অ্যানা প্যাকুইন

নিউজিল্যান্ডীয় অভিনেত্রী
(Anna Paquin থেকে পুনর্নির্দেশিত)

অ্যানা প্যাকুইন (ইংরেজি: Anna Helene Paquin; জন্ম ২৪ জুলাই ১৯৮২) হলেন একজন নিউজিল্যান্ডীয়-কানাডীয় অভিনেত্রী।[১][২] শিশুশিল্পী হিসেবে সফল মাত্র ১১ বছর বয়সে একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী প্যাকুইন অস্কারের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী।[৩] শিশুশিল্পী হিসেবে তার কাজের জন্য তিনি একাধিক ইয়াং আর্টিস্ট পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেছেন। এছাড়া তিনি একটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার[৪] ও দুটি স্যাটেলাইট পুরস্কার অর্জন করেছেন।

অ্যানা প্যাকুইন
জন্ম
অ্যানা হ্যালেন প্যাকুইন

(1982-07-24) ২৪ জুলাই ১৯৮২ (বয়স ৪১)
নাগরিকত্ব
  • নিউজিল্যান্ড
  • কানাডা
পেশাঅভিনেত্রী
কর্মজীবন১৯৯৩–বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীস্টিফেন মোইয়ার (বি. ২০১০)
সন্তান

কানাডার ম্যানিটোবায় জন্মগ্রহণকারী প্যাকুইন কিশোর বয়সে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে বেড়ে ওঠেন এবং কিশোর বয়সে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। শিশু বয়সে তিনি জেন ক্যাম্পিয়নের প্রণয়ধর্মী নাট্য চলচ্চিত্র দ্য পিয়ানো (১৯৯৩)-এ ফ্লোরা ম্যাকগ্রা চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ফ্লাই অ্যাওয়ে হোম (১৯৯৬), দ্য মেম্বার অব দ্য ওয়েডিং (১৯৯৭) ও আ ওয়াক অন দ্য মুন (১৯৯৯) ছবিতে তার কাজের জন্য ইয়ং আর্টিস্ট পুরস্কারে মনোনীত হন এবং অলমোস্ট ফেমাস ছবির জন্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারে মনোনীত হন। তিনি এক্স-মেন চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের প্রথম কিস্তিতে মিউট্যান্ট সুপারহিরোইন রোগ চরিত্রে অভিনয় করে স্যাটার্ন পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

প্যাকুইন এইচবিওর ভ্যাম্পায়ার নাট্যধর্মী টেলিভিশন ধারাবাহিক ট্রু ব্লাড (২০০৮-২০১৪)-এ সুকি স্ট্যাকহাউজ চরিত্রে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করে ২০০৯ সালে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার আয়োজনে সেরা নাট্য অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কৃত হন এবং ২০১০ আরেকটি গোল্ডেন গ্লোবের মনোনয়ন পান। এছাড়া তিনি এই কাজের জন্য তিনটি স্যাটার্ন পুরস্কার ও একটি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মনোনয়নের মধ্যে রয়েছে বারি মাই হার্ট অ্যাট ওন্ডেড নি (২০০৭) টেলিভিশন চলচ্চিত্রের জন্য প্রাইমটাইম এমি, গোল্ডেন গ্লোব, ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের মনোনয়ন এবং দ্য কারেজিয়াস হার্ট অব ইরিনা সেন্ডলার (২০০৯) টেলিভিশন চলচ্চিত্রের জন্য গোল্ডেন গ্লোবের মনোনয়ন।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

প্যাকুইন কানাডার ম্যানিটোবার উইনিপেগে জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা ম্যারি প্যাকুইন (বিবাহপূর্ব ব্রফি) একজন ইংরেজির শিক্ষক এবং নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনের অধিবাসী, এবং পিতা ব্রায়ান প্যাকুইন কানাডার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। প্যাকুইনের বড় ভাই অ্যান্ড্রু (জন্ম ১৯৭৭) একজন পরিচালক এবং বড় বোন ক্যাটিয়া (জন্ম ১৯৮০),[৫] যার সঙ্গী নিউজিল্যান্ডের গ্রিন পার্টির সাবেক সহ-প্রধান রাসেল নরম্যান।[৬] প্যাকুইন ওলন্দাজ, ফরাসি ও আইরিশ বংশোদ্ভূত।[৭] প্যাকুইনের যখন চার বছর বয়স, তখন তারা সপরিবার নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমায়। নিউজিল্যান্ড থাকাকালীন তার শৈশবের শখ ছিল ভায়োলা, চেলোপিয়ানো বাজানো। তিনি মল্লক্রীড়া, ব্যালে, সাঁতার, ডাউনহিল স্কিইং-এ অংশ নিতেন, তবে অভিনয় সম্পর্কিত তার কোন শখ ছিল না।[৮][৯]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পরিচালক জেন ক্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের পটভূমিতে নির্মিতব্য দ্য পিয়ানো চলচ্চিত্রের মূল ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য একটি ছোট্ট মেয়েকে খুঁজছিলেন, এবং উন্মুক্ত অডিশনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন। প্যাকুইনের বোন বিজ্ঞাপনটি পড়ে এবং এক বন্ধুকে নিয়ে অডিশন দিতে যান। প্যাকুইন এতে অনুপ্রাণিত হন। যখন প্যাকুইনের সাথে ক্যাম্পিয়নের সাক্ষাত হয় তখন তার একমাত্র অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ছিল একটি স্কুল নাটকের স্কাঙ্ক অভিনয়। ক্যাম্পিয়ন নয় বছর বয়সী প্যাকুইনের ফ্লোরার বাবার সম্পর্কে স্বগতোক্তির অভিনয় দেখে খুব মুগ্ধ হন এবং ৫০০০ প্রার্থীর মধ্য থেকে তাকে নির্বাচিত করেন।[৯] ১৯৯৩ সালে দ্য পিয়ানো মুক্তি পেলে সমালোচকেরা এর প্রশংসা করেন, বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র উত্সবে পুরস্কার অর্জন করে এবং শেষ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে পরিণত হয়। এই চলচ্চিত্রে প্যাকুইন তার অভিনয়ের জন্য ১৯৯৩ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন, যার ফলে তিনি ট্যাটুম ওনিলের পর অস্কারের ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম অস্কার জয়ের রেকর্ড করেন।[৯]

 
২০১০ কমিক কন ইন্টারন্যাশনালে প্যাকুইন

১৯৯৬ সালে তিনি দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। প্রথম চলচ্চিত্র জেন আইয়ার-এ তিনি কিশোরী জেন আইয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন। দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ফ্লাই অ্যাওয়ে হোম-এ তার চরিত্রটি প্রধান ছিল, যেখানে তিনি এক কিশোরী চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবার সাথে থাকা শুরু করে এবং হংসছানার দেখাশোনা করে শান্তি খুঁজে বেড়ায়।[১০] এই কাজের জন্য তিনি চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ প্রধান চরিত্রে শিশু শিল্পী বিভাগে ইয়াং আর্টিস্ট পুরস্কার এবং চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী বিভাগে ক্রিটিকস চয়েস চলচ্চিত্র পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। কিশোরী হিসেবে তার অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হল আমিস্টাড (১৯৯৭), হার্লিবার্লি (১৯৯৮), শি'স অল দ্যাট (১৯৯৯) এবং ক্যাসল ইন দ্য স্কাই-এর ইংরেজি ডাবিং। ২০০০ সালে তিনি আ ওয়াক অন দ্য মুন চলচ্চিত্রের জন্য চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে শিশু শিল্পী বিভাগে ইয়াং আর্টিস্ট পুরস্কারের মনোনয়ন এবং অলমোস্ট ফেমাস চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীদল বিভাগে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।

প্যাকুইন মার্ভেল কমিক্সের এক্স-মেন চলচ্চিত্র ধারাবাহিকের প্রথম কিস্তি এক্স-মেন (২০০০), এর পরবর্তী কিস্তি এক্সটু (২০০৩) এবং তৃতীয় কিস্তি এক্স-মেন: দ্য লাস্ট স্ট্যান্ড (২০০৬)-এ মিউট্যান্ট সুপারহিরোইন রোগ চরিত্রে অভিনয় করেন। এক্স-মেন চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তরুণ অভিনয়শিল্পীর সেরা অভিনয় বিভাগে স্যাটার্ন পুরস্কারের মনোনয়ন ও শ্রেষ্ঠ পর্দা যুগল বিভাগে এমটিভি মুভি ও টিভি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন, এবং এক্সটু চলচ্চিত্রের জন্য শন অ্যাশমোরের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ রসায়ন বিভাগে টিন চয়েস পুরস্কারের মনোনয়ন ও শ্রেষ্ঠ চুম্বন বিভাগে এমটিভি মুভি ও টিভি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে তিনি ব্লু স্টেট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং এর নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেন। চলচ্চিত্রটি প্যাকুইন ফিল্মস থেকে নির্মিত হয়, যে প্রতিষ্ঠানটি তিনি ও তার ভাই অ্যান্ডু প্যাকুইন মিলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Anna Paquin interview :: Who's News"ইউএসএ উইকেন্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  2. করি, ডমিনিক (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩)। "Dominic Corry: New Zealand's Oscar heroes"নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  3. "Anna Paquin. Biography, news, photos and videos"হেলো (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  4. "Anna Paquin"গোল্ডেন গ্লোব (ইংরেজি ভাষায়)। হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৮ 
  5. "X Appeal"দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। লন্ডন। ৬ আগস্ট ২০০০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২১ 
  6. ভ্যান্স, অ্যান্ড্রেয়া (২ নভেম্বর ২০১১)। "Hanging out with the political Wags"স্টাফ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২১ 
  7. "Twitter status"টুইটার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২১ 
  8. ভেরহেগ, মেলানি (Summer ১৯৯৪)। "Twinkle, Twinkle, Little Star"। হোমমেকার্স ম্যাগাজিন (ইংরেজি ভাষায়)। 
  9. ডাটকা, এলেইন (১১ জানুয়ারি ১৯৯৪)। "A Young Star is Born in the Piano"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২১ 
  10. ল্যামবার্ট, প্যাম (১৬ এপ্রিল ১৯৯৬)। "Paquicking it in"পিপল (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২১ 
  11. হল, কারিনা (২৫ আগস্ট ২০০৬)। "Anna Paquin: filmmaker and risk-taker" (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার অ্যালায়েন্স। ২৯ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা