২০১৭ সালের পশ্চিমবঙ্গ বন্যা

পশ্চিমবঙ্গের একটি বন্যার ঘটনা

২০১৭ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে, ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে চরম বন্যা দেখা দেয়।[২] বন্যার ঘটনায় ১ আগস্ট থেকে ৫০ জন এবং প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ৮ জনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে রিপোর্টে বলা হয়েছে।[৩]

২০১৭ সালের পশ্চিমবঙ্গ বন্যা
পশ্চিমবঙ্গে তার পূর্ববর্তী নিম্নচাপের কারণে বিপদজনক বন্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তারিখজুলাই – আগস্ট, ২০১৭
অবস্থানপশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড, ভারত
মৃত১৫২ (১ জুন ২০১৭ – ৩১ জুলাই ২০১৭)[১]
ক্ষয়ক্ষতি₹১৪০ বিলিয়ন (সরকারি মতে)[১]

এই বন্যার পরেই, উত্তরবঙ্গে বন্যার ঘটনা ঘটে। এই সময় উত্তরবঙ্গের সাত জেলা বন্যায় বিধ্বস্ত হয় এবং ৩ জনের মৃত্যু হয়।

দুর্যোগের কারণ এবং পরিমাণ সম্পাদনা

গাঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদনা

জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রাজ্যে বন্যার সৃষ্টি হয় ড্যামের জল থেকে।[৪] ভূমি বন্যার জলে প্লাবিত হয় পূর্ববর্তী বাঁধগুলির নিম্ন এবং দরিদ্র রক্ষণাবেক্ষণ জন্য যা পশ্চিমবঙ্গে বিপজ্জনক বন্যার সৃষ্টি করেছিল।

রাষ্ট্রীয় সেচমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় গত তিন দিনে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলাবতী নদী, বাঁকুড়া জেলার দ্বারকেশ্বর, বীরভূমের দ্বারকা ও কুপাই বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হয়েছে। সীউরি ব্লক ২ তে কিছু গ্রাম অনবরত বৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়েছে। ঘাটল, ক্ষিরপাই, চন্দ্রকোণসহ হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশ শনিবার রাতে জলে প্লাবিত হয়। বাঁকুড়া জেলায় রাজ্যের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এ সময়ে ২৭৪ মিলিমিটারে রেকর্ড করা হয়েছিল, দীঘা ১০৪ মিমি এবং বর্ধমানের ৭২.৬ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। [৪] ১৯৭৮ সালে ডিভিসি বাঁধের জল স্রোত ছিল একটি অভূতপূর্ব রাজ্যে বন্যার কারণ। ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ২.৭৮ লাখ কিউসেক জল ডিভিসি থেকে ছাড়া হয়েছিল। দমোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) এর বাঁধ থেকে আরও বেশি জল মুক্তি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় এবং দামোদর নদের নিম্নস্থল এলাকায় একটি লাল সতর্কতা জাড়ি করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার সকালে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ২৪ লাখ ৪ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়।[৫] ফলস্বরূপ, পূর্ব বর্ধমান জেলা, হুগলি জেলাহাওড়া জেলায় আরও অনেকগুলি বন্যার ঘটনাা ঘটে। [৫] জুলাই মাসে সাধারন বৃষ্টিপাতের তুলনায় বন্যার সময় প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল ৭৫৪ শতাংশ, বর্ধমানের ৩৩৪ শতাংশ, বীরভূম ৩১৩ শতাংশ, পূর্ব মেদিনীপুরের ৫০০ শতাংশ, পশ্চিম মেদিনীপুরের ৪২৪ শতাংশ , হাওড়া ৪২৭ শতাংশ, হুগলি ৩৫৯ শতাংশ, কলকাতা ৩৬৭টি, মুর্শিদাবাদ ১৭৪ শতাংশ এবং পুরুলিয়া ৭২১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত ঘটে। ২০ থেকে ২৬ জুলাই বীরভূমে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৬০০ মিলিমিটার।

আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়, কলকাতা শহরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪২ মিমি বৃষ্টিপাত হয়। জুলাই ২০১৭ কলকাতায় ২০০৮ সালের পর বেশি বৃষ্টিপাত হয়, যা ৭২% বেশি স্বাভাবিক বৃষ্টি পাতের থেকে - শহরটি ৬২১.৫মিমি বৃষ্টি। শুধুমাত্র একবার - ২০১৫ সালে - এই দশকে কলকাতাতে ঘূর্ণিঝড় কোমেন থেকে জুলাই মাসে আরও বৃষ্টিপাত হয়েছে।[৬]

উত্তরবঙ্গ সম্পাদনা

গাঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গের এই বন্যাগুলির মত উত্তরবঙ্গের ৭ জেলায় দ্রুত বন্যা ঘটে। এই বন্যা উপ-হিমালয়ান অঞ্চলে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের কারণে ঘটেছিল।

বন্যার প্রভাব সম্পাদনা

গাঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদনা

উত্তর বঙ্গ সম্পাদনা

এ অঞ্চলে বন্যার শুরুতে সাত জনের প্রাণহানি ঘটে। এই অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় প্রায় এক লাখ (১০০ হাজার) মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে - এদের মধ্যে ৬০ হাজার মানুষ আলিপুরদুয়ার জেলা এবং জলপাইগুড়ি জেলার। এই সব বন্যা প্রভাবিত মানুষের বেশির ভাগই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল। জলপাইগুড়ি জেলার ফালাকাটা ও মাদারিহাটের মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্মুখীন হয় এবং দুই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দারা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল। ফুলহার, বেহুলা, গঙ্গামহানন্দা নদীর জলে মালদা জেলাটি প্লাবিত হয়েছিল। বন্যার জন্য ওই অঞ্চলের ২ লাখেরও (২ হাজার হাজার) বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মালদা জেলার ইংরেজবাজার সহ ৪ টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক প্লাবিত হয়েছিল।

ত্রাণ ও উদ্ধার সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গের ১৪ টি জেলার ১০৬ টি ব্লকের ২৭,০০,০০০-এরও বেশি লোক বন্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়।[১] রাজ্য সরকারের থেকে বন্যা প্রভাবিতদের জন্য প্রায় ৩১ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমতার বন্যাগ্রস্ত এলাকা ও হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে সফর করেন। তিনি ডিভিসি-এর জল ছাড়ার ঘটনা উদ্বিগ্ন ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার প্রথমবারের মতো সশস্ত্র বাহিনী থেকে সাহায্য চেয়েছিল যখন দক্ষিণ বঙ্গের আটটি জেলা বন্যা দ্বারা আঘাত হানে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার প্রতাপপুর গ্রামে ২ টি বাড়িতে আটকে থাকা ৩৯ জনকে বিমান বাহিনী একটি হেলিকপ্টারের সাহায্য উদ্ধারের করে। [৭]

০৬.০৮.২০১৭ তারিখে এনডিআরএফ দল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালয়ে বিশ্বব্যাংকের ত্রাণ ও ত্রাণ অভিযান পরিচালনা করে এবং ০৩ জনকে উদ্ধার করে এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে। তারা বিতরণ করেছিল- ২২০০ টি জলের পাউচ, শুকনো দড়ি -১৬ ব্যাগ, গুঁড়া দুধ ৬ কেজি, এবং গুড় ৬০ কেজি। দলটি ২৫৩ জনকে উদ্ধার করেছে, ১০২৯ জন লোককে স্থানান্তর করে এবং ৫ টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল। দলটি শেষ পর্যন্ত ১৫০০ টি খাবারের প্যাকেট, জলের পাউচ/বোতল -২৫৬৪ টি, শুকনো খাবার (চাল, ডাল, চিনি, -২৩৬ ব্যাগ, শিশুদের খাবার-২৪ সিটিএন, দুধ-১০৫৬ প্যাকেট, গুর -২২০৫ কেজি, টেরপোলাইন -৫৮ টি, শাকসবজি -৫৪০ কেজি ও ওষুধ বিতরণ করে। [৮]


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Narendra Modi's 'India first' policy is mere talk, Centre overlooking West Bengal in flood relief is proof" 
  2. "Flood woes in West Bengal man-made, says CM Mamata Banerjee"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৮-০৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮ 
  3. "Death toll in West Bengal floods rises to 50; heavy rain lashes north India"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮ 
  4. "West Bengal: Incessant rains flood lowlands"The Asian Age। ২০১৭-০৭-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০৭ 
  5. "West Bengal flood: More villagers marooned; DVC releases water from dams, toll rises to eight"। আগস্ট ১, ২০১৭। 
  6. "Kolkata: July ends with 72% more rain, 2nd wettest since '07"। এপ্রিল ১৯, ২০১৭। 
  7. "Bengal flood: Air Force to the rescue of villagers trapped in Ghatal"। আগস্ট ১, ২০১৭। 
  8. "Bengal flood:India: Monsoon-2017: Daily monsoon / Flood situation report of 07 August 2017"। আগস্ট ১, ২০১৭।