হামিদা বানু বেগম
হামিদা বানু [১] (১৫২৭ – ২৯ আগস্ট ১৬০৪, ফার্সি: حمیدہ بانو بیگم, প্রতিবর্ণীকৃত: Ḥamīda Banū Begum) দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হুমায়ূন এর পত্নী এবং মুঘল সম্রাট আকবর এর মাতা। [২] তিনি ‘মরিয়ম মাকানি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি পার্সি ও হিন্দুস্তানি কারিগর দ্বারা হুমায়ূনের সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন।[৩]
হামিদা বানু বেগম মরিয়ম মাকানি | |
---|---|
বেগম-ই-খাস পাদশাহ মরিয়ম মাকানী মল্লিকা-ই-আজম হযরত হামিদা বানু বেগম সাহিবা | |
রুকাইয়া সুলতান বেগম | |
Tenure | 27 January 1556 - 29 August 1604 |
মুঘল সাম্রাজ্যের পাদশাহ বেগম | |
পূর্বসূরি | বেগা বেগম |
উত্তরসূরি | রুকাইয়া সুলতান বেগম |
জন্ম | ২১ এপ্রিল ১৫২৪ Paat, Dadu District Sindh |
মৃত্যু | ২৯ আগস্ট ১৬০৪ (বয়স ৮০) আগ্রা, মুঘল সাম্রাজ্য |
সমাধি | ৩০ আগস্ট ১৬০৪ |
দাম্পত্য সঙ্গী | হুমায়ুন |
বংশধর |
|
পিতা | শেখ আলী আকবর জামি |
মাতা | মাহ আফরোজ বেগম |
ধর্ম | শিয়া ইসলাম |
পরিবার
সম্পাদনাহামিদা বানু ১৫২৭ সালে পারসিয়ান শিয়া পরিবারে শেখ আলী আকবর জামির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। আলী আকবর প্রথম মুঘল সম্রাট বাবরের কনিষ্ঠ পুত্র হিন্দল মির্জার বন্ধু ও শিক্ষক ছিলেন। হামিদার মা মাহনা আফরাজ বেগম আলী আকবরকে সিন্ধুর পাট শহরে বিয়ে করেন। বংশগতভাবে হামিদা ধর্মপ্রাণা মুসলিম ছিলেন।[৪]
হুমায়ুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ
সম্পাদনাআলওয়ার শহরে বাবরের স্ত্রী ও হুমায়ুনের সৎমা দিলদার বেগমের আয়োজিত এক ভোজসভায় হুমায়ুনের সঙ্গে ১৪ বছরের বালিকা হামিদার প্রথম দেখা হয়। শের শাহ সুরির আক্রমণে নিষ্ক্রান্ত হওয়া হুমায়ুন তখন নির্বাসিত ছিলেন।[৫] যখন হুমায়ুন ও হামিদার বিয়ের প্রস্তাব উত্থাপিত হয় তখন হামিদা ও হিন্দল উভয়েই এতে আপত্তি করেন। ধারণা করা হয় হামিদা হিন্দলকে ভালবাসতেন[৬], যদিও এর কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না।[৬] হিন্দলের বোন ও হামিদার ঘনিষ্ঠ সখী গুলবদন বেগম ‘হুমায়ুননামা’ বইতে নির্দেশ করেন যে সেই সময় হিন্দলের প্রাসাদে এবং দিলদার বেগমের আয়োজিত সভায় হামিদাকে প্রায়শই দেখা যেত।[৭] প্রথমে হামিদা বাদশাহর সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন। ৪০ দিন চেষ্টার পর দিলদার বেগমের প্ররোচনায় অবশেষে তিনি হুমায়ুনকে বিয়ে করতে রাজি হন। হামিদা তার বই হুমায়ুননামাতে লিখেছেন “আমি এমন একজনকে বিয়ে করব যার কণ্ঠদেশ পর্যন্ত আমার হাত পৌঁছতে পারে, এমন কাউকে নয় যাকে আমি স্পর্শ করতে পারি না”।[৮]
মুঘল সম্রাজ্ঞী
সম্পাদনাআকবর এর রাজত্বকালে বহু ঘটনা দেখা যায় যেখানে রাজমহলের নারীরা বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন যেমন কোন অপরাধীর দণ্ডহ্রাস বা ক্ষমা করা প্রভৃতি। একবার লাহোর শহরে এক শিয়া মুসলিমকে হত্যা করার দায়ে এক সুন্নি মুসলিমকে ক্ষমার জন্য হামিদা আবেদন করলে আকবর তা নাকচ করে দেন।[৯]
বিধবা সম্রাজ্ঞী
সম্পাদনাশের শাহ সুরি ১৫৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তার উত্তরসূরী ইসলাম শাহও ১৫৫৪ সালে মারা যান। এভাবে সুরি সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। ১৫৫৪ সালের নভেম্বরে হুমায়ুন ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হলে হামিদা কাবুল গিয়ে থাকেন। হুমায়ুন ১৫৫৫ সালে দিল্লি পুনরুদ্ধার করতে পারলেও ফিরে আসার বছরখানেকের মধ্যে পাঠাগারের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১৫৫৬ সালে ঘটে যাওয়া এই অকালমৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৪৭ আর তার উত্তরাধিকারী পরবর্তীকালের বিখ্যাত সম্রাট আকবরের বয়স ছিল মাত্র ১৩। রাজত্বের দ্বিতীয় বছরেই হামিদা আকবরের কাছে কাবুলে চলে আসেন এবং তার কাছে থেকে যান। হামিদা তখন বিভিন্ন দরবারি কাজেও হস্তক্ষেপ করেন, বিশেষত আকবর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বৈরাম খাঁর স্বেচ্ছাচারিতার সময়।[১০]
মৃত্যু
সম্পাদনাহামিদা ১৬০৪ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যবরণ করেন। তাকে দিল্লীতে সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিসৌধতে কবর দেওয়া হয়। তিনি আকবরের মৃত্যুর ঠিক এক বৎসর পূর্বে এবং স্বামী হুমায়ুনের মৃত্যুর প্রায় অর্ধশত বছর পরে মারা যান। ইংরেজ পর্যটক থমাস করিয়ট এর ভাষ্যমতে আকবর হামিদাকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করতেন। একবার লাহোর থেকে আগ্রা যাওয়ার পথে আকবর নিজে তার পালকি টেনে নদী পার করেছিলেন। যুবরাজ জাহাঙ্গীর যখন পিতা আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, হামিদা তখন বুদ্ধিমত্তার সাথে বিষয়টি সামাল দেন। জাহাঙ্গীর আকবরের প্রিয় মন্ত্রী আবুল ফজল ইবনে মুবারককে মেরে ফেলার পরেও পিতাপুত্রে পুনর্মিলন সাধিত হয়। আকবর সমগ্র জীবনে কেবল দুইবার চুলদাড়ি ফেলে দিয়েছেন- এক পালক মাতা জিজি আনগার মৃত্যুতে আর দুই গর্ভধারিণী হামিদার মৃত্যুতে।[১১][১২][১৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Mukhia 2004, পৃ. 125।
- ↑ The Humayun Nama: Gulbadan Begum's forgotten chronicle Yasmeen Murshed, The Daily Star, 27 June 2004.
- ↑ Tankha, Madhur (জুন ৬, ২০১৪)। "Bringing it back to glory"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Dr. B. P. Saha। Begams, concubines, and memsahibs (ইংরেজি ভাষায়)। Vikas Pub. House। পৃষ্ঠা 20।
- ↑ Mukherjee, p.119
- ↑ ক খ Eraly, Abraham (২০০০)। Emperors of the Peacock Throne : The Saga of the Great Mughals (ইংরেজি ভাষায়) ([Rev. ed.]. সংস্করণ)। Penguin books। পৃষ্ঠা 65, 526। আইএসবিএন 9780141001432।
- ↑ Wade, Bonnie C. (১৯৯৮)। Imaging Sound : an Ethnomusicological Study of Music, Art, and Culture in Mughal India (ইংরেজি ভাষায়)। Univ. of Chicago Press। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 9780226868417।
- ↑ Mukherjee, p.120
- ↑ Mukherjee, p.130
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;gr
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ Genealogy of Hamida Begum
- ↑ Mukhia, Harbans (২০০৪)। The Mughals of India। India: Wiley। পৃষ্ঠা 115। আইএসবিএন 81-265-1877-4।
- ↑ Hamida Banu Faces of the feminine in ancient, medieval, and modern India, by Mandakranta Bose. Oxford University Press US, 2000. আইএসবিএন ০-১৯-৫১২২২৯-১. Page 203.