সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন

(Chirped pulse amplification থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন হল অতিহ্রস্ব লেজাররশ্মির স্পন্দনকে (কম শক্তির সংক্ষিপ্ত সময়ের স্পন্দন) বিবর্ধিত করে পেটাওয়াট স্তরে উন্নত করার কৌশল।[১] একে ইংরেজি পরিভাষায় "চার্পড পালস অ্যামপ্লিফিকেশিন" বা সংক্ষেপে "সিপিএ" বলে।

বর্তমান সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতিটি লেজার স্পন্দনের শক্তিকে অতি উচ্চমানে উন্নীত করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি এবং বর্তমান বিশ্বের প্রায় সব অতি উচ্চশক্তির লেজারগুলোতে (১০০ টেরাওয়াটের চেয়ে বেশি) এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধনের প্রয়োগকারী অতি উচ্চশক্তির লেজার ব্যবস্থার কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে রাদারফোর্ড অ্যাপলটন পরীক্ষাগারের কেন্দ্রীয় লেজার ব্যবস্থা ভালকান পেটাওয়াট লেজার, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিউট ফর লেজার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গেকা পেটাওয়াট লেজার, রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ফর লেজার এনারজেটিকসের ওমেগা ইপি লেজার।

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

রাডারে শক্তি বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে ১৯৬০-এর দশকে সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতিটি আবিষ্কৃত হয়।[২] ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি জেরার মুরু এবং ডনা স্ট্রিকল্যান্ড রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতিটি লেজারে প্রয়োগ করেন,[৩] লেজারের উপর সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতিটি ব্যবহারের স্বীকৃতিস্বরূপ উভয়েই ২০১৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।[৪] এর পূর্বে লেজার স্পন্দনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছিল একটি দুরূহ সামর্থ্যপ্রমাণের পরীক্ষা বা চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যার একটি সাধারণ সমাধান করা হয়। লেজার স্পন্দনের সময়ব্যাপ্তি সংক্ষিপ্ত করলে লেজার রশ্মির সব শক্তি সংক্ষিপ্ত সময়ে কেন্দ্রীভূত থাকে। কিউ সুইচিং এবং মোড লকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লেজার স্পন্দনকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে (পিকোসেকেন্ডে এমনকি উপ-পিকোসেকেন্ডেও) সীমাবদ্ধ করা যায়। সঙ্গে সঙ্গে স্পন্দনের সর্বোচ্চ শক্তি মেগাওয়াট এমনকি গিগাওয়াট পাল্লায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু উচ্চশক্তির আলোকশক্তির প্রভাবে বিভিন্ন অরৈখিক ক্রিয়ার প্রভাব পড়ে বলে নিরাপদে ও সফলভাবে স্পন্দনের শক্তি বিবর্ধিত করা সীমিত হয়ে পড়ে। বিশেষত স্পন্দনের শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে আত্ম-কেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আলোকরশ্মি বিবর্ধন মাধ্যমে (gain medium) দৈর্ঘ্য অক্ষ বরাবর কেন্দ্রীভূত হয়। ফলে বিবর্ধন মাধ্যমের অংশবিশেষে আলোকরশ্মির শক্তি প্রতি সেন্টিমিটারে গিগাওয়াট বা আরও অনেক বেশি হতে পারে। ফলে লেজার বিবর্ধন মাধ্যম এবং লেজার ব্যবস্থার অন্য কিছু উপাংশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়।

কৌশল সম্পাদনা

সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতিতে অতিসংক্ষিপ্ত সময়ে লেজার স্পন্দন বিবর্ধন মাধ্যমে প্রবেশের আগে প্রসারিত করার জন্য ব্যবহার করা হয় একজোড়া গরাদ বা গ্রেটিং। ফলে প্রতিফলিত হয়ে হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটনগুলি দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ফোটনগুলির তুলনায় অল্প দূরত্ব অতিক্রম করে। এর ফলে গরাদ জোড়া অতিক্রম করার সময় বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ফোটনগুলি ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ফোটনগুলির তুলনায় সময়ে পিছিয়ে পড়ে এবং লেসার স্পন্দনটির দৈর্ঘ্য ১০০০ থেকে ১০০০০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের প্রসারিত স্পন্দনকে ধনাত্মকভাবে সুতীক্ষ্ণ (পজিটিভলি চার্পড) বলে। যেহেতু লেসার স্পন্দনটি সময়ে প্রসারিত, বিবর্ধন মাধ্যমের ভিতর স্পন্দনটির শক্তি যেকোনো সময়ে প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে একই পরিমাণে হ্রাস পায়। এরপর কম শক্তির প্রসারিত লেজার স্পন্দনটি বিবর্ধন মাধ্যমে প্রবেশ করানো হলে অরৈখিক ক্রিয়াগুলি ক্রিয়াশীল হয় না। তাই বিবর্ধন মাধ্যম বা অন্যান্য উপাংশের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। বরং বিবর্ধন মাধ্যম স্পন্দনের শক্তি বহুগুণ (দশ লক্ষ গুণ পর্যন্ত) বিবর্ধিত করে। পরিশেষে উচ্চ শক্তির প্রসারিত স্পন্দনকে প্রসারণের বিপরীত প্রক্রিয়ায় একজোড়া গরাদের ভিতর দিয়ে পরিচালিত করে পুনরায় সংকুচিত করা হয়। যেখানে বড় দৈর্ঘ্যের ফোটনগুলি ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ফোটনগুলির তুলনায় অল্প দূরত্ব অতিক্রম করে। এভাবে সংকুচিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের স্পন্দনটির শক্তি বহুগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, সেটা সাধারণভাবে সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতি ছাড়া সম্ভব নয়। সুতীক্ষ্ণ স্পন্দন বিবর্ধন পদ্ধতিতে শুধু স্পন্দনের শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধিই নয়, লেজার ব্যবস্থার আকারও অনেক ছোট করে আনা সম্ভব হয়েছে। একটি টেরাওয়াট শক্তির লেজার ব্যবস্থাকে সাধারণত একটি টেবিলের উপর স্থাপন করা সম্ভব।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Paschotta, Rüdiger (জুলাই ১, ২০১৭)। "Chirped-pulse Amplification"RP Photonics Encyclopedia। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২, ২০১৮ 
  2. Cook, Charles (১৯৬০)। "Pulse Compression-Key to More Efficient Radar Transmission"। Proceedings of the IRE। Institute of Electrical and Electronics Engineers (IEEE)। 48 (3): 310–316। আইএসএসএন 0096-8390ডিওআই:10.1109/jrproc.1960.287599 
  3. Strickland, Donna; Mourou, Gerard (১৯৮৫)। "Compression of amplified chirped optical pulses" (পিডিএফ)Optics Communications। Elsevier BV। 56 (3): 219–221। আইএসএসএন 0030-4018ডিওআই:10.1016/0030-4018(85)90120-8 সাইট সিয়ারX 10.1.1.673.148 । ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  4. "The Nobel Prize in Physics 2018"। Nobel Foundation। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৮ 
  5. মুহম্মদ, আনিসুজ্জামান তালুকদার। "পদার্থবিদ্যায় নোবেল ২০১৮ লেজারের নোবেল জয়"। প্রথম আলো। বিজ্ঞানচিন্তা। 

টেমপ্লেট:Lasers