হামারা হিন্দুস্তান আওর উসকে ফাজায়েল

হুসাইন আহমদ মাদানির বই

হামারা হিন্দুস্তান আওর উসকে ফাজায়েল (উর্দু: ہمارا ہندوستان اور اس کے فضائل‎, অনুবাদ 'আমাদের ভারত এবং এর গুণাবলি'‎) ভারত বিভাজনের কিছুকাল আগে ১৯৪১ সালে লিখিত হুসাইন আহমদ মাদানির ৩২ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ যেখানে তিনি হিন্দুস্তানের গুণাবলি তুলে ধরেছেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দাবি ছিল ভারত শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য পবিত্র, মুসলমানরা বহিরাগত এবং ভারতের সাথে মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। মাদানি হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এই দাবিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ না করে তার বিপরীতে একটি ইসলামি দাবি তুলে ধরেন, যেখানে তিনি যুক্তি দেন, পৃথিবীর আদি পিতা আদম ভারতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, সে অনুযায়ী সকল মানুষ তার বংশধর এবং ভারত সকলের জন্য।[১]

হামারা হিন্দুস্তান আওর উসকে ফাজায়েল
মূল সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকহুসাইন আহমদ মাদানি
মূল শিরোনামہمارا ہندوستان اور اس کے فضائل
দেশভারত
ভাষাউর্দু
বিষয়হিন্দুস্তান
ধরনপ্রবন্ধ
প্রকাশিত১৯৪১
প্রকাশকজমিয়ত উলামায়ে হিন্দ
মিডিয়া ধরনশক্তমলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩২
ওসিএলসি১১২৪৩০০২৭৫

বর্ণনা সম্পাদনা

হুসাইন আহমদ মাদানি এই গ্রন্থে আরবি সাহিত্যের একটি পুরানো ধারা, "ফাজায়েল" ব্যবহার করেছেন যেখানে লেখকরা বিভিন্ন দেশের গুণ বা যোগ্যতা তুলে ধরেন। তবে তিনি এটিকে ভারতীয় জাতির জন্য তৈরি করা ঐতিহাসিক "জীবনী" হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা জোর দিয়েছিলেন, ভারত একটি হিন্দু ভূমি, শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য পবিত্র এবং তথাকথিত বিদেশি মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের জন্য নয়। ভারতের সাথে মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। মাদানি এই যুক্তিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেননি; তিনি কেবল এর বিপরীতে একটি ইসলামি দাবি করেছিলেন। মাদানি এই ধারার পূর্ববর্তী লেখকদের উদ্ধৃতি দিয়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি তুলে ধরেন,[২]

  • ভারত হল মুসলমানদের জন্য মক্কার পরে পৃথিবীর দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান, কারণ জান্নাত থেকে বহিষ্কারের পর আদম শ্রীলঙ্কার আদম চূড়ায় অবতরণ করেছিলেন।
  • যেহেতু আদমকে ইসলামের নবী ঐতিহ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেখা হয়, তাই ভারত ছিল এই ঐতিহ্য প্রকাশের প্রথম স্থান, প্রথম মসজিদ এবং প্রথম স্থান যেখান থেকে মক্কায় তীর্থযাত্রা করা হয়েছিল।
  • ভারতে "মুহাম্মদের চিরন্তন আলো" আদমের মধ্যে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
  • যেহেতু আদম ভারতে ছিলেন, সমস্ত মানুষ তার বংশধর।[৩] সবাই ভারতীয় যদিও "ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে, শুধুমাত্র আদমের কারণে মুসলমানরা বৈধভাবে দাবি করতে পারে যে তারা এই ভূমির আদি বাসিন্দা।"

মাদানির চূড়ান্ত এবং তার জন্য অকাট্য যুক্তি ছিল, মুহাম্মদ (স.) তার মাতৃভূমিকে ভালোবাসতেন, তার ভারতীয় অনুসারীরা এর ব্যতিক্রম কমই করতে পারে। আধুনিক জাতীয়তাবাদের আনুগত্যের প্রতি মুসলমানদের সামাজিকীকরণ এবং অন্যান্য ভারতীয়দের তাদের গ্রহণ করতে উৎসাহিত করার জন্য মাদানির এই বক্তব্য ছিল।[৪] তার যুক্তির দুটি অংশ ছিল। একটি ফাজায়েল বা গুণাবলির দৃষ্টিকোণ থেকে। অপরটি তিনি মুসলমানদেরকে "ভারতের দাসত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ" বলে সম্মুখভাগে রাখেন। মাদানি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, মুসলমানরা কেবল ব্রিটিশ বিরোধী ছিলেন না–বরং তারা সবচেয়ে বেশি ব্রিটিশ বিরোধী ছিলেন। মাদানি নির্মাণ করেছেন এমন অনাক্রম্যবাদী গল্প যা মুসলমানদেরকে প্রথম জাতীয়তাবাদী হিসেবে স্থান দিয়েছে। যেমনঃ ১৮০৩ সালে শাহ আবদুল আজিজের ফতোয়া, সৈয়দ আহমদ বেরলভির জিহাদ, সিপাহী বিদ্রোহ ১৮৫৭[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. লুবনা শিরিন, সায়েদা (২০১৪)। স্বাধীনতা আন্দোলনে মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানির বিশেষ উল্লেখ সহ জমিয়ত উলামায়ে হিন্দের একটি গবেষণা (১৯১৯ — ১৯৪৭) (গবেষণাপত্র) (ইংরেজি ভাষায়)। ঔরঙ্গাবাদ, মহারাষ্ট্র: ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর মারাঠওয়াদা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০৬। 
  2. লুবনা শিরিন ২০১৪, পৃ. ১০৩–১০৪।
  3. কাসেমি, শওকত আলি (২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "Tolerance and Coexistence with Non-Muslims in Islam" [ইসলামে অমুসলিমদের সাথে সহাবস্থান ও সহনশীলতা]। দেওবন্দ.নেট। "সর্বভারতীয় সন্ত্রাসবিরোধী সম্মেলন"–এ পঠিত পেপার। ২৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২১ 
  4. মুহাম্মদ জামশেদ, কাজী (১৯৮৭)। Role of Jamiat-Ul-Ulema in the Freedom Movement (1937-1947) [স্বাধীনতা আন্দোলনে জমিয়ত উলামার ভূমিকা (১৯৩৭–১৯৪৭)] (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৮৮। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা