলোপসাধন'। এছাড়াও তার মত হচ্ছে রণনীতির সমস্যা হচ্ছে যুদ্ধের সামগ্রিক পরিস্থিতির নিয়মের পর্যালোচনা। যুদ্ধের নিয়মগুলো শেখা সহজ ব্যাপার নয়, প্রয়োগ করা আরও কঠিন। এমন সেনাপতি চাই যার সাহস আছে, বিচক্ষণতা আছে আর আছে শত্রু এবং নিজেদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অবস্থার সংগে পরিচিত হবার সামর্থ্য। নির্ভুল বিচার, নির্ভুল সংকল্প আর নির্ভুল বিন্যাস সামরিক পরিকল্পনার তিনটি দিক। যুদ্ধের মধ্যে যুদ্ধ শিক্ষার পদ্ধতি আয়ত্ত করা, বিপ্লব ও যুদ্ধ করে জনসাধারণ ও সৈন্যের ব্যবধান দূর করার কথা বলেছেন মাও সেতুং।[২]
বিখ্যাত মাওবাদী নেতা ও সংগঠন
সম্পাদনাচারু মজুমদার- সিপিআই, এম-এল (ভারত)
সিরাজ সিকদার -পূবাসপা(বাংলাদেশ)
ইব্রাহিম কায়াপাক্কায়া- টিকেপি, এমএল(তুরষ্ক)
জুসে মারিয়া সিসন- সিপিপি(ফিলিপাইন)
আনোয়ার কবীর-পূবাসপা(বাংলাদেশ)
গণপতি - সিপিআই(মাওবাদী)(ভারত)
মোফাখ্খর চৌধুরী -পূবাকপা(বাংলাদেশ)
রাকেশ কামাল-পূবাকপা(লাল পতাকা)(বাংলাদেশ)
আরও দেখুন
সম্পাদনা- Chinese New Left
- Cult of Personality
- Deng Xiaoping Theory
- History of the People's Republic of China
- New Democracy
- Three Represents
- Quotations from Chairman Mao
চীনের বাইরে:
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাঅতিরিক্ত পাঠ
সম্পাদনা- মাও সেতুং, নয়া গণতন্ত্র প্রসঙ্গে : ৭.বুর্জোয়া একনায়কত্বের তত্ত্ব খন্ডন, জানুয়ারি ১৯৪০
- ভি আই লেনিন থিসিস, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার, থিসিস ২ : সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম, ১৯১৬
- মাও সেতুং, নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে, জানুয়ারি, ১৯৪০, চারটি প্রবন্ধ একত্রে, বিদেশী ভাষা প্রকাশনালয়, পিকিং, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৭৭
- Marxism in the Chinese Revolution by Arif Dirlik
- Rethinking Mao: Explorations in Mao Zedong's Thought by Nick Knight
- The Function of "China" in Marx, Lenin, and Mao by Donald Lowe
- Li Ta-chao and the Origins of Chinese Marxism by Maurice Meisner
- Mao's China and After by Maurice Mesiner
- The Political Thought of Mao Tse-Tung by Stuart Schram
- Mao Tse-Tung, The Marxist Lord of Misrule. On Practice and Contradiction by Slavoj Zizek
- Gregor, A. James and Maria Hsia Chang. "Maoism and Marxism in Comparative Perspective." The Review of Politics. Cambridge University Press for the University of Notre Dame du Lac on behalf of Review of Politics. Vol. 40, No. 3, July 1978. 307-327. Available at Jstor.
- Meisner, Maurice. "Leninism and Maoism: Some Populist Perspectives on Marxism-Leninism in China." The China Quarterly. Cambridge University Press on behalf of the School of Oriental and African Studies. No. 45, January - March 1971. p. 2-36. Available at Jstor.
- Steiner, H. Arthur. "Maoism or Stalinism for Asia?" Far Eastern Survey. Institute of Pacific Relations. Vol. 22, No. 1, January 14, 1953. P. 1-5. Available at Jstor.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাসাধারণ
সম্পাদনা- Marx2Mao.org Mao Internet Library
- The Encyclopedia of Marxism Mao Zedong Thought.
- The Encyclopedia of Marxism Mao's life.
- Monthly Review January 2005 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মার্চ ২০১১ তারিখে Text of the leaflets distributed by the Zhengzhou Four.
- World Revolution Media Maoist revolutionary film, music, and art archive
- Batchelor, J. Maoism and Classical Marxism ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে, Clio History Journal, 2009.
নির্বাচিত সংগঠনসমূহ
সম্পাদনা- Marxist–Leninist Communist Organization – Proletarian Way (France)
- Marxist-Leninist-Maoist Communist Party (France)
- News and Theory website of the Revolutionary Anti-Imperialist Movement ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে
- Signalfire - maoist news portal
- Communist Party of Argentina People
- Maoist Group of Sri Lanka.
- Leading Light Communist Organization -- for Global People's War
- The Kasama Project
- Chinese Communist Party
- Freedom Road Socialist Organization
- Revolutionary Internationalist Movement
Committee of Marxist-Leninist-Maoist parties from around the world
- Revolutionary Communist Party, USA Revolution newspaper online
- www.ucpnm.org Unified Communist Party of Nepal (Maoist)
- www.sarbedaran.org Communist Party of Iran (MLM) *in Persian*
- Communist Party of the Philippines (CPP)
- Communist Party of Peru Shining Path
- Revolutionary Internationalist Socialist Party, USA (RISP)
- Workers Party (Turkey)
- Revolutionary Communist Party of Canada (PCR-RCP)
- Communist Party of the Portuguese Workers PCTP/MRPP (Portugal)