হাতিয়া গণহত্যা হল ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুঠি গ্রামে চালানো একটি গণহত্যা। এই গণহত্যায় প্রায় ৭০০ জনকে হত্যা করা হয়।[১] হাতিয়া গণহত্যা হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ গণহত্যা।[২]

হাতিয়া গণহত্যা
শহীদদের স্মরণে নির্মিত দাগারকুটি বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ
সাধারণ তথ্য
অবস্থানদাগারকুটি গ্রাম, হাতিয়া ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলা, কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ

বর্ণনা সম্পাদনা

১৯৭১ সালে ১৩ নভেম্বর ছিল ২৩ রমজান।[৩] বর্তমান উলিপুর পৌরসভা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে হাতিয়া ইউনিয়নের দাগারকুঠি গ্রামে এদিন ফজরের নামাজের পর, পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের রাজাকারেরা কুড়িগ্রাম, উলিপুর ও চিলমারী এই তিন দিক থেকে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বুড়াবুড়ি ও হাতিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছিল। পাকবাহিনী দাগারকুটিসহ নয়াডারা, নীলকন্ঠ, অনন্তপুর, সরকারিগ্রাম, রামখানা, কলাতিপাড়া, বাগুয়া, হাতিয়া বকসী, হাতিয়া ভবেশ, রামরামপুর, জলাঙ্গারকুটি, হিজলীগোপ, সাদিরভিটা ও শ্যামপুর-এই ১৫টি গ্রাম থেকে ৬৯৭ জন বাঙ্গালিকে ধরে আনে দাগারকুটি গ্রামের ওই জায়গায়। এরপর গুলি করে এবং বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এসব গ্রামবাসীদের। হত্যার পর পাকিস্তানী বাহিনী নারী ধর্ষণ এবং বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল। তাদের এই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ থেকে কোলের শিশুরাও রক্ষা পায়নি। বধ্যভূমিতে শহীদদের মরদেহ দু'দিন পড়েছিল।[২]

হাতিয়া হত্যাযজ্ঞের সময়কালীন এক প্রত্যক্ষদর্শী কামাল হোসেনের ভাষ্যমতে,[৪] "ভোররাত থেকে পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ চালাতে শুরু করে। বাড়িঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। প্রাণের ভয়ে যে যেদিকে পারছিল পালাচ্ছিল।"

বধ্যভূমি সম্পাদনা

পরে ৭০০ জনকে গণকবর দেয়া হয়।[৫] ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দাগারকুটি বধ্যভূমি বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে।

স্মৃতিফলক সম্পাদনা

এই গণহত্যার শহীদদের স্মরণে হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর বাজারের প্রবেশ মুখে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "রংপুর ও কুড়িগ্রামে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবর"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. জনকণ্ঠ, দৈনিক। "কুড়িগ্রামের উলিপুরে হাতিয়া গণহত্যা দিবস আজ"দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ 
  3. "হাতিয়া গণহত্যা দিবসে কুড়িগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা"সময় সংবাদ। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ 
  4. সংবাদদাতা। "দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন কামাল হোসেন"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ 
  5. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "রংপুর ও কুড়িগ্রামে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, বধ্যভূমি ও গণকবর"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]