হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
অধ্যাপক হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ( জন্ম;- ২৫ অক্টোবর ১৯৩১) হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্যারা-সাইকোলজিস্ট। [১]
হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | আবু রোড রাজপুতানা ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে রাজস্থান ভারত) | ২৫ অক্টোবর ১৯৩১
পেশা | অধ্যাপনা ও গবেষণা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | অ্যামেরিকানস্ হু হ্যাব বিন রিইনকারনেটেড |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাহেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের রাজপুতানার অধুনা রাজস্থানের সিরোহি জেলার আবু রোড়ে রেলকর্মচারী পিতার কর্মস্থলে। হেমেন্দ্রনাথের স্কুলজীবন কাটে মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ জেলার মৌ-এ। পরে ভর্তি হন আজমেঢ় কলেজে। কলেজে পড়ার সময়ই পুরনো বইয়ের দোকানে একটি বই দেখেই প্রথম প্যারাসাইকোলজির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের বি.এ. পাশের পর চলে যান এলাহাবাদে । দর্শন শাস্ত্র নিয়ে ভর্তি হন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাএম.এ পাশের পর তিনি রাজস্থান সরকারের শিক্ষা দপ্তরের চাকরি নেন। কিন্তু মানুষের মৃত্যুর পর কী ঘটে, সে বিষয়ে তার অনুসন্ধিৎসা স্তিমিত না হওয়ায় চাকরির পাশাপাশি পরামনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। পরে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থান সরকার অন্য এক চাকরি নিয়ে চলে যান শ্রীগঙ্গানগরে। সেখানকার এক বর্ধিষ্ণু পরিবারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন শেঠ সোহনলাল মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট অব প্যারাসাইকোলজি। সেখানে পড়াশোনার সঙ্গে চালিয়ে যান গবেষণার কাজ। কালক্রমে এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসাবে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে, স্বাধীনতার পর ভারতের উত্তরপ্রদেশের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ড.সম্পূর্ণানন্দ, যিনি একদিকে মার্ক্সভক্ত আবার অন্যদিকে মহাত্মা গান্ধীর অনুরক্ত, আধ্যাত্মিক সাম্যবাদে রাষ্ট্র গড়ায় রাজনৈতিক ভাবাদর্শ পোষণ করতেন। মানুষকে আধ্যাত্মিক ঐক্যের সন্ধান প্রদানে, বিশ্বভ্রাতৃত্বের জন্য আধ্যাত্মিক ভিত্তির সন্ধানে ছিলেন। তার মতে, সাম্রাজ্যবাদের চাপে মূলধারার বিজ্ঞান লক্ষ্যভ্রষ্ট। নতুন বিজ্ঞানই দেখাতে পারে সে দিশা। নতুন সেই বিজ্ঞানের সন্ধান করতে গিয়ে তিনি মুখোমুখি হন প্যারাসাইকোলজির। তারই উদ্যোগে এলাহাবাদ ও লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠে প্যারাসাইকোলজি বিভাগ। ড.যমুনা প্রসাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে গবেষণাকেন্দ্র। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ হতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্যারা-সাইকোলজিস্ট ইয়ান স্টিভেনসনের সঙ্গে যমুনা প্রসাদের বন্ধুত্ব ছিল এবং তারা দুজনেই পুনর্জন্ম নিয়ে কাজে লিপ্ত ছিলেন। [২] পুনর্জন্ম, সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন’ তথা অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি ইত্যাদি নানা বিষয়ে গবেষণার ব্যবস্থা ছিল যমুনা প্রসাদের নেতৃত্বে গড়া কেন্দ্রটিতে। প্যারাসাইকোলজির এই গবেষণায় হেমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ড. সম্পূর্ণানন্দের দৃষ্টিগোচরে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ড. সম্পূর্ণানন্দ রাজস্থানের রাজ্যপাল নিযুক্ত হলে, তারই আদেশে হেমেন্দ্রনাথের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা 'শেঠ সোহনলাল মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট অব প্যারাসাইকোলজি'কে জয়পুরের রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইকোলজি বিভাগ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং বিভাগীয় প্রধান হন হেমেন্দ্রনাথ। [২] বিশ শতকের ষাটের দশকের প্রথম ভাগটা প্যারাসাইকোলজির স্বর্ণযুগ ছিল ভারতে। রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যারাসাইকোলজি বিভাগের প্রধান হেমেন্দ্রনাথ নানা কর্মকাণ্ডে রেখেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব প্যারাসাইকোলোজি' শীর্ষক সাময়িক গবেষণা জার্নালের প্রকাশনা। তার প্যারাসাইকোলজি বিভাগ পুনর্জন্ম বিষয়ক কয়েকটি প্রাতিস্মিক ঘটনার একক বিবরণী- ‘এ কেস সাজেস্টিভ অব এক্সট্রা-সেরিব্রাল মেমরি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হত। তার মতে, জাতিস্মরের ঘটনা হল ‘এক্সট্রা-সেরিব্রাল মেমরি’ বা মস্তিষ্কাতিরিক্ত স্মৃতির ঘটনা। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রাজপুতানার ভরতপুরের সেলিমপুর গ্রামে জন্ম জাতিস্মর বালক 'প্রভু'কে নিয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তার সেই গবেষণার বিশদ বিবরণ প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে। হেমেন্দ্রনাথের গবেষণা বিষয়ে সত্যজিৎ রায় ওয়াকিবহাল হয়ে উঠলেন বিমল চট্টোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ প্যারা-সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির কল্যাণে। তার 'প্যারাসাইকোলজি'র কাহিনী রূপোলি পর্দায় প্রদর্শিত হল- সোনার কেল্লা [১]
হেমেন্দ্রনাথ লাভ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লেবানন থেকে ব্রাজিল, তুরস্ক থেকে মিশর, সর্বত্রই গিয়েছেন পুনর্জন্ম জাতিস্মরদের সন্ধানে। এমনকী, প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি,জন এফ কেনেডির মেজো ভাই রবার্ট এফ কেনেডির আততায়ী ২৪-বছর বয়সী প্যালেস্টাইন যুবক শিরহান বি শিরহান যখন দাবি করেন যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে ভূতাবিষ্ট হয়েই খুন করেন, তখন তার সে দাবির সত্যাসত্য যাচাই করতে ডাক পড়েছিল হেমেন্দ্রনাথের। হেমেন্দ্রনাথ দেশ-বিদেশ ভ্রমণে পুনর্জন্ম , জন্মান্তরবাদ, নিয়ে বহু তথ্য ও মতবাদ সম্বলিত নিবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-
- রচিত গ্রন্থসমূহ-
- জন্মান্তরবাদ- রহস্য ও রোমাঞ্চ (১৯৬৩) অপরূপা কলকাতা উপস্থাপন=জ্যোতির্ম্ময় দাশ "জন্মান্তরবাদ- রহস্য ও রোমাঞ্চ"।
- ব্যানার্জি, হেমেন্দ্রনাথ (১৯৮০)। অ্যামেরিকানস্ হু হ্যাব বিন রিইনকারনেটেড। Sribner। আইএসবিএন 978-0025067400।
- ব্যানার্জি, হেমেন্দ্রনাথ (১৯৬৫)। প্যারা-সাইকোলজি।
- ব্যানার্জি, হেমেন্দ্রনাথ। দ্য ওয়ানস্ অ্যান্ড ফিউচার লাইফ: টুয়েন্টি-ফাইব ইয়ার স্টাডি অন রিইনকারনেসন। আইএসবিএন 9780440165545। [৩]
আরো পড়ুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "সোনার কেল্লার খোঁজে"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২২।
- ↑ ক খ "Parapsychology in India - a write up by Jamuna Prasad" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৯।
- ↑ "Parapsychology- banerjee bn"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-২৯।